বর্তমান যুগে যে কোন ব্যবসা’র সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে ওয়েব সাইটের উপর। কারণ বিশ্ব এখন সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলছে। তবে ওয়েবসাইট এর কথা আসলেই প্রথমেই ভাবতে হবে সাইটটির আউটলুক, অর্থাৎ ডিজাইন কেমন হবে? তখনই ছুটতে হয় কোন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কাছে। তবে ওয়েবসাইটের ডিজাইনের দিকে তাকাতে গিয়ে আসল উদ্দেশ্য, অর্থাৎ ব্যবসাতে তো আর মার খাওয়া যাবে না।
ওয়েব সাইট কোন আর্ট গ্যালারি নয়, এটি একটি ইন্টারফেস, যার সমন্বয় ঘটে ৪টি বিষয় নিয়ে, কপিরাইটিং, টাইপোগ্রাফি, লে আউট এবং আর্ট। যেখানে শুধু মাত্র নান্দনিক সৌন্দর্যই না, কন্টেন্ট এর সহজ ও সাবলীল সংযোগ ঘটানো হয়। সে কারনেই কিছু কিছু ব্যাপারে ওয়েবসাইটের মালিককে খেয়াল রাখতে হবে, কারন ওয়েব ডিজাইনার রা সেগুলো কখনোই আপনাকে জানাবে না। আপনার নিজেকেই জানতে হবে সেগুলো, তাই আপনার সুবিধার্থেই সেই বিষয়গুলো এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
পুরো লেখাটি লিখেছেন, ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের এসইও কোর্সের স্টুডেন্ট ইফাত শারমিন আপু। ব্লগিংয়ের অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে লেখাটি লিখেছেন, লেখাটি অনেক ভাল হয়েছে। সেজন্য সবার সাথে শেয়ার করলাম।
প্রথমেই ঠিক করতে হবে আপনার ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য কী? কারন উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করেই ওয়েব ডিজাইন করতে হয়। আপনার উদ্দেশ্য যদি হয় গ্রাফিক ডিজাইন এর প্রচার করা, তাহলে ওয়েব সাইটের ডিজাইন্টিও হওয়া উচিত খুব মনোরম। আবার আপনার উদ্দেশ্য যদি হয় ওয়েব সাইটের এর মাধ্যমে টুরিস্টদের দৃষ্টি আকর্ষন করা, তাহলেও আপনার ওয়েব ডিজাইনটি হতে পারে নান্দনিক ও চমৎকার ডিজাইনের।
তবে সব ক্ষেত্রে দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন আপনার ব্যাবসার সাফল্য বয়ে আনতে পারবে না। সুন্দর ডিজাইন দৃষ্টি কাড়তে পারে, কিন্তু ব্যাবসায় সফলতা বয়ে আনতে পারেনা। বিশ্বের বড় বড় ওয়েবসাইটগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখব যে সেগুলোর ডিজাইন একেবারেই সাধারণ,
যেমন, Google.com
খুব সাধারন এই ডিজাইন্টি দিয়েই ওরা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গুলোর টপে আছে।
এখানে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে ভিসিটর দের চাহিদার উপর, তারা কি চায়, কি খুঁজবে বা কোন কোন ব্যাপার গুলো তাদের বেশী দরকার, সেভাবেই এটিকে সাজানো হয়েছে। দৃষ্টি আকর্ষন করবে, বা চোখ কে আটকে দিবে, এমন ডিজাইন তাদের কাছে মূল্যহীন মনে হয়েছে।
একই উদাহরন দেয়া যায় FaceBook এর বেলাতেও।
এর উদ্দেশ্য ছিল একটি কমিউনিটি গঠন করা, তার জন্যে ডিজাইন নয়, ইউজার ইন্টারফেস কে তারা প্রাধান্য দিয়েছেন।আর সে কারনেই এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি সাইট।
প্রথমেই বলেছি, আপনি আগে ঠিক করে নিন আপনার ওয়েব সাইটের উদ্দেশ্য কী হবে, সে অনুযায়ীই ডিজাইন করুন। বার বার সেই ডিজাইন চেঞ্জ করা অনেক ব্যয় বহুল ও সময়ের অপব্যবহার। একটি লাইভ ওয়েবসাইট কে রিডিজাইন করতে যাওয়া মানে ইউজারদের কে অনেক ক্ষেত্রে কনফিউজড করে দেয়া। শুধু তাই নয়, এমন তো হতে পারে, রিডিজাইনের কারনেই আপনি আপনার টার্গেটেড মার্কেট হারাতে পারেন, কপিরাইটের সমস্যায়ও পড়তে পারেন। সুতরাং বড় ধরনের কোন প্রব্লেমে না পড়লে ওয়েবসাইটের রি ডিজাইন করা থেকে বিরত থাকুন।
যে কোন ব্যবসা শুরু করতে গেলেই প্রথমে একটি ওয়েবসাইটের দরকার হয়। তবে অনেককেই দেখা যায় ওয়েবসাইটের পিছনে প্রচুর টাকা ব্যয় করেন, এটা মোটেই ঠিক না। একটি ওয়েবসাইটের পিছনেই যদি আপনি আপনার সর্বস্ব ব্যয় করেন, তাহলে পরবর্তিতে আপনি আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হবেন, কোন সন্দেহ নাই।
অনেক ডিজাইনার রা আছে, যারা আপনাকে বিভ্রান্ত করে গলা কাটা একটা রেট জানিয়ে দেবে আপনাকে, তবে আপনার উচিত আরও যাচাই করা, বিভিন্ন ডিজাইনারদের কাছে যাওয়া। ডিজাইনার কে জানিয়ে দিন আপানার উদ্দেশ্য, ডিজাইন এবং বাজেট। সেগুলো শুনে যারা কাজ করতে আগ্রহী হবে, তাদের দিয়েই কাজ করান। উচ্চ রেট দিলেই যে ভাল কাজ করবে, এমনটি ভাবা ঠিক না।
আর আজকাল অনেক ফ্রি টেমপ্লেট পাওা যায়, সেগুলো এডিট করেও আপনি খুব কম খরচে আপনার ওয়েবসাইট টি করে নিতে পারেন।
ওয়েবসাইট মেইন্টেনিং করার ক্ষেত্রেও আপনার সজাগ অ সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। অনেক ওয়েব ডেভেলপ বা ডিজাইনাররা এর জন্যে আপনাকে আকাশ চুম্বী একটা রেট ধরিয়ে দেবে, যা গ্রহন করা একেবারেই বোকামি। কারন আজকাল ওয়েব হোস্টিং বা কন্টেন্ট মেনেজমেন্টের জন্যে অনেক কোম্পানি বা লোকজন রেডি হয়ে আছে, তাদের কে খুঁজে বের করুন, সময় নিন, অর্থ বাঁচান।
ওয়েবসাইটের কিছু কমন ব্যাপার আছে, সেগুলোর কাছা কাছি থাকতে হয়, সবাইকেই। এখন আপনি যদি সবার থেকে আলাদা হতে গিয়ে এমন ডিজাইন করলেন, যা একেবারেই উলটে দিল সব কিছু, লোগো উপরের দান দিকে না বসিয়ে, অন্য জায়গায় বসলো, ন্যাভিগেশন বার ভিসিটর রা খুজেই পেলো ন, তাহলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে বেশী আপনার ।
সুতরাং ওয়েব এর নীতিমালা এবং ইউজারদের সহজতর ব্যবহারের কথা বিবেচনা করেই ওয়েব সাইটের ডিজাইন্টি করা উচিত।
ডেভেলপার অনেক দক্ষ হওয়া সত্বেও তাকে আপনার ব্রান্ডের পরিচিতি না দিলে সে সাইটের ডিজাইনে তা ফুটিয়ে তুলতে পারবে না। এমন ডিজাইনার কে হায়ার করতে হবে, যিনি দক্ষতার সাথে ওয়েব ডিজাইনে আপনার ব্র্যান্ডের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। তা নাহলে তা ভুল পথে এগিয়ে যাবে, আপ্নিও আপনার স্বার্থ হাসিল করতে অর্থাৎ ব্যবসায় লাভবান হতে পারবেন না।
বড় বড় ওয়েবসাইট গুলো কেবল দৃষ্টি গ্রাহ্য ডিজাইন নয়, তার ইউজারদের আচরনের দিকটি মাথায় রেখে ডিজাইন করে থাকে। ওয়েবসাইট টি যদি হয় শিশুদের জন্যে, তাহলে তার কালার সিলেকশন, ফন্ট বা টেক্সট স্টাইল, টাইপও শিশুদের উপযোগীই হতে হবে।
আবার সাইটটি যদি হয় চিকিৎসা বিষয়ক, তাহলে তার কালার, ফন্ট হবে একেবারেই অন্যরকম, অর্থাৎ খুব সাদা মাটা।
ওয়েবসাইটের ব্যাকগ্রাউন্ড কালার এবং ফন্ট কালারের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। টেক্সট বা ফন্টের কালার যেন এমন হয়, যাতে ভিসিটরদের পড়তে কোনরকম প্রব্লেম না হয়। ভিসিটর যদি পড়তে না পারেন, তাহলে বিরক্ত হয়ে আপানার ওয়েবসাইটে থাকবে না, যা আপনার লক্ষ্য অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
আপনার ওয়েবসাইটে যেন এমন কোন ইমেজ না দেয়া হয়, যা আপনার ব্রান্ডের সাথে রিলেটেড নয়। ভিন্নধর্মী ইমেজ দেয়া মানেই হলো টার্গেটেড ক্লায়েন্ট কে হারানো।
সুতরাং, সব কিছু ডিজাইনার বা ডেভেলপারের হাতে ছেড়ে না দিয়ে এই ব্যাপারগুলো আপনি আপনার নিজের মত করে করুন। আর এগুলো জানা খুব একটা কঠিন বিষয় নয়, আপনি একটু গুগলে ঘুরা ঘুরি করলেই এসব বিষয়ে ভালো ধারণা লাভ করতে পারবেন।
পোস্টটি পূর্বে প্রকাশিত লিংকঃ জেনেসিস ব্লগ
ওয়েবডিজাইন সম্পর্কিত কোন সহযোগিতার জন্য, ফেসবুকগ্রুপে এসে প্রশ্ন করুন।
ফেসবুকগ্রুপঃ ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট
আমি মোঃ ইকরাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 102 টি টিউন ও 130 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
নিজেকে অনলাইন ব্রান্ড এক্সপার্ট হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করলেও গ্রাফিকস, ওয়েবডিজাইন এবং অ্যানিমেশন বিষয়েও প্রচুর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ব্লগিংটা নেশার কারনে করি। নিজের ব্লগের লিংকঃ http://genesisblogs.com/
সুন্দর গোছানো টিউন। কাজে দেবে নিঃসন্দেহে । ধন্যবাদ আপনাকে ।