ব্যক্তিগত সোস্যাল মিডিয়া সাইটে আপলোড করার জন্য অথবা যে কোনো প্রজেক্ট এর জন্য আমাদের প্রায়ই ভিডিও তৈরি করতে হয়। সব সময় তো আর প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর হায়ার করে সকল ভিডিও এডিট করিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না। তাই অনেকেই নিজের ব্যক্তিগত ভিডিওগুলো নিজেই এডিট করে নেয়। অনেকে তো আবার ব্লগ ভিডিও করে অফিসিয়াল ভাবে আপলোড-ও করেন বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া সাইটে। তাই যারা একদম প্রাথমিক লেভেলে আছেন তাদের জন্য ভিডিও এডিটিং সম্পর্কে কিছু টিপস নিয়ে হাজির হলাম।
প্রাথমিক পর্যায়ের ভিডিও এডিটর দের বেশ কিছু সমস্যা আমি ইতোমধ্যে Notice করতে পেরেছি। তো সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আজ আপনাদের সাথে আমি ৫ টি ভিডিও এডিটিং টিপস শেয়ার করবো। ভিডিও এডিটিং এর সময় এই ৫ টি টিপস ফলো করলে আপনার ভিডিও অনেকটা প্রফেশনাল এডিটর দের মতো হবে। তাই চলুন দেরি না করে ভিডিও এডিটিং এর ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
যে কোনো ব্লগ ভিডিও বা অন্যান্য ভিডিও তৈরি করার সময় প্রথমে সাধারণত ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করা হয়। তারপর এই ভিডিও ক্লিপিগুলো ধারাবাহিক ভাবে সাজিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিও প্রস্তুত করা হয়। তাই এডিটিং এর সময় প্রথমেই ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা ঠিক রেখে একটার পর একটা ভিডিও ক্লিপ সাজাতে হবে। কিন্তু অনেকেই এই বিষয়টি এলোমেলো করে ফেলেন।
এক্ষেত্রে আপনি এডিটরে ক্লিপ গুলো যুক্ত করার আগে ক্লিপ গুলো এক এক করে দেখে নেবেন। ভিডিও ক্লিপ ধারাবাহিক না হলে ভিডিওর মূল বিষয়বস্তু এলোমেলো হয়ে যাবে এবং পুরো ভিডিওটি অর্থহীন হয়ে যাবে। তবে ট্রেইলার হিসেবে ভিডিওর শুরুতে মাঝখানের দিকের একটা বা দুটো আকর্ষণীয় ভিডিও ক্লিপ খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে রাখতে পারেন। এতে করে প্রাথমিক ভিডিও ক্লিপটি দেখে দর্শক পুরো ভিডিওটি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করবে৷ তাই অবশ্যই প্রাথমিক পর্যায়ে ভিডিও ক্লিপগুলো ধারাবাহিক ভাবে সাজিয়ে নিন।
যদি একটি ভিডিওতে একাধিক ভিডিও ক্লিপ থাকে তাহলে অবশ্যই প্রতিটি ক্লিপ এর ট্রানজিশন একদম সঠিক রাখতে হবে। একটা ক্লিপ শেষ হওয়ার সাথে সাথে এমনভাবে অন্য ক্লিপটি বসাতে হবে যেন দর্শক বিষয়টি ধরতে না পারে। অর্থাৎ দুটো ভিডিও ক্লিপ এর মধ্যে এক সেকেন্ড এর গ্যাপও রাখা যাবে না। অথবা ট্রানজিশন এর ক্ষেত্রে কোনো একটি ইউনিক প্যাটার্ন ব্যবহার করতে পারেন।
আপনার ভিডিও ট্রানজিশন যতোটা ন্যাচারাল হবে ভিডিও ততোই সুন্দর হবে। প্রফেশনাল এডিটর দের ভিডিও ট্রানজিশন এর দক্ষতা খুবই হাই লেভেলের হয় বিধায় তাদের ভিডিও এতো হিট হয়। তাই ভিডিও ক্লিপগুলো এমন ভাবে সাজাতে হবে যাতে করে এর মধ্যে কোনো গ্যাপ না থাকে আবার একদম একটির সাাথে অন্যটি ঢুকে না যায়।
একটি ভিডিওর প্রাণ হলো এর অডিও বা মিউজিক। অডিও কোয়ালিটি যতো বেশি সুন্দর হবে ভিডিও ততো বেশি ভালো হবে। তাই ভিডিও এডিটিং এর সময় অডিওর দিকে খুব বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ভিডিও ক্লিপ এর সাথে থাকা অডিও ব্যবহার না করে স্টুডিওতে আলাদা করে রেকর্ড করা অডিও ব্যবহার করা উচিত। আর সরাসরি অন স্পট অডিও ব্যবহার করলে তা অবশ্যই অডিও এডিটিং ওয়েবসাইট বা সফটওয়্যার দিয়ে এডিট করে নিতে হবে।
মোটকথা ভিডিওর সাথে ব্যবহৃত অডিও হবে স্পষ্ট, আকর্ষণীয় ও শ্রুতিমধুর। তাই ভিডিও এডিটিং টিউটোরিয়াল দেখার সময় অডিও এডিটিং এর বিষয়গুলোও ভালোভাবে ক্লিয়ার করে নিন।
একটি ভিডিওর সঠিক ইম্প্রেশন ধরে রাখে কিন্তু এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। একটি ইমোশনাল ভিডিওতে আপনাকে অবশ্যই একটু ঠান্ডা মেজাজের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করতে হবে। আবার কোনো আনন্দঘন মুহূর্তের ভিডিওতে হাই ব্যান্ডের মিউজিক মানাবে। তাই ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিকতা ঠিক রেখে একটি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নির্বাচন করতে হবে। ফলে আপনার ভিডিও আরও অনেক বেশি অর্থপূর্ণ হবে।
অনেক সময় দেখা যায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এর ভলিউম এতো বেশি থাকে যে ভিডিওর আসল স্ক্রিপ্ট বা মিউজিক বোঝাই যায় না। তাই মেইন মিউজিক এর থেকে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এর ভলিউম তুলনামূলক কম রাখতে হবে। দুটো সাউন্ড এর ওপর এমন ভাবে সামঞ্জস্য রাখবেন যাতে একটি মিউজিক আরেকটির ওপরে প্রভাব না ফেলে।
ভিডিও এডিটিং এর সময় বেশিরভাগ সফটওয়্যারে প্রথমেই একটি অপশন থাকে ফ্রেম বা পিক্সেল বাছাই করার জন্য। অর্থাৎ আপনি কোন প্লাটফর্ম এর জন্য ভিডিও এডিট করবেন তা বাছাই করে নিতে পারবেন এখান থেকে। ধরুন আপনি ইউটিউব এর জন্য ভিডিও এডিট করবেন। তাহলে আপনাকে ইউটিউব এর স্ট্রাকচার এর ফ্রেম বেছে নিতে হবে। অন্য স্ট্রাকচারে ভিডিও এডিট করে তা ইউটিউবে ব্যবহার করলে এর রেজুলেশন ঠিক থাকবে না।
ঠিক তেমন ভাবে ফেসবুকের জন্য ভিডিও তৈরি করলে ফেসবুক এর পিক্সেল অনুযায়ী ভিডিও তৈরি করবেন। এভাবে টিকটক, ইন্সটাগ্রাম সহ যে কোনো প্লাটফর্ম সিলেক্ট করে নিতে পারবেন। পাশাপাশি ভিডিও ডাউনলোড করার সময় HD মোডে ভিডিও ডাউনলোড করবেন। ফলে আপনার ভিডিও রেজুলেশন পুরোপুরি হাই কোয়ালিটি হবে।
বিগিনার লেভেলে যারা ভিডিও এডিটিং করছেন বা ভিডিও এডিটিং শিখছেন তাদের জন্য টিপস গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশাকরি এই টিপস গুলো মাথায় রেখে কাজ করলে ভালো একটা আউটকাম পাবেন। আর ভিডিও এডিটিং এর মতো একটি কাজে কখনোই তাড়াহুড়ো করে কাজ করবেন না। হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে প্রতিটি বিষয় ধীরে ধীরে শিখতে হবে ও এক্সপার্ট হতে হবে। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।