টুইটার প্রোফাইল সেটআপ করবেন যেভাবে

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বর্তমানে বিশ্বব্যাপী একটি ক্রেজ। বিলিয়ন বিলিয়ন ব্যবহারকারী বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে প্রতি মুহুর্তে ঢু মারছে। আর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য সেটি তৈরি করেছে বিশাল প্রচার প্রচারণার সুযোগ। হোক সেটি স্বল্প অথবা দীর্ঘ সময়ের জন্যই। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের জন্য এখন খুব বড় বড় প্লাটফর্ম রয়েছে। তবে টুইটার তার মধ্যে অন্যতম সেরা। ১৪০ ক্যারেক্টারের মধ্যে সবকিছু লিখতে হয় বলে ব্যস্ত মানুষেরা এই নেটওয়ার্কটিতে বেশি সময় কাটান।

আপনিও চান আপনার ব্যবসায়ের জন্য ইফেক্টিভলি টুইটার মার্কেটিং করতে? কিন্তু আপনি জানেনই না কিভাবে টুইটারকে আপনার ব্যবসায়ের জন্য ইফেক্টিভলি সেটআপ করবেন? এই আর্টিকেলটিতে ধাপে ধাপে আমি দেখাবো কিভাবে আপনি আপনার ব্যবসায়ের জন্য টুইটার অ্যাকাউন্ট তৈরি এবং সেটিং করবেন।

টুইটার অ্যাকাউন্ট সাইনআপ প্রসেস

টুইটারে সাইন-আপ করা খুবই সহজ। সাইন আপ করতে https://twitter.com/signup পেজে গিয়ে আপনার নাম, ইমেইল আইডি, টুইটারের জন্য পাসওয়ার্ড। এরপর আপনাকে টুইটার ইউজার নেম দিতে বলবে, এই স্টেপটি ভাল করে মনে রাখতে হবে, টুইটারের ইউজার নেম সব সময় আপনার প্রতিটি টুইট এর পাশেই দেখাবে আপনি যতগুলো টুইট শেয়ার করবেন। তাই টুইটার নেম সব সময় ছোট, সামঞ্জস্য, মনে রাখা সহজ এমন নির্বাচন করবেন।

টুইটারের সব বেষ্ট নাম গুলো খেয়াল করলে দেখবেন ছোট। এতে কোন যে আপনার টুইট রি-টুইট করবে সে আপনার নামটি সহজেই মনে রাখবে। টুইটারের ইউজার নেম লিমিট ১৫ অক্ষরের মধ্যে। আপনার নাম যদি এই চেয়ে বড় হয় তবে অ্যাব্রেভিয়েশন করে ছোট নাম দিয়ে টুইটার সাইন-আপ করুন। আপনার কোম্পানির ব্র্যান্ডিং করতে চাইলে প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট আপনার কোম্পানির নাম দিয়ে অ্যাকাউন্ট সাইন-আপ করারই উত্তম। আপনার ব্র্যান্ড নাম কোন কোন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের জন্য খালি আছে সেটি চেক করতে http://namechk.com/ এর সহায়তা নিয়ে পারেন। এবার Create my account ক্লিক করুন। পরবর্তী পেজে আপনি কাকে ফলো করবেন সেটি Skip করবেন, কারণ আপনি না জেনে যে কাউকে ফলো করলে সেটি আপনার জন্য কোন কাজে দিবে না। টুইটার যদি আপনাকে Skip করার অপশন দিবে না সরাসরি কিন্তু আপনি আপনার ব্রাউজারের এড্রেস বারে শুধু মাত্র https://twitter.com/  লিখে ফলো করার স্টেপটি Skip করতে পারবেন অনায়াসে। এরপর আপনার ইমেইল ইমেইলে একটি ভেরিফিকেশন লিঙ্ক চলে যাবে সেটি ওপেন করে ভেরিফাই লিঙ্কে ক্লিক করে আপনার অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করে নিলেই অ্যাকাউন্ট সাইন-আপ প্রসেস শেষ!

টুইটার বায়োগ্রাফি লিখবেন যেভাবে:

আপনার অ্যাকাউন্ট সাইন-আপ এবং ভেরিফিকেশন হয়ে গেলেই আপনার প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে আপনার টুইটারের বায়োগ্রাফি লিখে ফেলা। মনে রাখবেন, টুইটারে ১৬০ ক্যারেক্টারের মধ্যে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে সমূলেই। তাই অযাচিত কিছু লিখে বায়োগ্রাফি ফিল-আপ করবেন না। কারণ, যে কেউ আপনাকে ফলো করতে  এসে প্রথমেই আপনার বায়োগ্রাফি দেখেই ডিসাইড করবে আপনাকে ফলো করবে কিনা। এটাই চিন্তার বিষয়, তাই না? হুম!

টুইটার বায়োগ্রাফি আপডেট করতে টুইটারের উপরের ন্যাভিগেশন প্যানেলের সার্চ বক্সের পাশের আইকনে ক্লিক করে “Settings” সেটিং সিলেক্ট করুন।

সেটিং পেজে চলে আসলে এবার বাম দিকের সাইডবার থেকে Profile” এ ক্লিক করুন।

ডান দিকে থেকে আপনার বায়োগ্রাফি bio বক্সে লিখুন। নিচে কিছু টিপস শেয়ার করলাম যা আপনার প্রোফাইলে বায়োগ্রাফি লিখতে সহায়ক হবে।

ক) এমন কিছু লিখুন যা দেখা মাত্রই যে কাউকেই আকর্ষিত হবে। একটি ক্রিয়েটিভ প্রোফাইল বায়োগ্রাফি একটি নন-ক্রিয়েটিভ প্রোফাইল বায়োগ্রাফি থেকে ৮/১০ গুন বেশি ফলোয়ার পেতে পারে। টুইটারে শুধু মাত্র একটি স্ট্যান্ডার্ড এবং ক্রিয়েটিভ বায়োগ্রাফি থাকা ফলোয়ার পাবার প্রধান উপাদান। আরও একটি কথা মনে রাখতে হবে, আপনি বায়োগ্রাফিতে যাই লিখেন না কেন, সেটি পরবর্তীতে পরিবর্তন করে নিতে পারবেন যেকোন সময়।

খ) এমন কিছু লিখুন যা করতে আপনি প্রতিজ্ঞা বদ্ধ এবং আগেও আপনার বায়ারদের সাথে করেছেন। আপনি কিভাবে তাদের হেল্প করতে পারবেন সেটিও লিখুন কয়েক ওয়ার্ডের মধ্যেই।

গ) আপনই কি সেটা শেয়ার করুন। আপনার সখ, আগ্রহ উল্লেখ করতে পারেন। সব চেয়ে বড় ব্যাপার আপনার ধর্মীয় বিশ্বাস এবং রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা আপনার প্রোফাইলে আলোচনা থেকে দূরে রাখুন।

ঘ) টুইটারের বায়োগ্রাফি সার্চএ্যাবল। টুইটার প্রোফাইলে আপনার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কিওয়ার্ড রাখুন যাতে যে কেউ আপনাকে খুঁজে পায়। যেমন: ফ্রীলান্সার, ওয়েব ডেভেলপার, ব্লগার ইত্যাদি।

ঙ) কিভাবে বায়োগ্রাফি লিখবেন ভেবে পাচ্ছেন না? টুইটারের সার্চ বক্স দিয়ে আপনার কিওয়ার্ড দিয়ে বায়োগ্রাফি সার্চ করুন। অবশ্যই পেয়ে যাবেন মনের মত। তবে সাবধান! অন্যের বায়োগ্রাফি কপি করে চালিয়ে দিবেন না। এটা পুরোপুরি জুয়াচুরি! অন্যের বায়োগ্রাফি থেকে আইডিয়া নিন অথবা তাদের স্টাইল ফলো করে আপনার নিজের বায়োগ্রাফি লিখুন।

চ) আপনার পারসোনালিটি ফুটিয়ে তুলুন।  বিচক্ষণতা এবং দক্ষতার পরিচয় দিন। এবং হ্যাঁ, প্রোফাইলকে আনন্দদায়ক করে তুলতে মজা করতে ভয় পারবেন না। কারণ, আপনার ফলোয়াররা আপনার থেকে হাসি, মশকরা দেখকে আপনাকে নীরস ভাববেন না! 😉

ছ) আপনার মন, কাজের ধরন, আপনার বায়ার বা আপনার ব্যবসায় যদি পরিবর্তন হয়ে যায় তবে একই সাথে আপনার টুইটার প্রোফাইল বায়োগ্রাফিও পরিবর্তন হওয়া উচিৎ।

টুইটার ওয়েবসাইট লিঙ্ক:

বায়গ্রাফির সাথে টুইটার প্রোফাইল আপনার ওয়েবসাইট লিঙ্ক শেয়ার করার অনুমতি আছে। বেশির ভাগ ফ্রীলান্সাররা তাদের ব্যাবসায়িক সাইটের লিঙ্ক শেয়ার করে থাকে। এতে করে আপনার বায়ার বা ফলোয়াররা আপনার সার্ভিস সরাসরি কিনবার সুযোগ পাবে। আপনার ব্যাবসায়িক লিঙ্ক ছাড়াও আপনার ব্লগের লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন যাতে কোন আপনার ফলোয়াররা আপনার সাথে সবসময় ইঙ্গেজ থাকতে পারেন। অথবা আপনার এমন কোন ল্যান্ডিং পেজ যেখানে আপনার সব সার্ভিসের ইনফো আছে অথবা আপনার অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের লিঙ্ক যাতে কোন টুইটার বাদেও সেখানে আপনার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।

আপনার টুইটার ইমেজ:

টুইটার আপনাকে তিন ধরণের ইমেজ প্রোফাইলে আপলোড করার সুবিধা দেয়, একটি প্রোফাইল ইমেজ, একটি হেডার ইমেজ এবং একটি ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ। আপনি আপনার টুইটার প্রোফাইল ইমেজ এবং হেডার ইমেজ সেটিং পেজের Profile সেকশন থেকে পরিবর্তন করতে পারবেন।

আপনার প্রোফাইল ইমেজ:

আপনার টুইটারে আপলোড করা প্রোফাইল ইমেজটি টুইটারে আপনার সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট ইমেজ। একটি প্রোফাইলে কে কেউ ফলো করতে চাইলে প্রোফাইল ইমেজ একটি বড় ব্যাপার। আপনার প্রোফাইল ইমেজটির সাইজ হবে ১২৮ x ১২৮ পিক্সেল সাইজের। সবশেষে, টুইটার দিয়ে ব্যবসায় করতে আপনার প্রোফাইল ইমেজ ক্লিয়ার এবং অবশ্যই হাসিখুশি হতে হবে!

হেডার ইমেজ:

হেডার ইমেজ টুইটারের নতুন সংযোজন। এটি দিয়ে আপনি আপনার নিজের পারসোনালিটি এবং ব্র্যান্ডিংকে খুব সহজেই ফোকাস করতে পারবেন। এটি আপনার টুইটার ফিডের উপরে এবং আপনার প্রোফাইল ইমেজ ও বায়োগ্রাফির মধ্যে অবস্থান করবে। বাই ডিফল্ট আপনি কোন ইমেজ সেট না করলে এখানে গাড় কালো রং দেখতে পারবেন। খুব ভাল হয় আপনার হেডার ইমেজটি ইউনিক হলে। নিজে অথবা অন্য কাউকে দিয়ে ৫২০ x ২৬০ পিক্সেলের একটি হেডার ইমেজ ডিজাইন করিয়ে নিতে পারলে ভাল নয়তো একটি ভাল ইমেজ খুঁজে নিয়ে সেট করে ফেলুন। উদাহরণ স্বরূপ কিছু প্রোফাইল করলাম আপনাদের বুঝার সুবিধার্থে:

১. ফ্রীলান্স রাইটার জনা পেন

২. মার্কেটিং স্ট্রেটেজিস্ট পাম মরে

আপনার টুইটার ব্যাকগ্রাউন্ড:

প্রোফাইল এবং হেডিংয়ের মত টুইটার আপনাকে ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ আপলোড করার অনুমতি দেয়। ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ আপনার টুইটার পেজের পুরোটা জুড়ে অবস্থান করবে। ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজে অনেক গুলো অপশন পাবেন যা আপনাকে ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ সেট করতে অনেকাংশে হেল্প করবে। ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ সেট করতে সেটিং পেজের Design সেকশনে যেতে হবে।

আপনার প্রোফাইল ইমেজ এবং ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ আপনার প্রোফাইলে ফলোয়ার সংগ্রহ করতে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। আপনি আপনার টুইটার ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজকে আপনার ব্যবসায়ের সম্পূর্ণ ব্রান্ডিংকে তুলে ধরতে পারেন।

আপনি নিজেই প্রোফাইলের ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ তৈরি করতে পারেন অথবা কোন ডিজাইনার হায়ার করে ডিজাইন করিয়ে নিতে পারেন। মনে রাখতে হবে, একটি সম্পূর্ণ টুইটার ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজের সাইজ হচ্ছে ১৬০০ x ১২০০ পিক্সেল।

আপনার টুইটার ফাউন্ডেশন:

আপনার টুইটার ইউজার-নেম, বায়োগ্রাফি, প্রোফাইল ইমেজ এসব কিছু আপনার ব্যবসায়ের ব্র্যান্ডিং। সাথে একটি ব্যাকগ্রাউন্ড এবং হেডার ইমেজও সমান গুরুত্ব রাখে। এই স্টেজ গুলো সম্পন্ন হয়ে গেলে আপনি এবার টুইটারে আপনার ব্যবসায়ের মার্কেটিং শুরু করে দিতে পারেন।  যদি এগুলো করার আগেই মার্কেটিং শুরু করে থাকেন তবেও সমস্যা নাই। মাঝ পথেই টুইটার প্রোফাইল সাজিয়ে ফেলুন!

বি: দ্র: আমার প্রতিষ্ঠানের কাজের বাইরে আপনাদের জন্য প্রতিনিয়তই আপনাদের জন্য রিসোর্স তৈরি করার চেষ্টা করছি। মন্তব্য প্রদাণের মাধ্যমে আশা করছি আমাকে উৎসাহিত করবেন। 🙂

Level 0

আমি ট্যালি মাস্টার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 56 টি টিউন ও 10 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level 2

বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। অনেকের সুবিধা হবে। 🙂