আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। একটি মোবাইল অ্যাপ আমাদের সকলের কাছেই অনেক পরিচিত এবং অনেক জনপ্রিয়। আমাদের মধ্যে এমন প্রচুর মানুষ রয়েছে যারা এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন করে থাকে।
আর এই অ্যাপটির নাম হচ্ছে ট্রুকলার। True caller অ্যাপটির মাধ্যমে আমরা অপরিচিত কোন নাম্বারের মালিকের নাম জানতে পারি। অপরিচিত কেউ যদি ফোন করে তবে তার তাৎক্ষণিক পরিচয় জানার জন্য আমরা True caller কে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু দাড়ান, আপনি যদি এই অ্যাপটি আপনার ফোনে ইন্সটল করে রাখেন; আপনি কার সঙ্গে কথা বলেন, কার সঙ্গে চ্যাট করেন ইত্যাদি সমস্ত তথ্য এই অ্যাপটি আপনার ফোন থেকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। তবে কীভাবে এই অ্যাপটি এ সমস্ত কাজ গুলো করে এবং কোন কোন তথ্যগুলো আমাদের কাছ থেকে এই অ্যাপটি নিয়ে যাচ্ছে এটি জানার জন্য অবশ্যই টিউনটি শেষ পর্যন্ত দেখবেন।
ট্রু কলার অ্যাপ সম্পর্কে আপনি এই টিউনে বিস্তারিত জানতে পারবেন। ট্রুকলার যে আমাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে যাচ্ছে এটি কিভাবে, সেটি জানার জন্য আমাদেরকে প্রথমে জানতে হবে True caller অ্যাপ টি কিভাবে কাজ করে। আর তাহলেই আমরা জানতে পারব যে ট্রু কলার কিভাবে আমাদের থেকে তথ্য নিয়ে যাচ্ছে। এজন্য প্রথমেই আলোচনা করা যাক True caller কিভাবে কাজ করে এ সম্পর্কে।
ট্রুকলার কিভাবে কাজ করে এটি আমাদের জন্য জানা খুবই সাধারণ। True caller এমন একটি অ্যাপ যেটি যে যে তার মোবাইলে ইন্সটল করে, অ্যাপটি সবার কাছ থেকে ডেটা গুলোকে নিয়ে তার সার্ভারে আপলোড করে দেয়। এবার আপনার মোবাইলে যত কন্ট্রাক্ট আছে, আমার যত কন্ট্রাক্ট আছে, বলতে গেলে যারা যারা এই অ্যাপটি ডাউনলোড করে করেছে, তাদের মোবাইলে থাকা Contacts গুলো নিজের সার্ভারে স্টোর বা জমা করে রাখে। তারপর সার্ভারে একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট কে ব্যবহার করে কোন একটি নাম্বারের সঙ্গে একটি নাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এটি তারা করে এজন্যই যে, একটি ফোন নাম্বার কে অনেকে তার মোবাইলে একেক নামে সেভ করে রাখতে পারে।
ট্রুকলার যখন একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে সেই নাম্বারটি নেবে; অর্থাৎ, একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে যখন ডেটাকে নেবে এবং তখন যেই জিনিস গুলো কমন আসবে, তখন সেই নাম গুলো সেই নাম্বারের সঙ্গে ম্যাপ করে দেওয়া হয়। বিষয়টি আপনি বুঝেছেন কিনা জানিনা। তবে আমি আপনার জন্য এই বিষয়টিকে আরও একটু সহজ ভাবে বলছি। ধরুন, আপনার ফোনে আপনার মায়ের নাম্বারটি "মা" দ্বারা সেভ করা রয়েছে এবং একই নাম্বারটি আপনার বাবার ফোনে নাম দিয়ে সেভ করা রয়েছে। এভাবে করে আপনার অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের মোবাইলে যদি এভাবে করে সেই নাম্বারটি কে কোন একটি নির্দিষ্ট নামে বেশিবার সেভ করে রাখা হয় এবং তারা যদি True caller ব্যবহার করে থাকে, তবে তাদের থেকে সেই নাম্বারের নাম টিকে নিয়ে ট্রুকলার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সেসব নাম গুলোর মধ্য থেকে একটি নাম দিয়ে দিবে।
এবার সেই নাম্বার থেকে যদি আপনার ফোনে ফোন আসবে এবং সেই মুহূর্তে যদি আপনার ফোনে True caller থাকে, তবে True caller তার নিজের সার্ভার থেকে সেই নাম্বারটি কে খোঁজ করতে থাকবে। এক্ষেত্রে সেই নাম্বারটি যদি আপনার মোবাইলে কোন নাম দিয়ে সেভ করে থাকে, তবে সেই নামটি আপনার মোবাইলের পর্দায় ভেসে উঠবে। কিন্তু যদি আপনার মোবাইলের নাম্বারটি সেভ না করা থাকে, তবে এবার ট্রু কলার তার সার্ভার থেকে মিলিয়ে দেখবে কোন নামটি এই নাম্বারের সঙ্গে মিলিত হয়েছে এবং সেটি পরবর্তীতে আপনার ফোনে শো করবে। তারমানে, সোজা ভাষায় বললে, আমাদের কাছ থেকেই ফোন নাম্বার বা কন্টাক্ট নিয়ে এই অ্যাপটি আমাদেরকেই ওই নামগুলো প্রদর্শন করায়। এখানে বাংলা ভাষায় প্রবাদ বলতে গেলে, কৈ এর তেল দিয়ে কৈ ভাজার মতো অবস্থা।
যেখানে আপনার তথ্যগুলো ব্যবহার করে আপনাকেই পরবর্তীতে কোন ব্যবহারকারীর নাম দেখাবে। তবে এখানে আপনাকে সেই নামটি দেখানোর ক্ষেত্রে True caller মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করলো। যেখানে পূর্বে আপনার পরিবারের সেই ব্যক্তির নাম্বারটি অন্য কারো একজনের কাছ থেকে ট্রুকলার নিয়েছে এবং সেটি তার সার্ভারে রেখে দিয়েছিল। এবার আপনি True caller অ্যাপ ব্যবহারকারী হওয়ায় এবং আপনার ফোনের সেই নাম্বারটি সেভ না থাকার কারণে ট্রুকলার আপনাকে সেই নাম্বারের মালিকের নামটি আপনার মোবাইলে এনে দিয়েছে। তবে হ্যাঁ, কোন অপরিচিত নাম্বার থেকে যদি আপনার ফোনে কল আসে এবং সেই মুহুর্তে আপনার ফোনে যদি True caller অ্যাপটি থাকে, তবে অবশ্যই আপনাকে ট্রুকলার এই নাম্বারের মালিকের নাম সহ প্রদর্শন করবে। তবে এজন্য অবশ্যই সে সময়ে আপনার মোবাইলের ইন্টারনেট কানেকশন চালু থাকতে হবে।
কোন একটি নাম্বার থেকে আপনার ফোনে যদি কল আসে এবং আপনার ফোনে যদি সে নাম্বারটি সেভ করা না থাকে, তবে True caller তাৎক্ষণিক সেই নাম্বারটি কে তার সার্ভারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে। সেই নাম্বারটির সঙ্গে মিল রেখে যদি কোন একটি নাম পায়, তবে তাৎক্ষণিক সেটি সেই ব্যবহারকারীর মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। আর এই কাজটি করার জন্য অবশ্যই মোবাইলে ইন্টারনেট কানেকশন চালু থাকা দরকার। তবে একবার যদি কোন একটি নাম্বারের মালিকের নাম খুঁজে পাওয়া যায় তবে পরবর্তীতে সেই নাম্বারটা মোবাইলে সেভ না করলেও পরবর্তীতে সেই নাম্বার থেকে কল আসলে সেই নাম সহ মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। এক্ষেত্রে ট্রুকলার তার স্টোরেজ ফাইলে সেই নাম্বারটির মালিকের নাম সংরক্ষণ করে রাখে এবং যা পরবর্তীতে কাজে লাগায়।
ট্রুকলার এর সেবা দেওয়ার পদ্ধতির ব্যাপারটি বোঝা খুবই সহজ। এবার মনে করুন, আপনি আপনার গ্রামে যাবেন এবং সেখানকার সমস্ত মানুষের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে খাতায় লিখে নিবেন। সেই গ্রামে কে কে থাকে এবং তাদের নাম্বার এর পেছনে নামগুলো আপনি আপনার কাছে সংগ্রহ করে রাখলেন এবং তাদেরকে বলে আসলেন আপনাদের যদি গ্রামের কারো নাম্বার এর দরকার পড়ে তবে আমার কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিবেন। ঠিক এইভাবে কাজ করে ট্রু কলার অ্যাপ। অতএব আপনি এবার বুঝতে পারছেন যে এই অ্যাপটি আমাদের প্রাইভেসির ওপর কতটা প্রভাব ফেলে।
তবে আপনাকে এখানে আরো একটি কথা বলে রাখি। ট্রুকলার যখন আপনার থেকে কারো নাম্বার এবং নাম সংগ্রহ করে, তখন সেই নামটিই অন্য ট্রুকলার ব্যবহারকারীকে দেখায়। এক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার মোবাইলে কোন সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে কোন একজন ব্যক্তির নাম্বার সংরক্ষণ করে রাখেন, তবে সেই নাম্বারটি ট্রুকলার নেবার পর সেভাবেই অন্য একজন ট্রুকলার ব্যবহারকারীকে দেখাবে। যদি একাধিক ব্যক্তি সেই নাম্বারটি সংরক্ষণ করে রাখে এবং তারা সবাই যদি ট্রুকলার ব্যবহারকারী হয়, তবে এক্ষেত্রে ট্রু কলার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট কে ব্যবহার করে সেই নাম্বার এর জন্য একটি সঠিক বা কাছাকাছি নাম দাঁড় করাবে। যা পরবর্তীতে কোনো ব্যবহারকারীকে দেখানোর কাজে ব্যবহার করে।
এই অ্যাপটি আমরা যখন আমাদের মোবাইলে ইন্সটল করব তখন True caller আমাদের সমস্ত কন্টাক্ট লিস্ট এর নাম্বার গুলো নিয়ে নিবে। আপনি যদি এদের ওয়েব সাইটকে লক্ষ্য করেন, তবে এই বিষয়টিকে ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। আপনি যদি True caller ব্যবহার করেন তবে আপনাকে কোন কোন বিষয়গুলোর তথ্য তাদেরকে দিতে হবে, সে সমস্ত বর্ণনা তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া রয়েছে। আপনি ওয়েবসাইটে গিয়ে Privacy policy-তে গেলে দেখতে পাবেন, Installation and use-এ তারা নিজেরাই বলছে, তারা আপনার পার্সোনাল ডাটাগুলোকে সংগ্রহ করবে। এছাড়া তারা কি কি ইনফরমেশন আপনার কাছ থেকে নেবে সেটিও সেখানে বলা রয়েছে।
ট্রুকলার ব্যবহার করলে এই ক্ষেত্রে আপনাকে তাদের কাছে শেয়ার করতে হবে আপনার লোকেশন, আইপি অ্যাড্রেস, ডিভাইস আইডি, ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারার বা ফোনের নির্মাতা, ডিভাইস এবং হার্ডওয়্যার সেটিংস, সিম কার্ডর তথ্য, আপনার ডিভাইসে ইনস্টল করা অ্যাপ্লিকেশন। আপনার ফোনে কি কি অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে সেটিও তাদেরকে জানতে হবে। বিজ্ঞাপণের জন্য আইডি; বিজ্ঞাপণ ডেটা, আপনার মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম, ওয়েব ব্রাউজার, আপনি কোন অপারেটরের সিম ব্যবহার করেন, আইএমএসআই; আপনার মোবাইলের পর্দা রেজল্যুশন; ডিভাইস টি ব্যবহারের পরিসংখ্যান; ডিফল্ট যোগাযোগ অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে ডিভাইসের কন্ট্রাক লিস্ট অ্যাক্সেস; ডিভাইস লগ এবং ইভেন্ট তথ্য; আপনার ডিভাইসের আগত এবং বহির্গামী কল এবং বার্তাগুলির লগস, কীওয়ার্ড এবং মেটা ডেটা। এবার আপনি যখন আপনার মোবাইলে True caller অ্যাপ ইন্সটল করেন তখন আপনি বুঝতে পারেন না যে, আপনি তাদের প্রাইভেসি পরিস্থিতে অজান্তেই টিক মার্ক দিয়ে আপনার আপনার সকল তথ্য তাদের কাছে তুলে দিচ্ছেন।
সব মানুষের ডেটা একত্রে সংগ্রহ করা এবং সেগুলো থেকে সাধারণ মানুষকে সেবা দেওয়ার বিষয়টিকে বলা হয় Crowd sourcing। এর মানে, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ডেটা নিয়ে সাধারণ মানুষকেই সার্ভিস দেওয়া। এবার অনেকে বলতে পারে এই অ্যাপটি তো তবে আমাদের জন্য উপকার ই করে। যেখানে এই অ্যাপটির মাধ্যমে আমরা কোন অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে ফোন আসলে তার নাম জানতে পারি। কোন নাম্বারটি স্প্যাম সেটিও আমরা এই অ্যাপটির মাধ্যমে জেনে নিতে পারি।
আপনি হয়তোবা ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করেছেন যে, এই অ্যাপটি ইনস্টল করার জন্য আপনাকে কোন কোন বিষয়গুলোর অনুমতি দিতে হয়। আপনি যখন তাদের প্রাইভেসি পলিসি তে Agree করেন, তখন তারা কিন্তু এটিও বলে দেয় যদি আপনি এসব শর্ত না মানতে পারেন তবে অ্যাপটি আনইন্সটল করে দিতে পারেন। আর আপনি যদি ইনস্টল করে আপনি ব্যবহার করেন তবে আমাদের এসব শর্তগুলো মানতে হবে। এই কারণে আপনি যদি আপনার ফোনের প্রাইভেসিকে গুরুত্ব দিতে চান, তবে এসব কিছুকে আবার আপনাকে ভেবে নেওয়া উচিত। আসলে আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন না যে এই অ্যাপটি আপনার কাছ থেকে কোন কোন ডেটা গুলোকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
তবে এবার প্রশ্ন হল যে, আমরা কি তবে জানতে পারবো না যে কোন অপরিচিত নাম্বার থেকে কে আমাকে ফোন করছে এবং তার নাম কি? এক্ষেত্রে বলব নিশ্চয়ই; আর সেটি আমরা করতে পারবো True caller কে ব্যবহার করেই। আর এর জন্য আপনাকে আপনার ফোনের নিরাপত্তাকে বাদ দিতে হবে না। আপনি একেবারে নিশ্চিন্তে ট্রু কলার অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন এবং অপরিচিত কোন নাম্বার থেকে আপনাকে ফোন করা হচ্ছে সেটিও জানতে পারবেন। এবার আপনাদের প্রশ্ন হতে পারে তবে এটি আমি কিভাবে করব? তবে সমস্যা নাই এই ব্যাপারটিও আমি নিচে বলছি।
আপনি ট্রু কলার অ্যাপ কে ব্যবহার না করেও ট্রু কলার অ্যাপ এর সুবিধা পেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনি অপরিচিত কোন ব্যক্তির নাম তাৎক্ষণিক আপনার মোবাইল স্ক্রীনে পাবেন না। যেখানে আপনাকে কিছুটা সময় ব্যয় করতে হবে অপরিচিত কোন নাম্বার এর মালিকের নাম খুঁজে বের করার জন্য। তবে কোন অপরিচিত নাম্বারের মালিকের খোঁজ খুঁজে বের করা টি আমাদের জন্য মুখ্য বিষয়। আর এজন্যই আমরা ট্রু কলার অ্যাপ কে ব্যবহার করে থাকি।
এর জন্য আপনি নতুন একটি ইমেইল একাউন্ট তৈরী করে নিবেন; যে ইমেইল আইডিতে আপনার কোনো ব্যক্তিগত তথ্য থাকবে না। বলতে গেলে, একেবারে নতুন ফ্রেস জিমেইল আইডি। এবার True caller এর যে ওয়েবসাইট রয়েছে, এখানে আমি অ্যাপের কথা বলছি না। সেখানে ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি আপনার মেইল অ্যাকাউন্ট দিয়ে Sign up করে নিবেন এবং তারপর আপনি ওয়েবসাইটে গিয়ে কোন একটি অপরিচিত নাম্বার লিখে সার্চ করে দেখতে পারেন সেটি কার নাম্বার। যেখানে এটি একটি খুবই অসাধারণ প্রক্রিয়া কোন অপরিচিত নাম্বারের মালিকের পরিচয় দেখার জন্য।
এজন্য আপনাকে কোন অ্যাপ ইন্সটল করতে হবে না। এজন্য আপনি ট্রুকলার এর ওয়েবসাইট কে ব্যবহার করতে পারেন কোন নাম্বার খোঁজার জন্য। যেখানে আপনি ট্রু কলার অ্যাপ ব্যবহার না করেও ট্রুকলার এর ওয়েবসাইট থেকে সকল ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার বেঁচে যাবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য। যেখানে আপনি ট্রু কলার অ্যাপ টি মোবাইলে ইন্সটল করলে প্রত্যেকটি বিষয়ে আপনাকে পারমিশন নিতে হতো এবং অ্যাপে অনেক কিছুর পারমিশন না দিলে হয়তোবা আপনি অ্যাপটি ব্যবহারে করতে পারতেন না। যেখানে আপনি True caller ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করার মাধ্যমে এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আপনার কাছে যদি মনে হয়, আমি আমার মোবাইলের বা আমার ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে কি আর করব। তবে আপনার এই সব চিন্তা থেকে আপনি শুরু করার অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। ট্রু কলার অ্যাপ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আপনি যে আপনার কন্টাক্ট লিস্ট এর নাম্বার গুলো তাদেরকে দিয়ে দিচ্ছেন, ব্যাপারটা তা নয়। বরং, এমনও হতে পারে, আপনার বন্ধুর ট্রু কলার অ্যাপ ব্যবহার করছে এবং সে আপনার নাম্বারটি অজান্তেই True caller এর সার্ভারে আপলোড করে দিয়েছে। এবার অন্য কোন ট্রু কলার অ্যাপ ব্যবহারকারী যদি আপনার নাম্বারটি লিখে ট্রু কলার এ সার্চ করে তবে এক্ষেত্রে তারা আপনার নামটি দেখাবে।
কিন্তু আপনি মোটেও চান না যে, কোন একজন অপরিচিত ব্যক্তি আপনার নাম্বার দিয়ে আপনার নামটি জানুক। এই সমস্যাটি থেকে মুক্তির জন্য ট্রুকলার একটি ব্যবস্থা রেখেছে। আপনি ট্রু কলার অ্যাপ ব্যবহার করার কোনো একটি পর্যায়ে চাইলে আপনার নাম্বারটি ট্রুকলার এর সার্ভার থেকে মুছে দেবার জন্য রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারেন। এছাড়া আপনি যেকোনো সময় ট্রুকলার থেকে আপনার একাউন্ট Deactive ও করে নিতে পারবেন। এ নিয়ে আমার পূর্বের একটি টিউন রয়েছে।
পূর্বের সেই টিউনে আমি দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে ট্রুকলার থেকে আপনার নাম্বারটি আজীবনের জন্য ডিলিট করবেন। সেই টিউনটি দেখলে আপনি ট্রুকলার থেকে নাম্বার ডিলিট করার পদ্ধতিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। সেই টিউনটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের কাছে মনে হতে পারে যে, ট্রুকলার অ্যাপ আমাদের কাছ থেকে কিভাবে টাকা আয় করে থাকে। যেখানে আমাদের মত সাধারন পাবলিক ট্রুকলার অ্যাপ কে ফ্রিতে ব্যবহার করি। ট্রুকলার এর আয় করার পদ্ধতি অনেক ধরনের রয়েছে। যেখানে সবার প্রথমে রয়েছে বিজ্ঞাপণ। এদের যে ওয়েবসাইট রয়েছে সেখানে বিজ্ঞাপণ চলে; এছাড়া ট্রু কলার অ্যাপ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনার মোবাইলে ও মাঝে মাঝে পপ-আপ বিজ্ঞাপণ চলে আসে।
কোন একটি অ্যাপের আয় করার পদ্ধতির কথা প্রথমে চলে আসলে, এখানে আসে বিজ্ঞাপণের কথা। অনলাইন প্লাটফর্মে আয় করার মাধ্যম হিসেবে আমরা বিজ্ঞাপণের উপর বেশি নির্ভরশীল। আমরা যে অনলাইনে ফ্রিতে যেসব কনটেন্ট গুলো দেখতে পাচ্ছি, এগুলোর পেছনে কাজ করছে বিজ্ঞাপণ। বিজ্ঞাপণের কারণেই আমাদেরকে অনলাইনে বিভিন্ন সেবা নিতে গেলে টাকা খরচ করতে হয় না। আর এর ব্যতিক্রম নয় ট্রু কলার অ্যাপ।
অন্যান্য সকল পরিষেবার মত আমরা যদি এই অ্যাপটি ও ব্যবহার করতে চাই, তবে আমাদেরকেও কিছু বিনিময় দিতে হবে। আর এর জন্য তারা বিজ্ঞাপণ কে বেছে নিয়েছে আমাদের মত ফ্রি ব্যবহারকারীকে সেবা দেওয়ার জন্য। যদি আপনি ট্রু কলার অ্যাপ এ বিজ্ঞাপণ না দেখতে চান তবে আপনি তাদের প্রিমিয়াম ভার্সন ব্যবহার করতে পারেন। যেখানে আপনাকে টাকা দিয়ে তাদের সেবা ব্যবহার করতে হবে এবং এতে করে আপনি ট্রু কলার অ্যাপ এ কোন ধরনের আর বিজ্ঞাপণ দেখতে পাবেন না। যেখানে এটি ট্রু কলার অ্যাপ এর আয় করার জন্য অন্যতম একটি মাধ্যম।
ট্রু কলার তাদের প্রাইভেসী পলিসি তে বলেছে, তারা আপনার নাম এবং নাম্বার ব্যতীত অন্য কোন তথ্য কারও সঙ্গে শেয়ার করেনা। তবে তারা এটি করে কিনা সেটি আমাদের অজানা এবং এ ব্যাপারে আমিও কিছু বলতে পারব না।
তারা তাদের প্রিমিয়াম সার্ভিস দেওয়ার মাধ্যমেও আমাদের থেকে অর্থ নেয়। আপনি যদি বিজ্ঞাপনমুক্ত এবং অন্য সকল সুবিধা যুক্ত ট্রু কলার ব্যবহার করতে চান, তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে তাদেরকে সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হবে। আমাদের মত সাধারণ ব্যবহারকারী টাকা দিয়ে তাদের সেবা ব্যবহার না করলেও অনেক ব্যবহারকারী রয়েছে যারা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে তাদের অতিরিক্ত ফিচার ব্যবহার করে থাকে। ট্রু কলার যেখান থেকে বড় একটি অ্যামাউন্ট পেয়ে থাকে। যেখানে আমাদেরকে ফ্রি সেবা দিয়ে থাকে আমাদের ডেটার গুলোকে নিয়ে অন্যদেরকে সেবা দেবার জন্য। এছাড়া আমাদের থেকে আয় করার জন্য তাদের বিজ্ঞাপণ পদ্ধতি তো আছেই।
যেখানে True caller আমাদের কাছ থেকে ডেটা নিয়ে আমাদেরকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তো বন্ধুরা, শুধুমাত্র ট্রুকলার অ্যাপ নয়; বরং সমস্ত অ্যাপ মোবাইলে ইন্সটল করার আগে সে অ্যাপটি সম্পর্কে দেখে নিবেন। কোন এক মোবাইলে ইন্সটল করার সময় দেখে নিবেন সেই অ্যাপটি কিসের এবং সেটি আপনার মোবাইলে কিসের কিসের পারমিশন নিতে চাইছে। এবার ধরুন, আপনি একটি ক্যালকুলেটর অ্যাপ ইন্সটল করলেন। এবার সেই অ্যাপ যদি আপনার মোবাইলের Contacts list এর পারমিশন চায়, তবে এটি একেবারেই অযৌক্তিক যে, সেই ক্যালকুলেটর অ্যাপটি চলার জন্য মোবাইলের Contacts list প্রয়োজন পড়বে।
যেখানে, সেই অ্যাপটি বরং আপনার মোবাইলের Storage এর পারমিশন নিতে পারত। কেননা এখানে সে তার ডাটা গুলোকে জমা করবে। এভাবে করে সে যদি অন্য কোন কিছুর পারমিশন চায় তবে সেই আপনার মধ্যে গোলমাল রয়েছে। সেই অ্যাপটি কোন ভাবে আপনার মোবাইল থেকে কিছু চুরি করতে চাইছে। তাই আপনি যখন কোন অ্যাপ মোবাইলে ইন্সটল করবেন তখন পারমিশনের ব্যাপার এ দেখে নিবেন; আর তাহলেই আপনার মোবাইল সবসময় নিরাপদ থাকবে।
এছাড়াও কোন অ্যাপ যদি মোবাইলে ইনস্টল করার সময় ভুলবশত কোন কিছুর পারমিশন নিয়েও নেয়, তবে আপনি আপনার মোবাইলের সেটিং এ গিয়ে সেগুলোর পারমিশন আবার বন্ধ করে দিতে পারবেন। এছাড়া এমন কোন অ্যাপ আপনার মোবাইলে থাকা উচিত হবে না যেটি আপনার মোবাইল থেকে গোপনে আপনার তথ্যগুলো কে চুরি করে। আপনি যদি বেখেয়ালি ভাবে অ্যাপ স্টোর থেকে যা ইচ্ছা তাই ইন্সটল করে নেন, আর সে সব অ্যাপগুলো আপনার মোবাইল থেকে ডেটা চুরি করবে এবং সেখান থেকে তারা টাকা ইনকাম করবে।
ট্রু কলার অ্যাপ এর ব্যাপারে বলতে গেলে, এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কোন অপরিচিত ব্যক্তির নাম জানতে পারেন। এছাড়া কোন স্প্যাম নাম্বার কে এই অ্যাপটি অটোমেটিক ব্লক করে ও দেয়। এই অ্যাপটি মোবাইলে থাকলে আপনি অনেক বিরম্বনার হাত থেকেও বেঁচে যান। যেখানে পূর্বে কোনো অপরিচিত নাম্বার থেকে আপনার ফোনে কল আসলে, আপনি সেই ব্যক্তির পরিচয় খুঁজে বের করার জন্য আপনার বন্ধু-বান্ধব কে সেই নাম্বারটি দিয়ে দিতেন এবং তাদেরকে সেই নাম্বার এর মালিকের নামটি খুঁজে বের করতে বলতেন। এভাবে করে দেখা যেত সেই ব্যক্তির পরিচয় বের করার জন্য হয়তো অনেক সময় চলে যেত এবং যেটি ছিল অনেকটা বিরম্বনার।
বর্তমানে আপনি আপনার মোবাইলে ট্রু কলার অ্যাপ কে ব্যবহার করার মাধ্যমে সেই ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে পেরেছেন। কিন্তু True caller অ্যাপ ব্যবহার করার ফলে আপনি আপনার অজান্তে কিংবা জানাতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য গুলো তুলে দিচ্ছেন তাদের কাছে। আর ট্রু কলার এসব তথ্য গুলো নিয়ে তারা নিজেদের ব্যবসার কাজে লাগাচ্ছে। যেখানে আপনার মতো আরও লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীর Contracts list এর নাম্বার গুলো তারা প্রতিনিয়ত ও তাদের সার্ভারে আপলোড করে নিচ্ছে এবং যে সব নাম্বারগুলো থেকে পরবর্তীতে আপনাকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এখানে শুধুমাত্র যে তারা সেই নাম্বার গুলো নাম নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে তা নয়; বরং তারা আপনার মোবাইল সংক্রান্ত আরো অন্যান্য তথ্যগুলো ও নিয়ে নিচ্ছে।
ট্রু কলার আপনার কাছ থেকে যেসব তথ্য গুলো নিচ্ছে, সেসবের সমস্ত গুলো আপনাকে হয়তোবা নাম্বারের মালিক দেখানোর কাজে লাগবে না। কিন্তু তাদের সেবা ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই তাদেরকে আপনার সেসব তথ্য দিতে হবে। আর তা না হলে আপনি তাদের সেবা পাবেন না। তবে আপনি আপনার তথ্যগুলোকে না দিয়ে বরং আপনার জরুরী প্রয়োজনে কোন নাম্বার কে খোঁজার জন্য উপরে বলা কৌশলটিকে অবলম্বন করতে পারেন। যেখানে আপনি আপনার মোবাইলে True caller অ্যাপ ইন্সটল না করে ও তাদের ওয়েবসাইট থেকে আপনি কোন নাম্বার কে খুঁজে নিতে পারেন।
এক্ষেত্রে আপনি হয়তো বা ইনস্ট্যান্ট নাম্বারের মালিকের নাম খুঁজে পাবেন না। তবে এক্ষেত্রে আপনি আপনার অনেক তথ্যই বাঁচাতে পারবেন ট্রু কলার এর হাত থেকে। আপনি ওয়েবসাইট থেকে তাদের সেবা ব্যবহার করবেন নাকি মোবাইলের ট্রু কলার অ্যাপ ব্যবহার করবেন এটি সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা। যদি আপনার ইচ্ছা হয় তবে ব্যবহার করতে থাকুন ট্রু কলার অ্যাপ। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি তাদের তথ্য নেবার বিষয়টিকে মাথায় রাখবেন।
বর্তমানে অনলাইনে বিচরণ করার ক্ষেত্রে সবচাইতে শক্তিশালী এবং দামী সম্পদ হিসেবে ডেটাকে বিবেচনা করা যেতে পারে। আর যেখানে আপনার ডেটা গুলোকে নিয়ে তারা ব্যবসা করছে। এক্ষেত্রে এখন আপনি কি করবেন সেটা আপনার ব্যাপার। আপনি কোন অপরিচিত নাম্বারের মালিকের নাম খুঁজে বের করার জন্য অবশ্যই ট্রু কলার কে ব্যবহার করতে পারেন। তবে ট্রুকলার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য কে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, তবে আপনি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের সেবা গুলো নিতে পারেন।
টিউনটির মাঝে যদি আমার কথাও ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে তবে ক্ষমা করে দিবেন। সেই সঙ্গে আমিও আমার আপনাকে পরবর্তী টিউন দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি এবং এর জন্য আমাকে অবশ্যই ফলো করে রাখবেন। তো বন্ধুরা, আজ এ পর্যন্তই। যদি টিউনটি ভালো লাগে তবে জোসস করতে পারেন এবং সেই সঙ্গে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)