বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? অনেকদিন পর আবারো হাজির হলাম নতুন টিউন একটি নিয়ে। বর্তমান সময়ে একটি ডেক্সটপ যেন না হলেই নয়। বর্তমান বিশ্ব যেভাবে আধুনিক হচ্ছে সেখানে নিজের একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ছাড়া যেন কল্পনাই করা যায় না। বর্তমান সময়ে একটি ডেক্সটপ কিংবা ল্যাপটপ আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য হয়ে গিয়েছে।
বিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিষ্কার হচ্ছে কম্পিউটার। বর্তমানে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রায় সকল কাজেই এ যন্ত্রটি ব্যবহার হয়ে আসছে। দিন দিন এটি মোবাইল ফোনের মত মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়ে গেছে। একটা সময় ছিল যখন মোবাইল ফোন শুধু মাত্র গুটিকয়েক লোক ব্যবহার করতো। তবে বর্তমান সময়ে সে ধারণা একেবারেই পাল্টে গেছে। বর্তমানে সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন। ঠিক তেমনি ভাবে কম্পিউটার ব্যবহার এর ক্ষেত্রেও একই হয়েছে। খুবই সহজলভ্য হওয়ার ফলে বাড়ছে কম্পিউটার এর চাহিদা।
বর্তমানে অনলাইনে কাজ করতে গেলে কিংবা শখের বশে একটি ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ অবশ্যই দরকার। তবে আপনাদের মধ্যে যারা প্রথমে একটি কম্পিউটার কিনতে চাচ্ছেন, তাদের প্রায়ই একটি প্রশ্ন থাকে যে ল্যাপটপ কিনব নাকি একটি ডেক্সটপ কিনব। বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদেরকে এ বিষয়টি পরিষ্কার করে দেওয়ার চেষ্টা করব আপনার জন্য কোনটি বেস্ট হবে, ল্যাপটপ নাকি ডেক্সটপ। এজন্য পুরো টিউনটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।
কম্পিউটার হলো এক ধরনের ডিভাইস যেটি বিভিন্ন ডিজিটালাইজড ডাটার মাধ্যমে তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রোগ্রাম সফটওয়্যার বা প্রসেস ব্যবহার করে সমাধান দিয়ে থাকে। তবে চলুন ল্যাপটপ এবং ডেক্সটপ সম্বন্ধে কিছু ধারণা নেওয়া যাক।
ডেক্সটপ কম্পিউটার চালানোর জন্য কিছু যন্ত্রপাতির দরকার হয়। যেগুলোকে ইন্টার্নাল হার্ডওয়ার এবং এক্সটারনাল হার্ডওয়ার বলা হয়। ইন্টার্নাল হার্ডওয়ার এবং এক্সটার্নাল হার্ডওয়্যার সম্পর্কে আপনাদের বেশি বুঝাতে হবেনা, কেননা এগুলো সম্পর্কে আপনারা হয়তোবা ইতিমধ্যেই পরিচিত। এসবের মধ্যে যেমন কিবোর্ড, মাউস, মাদারবোর্ড, র্যাম, প্রসেসর ইত্যাদি। একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার তৈরি করতে গেলে সব পার্টস গুলো আলাদা আলাদা ভাবে সেট করতে হয়। যার জন্য কম্পিউটার এর অনেক জায়গার প্রয়োজন পড়ে। যেহেতু একটি কম্পিউটারের মনিটর, সিপিইউ, মাউস কিবোর্ড সবকিছু আলাদা আলাদা ভাবে থাকে এবং আলাদা জায়গায় রাখতে হয় সে জন্য ডেক্সটপ এর নির্দিষ্ট একটি জায়গা লাগে। চাইলেই খুব সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা যায় না।
ডেক্সটপ কম্পিউটারের সবচাইতে বড় সুবিধা হলো এটিকে যে কোনও সময় প্রয়োজন অনুসারে আপগ্রেড করে নেওয়া যায়। কোনো সময়ে এসে যদি স্ক্রীন সাইজ ছোট মনে হয় তবে সেটি পাল্টিয়ে অন্য একটি ডিসপ্লে সে জায়গায় বসানো যায়। এছাড়া যদি ডেক্সটপ কম্পিউটারের পারফরম্যান্স কমে যায় তবে এদিকে আপগ্রেড করার জন্য একটি নতুন হার্ডডিক্স, প্রসেসর অথবা যেকোনো র্যাম লাগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এককথায় যেকোনো ধরনের হার্ডওয়ার সামগ্রী পরিবর্তনের মাধ্যমে ডেক্সটপকে আপগ্রেড করে নেওয়া যায়, যেটি ল্যাপটপের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। চাইলেই একটি ল্যাপটপে কিন্তু ছোট ডিসপ্লে খুলে বড় ডিসপ্লে লাগানো যাবেনা। তবে এটি ডেক্সটপ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে সম্ভব।
ল্যাপটপ এবং ডেক্সটপ কম্পিউটার এর দামের সঙ্গে পারফরম্যান্স বিবেচনা করে ডেক্সটপ কম্পিউটার ই উপরে থাকবে। একটি ৫০ হাজার টাকা দামের ল্যাপটপ এর সঙ্গে ৩৫-৪০ হাজার টাকা দামের ডেক্সটপ কম্পিউটারের পারফরম্যান্স প্রায় সমান হবে। পারফরম্যান্স এরদিকে বিবেচনা করলে ডেক্সটপ কম্পিউটার সব সময় প্রথমে থাকবে। একই দামের ল্যাপটপ এবং ডেক্সটপ কখনো একই পারফরম্যান্স দিতে পারেনা। গেমিং, ভিডিও এডিটিং অথবা গ্রাফিক ডিজাইন এর জন্য অবশ্যই ল্যাপটপ এর চাইতে ডেক্সটপ কম্পিউটার কেনাই উত্তম। কেননা একই কনফিগারেশন এর ডেক্সটপ কম্পিউটার ল্যাপটপ এর চাইতে ভাল পারফর্ম করে।
ল্যাপটপ কম্পিউটার এমন এক পোর্টেবল কম্পিউটার ডিভাইস যেটি ডেক্সটপ কম্পিউটার এর মতোই সম্পূর্ণ সমান ভাবে কাজ করতে পারে। তবে এটিকে পার্সোনাল কম্পিউটার ও বলা হয়।
ল্যাপটপে সবধরনের হার্ডওয়ার একসঙ্গে লাগানো থাকে এবং এটি হয় অনেক হালকা। সেক্ষেত্রে যেকোনো জায়গায় যেকোন সময় এটাকে নিয়ে যেতে পারা যায় খুব সহজেই, যেমনটি ডেক্সটপ এর ক্ষেত্রে হয় না। ল্যাপটপ কম্পিউটার কে ডেক্সটপ কম্পিউটারের মতো রাখার জন্য আপনার এক্সট্রা কোন জায়গার প্রয়োজন না। কেননা এটি সাইজে অনেক ছোট। তবে আকারে অনেক ছোট হলেও এর পারফর্মেন্স ডেক্সটপ কম্পিউটারের মতোই। ল্যাপটপ ডেস্কটপের থেকে স্ক্রীনসাইজ তুলনামূলক ছোট হয়, তাই এটাকে সহজে যেকোনো জায়গায় রাখতে পারবেন। পিসির তুলনায় ল্যাপটপ যেহেতু ছোট তাই একে আপনি ব্যাগে করে যেকোন জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন।
একটি ল্যাপটপ ব্যবহারের সবচাইতে বড় সুবিধা হল এদিকে যেকোনো জায়গায় যেকোন সময়ে বহন করা যায়। ওজনে এটি খুব হালকা হওয়ায় খুব সহজেই এটি বহনযোগ্য। যে কারণে ইমারজেন্সি মুহূর্তেও সঙ্গে রাখা সম্ভব। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে অন্য একটি সুবিধা হলো এর ব্যাটারি ব্যাকআপ। ল্যাপটপ মোবাইলের মত ব্যাটারি দিয়ে চালানো যায়। যে কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলেও এটিকে চালানো যায়, যে সুবিধাটি ডেক্সটপে পাওয়া সম্ভব নয়। ল্যাপটপের ব্যাটারির পাওয়ার অনুযায়ী ৪ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায়। যেটি কিন্তু আপনি ডেক্সটপ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে পাচ্ছেন না। বিদ্যুৎ চলে গেলে কাজটি সেখানেই থমকে যায় ডেক্সটপ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে।
এবার চলে আসি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে আপনি কোনটি তবে কিনবেন? ডেক্সটপের নাকি ল্যাপটপ?
ল্যাপটপ এবং কম্পিউটারের মধ্যে পার্থক্য গুলো আপনি যদি ভালোভাবে জানতে পারেন তবে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার জন্য কোনটি কেনা ভাল হবে। আপনি ল্যাপটপ এবং কম্পিউটারের সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো দেখেই অনুমান করতে পারবেন যে কোনটি আপনার জন্য বেস্ট হবে।
প্রথমে চলে আসি দামের ক্ষেত্রে,
১. ল্যাপটপ এবং ডেক্সটপ কম্পিউটারের মধ্যে সর্বপ্রথম যে পার্থক্য টি আসে সেটি হল দামের পার্থক্য। অর্থাৎ, একই দামে কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ এর পারফর্মেন্স ডেক্সটপ কম্পিউটারের ই ভালো হবে। যে কারণে আপনি একই দামে চাইতে কম দামে একটি ল্যাপটপের পারফরমেন্সের অনুযায়ী একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার কিনতে পারবেন। ভালো পারফর্মেন্স এর ল্যাপটপ কিনতে গেলে অবশ্যই বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে। যেটি কিন্তু ডেক্সটপ কম্পিউটার এর চাইতে অনেক ব্যয়বহুল। তাই দামের ক্ষেত্রে বিবেচনা করলে অবশ্যই ডেক্সটপ কম্পিউটার প্রথম পছন্দ হতে পারে।
২. এরপরে রয়েছে ব্যাটারি ব্যাকআপ এর বিষয়টি। আপনি ডেক্সটপ কম্পিউটার কে বিদ্যুৎ ছাড়া এক সেকেন্ডও চালাতে পারবেন না, পক্ষান্তরে একটি ল্যাপটপ বিদ্যুৎ ছাড়াই কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে পারে। তাই ডেক্সটপ কম্পিউটার কেনার চাইতে ল্যাপটপই অনেক ভাল। যদি আপনি বাড়িতে অথবা অফিসের বাইরে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রায়ই করে থাকেন যেগুলোতে আপনার সবসময় কম্পিউটার অন রাখা দরকার, সেখানে আপনি ল্যাপটপ ই রাখতে পারেন। যেখানে আপনার কাজের কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না।
৩. ডেক্সটপ কম্পিউটার কেনার আরও একটি সুবিধা হল আপনি যদি ডেক্সটপ কম্পিউটারটিকে আপগ্রেড করতে চান তবে খুব সহজেই সেটি করতে পারবেন। যেটি কিন্তু আপনি ল্যাপটপের ক্ষেত্রে পারবেন না। তাই আপনি যদি প্রথমে কম বাজেটের একটি ডেক্সটপ কম্পিউটার কেনেন, সেটিকে পরবর্তীতে আপগ্রেড করে নিতে পারবেন প্রয়োজন অনুসারে। যেখানে আপনি কিন্তু একটি সুবিধা পাচ্ছেন।
৪. ডেক্সটপ কম্পিউটারের জন্য নির্দিষ্ট একটি জায়গা বাছাই করতে হয়, পক্ষান্তরে যদি আপনি একটি ল্যাপটপ কেনেন সেটিকে যেকোনো জায়গায় যেকোন সময় বহন করা যায়। এক্ষেত্রে আপনার ল্যাপটপে হতে পারে প্রথম পছন্দ। তবে, যদি আপনি কোন জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন সেখানে আপনি ডেক্সটপ কম্পিউটারই রাখতে পারেন।
এবার আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে তাহলে আপনি কোনটি কিনবেন, ডেক্সটপ কম্পিউটারে নাকি ল্যাপটপ?
আপনি কোনটি কিনবেন সেটি উপরের পার্থক্য গুলো দেখে হয়তোবা বুঝে গিয়েছেন। আপনি ল্যাপটপ কিনবেন নাকি ডেক্সটপ কম্পিউটার কিনবেন সেটি আপনার চাহিদার ওপর নির্ভর করবে। আপনি যদি খুব বেশি পরিমাণ কাজ করতে চান তবে আপনার ডেক্সটপ কম্পিউটারই কেনা উচিত। যেমনঃ ভিডিও এডিটিং, গেমিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি কাজ। এসব কাজে কম্পিউটারের ওপর অনেক চাপ পড়ে। আপনি যদি এসব কাজ করতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে ডেক্সটপ কম্পিউটার কেনা উচিত। আর আপনি যদি হালকা কাজ করতে চান তবে আপনি ল্যাপটপ ই কিনতে পারেন। আপনি ডেক্সটপ কিনবেন নাকি ল্যাপটপ কিনবেন এটি নির্ভর করবে আপনার চাহিদার ওপর।
বন্ধুরা আমার এই টিউন ছাড়াও ইন্টারনেটে অনেক ভিডিও এবং আর্টিকেল রয়েছে যেগুলো দেখে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে আপনি ডেক্সটপ কম্পিউটার কিনবেন নাকি ল্যাপটপ কিনবেন। আপনি আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী যেকোনো একটি বাছাই করে নিতে পারেন। এই ব্যাপারে আমি হয়তোবা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত শোনাতে পারবোনা। ল্যাপটপ ও কম্পিউটার এবং ডেক্সটপ কম্পিউটারের পার্থক্য গুলো দেখে আপনার যেটি ভালো লাগে আপনি সেটিই বাছাই করতে পারেন। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হবে একমাত্র আপনারই। তবুও উপরের পার্থক্য গুলো দেখে যদি আপনার কোন একটি ভালো লাগে তবে আপনি সেটিই বাছাই করতে পারেন।
বন্ধুরা তবে আজ এই পর্যন্তই। আবারো পরবর্তীতে হাজির হবো নতুন টিউন ইনশাআল্লাহ। ততক্ষণ পর্যন্ত টেকটিউনস এর সাথেই থাকুন। আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)