চলো সাধারন আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে জানি
আজ রাতে আমি বাড়ির ছাদে বসে আকাশে এক আশ্চর্য ঘটনা দেখতে পাই।বন্ধুরা আমি অনিক।এখন রাত ২ টা।আমি ছাদে বসে আকাশ দেখছিলাম অনেকখন থেকে।হঠাতই আমি দেখি যে, দুইটি তারা খুব পাশাপাশি অবস্হান করছে।যদিও তাদের মাঝে দূরত্ব অনেক।
বিষয়টা প্রথমে তেমন ভাবাইনি আমাই,কিন্তু অনেকখন ধরে ঐ জায়গায় একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে আমি হতভম্ব হয়ে যায়।আমি সেদিকে তাকিয়ে থেকে দেখেছিলাম যে একটি তারা ধীরে ধীরে অপরটিকে প্রদক্ষিণ করছে।আবার কখনো অপর তারাটিও একই রকম আচরন করছে।বোঝার সুবিধার জন্য একটি তারাকে আমি x এবং অপরটিকে y ধরেছিলাম।তাহলে সারারাত ধরে আমার দেখা ঘটনাটি হলো কখনো x,y কে ঘিরে ঘুরে,আবার কখনো y,x কে ঘিরে ঘুরছে।পাশে ছিল আমার বড়ভাই।সেও আমার সাথে বিষয়টি দেখছিল।তবে সে পদার্থবিজ্ঞান তেমন একটা বুঝতো না।তাই সে আমাই বলল...
ভাইঃএখানে এমন ঘটনা কেন ঘটছে?(বড়ভাই)
আমিঃআসলে এখানে মহাকর্ষের প্রভাবে এমনটা ঘটছে।(আমি)
ভাইঃওহ বুঝলাম।এখানে x,y কে আকর্ষণ করছে।
আমিঃচিন্তাটি ভালো,তবে পুরোপুরি ঠিক না।
ভাইঃকেন?
আমিঃকারন তুমি এখানে নিউটনীয় মহাকর্ষের কথা বলছ।কিন্তু এখান মহাকর্ষ আলাদা অর্থ বহন করে।
ভাইঃকেমন?
আমিঃবেশিরভাগ মানুষই নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব সম্পর্কে জানে।তবে ১৯১৫ আইনস্টাইনও মহাকর্ষ নিয়ে একটি তত্ত্ব তৈরী করে।যার নাম জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি বা সাধারন আপেক্ষিক তত্ত্ব।আমাদের দেখা এই বিষয়টা এই তত্ত্ব দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
ভাইঃকিন্তু নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব গ্রহণযোগ্য নয় কেন?
আমিঃএর জন্য আমাদের এই তত্ত্বের ইতিহাস জানতে হবে।১৯০৫ সালের আগে নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব সর্বত্র প্রচলিত ছিল।তবে বিজ্ঞান হলো যুক্তির খেলা।১৯০৫ সালের পরে আইনস্টাইন এই তত্ত্বে ভুল বুঝতে পারেন।তিনি ভুল গুলো বুঝেন কতগুলো তথ্যের উপর ভিত্তি করে।
সূর্য পৃথিবী হতে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্হিত।আর আলোর বেগ প্রায় ৩ লক্ষ কি.মি./সে.।
সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড প্রায়।
এখন যদি ধরে নেওয়া যায়,নিটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব এখানে কাজ করছে,তবে নেক কিছু ব্যাখ্যা করা অসম্ভব।(নিউটনের তত্ত্ব অনুসারে,মহাকর্ষ হলো একটি আকর্ষণ বল)ধরে নিলাম সূর্য পৃথিবীকে আকর্ষণ করে চারপাশে ঘোরাচ্ছে।চলো আমরা একটু গভীরভাবে চিন্তা করি।মনে মনে সূর্যকে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি থেকে উধাও করে দাও,তবে কি ঘটবে এখন।
পৃথিবী সাথে সাথে কক্ষপথ ত্যাগ করে হারিয়ে যাবে।তার মানে এখানে মহাকর্ষের ক্রিয়া খুবই দ্রুত ঘটবে।তাহলে মহাবিশ্বে সবচেয়ে গতিশীল হওয়ার কথা মহাকর্ষের বেগ।
কেননা আলোর যেখানে পৃথিবীতে আসতে সময় লাগে প্রায় ৮ মিনিট,সেখানেতো মহাকর্ষের কোন সময়ই লাগবে না বললে চলে।
তবে আগেই আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বে বলেছেন যে,এই মহাবিশ্বে আলোর বেগই সর্বোচ্চ।কোনকিছুই এর বেগকে তিক্রম করতে পারবে না।যেহেতু মহাকর্ষের আলোর বেগকে অতিক্রম করার কথা নয়,সেহেতু মহাকর্ষ গতিশীল কিছু না।
অর্থ্যাৎ মহাকর্ষ কোন আকর্ষণ বল নয়।মহাকর্ষ হলো অন্যকিছু।
সেই অন্যকিছুকে নিয়ে ব্যাপক ভাবনার পরেই ১৯১৫ সালে আইনস্টাইন সাধারন আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রকাশ করেন।যার দ্বারা সেই অন্যকিছুকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
ভাইঃওহ বুঝেছি,নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব কেন এখানে চলবে না।আসলে এর সীমাবদ্ধতা আছে।
আমিঃ এই সাধারন আপেক্ষিক তত্ত্ব বলতে আইনস্টাইন কর্তৃক আবিষ্কৃত মহাকর্ষের
জ্যামিতিক নকশাকে বোঝায়।এই তত্ত্বটি মূলত বিশেষ আপেক্ষিকতা ও নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বের একীভূত রুপ।
ভাইঃবুঝেছি,তাহলে এই তত্ত্ব অনুসারে মহাকর্ষ আসলে কি??
আমিঃসেটা আর যাই হোক,কোন আকর্ষণ বল না।এটা বোঝানোর জন্য শুরু থেকে আলোচনা করি...
আমরা আমাদের চারপাশের সবকিছু ত্রিমাত্রিক(দৈর্ঘ্য,প্রস্হ ও উচ্চতা) দেখি।
তবে আইনস্টাইনের মতে আমাদের মহাবিশ্ব চতুর্মাত্রিক(দৈর্ঘ্য,প্রস্হ,উচ্চতা ও সময়)।আমরা সহজেই বুঝতে পারি,যেকোন স্হান গঠনের জন্য তিনটি মাত্রা আবশ্যক।তাই তিনটি মাত্রার সমন্বয়ে গঠিত স্হান ও সময়কে একত্রে স্হানকাল বা Space-time বলে।অর্থ্যাৎ মহাবিশ্বের প্রত্যেক স্হানই স্হানকালের অংশ।
এখন একটা উদাহরনে যায়
তুমি একটা চাদর নাও।এবার চারজন চারকোনা ধরে এটাকে উপরে তুলে রাখো।এবার একটা লোহার বল মাঝখানে রেখে দাও।কি দেখতে পাবে তুমি?
দেখা যাবে যে,মাঝখানটি নিচের দিকে বসে গিয়েছে(বি.দ্র. পৃথিবীতে এটা ওজনের কারনে নিচের দিকে বসলেও মহাবিশ্বে সেটার কারন হালকা ভিন্ন।যা পরে বলা আছে)।যেহেতু মহাবিশ্বের সব জায়গায় স্হানকাল,তাই সেখানে কোন ভারী বস্তু থাকলে সেখানেও চাদরের মতো বক্রতা তৈরী হবে।স্হানকালের উপর প্রতিটি ভারী বস্তুর জন্য এই ঘটনা ঘটবে।কোন ভারী বস্তুর জন্য স্হানকালে তৈরী এই বক্রতাকে স্হানকালের বক্রতা বা Space-time curvature বলা হয়।এতটুকু নিশ্চয়ই বুঝেছো?
ভাইঃহমম
আমিঃচলো আবার সেই চাদরের ভাবনাই যায়।চাদরের মাঝখানে বল রাখার পরে সেখানে বক্রতার সৃষ্টি হয়েছিল।এবার একটা ছোট গুলি নিয়ে চাদরের চারপাশে ঘূর্ণন পথে গতি দিয়ে চালিয়ে দাও।দেখা যাবে,গুলিটি ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে কেন্দ্রে পড়েছে।কিন্তু সেই চাদর ভেদ করে বাইরে যাবার ক্ষমতা গুলিটির নাই।তবে চাদরকে মহাবিশ্বের সাথে তুলনা করলে আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে,চাদরটি দ্বিমাত্রিক এবং ঘর্ষণযুক্ত বস্তু কিন্তু মহাকাশ চতুর্মাত্রিক এবং ঘর্ষণহীন।
এবার আমরা চাদরের জায়গায় মহাকাশের কোন জায়গার স্হানকাল,লোহার বলটিকে খুব ভারী বস্তুু(যেমনঃসূর্য) ও গুলিটির জায়গায় কম ভারী বস্তুু(যেমনঃপৃথিবী) কে কল্পনা করি।
মহাকাশ ঘর্ষণহীন হবার জন্য,আর ভারী বস্তুটির স্হানকালের বক্রতার জন্য কম ভারী বস্তুটি অনবরত ঘুরতেই থাকবে।এই জন্যই পৃথিবী সূর্যের চারপাশে, চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে।
আর সাধারন আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে কোন বস্তুর উপর স্হানকালের বক্রতার প্রভাবই মহাকর্ষ।
আমরা যদি কোন বস্তুর চারপাশে অন্য বস্তুকে ঘোরাতে চাই তবে সেই বস্তুর স্হানকালের বক্রতা অপরটির তুলনায় শক্তিশালী হতে হবে।
তাই মহাকর্ষ মূলত স্হানকালের বক্রতার জন্য সৃষ্ট একটা বাঁকা পথ,কোন আকর্ষণবল নয়।
ভাইঃবুঝেছি,কিন্তু মহাকাশে এই বক্রতা তৈরী হয় কেন??
আমিঃএটা মূলত স্হানকালের মধ্যস্হিত পদার্থের ভর-শক্তি এবং ভরবেগের জন্যই সৃষ্টি হয়।
ভাইঃআচ্ছা,পৃথিবীর আদিবেগ তো শূণ্য হবার কথা ছিল,তবে সে বেগ পেলো কোথাই।
আমিঃআসলে মহাবিষ্ফরনের পরে যখন পৃথিবীর মতো গ্রহগুলো তৈরী হয়,তখনই তারা গতি পেয়ে গেছে।যেহেতু মহাকাশ ঘর্ষণহীন,তাই এর বেগ এখনও তখনকার সমানই আছে।
অতীতের যে পরিমান বেগে পৃথিবী সূর্যের স্হানকালের বক্রতার মাঝে প্রবেশ করে,সেই বেগ এখনও কার্যকর আছে।
ভাইঃপৃথিবী কি স্হানকালের বক্রতার জন্যই বক্র পথে মানে উপবৃত্তাকার পথে চলে??
আমিঃহমম
চলে আবার একটা উদাহরনে যাই।
ধরো তুমি রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছ।আবার ধরো যে,রাস্তার বাইরে আর কিছুই নাই এমনভাবে রাস্তাটা সাজানো।
তবে তোমার গাড়ি সেই রাস্তা দিয়েই চলতেই থাকবে।তেমনি স্হানকালের বক্রতার জন্য সৃষ্ট পথকে ভেদ করে যাবার মতো ক্ষমতা পৃথিবীর নাই।
আর সূর্যের বক্রতার ধরনে কোথাও বেশি বেকে গেছে আবার কোথাও কম।
তা সম্পূর্ণ বৃত্তাকার পথ সৃষ্টি না হয়ে সেটা হয়েছে একটা উপবৃত্তাকার পথ।
আসলে সূর্য পৃথিবীর তুলনায় অনেক ভারী।তাই সূর্যের স্হানকালের বক্রতাও পৃথিবীর তুমনায় শক্তিশালী।
তাই পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে।আবার পৃথিবীর স্হানকালের বক্রতা চাঁদের তুলনায় বেশি হওয়ায় চাঁদও পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে।অর্থ্যাৎ মহাকাশে স্হানকালের বক্রতার ক্ষমতার পার্থক্যের জন্যই এক বস্তু অন্য বস্তুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।
ভাইঃওহ বুঝেছি।আকাশের ঐ x ও y তারা দুইটির স্হানকালের বক্রতার শক্তি হয়তো খুব কাছাকাছি।তাই একবার x,y কে আবার y,x কে প্রদক্ষিন করছে।
আমিঃহমম
মহাকাশে কোন বস্তু যদি অনেক শক্তি শালী বক্রতা তৈরী করতে পারে,তবে কোনকিছু এর মধ্যে ধুকে গেলে আর বের হতে পারেনা। যেমন :ব্লাকহোলের অনেক শক্তিশালী বক্রতার জন্য এর কাছ থেকে আলোও বের হতে পারে না।
ভাইঃস্হানকাল যদি বেকে যাই,তবে তো সময়ও বেকে যাবে।এটা কেমন??
আমিঃমহাকাশের বিভিন্ন স্হানে বিভিন্ন বস্তুর ভিন্ন স্হানকালের জন্য জন্য সময়ের গতিও ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় আলাদাভাবে গতিশীল থাকে।
এমনকি যে আলো সবসময় সরলপথে চলে,সেটাও স্হানকাকের প্রভাবে বাকা পথে চলতে বাধ্য হয়।সেই জন্যই মহাকাশে কোন বস্তুর সঠিক অবস্হান নির্ণয়ে সমস্যা হয়।
ভাইঃহমম বুঝলাম।
আমিঃআচ্ছা আজ আর নয়।সকাল প্রায় হতে চলল।একটু ঘুমাতে হবে।নয়লে ৯.৩০ মিনিটের ক্লাসে উপস্হিত হতে পারব না।
বি.দ্রঃরাতের ঘটনাটি কাল্পনিক।সাধারন আপেক্ষিক তত্ত্বের বিষয়টি আানবার জন্য গল্পটি ব্যবহৃত হয়েছে।
শেষ কথাঃসাধারন আপেক্ষিক তত্ত্বের পরিসর বিশাল।যারা এতোটুকু পড়েছেন তাদের বেসিক হয়ে গেল এই তত্ত্ব নিয়ে। পরের পর্ব লিখব যদি আপনারা চান।লেখাটি পড়বার জন্য ধন্যবাদ।
যোগাযোগঃযারা আমার সাথে যোগাযোগ করতে চান তাদের জন্য আমার
email:[email protected]
অথবা কেউ যদি আমার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী হোন তবে ফেসবুকে একবার নক করবেন
FB:https://m.facebook.com/anikkumar.raj.5
আমার ফেসবুক পেজে আপনার পদার্থবিজ্ঞানের আরো অনেক তথ্য পেতে পারেন
FB Page:https://m.facebook.com/i.l.physics/
আমি অনিক কুমার রাজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 7 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি হাজারো কৌতুহলকে সাথে নিয়ে কাজ করি।
অনেক ভাল লিখেছেন..
ওয়েটিং ফর নেক্সট পার্ট..
গতির কারনে মহাকাশে কিভাবে বয়স কমে যাই সে বিষয়ে লিখবেন আশাকরি..