ব্লগার বিশেষজ্ঞ হয়ে যান; ব্লগার টিউটোরিয়াল: আদ্যোপান্ত [পর্ব-১] :: ব্লগের ইতিহাস এবং ব্লগার শুরু

Blogger বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ফ্রী ব্লগিং প্লাটফর্ম। টেক জায়ান্ট Google এর একটি সেবা হল Blogger। ফ্রী অনলাইন ব্লগ তৈরির জন্য Blogger সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয় মাধ্যম। Google এর নিজস্ব সার্ভার ব্যবহারের মাধ্যমে Blogger এর সকল ব্লগ চালিত হয়। ব্লগারে তৈরি সকল ফ্রী ব্লগ .blogspot.com সাবডোমেইনে প্রকাশিত হয়।

ব্লগার নিয়ে ধারাবাহিক টিউটোরিয়ালের এটি প্রথম পর্ব। পর্বভিত্তিক এই চেইন টিউনটি ফলো করলে আশা করি আপনি একজন ব্লগার বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবেন। তো চলুন শুরু করা যাক।

Blogger সম্পর্কে জানার আগে আমরা Blog এবং Blogging এর ইতিহাস এবং Blogger সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই।

ব্লগ(Blog) কি?

Blog(ব্লগ) একটি ইংরেজি শব্দ। এর উৎপত্তি আরেক ইংরেজি শব্দ Log থেকে। Log বলতে বোঝায় সময়োনুযায়ী কাজের নোট রাখা সহজ ভাষায় ডায়েরী লেখা। আমাদের মধ্যে অনেকেই ডায়েরি লিখি। সেখানে আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজের কথা লিখি, আমাদের মনের কথা লিখি, আমাদের ইচ্ছাগুলো লিখি, কল্পনাগুলো লিখি আর যা ইচ্ছে লিখে রাখি। Web(ইন্টারনেটে) এ Log লিখলে সাধারণভাবেই তাকে বলা হবে Weblog(ওয়েবলগ)। এই Weblog শব্দ থেকেই Blog(ব্লগ) এর উৎপত্তি। ব্লগিং শুরুর প্রথমদিকে Weblog শব্দটিই প্রচলিত ছিল। ১৯৯৯ সালে Peter Merholz নামে এক প্রোগ্রামার Weblog কথাটিকে ছোট করে Blog করেন। Blog শব্দটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে যার ফলে লেখালেখির এই সম্পূর্ণ নতুন ধারার নাম হয়ে যায় Blogging। সাধারণভাবে ব্লগিং বলতে বোঝায় কোন একটি বিষয় বা কোন একটি ঘটনা নিয়ে ইন্টারনেট ভিত্তিক কোন ওয়েবপেজ এ বা ইন্টারনেটে লিখে তা সবার সাথে শেয়ার করা। যেসব ওয়েবসাইটে এই লেখাগুলো প্রকাশ করা হয় তাদের বলা হয় ব্লগ।

স্যার টিম বার্নাস লি HTML এর মাধ্যমে URL ভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের ধারনা প্রকাশের করে  ওয়েব সাইট বানানো সাধারণ মানুষের নাগালে নিয়ে আসেন। ১৯৯৪ সালে সেই সময়কার Swarthmore College এর ছাত্র Justin Hall তৈরি করেন links.net নামে একটি সাইট যেখানে তিনি ব্যক্তিগত Log লিখতে থাকেন। The New York Times Magazine এর মতে Justin Hall ব্যক্তিগত ব্লগিং এর জনক(Founding Father Of Personal Blogging)। ১৯৯৪ সালেই Open Diary নামে আরেকটি ব্লগ চালু করেন Claudio Pinharez।
Open Diary
এসব কারণেই ১৯৯৪ সালকে ব্লগিং এর শুরুর সাল হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৯৯ সালটি হল ব্লগিং এর স্বর্ণালি বছর। এ বছর চালু হয় Blogger, LiveJournal এবং Xanga এর মত ব্লগিং সাইট।
প্রথমদিকের ব্লগার
Live Journal
Xanga

Xanga কে ব্লগিং সাইট বলা হলেও এটি মূলত চালু হয় Social Networking সাইট হিসেবে, ২০০০ সালে Xanga ব্লগিং ফিচার এড করে। ২০০১ সাল পর্যন্ত ব্লগিং খুব বেশি জনপ্রিয় না হতে পারলেও ২০০২ এর পর ব্লগিংকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। Gawker, TheMommyBlog.com এর মত কয়েকটি ব্লগ চালু হয় ২০০২ এ, কিন্তু ২০০২ ব্লগিং এর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকার কারণ হল Google কর্তৃক ব্লগে বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য AdSense চালু করা। AdSense চালুর ফলে হাজার হাজার ব্লগার তাদের ব্লগ থেকে আয়ের পথ খুঁজে পায়।

AdSense এর কারণেই ব্লগিং শুধু একটা শখ হয়ে থাকেনি হয়ে উঠেছে সতন্ত্র একটি পেশা। বর্তমানে ব্লগ লিখে অনেকেই হাজার হাজার টাকা আয় করছেন AdSense এর মাধ্যমেই। প্রফেশনাল ব্লগারদের প্রথম পছন্দ WordPress চালু হয় ২০০৩ সালে। এছাড়া TypePad নামে আরেকটি ব্লগও চালু হয় এবছর।

প্রথমদিকের WordPress
TypePad

২০০৪-২০০৫ হল VideoBlog বা Vlog এর সূচনার সময়। যদিও ২০০০ সালেই VideoBlog এর ধারনা প্রকাশিত হয় কিন্তু মূলত ২০০৪ এই Video Blogging শুরু হয়। Steve Garfield(প্রথমদিকের ভ্লগারদের একজন) ২০০৪ কে " Year Of The Video Blog" বা "ভিডিও ব্লগিং এর বছর" হিসেবে ঘোষণা করেন। ২০০৫ এ বিশ্বের সেরা এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় Video Sharing এর সাইট YouTube চালু হয়। YouTube ভিডিও শেয়ারিং এর সাইট হলেও শুরুতে কিন্তু YouTube কোন Video Sharing সাইট ছিল না। YouTube তার যাত্রা শুরু করে একটি Dating Site হিসেবে যেখানে সিঙ্গেলরা নিজের সম্পর্কে রোমান্টিক তথ্যসহ ভিডিও আপলোড করে একে অপরের সাথে পরিচিত হত (২০০৫ এর ফেব্রুয়ারীতে YouTube যাত্রা শুরু করে Dating Site হিসেবে পরবর্তিতে ২০০৫ এর জুনে YouTube শুধু ভিডিও শেয়ারিং এর সাইট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে)।

প্রথমদিকের ইউটিউব

ব্লগ লেখার ধারাবাহিকতায় ২০০৬-২০০৭ এ শুরু হয় MicroBlogging এর সাইটগুলোর। ২০০৬ এর মার্চে ১৪০ অক্ষরের MicroBlogging এর সবচেয়ে জনপ্রিয় সাইট Twitter এর যাত্রা শুরু হয়। ২০০৭ এ MicroBlogging এর আরেক সাইট Tumblr চালু হয়।

২০১২ তে Blogger এর তৈরীকারক Pyra Labs এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা Evan Williams ব্লগিং এর সম্পূর্ণ নতুন একটা প্লাটফর্ম তৈরী করেন যার নাম দেওয়া হয় Medium। এই মিডিয়াম এখন ব্লগিং দুনিয়ায় নতুন চমক সৃষ্টি করেছে।

Blogger(ব্লগার) কি?

 

ব্লগার(Blogger) হল ব্লগিং করার একটি প্লাটফর্ম। ব্লগারের জন্ম ১৯৯৯ সালের ২৩শে আগস্ট ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরির কোম্পানি Payra Labs এর হাত ধরে। পরবর্তীতে টেক জায়ান্ট Google ২০০৪ সালের ২রা মে তারিখে ব্লগার কিনে নেয় এবং নিজেরা এর Development শুরু করে। Blogger নামটা কিনে নেওয়ার পর Google দেয়। ব্লগার এ তৈরি সকল ব্লগের হোস্টিং হয় গুগলের নিজস্ব সার্ভারে .blogspot.com সাবডোমেইন এ।

ব্লগার কেন?

 

ব্লগার সম্পূর্ণ ফ্রী একটি সেবা। ব্লগার ব্যবহার করার জন্য কোন খরচ নেই, কোন ফি নেই। ব্যবহার করা খুব সহজ। WordPress অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি Blogging প্লাটফর্ম কিন্তু ব্যবহার করা অনেকটাই কঠিন। ব্লগিং শুরুর সময় WordPress দিয়ে শুরু করলে অনেক কিছুই Newbie হিসেবে বোঝা যায় না এবং ব্যবহারও ঠিকমত করা সম্ভব হয়ে উঠে না। সে হিসেবে Blogger ব্যবহার করা খুবই সোজা। যে কেউ Blogger বুঝতে পারবে এবং ব্যবহার করতে পারবে। তাছাড়া Blogger সরাসরি Google এর প্রদত্ত সেবা, ইন্টারনেট দুনিয়ায় Google এর প্রতিদ্বন্দ্বী বলতে কিছুই নেই...। এছাড়াও,

*আপনি আপনার ব্লগার একাউন্ট দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন নামে একাধিক ব্লগ তৈরি করতে পারবেন। একটি ব্লগার একাউন্ট থে সর্বোচ্চ ১০০টি ব্লগ তৈরি করতে পারবেন।

*একটি ব্লগে আপনি আনলিমিটেড টিউন করতে পারবেন। ব্লগার কোন টিউন ডিলেট বা এডিট করবে না এবং কোন টিউনের দায় নিবে না, টিউন ডিলিট, এডিট এবং টিউনের দায় আপনার।

*কোন টিউনে আনলিমিটেড টিউমেন্ট হতে পারে। টিউমেন্টের ক্ষেত্রেও ডিলিট, এডিট এবং দায় আপনার।

*টিউনের সাইজ যত ইচ্ছা তত হতে পারে। টিউনের সাইজের ব্যাপারেও কোন নিয়ম নেই।

*আপনি চাইলে আপনার ব্লগে আনলিমিটেড অতিথি লেখক যুক্ত করতে পারেন। তাদের সবাই ব্লগে লিখতে পারবে।

*ব্লগ লিখে আয়ের সেরা মাধ্যম হল AdSense, যার মালিক Google আবার Blogger এর মালিকও Google যার ফলে অল্প কিছু ভিজিটর ও সামান্য টিউন থাকলেও ব্লগার থেকে এডসেন্সে এপ্লাই করা যায় এবং এপ্রুভও পাওয়া যায়। যার ফলে ব্লগার থেকে ভাল টাকা আয় করা সম্ভব।

এতশত সুবিধা থাকতে ব্লগার ছেড়ে আর কি ইউস করবেন?????

Blogger এ ব্লগ তৈরি:

Blogger ব্যবহার করে ব্লগ তৈরি করতে চাইলে প্রথমেই প্রয়োজন জিমেইল একাউন্টের। Gmail একাউন্ট না থাকলে করে নিন। Gmail থাকলে বা করে নেবার পর এখানে ক্লিক করুন। ক্লিক করার পর আপনি নিচের মত পেজ দেখতে পাবেন। যদি আপনার কোন জিমেইল একাউন্ট না থাকে তাহলে 'আপনার ব্লগ তৈরি করুন' অথবা জিমেইল একাউন্ট থাকলে 'সাইন ইন করুন' এর উপর ক্লিক করুন।

 

আপনাকে সাইন ইন করতে বলা হবে। জিমেইল একাউন্ট দিয়ে সাইন ইন করুন। অথবা একাউন্ট তৈরী করে সেটা দিয়ে সাইন ইন করুন।

সাইন ইন করার পর আপনার প্রোফাইল নিশ্চিত করতে বলবে ভাষা ও অন্যান্য সেটিংস ঠিক করার পর 'ব্লগার এ অবিরত রাখুন' এর উপর ক্লিক করুন।

নতুন ব্লগার থিমগুল ব্যবহার করে দেখার কথা বলবে 'হয়ত পরে' এর উপর ক্লিক করুন।

 

আপনার ব্লগার ড্যাসবোর্ডে পৌছে যাবেন। নতুন একটি ব্লগ তৈরির জন্য 'নতুন ব্লগ তৈরি করুন' এর উপর ক্লিক করুন।

ব্লগ তৈরির জন্য একটি ফর্ম আসবে।

*শিরোনাম ঘরে আপনার ব্লগের জন্য পছন্দমত একটা নাম দিন।

*ঠিকানা ঘরে ব্লগের জন্য উপলভ্য একটি ঠিকানা দিন(এটিই হবে আপনার ব্লগের URL এড্রেস)। তারপর ইচ্ছামত থিম সিলেক্ট করে 'ব্লগ তৈরি করুন' এর উপর ক্লিক করুন।

আপনার ব্লগ তৈরি হয়ে যাবে। 'ব্লগ দেখুন' এ গিয়ে আপনি আপনার ব্লগ দেখতে পারবেন।

ব্লগের নাম এবং ঠিকানাসহ ব্লগ দেখতে পাবেন।

কংগ্রেচুলেশন!! আপনি সফল ভাবে একটি ব্লগার ব্লগ তৈরী করে ফেলেছেন। এখন এই ব্লগে আপনি লিখতে পারবেন, টিউন করতে পারবেন, ছবি এবং ভিডিও এড করতে পারবেন টিউনে আরো কত কি!! হয়ে উঠতে পারবেন একজন প্রফেশনাল ব্লগার।

আজ এ পর্যন্তই। আগামী পর্বে ব্লগারের ড্যাসবোর্ডের বিভিন্ন টুলসের কার্যকারিতা ও ব্যবহার নিয়ে হাজির হব ইনশাল্লাহ।

Level 2

আমি হাসিবুর ইসলাম নাসিফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 43 টি টিউন ও 76 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

বিষাদময় পৃথিবীতে আমি আনন্দ খুঁজে নিই সবকিছু থেকে। আর স্বপ্ন দেখি মহাকাশ ভেদ করে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেবার। স্বপ্নচারী আমার স্বপ্নগুলোই বাঁচিয়ে রেখেছে আমাকে। হাত ধরে চলো স্বপ্ন দেখি একসাথে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস