আমরা ইতিমধ্যে রঙ এর Properties, TInts, Shades, Tones এগুলো জেনে গেছি। এখন যে বিষয় টি নিয়ে আলোচনা করবো সেটা হচ্ছে Color Temperature বাংলায় সম্ভবত রঙ এর তাপমাত্রা। এই কথা শুনে নিজের শরীরের তাপমাত্রা অনেকের হয়তো বেড়ে গেছে। :)। কারন অনেকেই বলবেন রঙ কি আগুনে গলিয়ে তারপর পেইন্ট করতে হয় যে তাপমাত্রার সাথে এর কোন সম্পর্ক আছে? ভাবাটা অস্বাভাবিক কিছু না নতুনদের জন্য। তবে অনেকেই এসম্পর্কে কিছুটা হলেও জানেন। তবে আজকে নতুন ও অল্পজানা সবকিছুর অবসান ঘটাতে লিখতে বসলাম রঙ এর তাপমাত্রা নিয়ে।
হ্যাঁ, আপনি নতুন হলে শুনে অবাক হতে পারেন যে, প্রতিটি রঙই ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রা বহন করে। এই রঙ এর সাথে মানুষের অনুভূতির একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে। আসুন আমাদের কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগাই, কিছুক্ষন কল্পনার সাগরে ভেসে যাই। চোখ বন্ধ করে একমনে মিশে যান আমাদের প্রকৃতির(Nature) সাথে। একবার আকাসের দিকে তাকান, একবার সবুজ ঘাস এর দিকে, একবার বড় বড় পর্বত এর দিকে কিংবা সমুদ্র অথবা বরফ এ আচ্ছাদিত কোন দেশ এর দিকে। অথবা আগুনে দগ্ধ হচ্ছে এরকম কোন বাড়ি। প্রতিটি উপাদানেরই ভিন্ন ভিন্ন রঙ ভিন্ন ভিন্ন উজ্জ্বলতা। কোনটার Tints বেশী কোনটার Shade কম। কোনটা De-saturated কোনটা Saturated. আর প্রতিটি পরিবেশ আমাদের ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির সৃষ্টি করে। যেমন নীল আকাশের দিকে তাকালে আমাদের মন শীতল হয়ে যায় কিন্তু আগুনে দগ্ধ বাড়ির দিকে তাকালে কিন্তু মন শীতল হয়ে যায় না বরং অশান্তির সৃষ্টি হয়।
আসুন দুইটা ছবি দেখে আসি। নিচের ছবিতে দুই ধরনের তাপমাত্রা দেখানো হয়েছে।
এই ছবিদুটো দেখে নিজেকে প্রশ্ন করুন তো যে, কি কি তাপমাত্রা অনুভব করতে পারছেন? যদি না পারেন তাহলে দেখুন ১ নাম্বার ছবি টা, এটা একটা বরফে আচ্ছদিত এলাকা আর বরফে আচ্ছাদিত এলাকা মানে অবশ্যই খুবই ঠাণ্ডা এলাকা এবং তাপমাত্রা অনেক কম। এবার ২ নাম্বার ছবিতা দেখুন, এটা একটা খরায় আক্রান্ত এলাকা এবং মরুভুমি টাইপের। বুঝতেই পারছেন অধিক তাপমাত্রার কারনে মাটী ফেটে চৌচির। কি? বুঝলেন কিছু? এখন হয়তো প্রশ্ন হতে পারে যে পরিবেশ টান্ডা আর গরম বুঝলাম। কিন্তু রঙের সাথে তাপমাত্রা এটা এখনও বুঝলাম না। ঠিকাছে এবার বোঝাচ্ছি। ১ নাম্বার ছবির রঙ গুলো কল্পনা করুন, প্রায় নীল রঙয়ের কাছাকাছি তাইনা? এবার ২ নাম্বার ছবি দেখুন, এই ছবির রঙ গুলো লাল+ কমলা রঙের মত। এবার তো বোঝা গেল রঙ এর সাথে তাপমাত্রার সম্পর্ক।
অতয়েব মূলত তাপমাত্রাকে এখন আমরা দুই ভাগে ভাগ করে ফেলতে পারি। যথা, নীল রঙ হচ্ছে ঠাণ্ডা টাইপের রঙ এবং লাল রঙ হচ্ছে উষ্ণ টাইপের রঙ। আশাকরি বিষয়টা পুরোপুরি ক্লিয়ার হয়ে গেল। Cool! 🙂 এখন কি? ভাবতেছেন আলোচনা শেষ হয়ে গেল? আরে নাহ! উপরের আলোচনা তো আল্পজানা লোকদের জানা ছিল। এবার একটু Advance এ চলে যাই। আশাকরি। একটি Wheel 360 ডিগ্রী হলে (180 ডিগ্রি+180 ডিগ্রি = ঠান্ডা + গরম) নিচে ছবিতে লক্ষ করুন। নিচের ছবিতে রঙ গুলোকে ২ ভাগে ভাগ করে ফেলেছি।
উষ্ণ রঙঃ অর্থাৎ গরম রঙ, এই রঙ এর বিষয়ে সহজে বলতে গেলে বলতে হবে “লাল রঙ এর সাথে হলুদ(বিভিন্ন মাত্রায়) যোগ করে যে রঙ তৈরি হয় তা উষ্ণ ” ছবিতে উষ্ণ রঙ এর অংশ টা খেয়াল করুন। এই অংশটি শুরু হয়েছে ১০০% লাল দিয়ে এবং শেষ হয়েছে কাঁচা হলুদ রঙ দিয়ে। অনেকে হয়তো সবুজ দেখছেন, কিন্তু থিয়োরি বোঝানোর সুবিদার্থে এই সবুজ কে কাঁচা হলুদ নাম দেওয়া হলো কারন আমি উপরের সংজ্ঞায় বলে দিয়ে ছি উষ্ণ রঙ হচ্ছে লাল এর সাথে হলুদের মিশ্রণ।
উষ্ণতার উদাহরনঃ রবি (জ্বলে উঠুন আপন শক্তিতে), Airtel (ভালোবাসার টানে পাঁশে আনে) এরা তাদের রঙ বাছাই করেছে লাল। রবি বা এয়ারটেল এর লোগো টা তে কেন লাল রঙ ব্যবহার করা হল? কারন রবি মানুষ কে আপন শক্তিকে জ্বলে উঠতে বলেছে, আর কোন কিছু জ্বলা মানে তো উষ্ণতার প্রতিক। আর উষ্ণ রঙ হচ্ছে হলুদ আর লাল এর মিশ্রণ, শুধু লালও উষ্ণতা নির্দেশ করে। এয়াটেল আমাদের ভালোবাসার টান কে আকর্ষণ করেছে। এইরকম উষ্ণ রঙ গুলো সাধারনত love(ভালবাসা), passion(আবেগ), heat(তাপ), joy(আনন্দ), power(শক্তি) ইত্যাদি প্রকাশ করে। এছাড়াও হলুদ রঙ happy(সুখী), joyful(আনন্দদায়ক), cheerful(প্রফুল্লিত), remembrance(কোন কিছু মনে রাখা) তারপর Gold রঙ riches(সম্পদ), extravagance(অপচয়), bright(উজ্জল), traditional(ঐতিহ্য), কমলা রঙ energy(শক্তি), warmth(উষ্ণতা), change(পরিবর্তন) আরো অনেক কিছুই আছে। কিন্তু ডিজাইনিং এর ক্ষেত্রে উপরের টার্ম গুলো মাথায় রেখে ডিজাইন করলে ভালো রেটিং পাবেন।
ঠাণ্ডা রঙঃ এই রঙ নিয়ে বেশী আলোচনা করবনা, এক কথায় নীল রঙ। ঠাণ্ডা পরিবেশ বোঝাতে নীল রঙ ব্যবহার করবেন, এছাড়াও মাইন্ড রিফ্রেশিং, এন্টিসেপটিক রং, শান্ত, ইত্যাদি। আশাকরি। আপনরা ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করলে অনেক জানতে পারবেন। এর জন্য গুগল এ গিয়ে Cool Color meaning লিখে সার্চ করুন। অনেক আলোচনা করা আছে এ নিয়ে। 🙂
টিপসঃ লাল রঙ উষ্ণতা নির্দেশ করে, আর নীল রঙ ঠাণ্ডা নির্দেশ করে। কাঁচা হলুদ থেকে শুরু করে লাল পর্জন্ত সবই উষ্ণতা প্রকাশ করে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে, অপরদিকে পার্পেল রঙ থেকে শুরু করে কাঁচা হলুদ পর্জন্ত এসব ঠাণ্ডা নির্দেশ করে। Color Wheel এ রঙ গুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় (a) Warm Colors (b) Cool Colors সাধারনত নীল, সবুজ ও লাইট পারপেল রঙ গুলোকে Cool Color বলা হয় এবং Deep Purple, লাল, হলুদ ইত্যাদি কে warm color বলা হয়।
Special Tips: ধরুন কোন একটা ছবি দেখে আপনি বুঝতে পারছেন না যে এই ছবিটা তে Warm Color এর পরিমান বেশী নাকি Cool Color বেশী। অথবা ছবিটা কি Cool/Warm, সেক্ষেত্রে Photoshop ব্যবহার করে সহজেই বের করতে পারবেন। Photoshop এর Eyedropper Tool এর ব্যবহার করে দেখতে পারেন। যে ছবিটা সম্পর্কে জানতে চান, সে ছবিটা Open করুন, এরপর Color Pallete Open করুন এবং Eyedropper Tool দিয়ে Color sample নিয়ে পরিক্ষা করতে পারেন।
পরবর্তি টিউন এ আলোচনা করবো Color Harmony নিয়ে।
আজকের পর্বসম্পর্কে কোন প্রশ্ন, সমস্যা কিংবা আমার কোন ভুল হলে অবশ্যই গ্রুপে টিউন করতে দ্বিধা করবেন না।
আমি সমীর, আমি CG & VFX এর জন্য নিজের লাইফ কে উৎসর্গ করেছি। এর সাথেই আছি এবং থাকবো।
বিস্তারিত আলচনার জন্য ফেইসবুক গ্রুপে যোগ দিতে পারেন।
আমি সমীর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 31 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অনেক অনেক বেশী ভাল লাগল।।।। 🙂