মো: আশরাফূল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্মরণীয় এক নাম । বিশ্ব ক্রিকেটেও স্মরনীয় হয়ে থাকবে তার সবচেয়ে কম বয়সে টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরী করার জন্য । যদিও বর্তমানে তার আগের সেই ফর্ম নাই তারপরও তার অবদান অস্বীকার করা যাবেনা । বাংলাদেশের যতজন লোক ক্রিকেট খেলা দেখে বা জানে তাদের প্রত্যেকে অবশ্যই আশরাফূলকে চিনে । চিনে তার ক্রিকেট খেলায় পারদর্শিতার কারণে । কিন্তু সে এখনও এইচ.এস.সি পাশ করতে পারেনি ।
আমার ঘুম ভাঙ্গাইয়া দিলরে মরার কোকিলায়.............. এই গানের শিল্পী মমতাজ যাকে বাংলাদেশের গ্রামানঞ্চল তথা দেশের অধিকাংশ মানুষ চিনে । কিন্তু সেও স্কুলের আঙ্গিনা পার হতে পারেনি । তারপরও দেশের মানুষ মমতাজকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয় ।
যদিও উপরের দুজনের চেয়ে জ্ঞান, শিক্ষা ও সম্মানে বুয়েটের ভিসি স্যার যোজন যোজন এগিয়ে তারপরও কিন্তু আশরাফূল ও মমতাজকে দেশের মানুষ যতটা চেনে ভিসি স্যারকে ততটা চেনেনা ।
উপরের তিনজনেরই প্রতিভার কারণে এত সম্মান বা পরিচিতি । কারো প্রতিভা খেলাধুলায়, কারো প্রতিভা সংঙ্গীতে ও কারো প্রতিভা শিক্ষায় দেখিয়েছেণ ।
অনেক বিদ্যালয়ে দেখা যায় কিছু শিক্ষার্থী আছে যারা পড়াশুনায় দূর্বল ও অমনোযোগী কিন্তু খেলাধূলা বা ছবি আঁকা বা সংগীতে বা গল্প-কবিতা লেখা বা অন্যান্য কার্যক্রমে অসাধারণ পারফমেন্স করে । তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকেরই অভিভাবক বা শিক্ষক তাদের এই কাজ গুলোকে ভাল ভাবে দেখেনা । তাদের পড়াশোনার প্রতি অতি প্রেশার দেয় ফলে তাদের সেই প্রতিভা গুলো বিকশিত হতে পারেনা আবার পড়াশোনায় ও খুব ভাল করতে পারেনা । এক সময় এরা নীরবে ঝড়ে যায় ।
আবার অনেকেই আছে শুধু পড়াশোনাতেই ব্রিলিয়ান্ট কিন্তু অন্য কোন বিষয়ে কিছুই করতে পারেনা এবং কিছু আছে যারা পড়াশুনাতে ও যেমন ব্রিলিয়ান্ট তেমনি অন্যান্য দিকেও ।
সবারই কিছুনা কিছু বিষয়ে প্রতিভা থাকে । কেউ ছবি আকাঁয়, কেউ সংগীতে , কেউ খেলাধূলায়, কেউ গল্প কবিতায় ও কেউ লেখাপড়ায় । বিদ্যালয়গুলোতে শুধু লেখাপড়ায় জোর দেয়া হয় কিন্তু অন্যান্য প্রতিভা বিকাশে তেমন কোন বিশেষ কার্যক্রম নেয়া হয়না ফলে যারা আজকের জয়নূল, আজকের নজরুল হতে পারত তা হয়না ।
আজ আমি আপনাদের দেখাব কিভাবে পড়াশুনার মাধ্যমে এসব প্রতিভার বা বুদ্ধিমত্তার বিকাশ সাধন করা যায় । এরজন্য প্রয়োজন বিদ্যালয়ের শ্রেণীপাঠদানে একটি বিশেষ পদ্ধতি বা কৌশল ব্যবহার কারা যাতে সকল ধরনের প্রতিভার বা বুদ্ধিমত্তার শিক্ষার্থীদের বিকাশ সাধন হতে পারে । এটা শুধু শিক্ষকদের জন্য না যারা নিজেদের সন্তানদের নিজেরা অনেক কেয়ার করেন তারাও প্রয়োগ করতে পারেন ।
১৯৮৩ খ্রীস্টাব্দে আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড: হাওয়ার্ড গার্ডনার একটি তত্ত্ব প্রদান করেন যাতে তিনি বলেন - মানুষের মধ্যে ৮ ধরনের বুদ্ধিমত্ত্বা থাকে । সেগুলি হল :
০১। ভাষাভিত্তিক বুদ্ধিমত্ত্বা : সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারা, বক্তৃতা করতে পারা, কোন কিছু ব্যাখ্যা করতে পারা, কোন কিছু রচনা করতে পারা ইত্যাদি ।
০২। যুক্তিমূলক-গানিতিক বুদ্ধিমত্ত্বা : কোন ব্যাপারে যুক্তি প্রদান করতে পারা, বিতর্কে যোগ্যতা প্রদর্শন করা, বিচার বিশ্লেষণ করতে পারা, অঙক করতে পারা, সমস্যা সমাধান করতে পারা, বিমূর্ত বিষয় ব্যাখ্যা করতে পারা ইত্যাদি ।
০৩। দর্শনীয় অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্ত্বা : আনুপাতিক দিক ঠিক রেখে ছবি অংকন করতে পারা, ছবি ব্যাখ্যা করতে পারা, সাজাতে পারা, মানচিত্র নকশা চার্ট বুঝতে পারা, কোন কিছুর চিত্র কল্পনা করতে পারা, প্রতিকৃতি বানাতে পারা ইত্যাদি ।
০৪। অনুভূতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্ত্বা : শরীর ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং শরীরচর্চা মূলক কাজকর্ম যেমন- দৌড়, সাঁতার ইত্যাদি ও খেলাধূলা যেমন - ক্রিকেট, ফুটবল, হাডুডু ইত্যাদিতে যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রদর্শন এবং হস্তশিল্পে দক্ষ, কর্মকার, সূতার, চাষী, কাঠুরিয়া প্রভৃতি পেশার ব্যক্তিদের ক্রিয়া কলাপে ব্যবহৃত বুদ্ধি ।
০৫। ছন্দ ও সংগীতমূলক বুদ্ধিমত্ত্বা : গান-বাজনা, অঙ্গভঙ্গি, নৃত্য, প্রকৃতির বিভিন্ন শব্দ সহজে অনুধাবন ইত্যাদি ক্রিয়াকলাপে পারদর্শিতা প্রদর্শন ।
০৬। আন্ত:ব্যক্তিক বুদ্ধিমত্ত্বা : অন্যের সহিত সুসম্পর্ক স্থাপন করতে পারা, অন্যের আস্থা অর্জন করতে পারা, নেতৃত্ব দান করতে পারা, নিজকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারা, সহঅবস্থানে বসবাস করতে পারা, ভালবাসা অর্জন করতে পারা, অন্যের কাজে সহযোগিতা করা, সামাজিক অবস্থা বুঝতে পারা, অন্যর অবস্থা বুঝতে পারা ইত্যাদি ।
০৭। অন্ত:ব্যক্তিক বুদ্ধিমত্ত্বা : আত্মসচেতন হ্ওয়া, আত্মপোলদ্ধি করতে পারা, ভারসাম্য বজায় রেখে চলার যোগ্যতা, একা একা অধ্যয়ন করে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা, নিজের সবলতা ও দূর্বলতা বুঝতে পারা, অধিক চিন্তা করা, একা একা কাজ করতে ভালবাসা ইত্যাদি ।
০৮। প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্ত্বা : প্রকৃতির স্বাভাবিক অবস্থা ও গতিতে খাপ খাইয়ে চলার যোগ্যতা, সৌন্দর্য্যবোধ, প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগাতে পারা, প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের তথ্য সংগ্রহ করা, প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে গবেষনা করা, প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা ইত্যাদি ।
শিক্ষার্থীদের সকল ধরণের প্রতিভা বা বুদ্ধিমত্ত্বার বিকাশের জন্য পাঠকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে করে এই পাঠের মাধ্যমে উপরের সকল বা অধিকাংশ বুদ্ধির চর্চা হয় । এতে করে সবধরনের প্রতিভা বা বুদ্ধিমত্বার শিক্ষার্থীদের বিকাশ ঘটবে । কিভাবে এই সকল বুদ্ধি মত্ত্বার চর্চা উপযোগী করে পাঠ উপস্থাপন করা যায় তার একটি উদাহরন -
প্রথমে পাঠকে উপরের বুদ্ধিমত্ত্বা অনুসারে কয়েকটি অংশে ভাগ করে নেয়া যেতে পারে এবং সেভাবে প্রতিটি অংশের উপস্থাপন করা যেতে পারে ।
যেমন - অর্থনীতিতে চাহিদা ও সরবরাহ নীতি শিখানোর জন্য যা করতে পারেন -
একই পাঠে সবধরনের বুদ্ধিমত্ত্বার উপাদান আসতে হবে তা কখনই নয় । বিষয়ভিত্তিক পাঠে যে ধরনের বুদ্ধিমত্ত্বার উপাদান সর্বাধিক আনা যায় সেভাবে উপস্থাপন করতে হবে ।
ত্রিভূজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় :
ত্রিভূজের ক্ষেত্রফল = ১/২ গুণ ভূমি গুণ উচ্চতা এটা প্রমানের জন্য
এভাবে যদি প্রতিটি পাঠকে বুদ্ধিমত্ত্বা অনুযায়ী উপস্থাপন করা যায় তবে শিক্ষার্থীরা যে যে বুদ্ধিমত্ত্বায় পারদর্শী তারা সেভাবে বিকশিত হতে পারবে । এতে করে সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রতিভার বিকাশ সাধনে সহায়ক হবে ।
সবাইকে কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ । কারো কোন প্রশ্ন থাকলে যথাসাধ্য উত্তর দেয়ার চেষ্ট করব।
সূত্র :
০১। প্রশিক্ষণে অর্জিত নিজের জ্ঞান
০২। মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম ও শিশুর ক্রমবিকাশ
মডিউল - ১ ও ৩,শিক্ষামন্ত্রণালয় ।
আমি ছাত্র ও শিক্ষক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 54 টি টিউন ও 1010 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
তুমি যদি শিক্ষিত হও,অশিক্ষিতকে আলো দেবে। না পারলে তুমি অহংকার করবেনা,তুমি দূর্ব্যবহার করবেনা,বিনয়ের সঙ্গে কথা বলবে,তুমি শিক্ষিত বলেই এ তোমার অতিরিক্ত দায়।
সুন্দর টিউন 🙂