মোবাইল দিয়ে প্যাসিভ ইনকাম শুরু করার উপায়

Level 3
শিক্ষার্থী, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ

প্যাসিভ ইনকাম হলো এমন একটি আয়ের উৎস, যেখানে আপনি একবার কিছু কাজ করে তা থেকে দীর্ঘমেয়াদে নিয়মিত ইনকাম করতে পারবেন। প্রযুক্তির এই যুগে, মোবাইল ফোনের সাহায্যে সহজেই প্যাসিভ ইনকাম শুরু করা সম্ভব। আপনি নানা ধরনের মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে কাজ করতে পারেন, যেগুলো থেকে সময়ের সাথে সাথে আপনার আয় বাড়বে। এই আর্টিকেলে আমরা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কীভাবে প্যাসিভ ইনকাম শুরু করবেন এবং কোন ধরনের ওয়েব বা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনা করবো।

প্যাসিভ ইনকামের ধারণা

প্যাসিভ ইনকাম বলতে বোঝায় এমন একটি আয়ের উৎস, যেখানে আপনাকে প্রতিদিন কাজ করতে হয় না, তবে নিয়মিতভাবে আয় হয়। মূলত প্যাসিভ ইনকাম বলতে বুঝায় এমন একটি সিস্টেম তৈরি করা যেখানে আপনি একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর কাজ করবেন কিন্তু ইনকাম হবে সবসময়। আপনি কোথাও ঘুরতে গেলেন আপনার ইনকাম হবে, আপনি ঘুমাচ্ছেন তখনও ইনকাম হবে। এটাকেই প্যাসিভ ইনকাম বলে। উদাহরণস্বরূপ, বিনিয়োগ থেকে মুনাফা পাওয়া, অনলাইন কন্টেন্ট থেকে বিজ্ঞাপণ দেখিয়ে আয়, বা ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রির মাধ্যমে আয়।

প্যাসিভ ইনকামের কিছু জনপ্রিয় উপায়:

  • ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি
  • ইউটিউবিং
  • বিনিয়োগ
  • বিজ্ঞাপণ আয়
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
  • স্টক ফটো বিক্রি

মোবাইল দিয়ে প্যাসিভ ইনকাম শুরু করার উপায়

ক. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে আপনি একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের জন্য রেফারেল লিংক শেয়ার করে কমিশন পান। মোবাইলের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই এই কাজটি শুরু করতে পারেন।

জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং :

  • Amazon Associates: আমাজন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে কাজ করতে হলে প্রথমে অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েটস ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের পর, পণ্যের জন্য অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক তৈরি করা যাবে, এবং সেই লিঙ্ক থেকে কেউ কিছু কিনলে আপনি কমিশন পাবেন। এটি প্যাসিভ ইনকাম অর্জনের একটি সহজ উপায়।
  • Rakuten: Rakuten অ্যাফিলিয়েট এর পণ্যের অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক তৈরি করে আপনার ওয়েবসাইট, ব্লগ, বা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে হবে। যখন কোনো গ্রাহক এই লিঙ্ক ব্যবহার করে পণ্য ক্রয় করবে, তখন আপনি কমিশন পাবেন।
  • CJ Affiliate: এটি জাপানের একটি ওয়েবসাইট। এতে খুব সহজেই প্যাসিভ ইনকাম তৈরি করতে পারবেন। আপনি তাদের প্রোডাক্টের রেফারেল লিংক শেয়ার করে আয় করতে পারেন।

অফিশিয়াল ওয়েবসাইট:

Amazon Associates @ Amazon Associates
Rakuten @ Rakuten
CJ Affiliate @ CJ Affiliate

খ. স্টক ফটো বিক্রি

আপনি যদি ফটোগ্রাফি ভালোবাসেন, তাহলে আপনার মোবাইল দিয়ে তোলা ছবি বিভিন্ন স্টক ফটো ওয়েবসাইটে বিক্রি করতে পারেন। একবার ছবি আপলোড করলে তা সারাজীবন বিক্রি হতে পারে এবং যতবার বিক্রি হবে আপনি ততবার কমিশন পাবেন।

জনপ্রিয় স্টক ফটো বিক্রির ওয়েবসাইট:

  • Shutterstock Contributor: আপনি আপনার মোবাইলের মাধ্যমে Shutterstock-এ ছবি আপলোড করে বিক্রি করতে পারেন।
  • Adobe Stock: স্টক ফটো বিক্রির জন্য Adobe Stock খুবই জনপ্রিয়। এখান থেকে মোবাইল দিয়ে সহজেই প্যাসিভ ইনকাম করতে পারবেন।
  • Foap: মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য একটি সহজ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি মোবাইল দিয়ে তোলা ছবি বিক্রি করতে পারবেন।

অফিশিয়াল ওয়েবসাইট:

Shutterstock @ Shutterstock
Adobe Stock @ Adobe Stock
Foap @ Foap

গ. ব্লগিং

ব্লগিং হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম, যেখানে আপনি নিয়মিত কনটেন্ট বা লেখালেখি করে, আপনার সাইটে ভিজিটর আনার মাধ্যমে বিজ্ঞাপণ দেখিয়ে আয় করতে পারবেন। মোবাইল দিয়ে ব্লগ তৈরি করা বেশ সহজ এবং বিভিন্ন ব্লগিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এটি করতে পারেন।

জনপ্রিয় ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম:

  • Blogger: এটি গুগলের একটি ফ্রি ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি মোবাইল দিয়ে ব্লগ তৈরি এবং পরিচালনা করতে পারবেন।
  • WordPress: সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লগিং প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম। WordPress অ্যাপ দিয়ে মোবাইল থেকে ব্লগিং করা সম্ভব।

অফিশিয়াল ওয়েবসাইট:

Blogger @ Blogger
WordPress @ WordPress

ঘ. ইউটিউব অ্যাডসেন্স

ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে ইউটিউবের মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম করা সম্ভব। ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার পর যদি আপনি ১, ০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪, ০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম পেয়ে যান, তবে আপনি অ্যাডসেন্স থেকে আয় শুরু করতে পারেন। মোবাইল দিয়ে ভিডিও তৈরি এবং এডিট করা বেশ সহজ, এবং ইউটিউব অ্যাপ ব্যবহার করে সব কিছু পরিচালনা করতে পারবেন।

ঙ. ই-বুক বিক্রি

আপনি যদি লেখালেখি ভালোবাসেন, তবে মোবাইল দিয়ে ই-বুক লিখে তা অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। একবার ই-বুক আপলোড করলে তা থেকে নিয়মিত ইনকাম হতে পারে।

জনপ্রিয় ই-বুক বিক্রির প্ল্যাটফর্ম:

  • Amazon Kindle Direct Publishing (KDP): KDP এর মাধ্যমে আপনি ই-বুক লিখে তা বিক্রি করতে পারবেন।
  • Smashwords: এটি একটি ই-বুক পাবলিশিং প্ল্যাটফর্ম যেখানে আপনার বই বিক্রি করতে পারবেন।

অফিশিয়াল ওয়েবসাইট:

KDP @ KDP
Smashwords @ Smashwords

মোবাইলের মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম বাড়ানোর কৌশল

আপনার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আয় শুরু করার পর কিছু কৌশল প্রয়োগ করে আপনি আপনার ইনকাম আরো বাড়িয়ে তুলতে পারেন। এখানে কিছু কার্যকরী কৌশল দেওয়া হলো:

  1. কনসিস্টেন্সি: যেকোনো ধরনের প্যাসিভ ইনকামের জন্য নিয়মিত কাজ করা জরুরি। যেমন, নিয়মিত ব্লগ টিউন করা, ভিডিও আপলোড করা বা ফটোগ্রাফি করা। কনসিস্টেন্ট থাকলে আয়ের পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।
  2. একাধিক আয়ের উৎস তৈরি করা: আপনি একই সময়ে একাধিক প্ল্যাটফর্মে কাজ শুরু করতে পারেন। যেমন, ব্লগিং, ইউটিউবিং, এবং স্টক ফটো বিক্রি করতে পারেন। এর ফলে আপনার আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
  3. মার্কেটিং কৌশল: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আপনার কন্টেন্ট, ভিডিও বা প্রোডাক্ট প্রচার করুন। আপনার ব্লগ বা ইউটিউব ভিডিওগুলো শেয়ার করুন এবং আরো ভিজিটর বা দর্শক আকর্ষণ করুন।
  4. স্কিল উন্নয়ন করা: প্যাসিভ ইনকাম বাড়ানোর জন্য নিজের স্কিল উন্নয়ন করা জরুরি। যেমন, ভিডিও এডিটিং, ফটোশপ, বা ব্লগিংয়ের জন্য এসইও শেখা। নতুন নতুন স্কিল আয়ত্ত করলে আপনি আরও প্রোফেশনাল কন্টেন্ট তৈরি করতে পারবেন, যা আয়ের পরিমাণ বাড়াবে।

শেষ কথা

মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম শুরু করা সহজ এবং আপনি একবার কাজ শুরু করলে তা থেকে দীর্ঘমেয়াদে আয় করতে পারবেন। আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ইউটিউব, ব্লগিং বা ফটো বিক্রির মাধ্যমে মোবাইল থেকে আয় শুরু করতে পারেন। নিয়মিত কাজ এবং ধৈর্যের মাধ্যমে আপনার প্যাসিভ ইনকাম দিন দিন বাড়তে থাকবে।

Level 3

আমি মো সানজিদ। শিক্ষার্থী, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 15 টি টিউন ও 19 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস