কম্পিউটার চালনায় দক্ষ হয়ে ওঠা বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই সাধারণ একটি স্কিল। অনেক সময় এটাকে কোনো স্কিল হিসেবে ধরাই হয় না। কিন্তু তবুও আমরা বর্তমান জেনারেশন এর বেশিরভাগ ছেলে মেয়েরাই কম্পিউটার ব্যবহারের বেসিক নিয়মটাই জানি না। তাইতো বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা গুলোর শেষে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অসংখ্য শিক্ষার্থীর ভীড় দেখা যায়। পরিক্ষার পরের ফ্রি সময়টুকু কাজে লাগিয়ে তারা কম্পিউটার পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করতে চায়।
কিন্তু ট্রেনিং সেন্টার থেকে কম্পিউটার শিখে তা ব্যবহারিক জীবনে কাজে লাগানো আর হয়ে ওঠে না। তাই কিছুদিন গেলেই পুরো স্কিল আমরা দিনে দিনে ভুলতে বসি। ফলে প্রফেশনাল জীবনে এসে আমরা আর এটিকে খুব বেশি কাজে লাগাতে পারি না। তার ওপরে কম্পিউটার শেখা নিয়ে আমাদের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে, ভুল পদ্ধতি রয়েছে এবং গ্যাপ রয়েছে। এই সমস্যা গুলো থেকে বেড়িয়ে এসে আমরা কম্পিউটার শিখলে তা একটি দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল বয়ে আনতে পারবে।
তাই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেয়ার আগে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করতে হবে এবং কিছুটা সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। চলুন এমন ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
বেশিরভাগ মানুষ কম্পিউটার স্কিল দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখতে পারে না কারণ তার নিজের একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার নেই। আমরা ট্রেইনিং সেন্টারে যাই এবং সেখানকার কম্পিউটার ব্যবহার করে কয়েকদিনে বা কয়েক মাসে কাজ শিখে ফেলি। কিন্তু নিজের কম্পিউটার না থাকায় এই কাজগুলো আমরা বারবার অনুশীলন করতে পারি না। ফলে একটা সময়ে এসে কম্পিউটার এর বেশিরভাগ প্রোগ্রাম আমরা ভুলে যাই। সুতরাং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার আগে আপনার নিজের একটা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ সংগ্রহ করা চাই।
প্রাথমিক অবস্থায় যেহেতু আপনি খুব ভাড়ি কোনো কাজ করবেন না তাই আপনি যে কোনো সাধারণ মানের একটি কম্পিউটার দিয়েই কাজ শুরু করতে পারেন৷ বেসিক বিষয়গুলো প্রাকটিস করার জন্য খুবই কম মূল্যে সেকেন্ড হ্যান্ড কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কিনে নিতে পারেন৷ যখন আপনি ট্রেনিং সেন্টার থেকে একটা কাজ শিখে এসে বাড়িতে বসে সেটা আরও কয়েকবার চর্চা করবেন তখন বিষয়টি ভালোভাবে আপনার মস্তিষ্কে সেট হয়ে যাবে। ফলে এই স্কিল গুলো ভুলে যাওয়ার কোনো চান্স থাকবে না। পাশাপাশি এই স্কিল গুলো কাজে লাগিয়ে দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজ আপনি সহজেই করতে পারবেন।
বেশিরভাগ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অর্ধেক ক্লাস ফুরিয়ে যায় কম্পিউটার অন অফ করা শেখাতে শেখাতেই৷ কিন্তু বেসিক কম্পিউটার স্কিল এর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট হলো টাইপিং। আপনি যতো দ্রুত ও নিখুত ভাবে টাইপিং করতে পারবেন, ধরে নিবেন আপনার কম্পিউটার স্কিল ততোটাই স্ট্রং। তবে মনে রাখবেন আপনাকে কেউ হাতে ধরে টাইপিং শিখিয়ে দেবে না। টাইপিং স্কিল অর্জন করতে হলে আপনার নিজেকেই অনেক বেশি চেষ্টা করতে হবে। ঘড়ির টাইম ধরে ধরে প্রতিদিন প্রাকটিস করতে হবে।
একটা সময়ে এসে দেখবেন টাইপিং এর সময় আপনি কি বোর্ডের দিকে না তাকিয়েও সমান তালে টাইপ করতে পারছেন। ঠিক তখন বুঝে নিবেন আপনি শতভাগ টাইপিং দক্ষতা অর্জন করে নিয়েছেন। চাকরির ক্ষেত্রে যে সকল প্রতিষ্ঠান একদম বেসিক লেভেলের কম্পিউটার স্কিল চায় তারা মূলত চাকরি প্রার্থীর টাইপিং স্পিডকে বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখে। তবে ডিজিটাল সেক্টরে টাইপিং আপাতদৃষ্টিতে বিশেষ কোনো গুন না, কিন্তু এই একটিমাত্র দক্ষতার অভাবে আপনি হয়তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্কিল শিখতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হবেন।
আপনি একটা বিষয় চিন্তা করে দেখেন তো, একটা সময় আপনি মোবাইল এর কিছুই বুঝতেন না। এখন হয়তো অনেক অপশন নিজে নিজেই পরিচালনা করতে পারেন। হয়তো খুব ভালোভাবেই মোবাইল এর খুটিনাটি সকল কাজ আপনি করতে পারেন। এই কাজগুলো শেখার জন্য আপনি কি কোনো ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলেন? না, মূলত মোবাইল ব্যবহার করতে করতেই আমি আপনি আমরা সবাই এটি পরিচালনায় এক্সপার্ট হয়ে উঠেছি। ঠিক একই ভাবে কিন্তু আমরা কম্পিউটার ব্যবহার করাও নিজে নিজে শিখতে পারি, এজন্য আমাদের কোনো ট্রেনিং সেন্টারে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
নিজের একটা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থাকলে এবং এটার পেছনে প্রতিদিন ঘন্টাখানেক সময় দিলে কম্পিউটার এর বেসিক লেভেলের কাজ একা একাই করা যায়। কোথাও কোনো সমস্যায় পড়লে ইউটিউব তো আছেই। বেসিক কম্পিউটার স্কিল এর ওপরে ইউটিউবে হাজার হাজার ফ্রি ভিডিও রয়েছে। কোথাও কোনো অপশনে গিয়ে আটকে পড়লে ইউটিউব সার্চ করলেই সমাধান পেয়ে যাবেন। আর এভাবে ধাক্কা খেতে খেতে শিখলে এই কাজগুলো আপনি আজীবন মনে রাখতে পারবেন।
মনে রাখবেন কম্পিউটার এর বেসিক ফাংশনাল কাজগুলো আপনি এভাবে শিখতে পারবেন। তবে এডভান্স লেভেলের কাজ শিখতে হলে অবশ্যই আপনার একজন দক্ষ ট্রেইনার এর প্রয়োজন হবে।
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স গুলোতে কম্পিউটার এর বিভিন্ন Application Software সম্পর্কে বিস্তারিত ক্লাস থাকলেও হার্ডওয়্যার নিয়ে তেমন কোনো ক্লাস থাকে না। তাই ব্যক্তিগত কাজে বা প্রফেশনাল সেক্টরের কাজ করতে করতে কম্পিউটারে সামান্য কোনো সমস্যা দেখা দিলেও তা নিয়ে দৌড়াতে হয় কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এক্সপার্ট এর কাছে। কিন্তু বেসিক কিছু ধারনা থাকলেই হার্ডওয়্যার এর সাধারণ সমস্যাগুলো নিজেই সমাধান করা যায়। তাই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হওয়ার আগে জেনে নিন যে হার্ডওয়্যার সম্পর্কে পর্যাপ্ত ক্লাস কোর্সের অন্তর্ভুক্ত আছে কিনা।
বিশেষ করে কম্পিউটার সেটআপ, বিভিন্ন পোর্ট সংযুক্ত করা, হার্ডওয়্যার এর বেসিক যত্ন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা তো অবশ্যই থাকতে হবে। পাশাপাশি কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এর প্রতিটি পার্ট এর সঠিক নাম ও এর কাজ সম্পর্কেও বিস্তারিত ধারনা রাখা বাঞ্ছনীয়। সুতরাং কম্পিউটার পরিচালনায় দক্ষ হওয়ার পাশাপাশি আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোতেও সমান ভাবে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শিখতে হবে। যাতে একটি কোর্সের মাধ্যমেই আপনি পূর্নাঙ্গ ভাবে সব শিখে নিতে পারেন।
আমরা সবাই জানি কম্পিউটার এর ভাষা ইংরেজি। এখানে প্রতিটি নির্দেশনা দেয়া হয় ইংরেজি ভাষাতেই। কোন কাজ এর পরে কোন কাজ করতে হবে তা কিন্তু কম্পিউটার নিজেই ধারাবাহিক ভাবে নির্দেশনা দিতে থাকে। তাই ইংরেজি পড়ে এর সঠিক অর্থ বুঝতে না পাড়লে কোনো নির্দেশনা অনুযায়ী আপনি ঠিকমতো কাজ করতে পারবেন না। সুতরাং কম্পিউটার এর প্রতিটি ফাংশনাল বিষয়বস্তু ভালোভাবে বুঝতে হলে ইংরেজি ভোকাবুলারি শেখার বিকল্প নেই।
তবে কম্পিউটারে ব্যবহৃত ইংরেজি ভাষার শব্দগুলো কিছুটা ব্যতিক্রমী বলা চলে। তাই কম্পিউটার শিখন কালীন সময়ে অপরিচিত শব্দগুলো নোট করে ঐ শব্দ গুলোর অর্থ জেনে শব্দগুলোর সাথে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করবেন। দেখা যায় বেশিরভাগ অপশন এর কাজ আপনার ট্রেইনার শিখিয়ে দিল, ফলে ঐ অপশনের নির্দেশনা না পড়লেও বুঝতে পারবেন যে এবার আপনাকে কী করতে হবে। কিন্তু প্রশিক্ষণ শেষে যখন নিজে নিজে কম্পিউটারে কাজ শুরু করবেন তখন নতুন নতুন অনেক অপশন ও ফাংশন আপনার সামনে চলে আসবে। আর এই অপরিচিত অপশনে কাজ করার সময় অবশ্যই আপনাকে ইংরেজিতে নির্দেশনা পড়ে সেই অনুযায়ী পরবর্তী স্টেপ নিতে হবে।
সুতরাং ইংরেজি ছাড়া কম্পিউটার স্কিল এর কোনো পার্ট-ই আপনি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারবেন না। তাই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহনের পাশাপাশি ইংরেজি ভোকাবুলারি স্ট্রং করতে থাকুন।
বাংলা ভাষায় সব থেকে বৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির Social Network টেকটিউনস। কম্পিউটার এর খুঁটিনাটি যাবতীয় বিষয়বস্তু এই সাইট থেকে শিখতে পারবেন। নিয়মিত টেকটিউনসে যুক্ত থাকলে কম্পিউটার এর বেসিক স্কিল থেকে শুরু করে বিশেষ বিশেষ স্কিল শিখতে পারবেন একদম বিনামূল্যে। পাশাপাশি কম্পিউটার এর মাধ্যমে অনলাইন সেক্টরে কীভাবে আয় করবেন তারও উপায় খুঁজে পাবেন এখানে। টেকটিউনসে প্রতিনিয়ত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন টিউনার কম্পিউটার স্কিল বিষয়ক শিক্ষামূলক কনটেন্ট প্রকাশ করে।
তাই শুধু কম্পিউটার স্কিল না বরং ডিজিটাল সেক্টরের যে কোনো স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর জন্য টেকটিউনসে নিয়মিত সময় দিলে লাভ ছাড়া লস হবে না। কম্পিউটার স্কিল শেখাটা আসলে চলমান একটি প্রক্রিয়া। দক্ষতার যেন শেষ নেই। একটা স্কিল শিখতে শিখতেই দেখবেন নতুন আরেকটা স্কিল সামনে চলে আসবে। এভাবে এই সেক্টরের পুরোপুরি ভাবে দক্ষ হয়ে ওঠার জন্য সব ধরনের স্কিল শিখতে পারবেন টেকটিউনস থেকে।
তাই নিয়মিত টেকটিউনসে সময় দিন ও নিজের কম্পিউটার শেখা অব্যাহত রাখুন।
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেয়ার আগে উপরোক্ত ৫ টি টিপস মাথায় রাখলে আপনার সময়, শ্রম ও অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে। নয়তো আপনার কম্পিউটার স্কিল অকেজো হয়ে পড়ে থাকতে থাকতে তা একসময় বিলীন হয়ে যাবে। তাই তথাকথিত কম্পিউটার শেখার পদ্ধতি থেকে বেড়িয়ে এসে চলুন একটু স্মার্ট ভাবে দির্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা যাক।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।