বর্তমানে এমন একটা ট্রেন্ড বেরিয়েছে যে মোবাইল বা যে কোনো ডিজিটাল স্ক্রিন ছাড়া বাচ্চাদের শান্ত রাখা যায় না৷ খাওয়ার সময় মোবাইল, পড়ার সময় মোবাইল এমনকি ঘুমাতে যাওয়ার সময়ও বাচ্চার হাতে মোবাইল। আর সেই সাথে সাথে শিশুদের মোবাইল আসক্তির কুফল দিন দিন বেড়েই চলেছে। মোবাইল বা যে কোনো ডিজিটাল ডিভাইস মানবজীবনে বিজ্ঞানের আশীর্বাদস্বরূপ। কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার না করতে পারলে তা আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে বাধাগ্রস্ত করবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু বর্তমানে বয়োজ্যেষ্ঠ দের তুলনায় ছোটদের হাতেই সবথেকে বেশি ডিজিটাল ডিভাইস দেখতে পাওয়া যায়। তারা এখন সারাদিন ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকতে চায়। নতুন নতুন গেইম, ভিডিও তাদের কাছে পৃথিবীর অন্য সব কিছুর থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। এভাবে চলতে থাকলে গোটা একটা জেনারেশন হুমকির মুখে পড়ে যাবে। তাই এই মোবাইল আসক্তি থেকে যেভাবেই হোক বাচ্চাদের বের করে নিয়ে আসতে হবে। কীভাবে বাচ্চাদেরকে মোবাইল আসক্তি থেকে বের করে আনা যাবে তাই নিয়ে ভাবনার শেষ নেই বাবা মায়ের।
আজকে আপনাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ১০ টি টিপস শেয়ার করবো। এই টিপস গুলো ফলো করে আপনারা আপনাদের বাচ্চাদেরকে মোবাইল বা যে কোনো ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে রাখতে পারবেন৷ তাহলে চলুন মোবাইল আসক্তি থেকে শিশুদের বের করে আনার ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
বাচ্চাদের শাসন করার আগে আপনার নিজেকে শাসন করা জরুরি। কেননা আপনি যা করবেন ঠিক তাই অনুকরণ করবে আপনার বাচ্চা। আপনি যদি সারাদিন মোবাইলে মুখ গুঁজে বসে থাকেন, রিলস দেখতে থাকেন, গেমস খেলতে থাকেন তাহলে আপনার বাচ্চাও তো ঐ কাজগুলোই করতে চাইবে। তারা এই ডিভাইস এর প্রতি একটা আলাদা আকর্ষণ অনুভব করবে। এরপরে সারাক্ষণ মোবাইল হাতে পাওয়ার জন্য জিদ করতে থাকবে।
একসময় বাধ্য হয়ে অনেক বাবা মা সন্তানের জন্যও আলাদা একটি মোবাইল বা ট্যাব কিনে দেয়। যাতে করে বাচ্চার জন্য তার মোবাইল ব্যবহারে কোনো ব্যাঘাত না ঘটতে পারে। বাচ্চাদের সামনে কখনোই প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ব্যবহার করবেন না। আপনি মোবাইল না ব্যবহার করলে আপনার বাচ্চাও মোবাইল ধরার সাহস পাবে না। তাই আগে নিজেকে পরিবর্তন করুন আপনার বাচ্চাও অটোমেটিক ভাবে পরিবর্তন হয়ে যাবে।
বর্তমানে বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তির বড় কারন হলো তাদের একাকিত্ব। যান্ত্রিকতার শহরে বাবা, মা, ভাই, বোন সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর পরিবারের ছোট বাচ্চাটি ব্যস্ত হয়ে পড়ে মোবাইল বা কম্পিউটার নিয়ে। কিন্তু পরিবারের প্রতিটি সদস্য যদি তাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারে তাহলে ঐ বাচ্চা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের সময়ই তো পাবে না। এই সাধারণ বিষয়টা চিন্তা না করে অনেক বাবা মা আবার মোবাইল ঘেটে ঘেটে অস্থির হয়ে পড়েন সন্তানকে এই পরিস্থিতি থেকে ফিরিয়ে আনার উপায় খুঁজতে খুঁজতে।
অনেকে তো আবার কোয়ালিটি টাইম কী জিনিস তাই বোঝেন না। আপনি সন্তানকে খাওয়াচ্ছেন বা তার কোনো কাজ করে দিচ্ছেন, তার মানে এই না যে আপনি তার সাথে কোয়ালিটি টাইম কাটাচ্ছেন। আপনি এবং আপনার পরিবার একসাথে বসে গল্প করছেন, একটু আনন্দ করছেন বা হাসি ঠাট্টা করছেন এটা হলো কোয়ালিটি টাইম। বিশেষ করে রাতে খাবার খেয়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পরিবারের সবাই মিলে এমন একটি বৈঠক করতে পারেন। এই সময়টুকুতে অবশ্যই কারো সামনে মোবাইল বা ডিজিটাল ডিভাইস রাখা যাবে না।
আমরা এখন মর্ডান হয়েছি। এতোটাই মর্ডান হয়েছি যে আমাদের বাচ্চাদের শরীরে একটু ধুলো লাগলেও সমস্যা। একটু বাইরে হুটোপুটি করলে সমস্যা। একটু মাঠে গড়াগড়ি করলে সমস্যা। কিন্তু এটা যে একটা বাচ্চার শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না।
বাচ্চাদের সারাক্ষণ গৃহবন্দী করে রাখা যাবে না। একটা বাচ্চা সারাদিন ঘরে বন্দী হয়ে থাকলে করবে টা কী? হয় মোবাইল দেখবে, নয় টিভি দেখবে নয়তো কম্পিউটার খুলে বসে পড়বে। এভাবেই তারা এক সময় ডিজিটাল ডিভাইস এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে। তাই বাচ্চাদের বাইরে খেলাধুলার সুযোগ দিতে হবে।
প্রতিদিন কমপক্ষে দুই ঘন্টা সময় বাচ্চাদের বাইরে কাটানোর সুযোগ করে দিন। তাছাড়া মাঝে মাঝে বাচ্চাকে নিয়ে নিজেরাই একটা ট্যুর দিয়ে আসুন। লং ট্যুর দিতে না পারলে আসেপাশের ছোটখাটো কোনো পার্ক থেকে নিয়ে ঘুরে আসুন৷ এতে করে শিশুরা জানতে পারবে মোবাইল এর জগৎ ছাড়াও আরও সুন্দর একটি দুনিয়া আছে। এই বাস্তবতাটা এখন অনেক শিশুর শৈশব থেকে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে।
বাচ্চাদের স্ক্রিন টাইম কম দিন আর আউট বই পড়ার জন্য বেশি বেশি উৎসাহিত করুন। আমরা দুই বছর বা তার থেকে ছোট বাচ্চার হাতেও মোবাইল তুলে দেয়ার আগে দুইবার ভাবি না। আর বাচ্চারাও খুব ভালোভাবে মোবাইল কী জিনিস তা বুঝতে পারে। কিন্তু বই দেয়ার সময় ভাবি, এতো ছোট বাচ্চা বইয়ের কি বুঝবে। আসলে ছোট থেকে বাচ্চাদের যা দেয়া হয়, যা শেখানো হয় তারা সেই বিষয়ের সাথেই পরিচিত হতে থাকে।
ছোটবেলা থেকেই আপনার সন্তানের জন্য ছবি যুক্ত আকর্ষণীয় বই কিনতে থাকুন। একেক সময় একেক রকমের বই উপহার দিন। নিজেই বইগুলো উল্টেপাল্টে পড়ে শোনান, ছবি দেখান। এসব বিষয় বাচ্চারা খুবই উপভোগ করে। আর বাচ্চা যখন বই পড়তে পারবে তখন আরও বেশি বেশি বই উপহার দিন।
এতে করে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ হবে। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়ে গেলে বাচ্চার নিজে থেকেই ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নিজেদের দূরে রাখবে। ফলে আপনাকে আলাদা করে আর কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে না।
বাচ্চাদের আপনি যতো বেশি অফলাইন কাজে যুক্ত রাখতে পারবেন তারা ততোই মোবাইল কিংবা অনলাইন জগৎ সম্পর্কে কম জানবে। তাই বাচ্চাদের বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিন। তারা অবসরে করতে পারবে এমন সব কাজ খুঁজে খুঁজে তাদের ধরিয়ে দিন। যেমন: ড্রয়িং, কাগজ কেটে ফুল বানানো, ঘর সাজানো, বাড়ির আঙিনা গোছানো, গাছের পরিচর্যা সহ যাবতীয় যে কোনো আকর্ষণীয় কাজ।
বাচ্চারা বাস্তব জীবনে ব্যস্ত থাকলে মোবাইল বা ডিজিটাল ডিভাইস এর কথা মনেই করবে না। মোটকথা ওদের আপনি যতো ব্যস্ত রাখবেন ওরা ততোই কর্মঠ ও ক্রিয়েটিভ হয়ে উঠবে। আর যতো একাকিত্ব অনুভব করবে ততোই মোবাইল এর পেছনো বেকার সময় নষ্ট করবে।
বড় ছোট কারোরই ইন্টারনেট ছাড়া মোবাইল ব্যবহার করতে মন চায় না। ইন্টারনেট না থাকলে মোবাইলটা পুরোপুরি অর্থহীন মনে হয়। আর ছোট ছোট বাচ্চারাও এখন ইন্টারনেট এর মজা বুঝে গিয়েছে। ইন্টারনেট না থাকলে তারা ঐ মোবাইল বেশিরভাগ সময়ই ব্যবহার করতে চায় না। তাই বাচ্চার স্বার্থে আপনি আপনার মোবাইল এর ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিন।
আপনি যদি ওয়াইফাই ব্যবহার করে থাকেন তাহলে ওয়াইফাই এর জন্য এক্সট্রা লক ব্যবহার করুন এবং বাচ্চাকে সেটা জানাবেন না। আর যদি ডাটা প্যাক ব্যবহার করে থাকেন তাহলে প্রয়েজন ছাড়া ডাটা প্যাক ক্রয় করা থেকে বিরত থাকুন। অথবা সিম লক করে রাখুন। মোটকথা আপনার বাচ্চা যাতে কোনো ভাবেই মোবাইল এর ইন্টারনেট কানেক্ট করতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখুন। কেননা ইন্টারনেট ছাড়া মোবাইল বাচ্চাদেরকে তুলনামূলক কম আকর্ষণ করে।
বাচ্চারা মূলত তার বাবা মা এর মোবাইল ব্যবহার করে থাকে। তাই আপনার মোবাইল টি এমন ভাবে সেটআপ করে রাখুন যেখানে বাচ্চাদের জন্য আকর্ষণীয় কিছু না থাকে। যেমন বাচ্চাদের পছন্দের গেমস কখনও মোবাইলে ডাউনলোড করে রাখবেন না। ইউটিউব কিডস বা এই জাতীয় কোনো Apps মোবাইলে ডাউনলোড করে রাখবেন না। মোটকথা ওরা যেন মোবাইল ধরলেও আর্কষণ অনুভব না করে তেমন ভাবে মোবাইলটি সেটআপ করে রাখবেন।
অনেকে আবার বাচ্চাদের পড়াশোনার হাতেখড়ি শুরু করেন মোবাইল এর মাধ্যমে। এরপর ছেলেমেয়েরা আর খাতা পেন্সিল দিয়ে লিখতে চায় না। তাই বাচ্চার পড়াশোনার ক্ষেত্রে ওদের মোবাইল দিয়ে আকর্ষণ করা থেকে বিরত রাখুন। মূলত মোবাইল জিনিসটা যে খুব একটা আকর্ষণীয় বস্তু এটা বাচ্চাদের খুব সহজেই উপলব্ধি করাবেন না।
বাচ্চাকে প্রায়ই আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু কিছু আকর্ষনীয় খেলনা কিনে দিতে পারেন। এমন ধরনের খেলনা কিনবেন যেখানে মাল্টি টাস্ক থাকবে৷ ফলে আপনার শিশু ঐ খেলনার প্রতি খুব সহজেই আকর্ষণ হারাবে না। এভাবে বাচ্চাকে মোবাইল দিয়ে ব্যস্ত না রেখে খেলনা দিয়ে ব্যস্ত রাখুন।
খেলনা গুলো এমন হওয়া চাই যাতে শিশুর ব্রেইন এর বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে। যেমন: পাজল, গেজেট মেকিং, সাইন্স বক্স ইত্যাদি। এসকল খেলনা যেমন অনেক লম্বা সময় আপনার শিশুকে ব্যস্ত রাখবে তেমনই শিশুর ব্রেইন এর বিকাশে সহায়তা করবে।
বেশিরভাগ বাবা মা বাচ্চাদের কোনো কাজ করানোর আগে শর্ত হিসেবে মোবাইল অফার করে। যেমন খেতে না চাইলে মোবাইল সামনে দিয়ে খাওয়ানো হয়। পড়তে না বসলে পড়ার শেষে মোবাইল দেওয়ার শর্ত। অর্থাৎ কোনো কাজ না করলেই শর্ত হলো মোবাইল দিতে হবে।
এভাবে শর্তসাপেক্ষে কাজ করাতে করাতে একটা সময় দেখবেন বাচ্চাদের মোবাইলের নেশা হয়ে যাবে। আর শিশুর বিকাশে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের প্রভাব যে কতোটা ভয়ানক তা তো আমরা সকলেই জানি। তাই বাচ্চা কোনো কাজ না করতে চাইলে সাথে সাথে তাকে মোবাইল অফার করা থেকে বিরত থাকুন। নরমাল ভাবে সবকিছু করার অভ্যাস করুন, দেখবেন সবকিছুই স্বাভাবিক ভাবে আপনার শিশু মেনে নেবে।
বেশিরভাগ মায়েরা তাদের কাজের সময়ে বাচ্চাকে মোবাইল দিয়ে ব্যস্ত রাখে। ফলে সে খুব দ্রুত এবং অনায়াসে বাড়ির সকল কাজ শেষ করতে পারে। কিন্তু একটু সুবিধা নিতে গিয়ে বাচ্চার যে কতোটা ক্ষতি করছেন তা কি একবার ভেবে দেখেছেন? কাজের সময় মোবাইল দিতে দিতে আপনার বাচ্চার মোবাইলের প্রতি নেশা হয়ে যাবে। তাই কাজের সময় শিশুকে মোবাইল না দিয়ে বরং আপনার বাচ্চাকে আপনার কাজে সাহায্য করতে উৎসাহিত করুন।
হয়তো আপনার কাজ করতে একটু অসুবিধা হবে। কিন্তু এই স্টেপ টি আপনার শিশুর সামাজিক গুণাবলি অর্জনে অনেক সহায়তা করবে৷ পাশাপাশি আপনার সন্তান মোবাইল থেকেও দূরে থাকবে৷ ঘর পরিষ্কার করার সময় বাচ্চাকেও সাথে নিন। বাগানে পানি দেয়ার সময়, গাড়ি পরিষ্কার করার সময়, কাপর শুকাতে গেলে বাচ্চাকে সাথে নিয়ে কাজ করুন। বাচ্চারা এই বিষয়গুলো মোবাইল স্ক্রিনের থেকেও বেশি উপভোগ করবে।
আশাকরি আপনি আপনার বাচ্চাকে মোবাইল থেকে দূরে রাখার সঠিক উপায় ইতোমধ্যে খুঁজে পেয়েছেন।
শিশুকে কীভাবে মোবাইল থেকে দূরে রাখবেন তা তো জানতে পারলেন। চলুন এবার জেনে নেই ঠিক কী কী কারনে আপনার বাচ্চাকে মোবাইল থেকে দূরে রাখা দরকার। অর্থাৎ আপনার বাচ্চা সারাদিন মোবাইল স্ক্রিনের ওপর মগ্ন হয়ে থাকলে তার বিকাশে কী কী প্রভাব পড়তে পারে তা জেনে নিন।
একটা বাচ্চা সারাদিন ঘরের কোনায় বসে মোবাইল দেখছে, কম্পিউটারে গেমস খেলছে কিংবা অন্য কোনো কাজ করছে ডিজিটাল ডিভাইস এর মাধ্যমে। এতে করে শিশুটির কোনো শারিরীক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে না। শিশুদের বাড়ন্ত বয়সে তারা দৌড়ঝাঁপ করবে, হুটোপুটি করবে ফলে তাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে। শরীরের ওপর প্রেশার তৈরি হলে শরীরে মাংসপেশি ও হাড়ের গঠন সুগঠিত হতে থাকবে। কিন্তু বর্তমানে শিশুরা এই ধরনের একটিভিটি থেকে নিজেকে দূরে রাখছে।
দিনরাত শরীরের কোনো ব্যায়াম হচ্ছে না বিধায় শরীর মুটিয়ে যাচ্ছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। একটা বাচ্চা যতো বেশি বাইরের পরিবেশের সাথে মিশবে, সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকবে ততোই তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। অন্যদিকে মোবাইল আসক্তির ফলে বাচ্চারা ঘর থেকে বের হতে চায় না, শারিরীক কসরত করতে চায় না ফলে তাই তাদের শরীরের সুস্থতার হার ধীরে ধীরে কমতে শুরু করছে। এতে পুরো একটা জেনারেশন দুর্বলতার হুমকির মুখে রয়েছে।
ইদানিং বেশিরভাগ ছোট বাচ্চার চোখেই দেখা যায় মোটা মোটা ফ্রেমের চশমা। খোঁজ নিয়ে দেখবেন এদের বেশিরভাগই মোবাইলে আসক্ত। সারাদিন রাত ডিজিটাল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে এর ব্লু রশ্নি চোখের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। ফলে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবারই চোখের সমস্যা দেখা দেয়। চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ জ্বালাপোড়া সহ বিভিন্ন ধরনের চোখের সমস্যা দেখা দেয়।
তাই আপনার সন্তানকে শিশু বয়সেই শারিরীক ভাবে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে ঠেলে দিতে না চাইলে তাদেরকে মোবাইল আসক্তি থেকে বের করে নিয়ে আসুন।
অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তির কারণে শিশুদের শারিরীক বিকাশ এর থেকেও মানসিক বিকাশ মারাত্মক ভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এই ধরনের বাচ্চাগুলো অনেকটা মানসিক প্রতিবন্ধকতার ভেতরে চলে যায়। বাস্তব জীবনকে তাদের কাছে অবাস্তব মনে হতে থাকে। আর ভার্চুয়াল জগৎকে পৃথিবীর একমাত্র সত্যি বলে মনে হয়। এমতাবস্থায় বাচ্চাটি দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড সঠিক ভাবে করতে চায় না। নিজের বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে কোনো কাজ করার সক্ষমতা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে।
জীবনে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে এরা খুব সহজে এই পরিস্থিতি কাঠিয়ে উঠতে পারবে না। আর এই ধরনের মোবাইল আসক্ত শিশু বেশিরভাগ সময়ই অসামাজিক আচরণ করতে থাকে। তারা মানুষের সাথে মিশতে পারে না, এমনকি মিশতে চায়ও না। সারাদিন নিজের মতো করে থাকতে পছন্দ করে। তাদের মস্তিষ্ক সব সময় অলস ভাবে রাখতে পছন্দ করে।
যে কোনো সামাজিক বা সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণ করতে এই শিশুদের সবথেকে বেশি অনীহা দেখা দেয়। তারা সবকিছুকে ভার্চুয়াল জগতের মতো সহজভাবে পেতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা যে কতোটা কঠিন তা এই বাচ্চারা কখনোই বুঝে উঠতে পারে না। এমনও হয়েছে যে, কোনো বাচ্চা সারাদিন বিদেশি কার্টুন দেখতে দেখতে বাংলা ভাষায় কথা বলাই ছেড়ে দিয়েছে। এভাবেই তারা ধীরে ধীরে মারাত্মক ভাবে মানসিক প্রতিবন্ধকতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনার বাচ্চার মানসিক স্বাস্থ্য সঠিক ভাবে গড়ে তুলতে বাচ্চাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে রাখা কতোটা জরুরি।
আশাকরি আজকের পর থেকে শিশুকে মোবাইল দেয়ার আগে অন্তত কয়েকবার ভাববেন। আপনার সন্তানের ভবিষ্যতের ওপর যেন প্রযুক্তির কোনো খারাপ প্রভাব না পড়ে এটা পুরোপুরি আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে। হ্যাঁ, দিনের যে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিছুক্ষণ মোবাইল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এটা যেন মাত্রা অতিক্রম করে না ফেলে সেদিকে মনোযোগী হওয়ার বিকল্প নেই।
আপনার সন্তানের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করছি। প্রযুক্তির ছোয়ায় তারা হয়ে উঠুক আরও স্মার্ট। কিন্তু প্রযুক্তির দ্বারা তারা যেন নিয়ন্ত্রিত না হয় এই কামনা করছি। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।