কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করে কাজ বন্ধ হয়ে গেলে বা "হ্যাং" হয়ে গেলে আমরা অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ি। বিশেষ করে যখন জরুরি কোনো কাজ থাকে তখন এই সমস্যাটি আরও বেশি বিরক্তিকর মনে হয়।
উইন্ডোজ কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার সমস্যা কি শুধুই আপনার? না! তা কিন্ত না। এই সমস্যাই মোটামুটি আমরা সবাই পড়েছি। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই! কারণ এই সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু সহজ উপায় আছে।
এই টিউনে আমি আলোচনা করবো কিভাবে আপনি আপনার উইন্ডোজ কম্পিউটার হ্যাং করার সমস্যা সমাধান করতে পারেন। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার আগেই বিস্তারিত আলোচনা শুরু করি।
কাজের মধ্যে হঠাৎ করেই কম্পিউটার থেমে যাওয়া বা হ্যাং হয়ে যাওয়া এমন বিরক্তিকর অবস্তাই পড়েনি এমন মানুষ খুব কমই আছেন। কিন্তু কী কারণে এই সমস্যা হয়, তা কি আপনি জানেন? আসুন, কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার কয়েকটি সাধারণ কারণ জেনে নেওয়া যাক।
১. RAM ডিসেবিলিটি: কম্পিউটারের মাল্টিটাস্কিং করার ক্ষমতা নির্ভর করে এর RAM-এর পরিমাণের উপর। যদি আপনার RAM কম থাকে, তাহলে একসাথে অনেকগুলো প্রোগ্রাম চালানোর সময় কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যেতে পারে।
2. হার্ডড্রাইভ এর সমস্যা: কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভ যদি ফাইল, সফটওয়্যার ইত্যাদি দিয়ে পূর্ণ হয়ে যায়, তাহলেও হ্যাং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. অতিরিক্ত গরম: কম্পিউটারের ভেতরে যদি অতিরিক্ত তাপমাত্রা তৈরি হয়, তাহলে প্রসেসরসহ সিস্টেম ইউনিটের বিভিন্ন কম্পোনেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, ফলে হ্যাং হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. ভাইরাস বা মালওয়্যার আক্রমণ: কম্পিউটারে ভাইরাস বা মালওয়্যার ঢুকে গেলেও হ্যাং হওয়ার সমস্যা হতে পারে।
৫. সফ্টওয়্যার সমস্যা: পুরনো বা উন আপডেটেড সফ্টওয়্যার ব্যবহার করলেও কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে।
উপরে উল্লিখিত কারণগুলোর যেকোনো একটির কারণে উইন্ডোজ কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে। এছাড়াও, কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সমস্যা, সফ্টওয়্যার ইনকম্প্যাটিবিলিটি ইত্যাদিও হ্যাং হওয়ার অন্যতম কারণ।
উইন্ডোজ কম্পিউটার হ্যাং হলে প্রথমেই মউস ক্লিক করা বা কিবোর্ডের যেকোনো কী চাপ দিয়ে দেখুন। যদি কোনো সাড়া না পান তাহলে টাস্ক ম্যানেজার খুলুন (টাস্ক ম্যানেজার খুলতে কন্ট্রোল + Alt + Delete টিপুন)। এখানে অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম চিহ্নিত করে এন্ড টাস্ক বাটনে ক্লিক করুন। এতে হ্যাং হওয়ার সমস্যা সমাধান হতে পারে।
এই পদ্ধতিতে যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে সিস্টেম ইউনিটের রিস্টার্ট বাটন থেকে কম্পিউটার রিস্টার্ট করুন। এতে চলমান সকল প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে যাবে এবং সিস্টেম ফ্রেশ হতে শুরু করবে। রিস্টার্টেও যদি ঠিক না হয় তাহলে সেফ মোড-এ কম্পিউটার চালু করুন। এই মোডে কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় সফ্টওয়্যারই লোড হয়।
এতগুলো কাজ করার পরেও যদি এখনও সমস্যা সমাধান না হয়, তাহলে অবস্থা ক্রিটিকাল। এ অবস্থাই অতিরিক্ত স্টোরেজ ব্যবহার পরীক্ষা করুন। ডিস্ক ক্লিনআপ টুল ব্যবহার করে অপ্রয়োজনীয় ফাইল মুছে ফেলুন। ডিফ্র্যাগমেন্টেশন চালিয়ে হার্ডড্রাইভের পারফরম্যান্স ডেভেলপ করুন। এছাড়াও, মেমোরি ডায়াগনস্টিক টুল দিয়ে র্যাম সমস্যা চেক করুন।
মনে রাখবেন, সফ্টওয়্যার সমস্যাও কিন্তু হ্যাং হওয়ার কারণ হতে পারে। অ্যান্টিভাইরাস আপডেট করে সিস্টেম স্ক্যান করুন। অব্যবহৃত সফ্টওয়্যার আনইনস্টল করুন। রিসেন্ট ড্রাইভার আপডেট আছে কিনা পরীক্ষা করুন।
উপরের পদক্ষেপেও ঠিক না হলে ভাই আর কিছু করার নাই। তবে এখন মাইক্রোসফট সাপোর্ট ওয়েবসাইটে আপনার সমস্যাটির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সাহায্য চাইতে পারেন।
হ্যাং হওয়া সমস্যা থেকে বাচতে প্রথমেই আপনার কম্পিউটারের চলমান প্রোগ্রামগুলো পর্যবেক্ষণ করুন। কোনো প্রোগ্রাম অতিরিক্ত রিসোর্স (CPU, RAM) ব্যবহার করছে কিনা, তা ভালোভাবে দেখে নিন। Task Manager খুলে Resource Monitor ট্যাবে গিয়ে CPU, Memory, Disk, Network ব্যবহার চেক করুন। সন্দেহজনক কোন প্রোগ্রাম চালু থাকলে তা End Task দিয়ে বন্ধ করে দিন।
এছাড়া হ্যাং হওয়া সমস্যা থেকে বাচতে আপনার কম্পিউটারে পর্যাপ্ত স্টোরেজ আছে কিনা, তাও দেখা দরকার। সাধারণত কম্পিউটারের C ড্রাইভে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা থাকে, তাই C ড্রাইভ-এ পর্যাপ্ত স্পেস আছে কি না তা চেক করুন। ফাইল এক্সপ্লোরার খুলে C ড্রাইভের Properties দেখে নিন। যদি C ড্রাইভের ফাঁকা জায়গা কম হয়, তাহলে অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করুন অথবা বড় ফাইলগুলো অন্য ড্রাইভে সরিয়ে নিন।
কম্পিউটারের অপ্রয়োজনীয় সফ্টওয়্যার আপনার কম্পিউটারকে স্লো করে দেয়। তাই Control Panel থেকে Uninstall a program অপশনে গিয়ে ব্যবহার না করা সমস্থ সফ্টওয়্যারগুলো আনইনস্টল করে দিন।
কম্পিউটারের ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রসেস চলতে থাকলেও কম্পিউটারের পারফরম্যান্স কমে যায়। তাই Settings এ গিয়ে তারপর Privacy এরপর Background apps এ গিয়ে অপ্রয়োজনীয় ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপগুলো বন্ধ করে দিন।
নিয়মিত কম্পিউটার আপডেট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Windows Update চালিয়ে সর্বশেষ আপডেট ইন্সটল করুন। এতে সিস্টেমের পারফরম্যান্স ডেভেলপ হয় এবং নিরাপত্তাও বাড়ে। এছাড়া কম্পিউটারে ভাইরাস স্ক্যানার চালিয়ে কম্পিউটারে কোনো ভাইরাস আছে কিনা, তা পরীক্ষা করুন।
এছাড়াও, হার্ডওয়্যার সমস্যাও হ্যাং হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই কম্পিউটারের ফ্যান ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, তা পরীক্ষা করুন। সিস্টেম ইউনিটের মধ্যকার ধুলো পরিষ্কার করা এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
এই সহজ পদক্ষেপগুলো কাজে লাগিয়ে আপনি উইন্ডোজ কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। মনে রাখবেন, কম্পিউটার একটি ইলেকট্রিক ডিভাইস, তাই এর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণই এর হ্যাং হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে।
উইন্ডোজ কম্পিউটার হ্যাং হওয়া একটি অতি সাধারণ সমস্যা। তবে, সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে এই হ্যাং হওয়ার সমস্যা থেকে এড়িয়ে চলা সম্ভব। আপনি আপনার কম্পিউটারের স্বাস্থ্যের প্রতি যত যত্নবান হবেন, ততই আপনি বাধাহীনভাবে হ্যাং হওয়ার সমস্যা ছাড়াই কাজ করতে পারবেন।
আশাকরি এই টিউনের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রিয় উইন্ডোজ কম্পিউটারের হ্যাং হওয়া সমস্যার জন্য মুক্তির পথ খুঁজে পাবেন। আমার জ্ঞানের স্বল্পতার ওপর কাবু রেখে এই টিউনটি আমি এখানেই শেষ করছি। ভুল ত্রুতি হলে হ্মমা করবেন, সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ!
আমি ইমন সিকদার। ১ম বর্ষ, সরকারি দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজ, নবাবগঞ্জ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 মাস 3 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 23 টি টিউন ও 6 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।