প্রযুক্তির অবদানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজই হয়েছে অনেক সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময়। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি কাজেই এখন প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য। এই প্রযুক্তির ছোঁয়া এসে লেগেছে আমাদের দৈনন্দিন কেনাকাটায়-ও। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমরা চাইলেই অনলাইনে অর্ডার করতে পারি এবং ঘরে বসেই সেই পণ্যটি হাতে পেয়ে যাই। কাপড়চোপড় থেকে শুরু করে হোম মেড খাবার সব কিছুই এখন ঘরে বসেই কিনতে পারি।
অনলাইন কেনাকাটার অসংখ্য সুবিধা যেমন আছে ঠিক তেমনই হাজারটা অসুবিধা রয়েছে। কেননা দোকানের মতো কোনো পণ্য হাতে ধরে বা সামনাসামনি দেখে তো আর আমরা কিনতে পারি না। ছবি দেখে সন্তুষ্ট হলেই আমরা সেই পণ্যটি ক্রয় করতে আগ্রহ প্রকাশ করি। আর কিছু কিছু অসাধু অনলাইন ব্যবসায়ী এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাস্টমারকে ঠকানোর চেষ্টা করে। ফলে আমরা আমাদের কাঙ্খিত পণ্যটি হাতে পাই না।
তবে সব অনলাইন ব্যবসায়ী যে এমন লোক ঠকায় তা কিন্তু না। অনলাইনে এমন অসংখ্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ মানের পণ্য সরবরাহ করে। তাই অনলাইনে কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে আমাদের একটু সচেতন হতে হবে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক জানলে আপনি সঠিক বিক্রেতার কাছ থেকে ভালো মানের পণ্যটি সংগ্রহ করতে পারবেন। ফলে কোনো ধরনের ভয় ছাড়াই একদম স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন।
আজকের টিউনে আমি এমন ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস শেয়ার করবো যার মাধ্যমে আপনি নিশ্চিতে অনলাইনে শপিং করতে পারবেন। এই টিপস গুলো ফলো করলে আপনার ঠকে যাওয়ার চান্স কনেক কমে যাবে। তাহলে দেরি না করে চলুন অনলাইনে কেনাকাটার ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
আপনি সোস্যাল মিডিয়া স্ক্রল করতে করতে একটা প্রোডাক্ট দেখলেন যা আপনার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। তখন কী আপনি সাথে সাথে অর্ডার করে দেবেন? এটা কিন্তু হবে একদমই বোকামি। প্রোডাক্ট দেখে পছন্দ হলে আগে ঐ পণ্যের সোস্যাল মিডিয়া পেইজ কিংবা ওয়েবসাইটে ঢুকবেন। তারপর চেক করতে হবে এই পেইজ বা ওয়েবসাইটটি কতোদিন হলো ব্যবসা শুরু করেছে।
একদম নতুন পেইজ বা ওয়েবসাইটের কোনো রিভিউ থাকে না এবং খুব বেশি জনপ্রিয়তা থাকে না। সেক্ষেত্রে এই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বস্ত কিনা তা বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই আমি সাজেস্ট করবো অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের স্থায়িত্বকাল দেখে কেনাকাটা করা উচিত। তাহলে প্রতারিত হওয়ার চান্স অনেক কম থাকবে।
আবার অনেকেই আছে ব্যক্তিগত ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের প্রোফাইলের মাধ্যমে এবং গ্রুপের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার করে। এই ধরনের ব্যক্তিমালিকানাধীন পণ্য সব সময় অথেনটিক হয়ে থাকে। বিশেষ করে কোনো অঞ্চলভিত্তিক পণ্য, হোম মেড ফুড, কুটির শিল্প ইত্যাদি পণ্য এই ধরনের উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে কেনাই ভালো। তবে একটা একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে ঐ উদ্যোক্তা সোস্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত কিনা। প্রতিনিয়ত যারা সোস্যাল মিডিয়ায় নিজের বিজনেস সম্পর্কিত কনটেন্ট আপলোড করে একটিভ থাকে তাদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করুন।
অনলাইন কেনাকাটায় ভরসার জায়গা হলো পণ্যের রিভিউ। আপনার পছন্দ করা পণ্যটি আগে যারা কোনো অনলাইন শপ থেকে কিনেছেন এবং ব্যবহার করেছেন সেখানে তারা ঐ বিষয়ে একটি মন্তব্য করবে। ভালো খারাপ দুই ধরনের মন্তব্যই আসবে। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে আপনাকে পণ্যটি ক্রয় করতে হবে।
কারণ প্রতিষ্ঠান ভেদে একই পণ্যের গুনগত মানে তারতম্য থাকতে পারে। দেখা গেল একটি ড্রেস দেখতে একই রকম কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন অনলাইন দোকানে ভিন্ন ধরনের কোয়ালিটি বিদ্যমান। ছবি দেখে তো আর আপনি কোয়ালিটি বুঝতে পারবেন না। তাহলে উপায়?
আপনাকে এক্ষেত্রে একই পণ্য বিক্রি করে এমন কয়েকটি ওয়েবসাইট কিংবা পেইজ ভিজিট করতে হবে। প্রতিটি অনলাইন দোকানের একটি রিভিউ অপশন থাকে। ঐ রিভিউ অপশনে গেলেই আপনি বুঝতে পারবেন পণ্যের গুনগত মান কেমন৷ এবং সেই সাথে এটাও বুঝতে পারবেন যে ঐ অনলাইন দোকানের যাবতীয় সকল সার্ভিস সন্তোষজনক কিনা।
কোনো প্রতিষ্ঠানের রিভিউ অপশনে আপনি বেশিরভাগই পজিটিভ রিভিউ দেখতে পাবেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের রিভিউ পাবেন একদম নেগেটিভ। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো রিভিউ-ই পাবেন না। নেগেটিভ রিভিউ ও একদম রিভিউ ছাড়া প্রতিষ্ঠান তালিকা থেকে বাদ দিয়ে পজিটিভ রিভিউ যুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে নিশ্চিন্তে কেনাকাটা করতে পারেন।
আবার আরেকটি বিষয় হলো অনেক সোস্যাল মিডিয়ার পেইজে ফেইক রিভিউ সাজানো থাকে। সেক্ষেত্রে কীভাবে বুঝবেন এটা ফেইক রিভিউ কিনা? সেক্ষেত্রে যারা ঐ পেইজে রিভিউ করেছে তাদের প্রোফাইল ভিজিট করে দেখতে পারেন যে ঐ প্রোফাইল অনলাইনে নিয়মিত একটিভ কিনা। যদি প্রোফাইল দেখে ফেইক মনে হয় তাহলে বুঝতে হবে ঐ প্রোফাইল থেকে যে রিভিউ করা হয়েছে তা-ও ফেইক।
তাই শুধু রিভিউ দেখলেই হবে না। সেই সাথে রিভিউ এর সত্যতা যাচাই করে কেনাকাটা করতে হবে। আশাকরি এই একটি টিপস ফলো করলে শতভাগ ভালো পণ্য হাতে পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে।
অনলাইন কেনাকাটায় ক্রেতার একমাত্র ভরসা ছবি। ছবি দেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে পণ্যটি কোনা যাবে কিনা। তাই এই ছবি টিকেই খুব ভালোভাবে যাচাই বাছাই করতে হবে। ছবির মধ্যেও লুকিয়ে থাকে অনেক রহস্য।
কোনো পণ্যের ছবি দেখে সাথে সাথে অর্ডার করবেন না। ঐ পণ্য সম্পর্কে অনলাইনে আরও সার্চ করবেন। যদি দেখা যায় প্রায় অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান একই ছবি ব্যবহার করে পণ্যের প্রচার করছে তাহলে ঐ ছবির বিশ্বস্ততা কম। কেননা যে সকল প্রতিষ্ঠান পণ্য স্টক করে বা নিজেরাই তৈরি করে বিক্রি করে তারা নিজেরাই পণ্যের ফটোগ্রাফি করবে। আর বেশিরভাগ ফেইক ব্যবসায়ী অনলাইন থেকে ছবি ডাউনলোড করে তা দিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে।
তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ছবির পাশাপাশি অনলাইনের বিভিন্ন মডেলের ছবি ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে তাদের ছবির পাশাপাশি ঐ সকল কমন ছবি ব্যবহৃত হয়। যদি আপনি মডেল ছবির পাশাপাশি আসল পণ্যের ছবিটি দেখতে পান সেক্ষেত্রে ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা রাখতে পারেন।
আরেকটি হাস্যকর কিন্তু বাস্তব বিষয় হলো ছবি চুরি করা। বেশিরভাগ ফেইক বিক্রেতা অন্যের তোলা অথেনটিক ছবি নিজের নামে চালিয়ে দেয়। তাই ছবির সাথে প্রতিষ্ঠানের লোগো আছে কিনা সেদিকে লক্ষ রাখবেন। আর অনলাইন থেকে ডাউনলোড করা ছবির লোগো কেটে দিয়ে সেটা পুনরায় আপলোড করলে ছবি ফেটে যাবে। তাই আপনি একটু জুম করে দেখলেই বুঝতে পারবেন ছবিটি আসল কিনা।
এভাবে অনলাইনে কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে পণ্যের ছবিটি ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। এতে প্রতারিত হওয়ার চান্স কম থাকবে।
একটি ব্রান্ডিং প্রতিষ্ঠান তাদের অনলাইন দোকান, ওয়েবসাইট কিংবা পেইজ খুব আকর্ষণীয় কনটেন্ট দিয়ে সাযাবে। আর যে সকল কোম্পানির উদ্যেশ্য ভিন্ন তারা কোয়ালিটি সম্পন্ন কনটেন্ট তৈরির পেছনে এতো সময় নষ্ট করবে না। কারণ কনটেন্ট তৈরি করার মতো কোয়ালিটি সম্পন্ন পণ্য-ই তো তাদের কাছে থাকবে না।
ব্রান্ডিং ওয়েবসাইট বা পেইজে ভিডিও, টেক্সট ও ফটো কনটেন্ট এর সবগুলোই কমবেশি থাকবে। প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যটি কীভাবে তৈরি করছে বা কোথা থেকে সংগ্রহ করছে তার সব কিছু ডিটেইলস কাস্টমারের কাছে তুলে ধরবে কনটেন্ট এর মাধ্যমে। ফেইক বিক্রেতার পণ্যের কোয়ালিটি খারাপ থাকবে বিধায় তারা ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করতে ইতস্তত করবে। ফলে কোয়ালিটি সম্পন্ন কনটেন্ট দিয়ে তাদের ওয়েবসাইট বা পেইজ সাজানো সম্ভব হবে না।
একটা প্রতিষ্ঠানের গতিবিধির পুরোটাই তাদের কনটেন্ট দেখে ধারণা করা যায়। তাই কোনো পণ্য অর্ডার করার আগে ঐ প্রতিষ্ঠানের অনলাইন প্লাটফর্মের কনটেন্ট গুলো একটু সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
অনলাইনে একটি সফল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সবথেকে বড় পরিচয় হলো তাদের ব্রান্ডিং। একটু চিন্তা করলেই অনলাইন কেনাকাটার কয়েকটি ব্রান্ড প্রতিষ্ঠানের নাম কিন্তু আমাদের মাথায় চলে আসে। এই সকল ব্রান্ডিং প্রতিষ্ঠান থেকে কিন্তু আপনি একদম নিশ্চিন্তে কেনাকাটা করতে পারেন। কেননা কোনো প্রতিষ্ঠান এমনি এমনি ব্রান্ডে পরিনত হয় না। দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমারের চাহিদা পূরণ করার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্রান্ডিং করে।
আবার সকল ব্রান্ডিং প্রতিষ্ঠান-ই যে ভালো সার্ভিস প্রদান করে তা কিন্তু না। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের নেগেটিভ রিভিউ থাকা সত্বেও ব্রান্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা তাদের কিছু পণ্যের রিভিউ ভালো আবার কিছু পণ্যের রিভিউ এখনও ভালো করতে পারেনি। তাই এই সকল প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটার বিষয়ে একটু সচেতন থাকতে হবে।
কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের যে কোনো একটি পণ্যের জন্য ব্রান্ডে পরিনত হয়েছে। তাই ঐ ব্রান্ড পণ্য ছাড়া অন্য কোনো পণ্য ঐ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে না কেনাই ভালো। আবার কিছু কিছু ব্রান্ড স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থাৎ তাদের কাছ থেকে নিশ্চিন্তে সব পণ্য-ই কেনা যায়।
তাই অনলাইনে কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে ব্রান্ডিং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে একটু রিসার্চ করা উচিত। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করলেই আপনি বুঝতে পারবেন কোনটি সবথেকে বেশি জনপ্রিয় ও ব্রান্ডিং কোম্পানি। অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে দাম একটু বেশি হলেও ব্রান্ডিং প্রতিষ্ঠান থেকেই পণ্য সংগ্রহ করা উচিত।
কেনাকাটা অনলাইনে হোক কিংবা অফলাইনে সকলেই চায় বিক্রেতার কাছ থেকে একটু প্রায়োরিটি পেতে। শপিংমলে গেলে যে দোকানদার একটু হাস্যোজ্জ্বল মুখে কথা বলে তার কাছেই কিন্তু ক্রেতা সমাগম বেশি হয়। অন্যদিকে যাতের কাস্টমার খাতির নেই বললেই চলে ঐ সকল দোকানে ক্রেতার আগমন কম ঘটে। ঠিক একই বিষয় অনলাইনের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
একজন সফল ও উদ্যমী ব্যবসায়ী মানেই কাস্টমারের প্রায়োরিটি তার কাছে সবার আগে। তাই ভালো মানের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট বা পেইজে কোনো পণ্য সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ ক্রেতাদের সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দেয়। ধৈর্য সহকারে ক্রেতার প্রশ্নের উত্তর দেয়। এটাই মূলত কাস্টমার খাতির।
আপনি যে ওয়েবসাইট বা পেইজ থেকে পণ্য ক্রয় করবেন তাদের কাস্টমার খাতির কেমন তা বিবেচনায় রাখবেন। ফেইক বা অসাধু ব্যবসায়ী কাস্টমার খাতিরের বিষয়ে খুব বেশি সচেতন থাকবে না এবং তাদের পণ্য সম্পর্কে খুটিনাটি প্রশ্ন করলে বিরক্ত হবে। আর যারা পণ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারবে না তাদের সাইট থেকে সোজা বেরিয়ে আসুন। কেননা যেচে পণ্য অর্ডার করে তারপর ঠকে গেলে আর করার কিছুই থাকবে না। আর আপনি যেহেতু তাদের কাছ থেকে কেনাকাটা করছেন তাই এতোটুকু প্রায়োরিটি তো আশা করতেই পারেন।
অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের থেকেও বেশি আমরা প্রলোভনে পড়ে পণ্য অর্ডার করি। আগে শপিংমলে গেলে মনে হতো সব কিছুই যেন তুলে নিয়ে আসি। কিন্তু পরবর্তীতে বাসায় এলে আর সেই প্রলোভন থাকতো না। কিন্তু এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় এতো এতো পণ্যের বিজ্ঞাপণ দেখি যে কেনাকাটার প্রলোভনে পড়ার জন্য আমাদের শপিংমল পর্যন্ত যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না।
বিজ্ঞাপনগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে দেখলেই যে কেউ প্রলোভনে পড়ে যায়। ফলে প্রয়োজন না থাকলেও আমরা হুটহাট এটাসেটা অর্ডার করে ফেলি। পরবর্তীতে দেখা যায় ঐ পণ্যটি শুধু শুধু পড়ে থাকে। এটা আসলে অপচয় ছাড়া আর কিছুই না।
তাই অনলাইনে কেনাকাটা করার আগে আমাদের একটু সচেতন থাকতে হবে। আগে ভাবতে হবে আসলেই পণ্যটি আমাদের কতোটুকু প্রয়োজন। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ফাঁদে পড়ে অপচয়ের হাত থেকে বাঁচতে চাইলে একটু সচেতনতা তো থাকাই উচিত।
অনলাইনে প্রায়ই দেখা যায় তুলনামূলক কম মূল্যে এমন সব পণ্যের বিজ্ঞাপণ দেয়া হয় যে পণ্যের সাধারণ দাম আরও বেশি হওয়ার কথা। আর সাধারণ জনতাও তো কম টাকায় বেশি পাওয়ার সুযোগে থাকে। ফলে লোভে পরে ঠকে যায়। এই ফাদে পা দিয়েছেন মানেই ঠকেছেন। কেননা সাধারণ দামের থেকে কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হলে তা অবশ্যই মানসম্পন্ন পণ্য হবে না।
ছবিতে দেখা যায় একই রকম ডিজাইনের পণ্য বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে আর তাদের কোয়ালিটি এক রকম না-ও হতে পারে। তাই অস্বাভাবিক ভাবে কম দাম দেখলে সেই পণ্যটি কোয়ালিটি সমৃদ্ধ হবে না এটা যে কেউ বুঝতে পারে। এক হাজার টাকার একটি পণ্য কেউ একশত টাকায় বিক্রি করছে তার মানে নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো রহস্য আছে। অনেক সময় বিভিন্ন ঠকবাজ প্রতিষ্ঠান ক্রেতার কাছ থেকে ডেলিভারি চার্জ অগ্রিম নিয়ে আর পণ্য পাঠায় না। তাহলে বুঝতেই পারছেন কম দামে কিনতে গিয়ে উল্টো লস হচ্ছে আপনার।
আবার এমনও হয় কোনো পণ্যের সাধারণ দামের থেকে তুলনামূলক বেশি টাকায় পণ্য বিক্রি করে অনেক অনলাইন ব্যবসায়ী। তাদের দাবি যে তারা সবথেকে ভালো কোয়ালিটির পণ্যটি সরবরাহ করছে। এটা সত্যি যে তারা সবথেকে ভালো কোয়ালিটির পণ্য সরবরাহ করছে কিন্তু সেই তুলনায় দাম আরও বেশি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে কয়েকটি অনলাইন শপের মধ্যে তুলনা করে আপনাকে বিশ্বস্ত একটি প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করতে হবে যাদের পণ্যের মূল্য মোটামুটি স্বাভাবিক মনে হয়।
এভাবে পণ্যের মূল্যের দিকে বিবেচনা করে সঠিক সাইট থেকে পণ্য ক্রয় করুন। আর প্রতারণা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
অনলাইনে একটি পণ্য অর্ডার করে আমরা সকলেই উদগ্রীব হয়ে বসে থাকি কখন পণ্যটি হাতে আসবে। আর কিছু অর্ডার করে অপেক্ষা করে বসে থাকাটাও বিরক্তিকর বিষয়। তাই কোনো অনলাইন শপ থেকে পণ্য ক্রয় করার আগে তাদের ডেলিভারির সময় ও ডেলিভারির পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত। অনলাইন সাইট থেকে না বললেও আপনার নিজ দায়িত্বে এসকল বিষয়ে প্রশ্ন করে ডিটেইলস সব কিছু জেনে নিতে হবে।
আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের হোম ডেলিভারি সার্ভিস নেই। যেখানে বর্তমানে গ্রাম পর্যায়ে হোম ডেলিভারি সেবা চালু আছে সেখানে কুরিয়ার সার্ভিস পর্যন্ত গিয়ে পণ্য নিয়ে আসাটা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত? আর যারা দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে তাদের অবশ্যই একটি ভালো ডেলিভারি সিস্টেম থাকবে। তাই অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি ডেলিভারি দিতে পারবে কিনা এবং ডেলিভারি টাইম ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে কিনা।
মনে রাখবেন একটি ভালো প্রতিষ্ঠানের পণ্যের গুনগুন মানের পাশাপাশি তাদের আনুষঙ্গিক সকল সার্ভিস ভালো হবে। তবে যাতায়াত ব্যবস্থায় সাময়িক কোনো সমস্যা বা চাপ থাকলে সেক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হতেই পারে এবং এটি আপনার কম্প্রোমাইজ করতেই হবে।
অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে ভালো মানের যতো প্রতিষ্ঠান আছে তাদের সকলেরই রিটার্ন পলিসি রয়েছে। কেননা অনলাইনে পণ্য কেনার পরে ক্রেতার পছন্দ না-ও হতে পারে। কিংবা পণ্যে কোনো ধরনের সমসা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি পণ্য ফেরত দেয়ার সিস্টেম না থাকে তাহলে ক্রয়কৃত পণ্যটি হবে পুরোটাই লস প্রজেক্ট।
ব্রান্ডিং প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য রিটার্ন করার সুযোগ রাখে। কারণ তারা তাদের পণ্য সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারে। তাই কোনো ধরনের সমস্যা হওয়ার সুযোগ থাকে না। আর সমস্যা হলেও তারা পুনরায় পরিবর্তন করে আবার অন্য প্রোডাক্ট পাঠিয়ে দেয়।
আর যারা লো কোয়ালিটির পণ্য নিয়ে কাজ করে তাদের কোনো ধরনের রিটার্ন পলিসি থাকে না। তারা ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছে দিয়ে আর কোনো খোঁজখবর রাখে না। এভাবেই তারা দিনের পর দিন ব্যবসা করে যাচ্ছে।
তাই কোনো পণ্য কেনার আগে এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন যে পণ্যটি পছন্দ না হলে আপনি ফেরত দিতে পারবেন। এমন কোনো সুযোগ না থাকলে সেখান থেকে পণ্য না কেনাই ভালো।
আশাকরি আজকের টিপস গুলো আপনার অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। একটু চোখকান খোলা রেখে কেনাকাটা করলে অনলাইন শপিং হতে পারে আপনার নিত্যদিনের সঙ্গী। তাই কেনাকাটায় সচেতন হোন এবং সঠিক পণ্য কিনুন।
আপনি যদি একজন অনলাইন ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তবে আপনার জন্যও এই টিপস গুলো অত্যন্ত জরুরি। কেননা ইতোমধ্যে আপনি বুঝতে পেরেছেন একজন সচেতন ক্রেতা আপনার কাছ থেকে কতোটা কোয়ালিটি ডিজার্ভ করে। তাই নিজের ব্যবসাকে সফল করতে এই কোয়ালিটি গুলো মেইনটেইন করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন।
ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।