আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই, আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরের মত হাজির হলার নতুন একটি টিউন নিয়ে।
ইন্টারনেটের এই যুগে আপনি ক্লাউড কথাটা অনেক বেশি শুনেছেন। আমরা মোটামুটি সবাই এটা জানি ক্লাউড কম্পিউটিং কী? আমরা ইন্টারনেটে যেসব সফটওয়্যার বা সার্ভিস ব্যবহার করি এই সব কিছু ক্লাউড কম্পিউটিং এর জন্যই সম্ভব। বিভিন্ন ধরনের ক্লাউড কম্পিউটিং রয়েছে এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এ গুলো হয়ে থাকে। আজকের এই টিউনে আমরা বিভিন্ন ধরনের ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে ধারণা নিব।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর ধরন নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আলোচনা হয় কোন প্রযুক্তি এতে ব্যবহৃত হয় কিন্তু আমাদের আর্কিটেকচারের উপর ভিত্তি করে ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে জানা উচিৎ। আর্কিটেকচারের দিক থেকে দেখলে ৩ ধরনের ক্লাউড কম্পিউটিং রয়েছে যেমন, IaaS, PaaS, SaaS।
অন ডিমান্ড ডাটা রিসোর্স ভাড়া করা হচ্ছে IaaS। এখানে আপনি প্রয়োজনমত রিসোর্স বা হার্ডওয়্যার ভাড়া করতে পারেন এবং কাজ করতে পারেন৷ নিজস্ব ডেটা সেন্টার না কিনে হার্ডওয়্যার ভাড়া করা হচ্ছে IaaS।
আপনি যদি ক্লাউড এপ্লিকেশন ডেভেলপ করতে চান এবং আপনার কোন অপারেটিং সিস্টেম বা ডেভেলপমেন্ট এনভায়রনমেন্ট না থাকে তাহলে আপনি PaaS ব্যবহার করবেন। এখানে আপনি একটি ডেভেলপমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ভাড়া করবেন। আপনার অ্যাপ ডেভেলপ করার প্রয়োজনীয় সকল টুল এখানে দেয়া হবে।
আপনি যদি ক্লাউড প্রোভাইডার বা ডেভেলপার না হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য রয়েছে SaaS। এখানে মূলত সফটওয়্যার সার্ভিস পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ক্লাউড কম্পিউটিং SaaS আর্কিটেকচার ফলো করে।
চলুন বিভিন্ন ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক
আপনি চাইলে ডেটা সেন্টারের একটা রিমোট কম্পিউটার ভাড়া করতে পারেন। এখানে আপনি যেকোনো সময় এক্সেস নিতে পারবেন। এখানে কাজ করতে আপনাকে কম্পিউটার কিনতে হবে না, মেইনটেইন খরচ নেই এবং ২৪/৭ এক্সেস পাবেন।
যাদের একটি নির্দিষ্ট সময় কেবল একটি হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন হয় তারা এটি ব্যবহার কর। অনেক দাম দিয়ে সেই হার্ডওয়্যার কিনতে হয় না, নির্দিষ্ট ফি দিয়েই সেখানে এক্সেস করতে পারে। যেমন আপনি কোন ভারী কাজ করতে ক্লাউড থেকে ম্যাক বা সুপার ফাস্ট ওয়ার্ক স্টেশন কম্পিউটার ভাড়া করতে পারেন।
এই পদ্ধতিতে ভার্চুয়াল মেশিন ভাড়া করতে পারেন। কোন ফিজিক্যাল পিসি না কিনে আপনারা পিসিতেই ভার্চুয়াল মেশিন ব্যবহার করতে পারেন। অনেক ইউজার আছে যারা ফিজিক্যাল ডেটা সেন্টার ভাড়া না করে নির্দিষ্ট কাজের জন্য ভার্চুয়াল মেশিন ভাড়া করে। ভার্চুয়াল মেশিন ভাড়া করার সুবিধা হল আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন এখানে সব সময় ভাল পারফরম্যান্স পাবেন।
ক্লাউড কম্পিউটিং এ রান করা অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি আপনার টাস্ক ফুলফিল করতে পারেন। কিছু কিছু অ্যাপ রয়েছে যেগুলো ডেভেলপই করা হয়েছে ক্লাউডে যেগুলো চাইলেই আপনি অফ লাইনে আপনার পিসিতে ইন্সটল করতে পারবেন না। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ক্লাউড থেকে ভাড়া করে চালালে সেটাকে Native Cloud Application বলা যাবে না। Native Cloud Application এর উদাহরণ হচ্ছে Office 365 Word এবং Gmail। এই অ্যাপ গুলো ক্লাউডে ইন্সটল করা এবং এক্সেস নিতে হলে ক্লাউডে কানেক্ট হতে হয়।
Cloud Storage সম্পর্কে আপনার হয়তো ধারণা আছে। এটি একটি সিম্পল কনসেপ্ট। লোকাল কম্পিউটার স্টোরেজে কোন ফাইল সেভ না করে ক্লাউডে স্টোর করে রাখা হয় এই কনসেপ্টে।
ক্লাউড স্টোরেজে কোন কিছু রাখলে সেটা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডে সেখানে থাকে, আপনার ডেটা ক্লাউডে থাকার পাশাপাশি এর কয়েকটা কপি ফিজিক্যাল কয়েকটা লোকেশনেও রাখা হয়। ক্লাউড স্টোরেজে কিছু অতিরিক্ত সুবিধাও পাওয়া যায় যেমন আপনার ফাইল সার্চ করতে পারবেন এবং ক্লাউডে রেখেই এডিট করতে পারবেন।
ক্লাউড স্টোরেজের কয়েকটি উদাহরণ হল, Google Drive, Microsoft OneDrive, DropBox, and Apple iCloud ইত্যাদি।
আপনি অবাক হতে পারেন সোশ্যাল মিডিয়াও কিন্তু ক্লাউড কম্পিউটিং এর অংশ। অবাক হবার কোন কারণ নেই, খেয়াল করে দেখুন আপনি সেখানে আপনার ইমেজ রাখছেন, অনলাইনের সার্ভিস ব্যবহার করছেন, ভিডিও দেখেছেন। আর ক্লাউড কম্পিউটিং এর জন্যই Facebook, Twitter, Instagram, এর মত সোশ্যাল মিডিয়া গুলো লাইভ আছে।
অনলাইনে যত ধরনের স্ট্রিমিং সার্ভিস রয়েছে সব কিছুই ক্লাউড কম্পিউটিং এর অংশ, হতে পারে Spotify অথবা Netflix। অ্যাপ গুলো আপনার ফোন ইন্সটল করা থাকলেও এর সার্ভিস পেতে এগুলো বৃহৎ ডেটা সেন্টারের সাথে কানেক্ট করা থাকে।
এই সার্ভিস গুলো আপনার চাহিদা অনুযায়ী কন্টেন্টই কেবল দেয় না, ইন্টারনেট কানেকশনের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন কোয়ালিটিতে প্রোভাইট করে এমনকি পারসোনাল ডেটা নিয়ে রেকোমেন্ডেশন তৈরি করে।
আপনি চাইলে দামী কনসোল বা দামী পিসি না কিনেও কিন্তু Xcloud, Geforce Now, এবং Google Stadia এর মত সার্ভিস গুলো দিয়ে বিভিন্ন গেম স্ট্রিম করতে পারেন। ক্লাউড গেমিং বিষয়টা তুলনামূলক নতুন হলেও আপনার কাছে স্ট্যাবল ইন্টারনেট কানেকশন থাকলে এটি ব্যবহার করে ভাল অভিজ্ঞতা পেতে পারেন।
ট্র্যাডিশনাল ক্লাউড সার্ভিস গুলোতে ব্যবহার করা হয় কেন্দ্রীভূত ডেটা সেন্টার সেখানে থাকতে পারে প্রাইভেসি রিস্ক আর এই সমস্যা সমাধানে এর উন্নত রূপ হচ্ছে বিকেন্দ্রীভূত ক্লাউড সার্ভিস। যেমন Google Docs এ কোন ডকুমেন্ট তৈরি করলে সেটা চাইলে গুগল পড়তে পারে। প্রাইভেসি রক্ষায় বিকেন্দ্রীভূত ক্লাউড সার্ভিস এর উদাহরণ হতে পারে Graphite Docs। এটার কোন সেন্ট্রাল ডেটা সেন্টার নেই এটা ব্লকচেইন টেকনোলজি ব্যবহার করে ডেটা হোস্ট এবং এনক্রিপট করে। কেউ চাইলেও এখানে ইউজারের ডেটায় নজর রাখতে পারবে না।
দুর্ভাগ্য বশত, Graphite Docs, ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে যায় তবে এটার কোড এখন ওপেনসোর্সে আছে চাইলে যেকেউ এটি ব্যবহার করে নতুন কিছু তৈরি করতে পারে। আরেকটা এমন বিকেন্দ্রীভূত অ্যাপ হচ্ছে Stacks যেখানে আপনি বিকেন্দ্রীভূত অ্যাপ রাইট করতে পারেন।
আমাদের প্রায় সবার একটি করে পারসোনাল কম্পিউটার থাকলেও ভবিষ্যৎ আস্তে আস্তে ক্লাউড বেসড হয়ে যাচ্ছে। আপনি চান বা না চান আপনাকে ক্লাউড কম্পিউটিং উপর নির্ভর করতে হবেই।
আজকে এ পর্যন্তই শীঘ্রই দেখা হবে নতুন কোন টিউনের সাথে ততদিন ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।