মোবাইল ডেটার ব্যবহার কমাতে এবং অর্থ সাশ্রয়ের জন্য ১০ টি দরকারী টিপস

Level 15
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

আমরা যারা নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে থাকি, তাদের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো অতিরিক্ত ডেটের ব্যবহার। এমনিতেই মোবাইল ডেটার দাম অনেক চড়া, তার ভিতরে যদি আবার মোবাইলে বেশি মেগাবাইট শেষ হতে থাকে, তাহলে সমস্যা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তো, আপনিও কি আপনার মোবাইলের ডাটা খরচ কমাতে চান? আজকের এই টিউনে আলোচনা করা অ্যাপ্লিকেশন এবং কৌশল গুলোর মাধ্যমে আপনি মেগাবাইটের ব্যবহার অনেক কমিয়ে আনতে পারবেন।

মোবাইল ডেটার ব্যবহার সবসময় ব্যয়বহুল। তাহলে আপনি কীভাবে কাজের পরিমাণ ঠিক রেখে মোবাইল ডেটার পরিমাণ কমাতে পারেন?

এটার উত্তর হল, আপনি আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করে এটি করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার মোবাইলে‌ থাকা বিল্ট ইন ফিচারগুলোর মাধ্যমে এটি করতে পারেন। এই টিপসগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি আপনার ডাটা ইউজের পরিমাণ অনেক কমাতে পারেন এবং এতে আপনার খরচ ও বেঁচে যেতে পারে।

১. ম্যানুয়ালি আপনার মোবাইল ডাটা Cap করুন

ম্যানুয়ালি আপনার মোবাইল ডাটা Cap করুন

আপনি হয়তোবা অনেক সময় এরকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন যে, আপনার ডাটা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও আপনার মোবাইলের ডাটা কানেকশন চালু করা ছিল এবং যে কারণে সিম থেকে টাকা কেটে নিয়েছে। আমরা প্রায়ই এরকম সমস্যার সম্মুখীন হই। আপনি হয়তোবা পূর্বে এরকমটি ভেবেছিলেন যে, আমাদের ডেটার ব্যবহার ঠিক রয়েছে এবং ডেটা শেষ হয়ে যাওয়ার মেসেজ না আসা পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করবেন না। কিন্তু, কখন যে আপনি সম্পূর্ণ মেগাবাইট খরচ করে ফেলেছেন, সেটি বুঝতে পারেননি।

দুর্ভাগ্যক্রমে, মোবাইল ডেটার পরিমাণ কিন্তু আনলিমিটেড নয়। এখানে আপনি যতটা পরিমাণ মেগাবাইট কিনবেন, আপনাকে শুধুমাত্র ততটুকু মেগাবাইট ই খরচ করতে হবে। যাই হোক, কোন কারণে আপনার মোবাইলে ডেটা শেষ হয়ে গেলে, আপনার মূল ব্যালেন্স থেকে টাকা চার্জ হবে। তবে, আমরা চাইলেই এই বিষয়টিকে অনেক স্মার্ট ভাবে ম্যানেজ করতে পারি। এজন্য আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় একটি লিমিট সেট করে দিতে পারি, যাতে করে সেই লিমিট অতিক্রম করলে মোবাইল ডাটা অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও, আমরা কয়েকটি উপায়ে আমাদের মেগাবাইটের অতিরিক্ত খরচ ও কমাতে পারি।

ক্যাপিং করে কীভাবে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ডাটা সেভ করবেন

আপনি আপনার মোবাইলের বিল্ড ইন ফিচার ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের ডাটা লিমিট সেট করতে পারেন। এজন্য আপনাকে নিচের পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করতে হবে।

১. এজন্য প্রথমে মোবাইলের Setting ওপেন করুন এবং তারপর Network & Internet > Data usage অপশনে যান।

Data warning & limit

২. আর এখান থেকে আপনি Data warning & limit অপশনে যান এবং Data warning সেট করুন। যেখানে আপনি ১ জিবি অথবা ২ জিবি লিমিট সেট করে দিতে পারেন। আর এই লিমিট শেষ হয়ে গেলে, অটোমেটিক ভাবে আপনার মোবাইলের ডাটা কানেকশন বন্ধ হয়ে যাবে।

৩. এছাড়াও, Data usage করার সময় মেগাবাইটের খরচ কমানোর জন্য Data saver ও চালু করতে পারেন।

আইফোনে কীভাবে মোবাইল ডেটা ক্যাপ করবেন?

iPhone ব্যবহার করার সময় আপনি বর্তমানে কত মোবাইল ডাটা ব্যবহার করেছেন তা দেখার জন্য Setting > Mobile data অপশনটিতে যান। এছাড়াও, এটির জন্য Current Period Roaming মোড আছে।

আপনি চাইলে, এখান থেকে যেসব অ্যাপগুলোতে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস পেতে চান না, সেগুলো ব্লক করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে সে সমস্ত অ্যাপ গুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে আপনার মোবাইলের ডাটা খরচ করবে না এবং আপনার ডেটার ব্যবহার ও কমে যাবে।

২. ডেটা কম্প্রেসিং অ্যাপ ব্যবহার করুন

ডেটা কম্প্রেসিং অ্যাপ ব্যবহার করুন

এমন বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, যেগুলো আপনার ডেটা ব্যবহার কমাতে কমপ্রেশন টেকনোলজি ব্যবহার করে। আপনি হয়তোবা এগুলোর মধ্যে থেকে ইতিমধ্যেই যেকোন একটি ব্যবহার করতে পারেন। যাইহোক, আমরা তবে এবার এরকম কিছু Data compressing apps দেখব, যেগুলো আমাদের ডেটার খরচ কমিয়ে দিতে পারে।

Google Chrome

ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় ডাটা খরচ কমানোর ক্ষেত্রে Google Chrome তালিকার প্রথমে থাকা উচিত। আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তোবা গুগল ক্রোম ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করে থাকি। তবে, আপনি হয়তোবা এখনো জানেন না যে, গুগল ক্রোমের একটি Built in data saving টুল রয়েছে। গুগল ক্রোমের ডাটা সেভিং চালু করার জন্য আপনি অ্যাপ্লিকেশন টিতে প্রবেশ করে Setting > Data Saver > Use Data Saver অপশনে ট্যাপ করে এটি Enable করুন।

এই সেটিংটি চালু করার ফলে, কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করার ক্ষেত্রে আপনার প্রায় ৪০% ডাটা সাশ্রয় হবে।

Google Chrome

Official Download @ Google Chrome - Android | IOS

Opera Mini

ইন্টারনেট করার সময় ডেটা সাশ্রয়ের জন্য Opera Mini অ্যাপে ডিফল্টভাবে Data saver মোড রয়েছে। আপনি গুগল ক্রোম এর বিপরীতে এই ব্রাউজারটির মাধ্যমে কোন ওয়েবসাইটের ইমেজ এবং কনটেন্ট গুলোর কোয়ালিটি সেট করতে পারবেন, এতে করে আপনার ডেটা খরচ কম হবে।

Opera Mini

Official Download @ Opera Mini

৩. মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার কমান এবং এর পরিবর্তে ওয়াইফাই ব্যবহার করুন

ডেটা খরচ কমাতে ওয়াইফাই ব্যবহার করুন

আপনি কি এখনো মোবাইলে মেগাবাইট কিনে ইন্টারনেট চালান? যদিও আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকেই মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। যদি আপনার প্রতিদিন অনেক বেশি পরিমাণে ডেটার প্রয়োজন হয়, তাহলে Mobile data ব্যবহার করে ইন্টারনেট চালানো অনেক ব্যয়বহুল। আপনি কি ইন্টারনেট কেনার পেছনে বেশি অর্থ খরতে চান?

আপনাকে এই প্রশ্ন করা হলে, আপনি অবশ্যই বলবেন না। তাই আপনাকে আপনার ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আরও একবার চিন্তা করতে হবে এবং এই বিষয়ে আপনার পরিবর্তন আনা জরুরি। আমাদের কাছে ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে দুইটি অপশন রয়েছে, একটি হলো মোবাইল ইন্টারনেট এবং অন্যটি হলো ওয়াইফাই।

অন্যান্যদের মতো আপনিও হয়তোবা প্রায়ই ওয়াইফাই ব্যবহার করে থাকেন। এক্ষেত্রে শহরের কোন শপিং মল, দোকান, পরিবহন এবং স্কুল ক্যাম্পাসে ও বিনামূল্যের ওয়াইফাই পাওয়া যায়। তো, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, আপনার ডেটার ব্যবহার কমাতে সেখানে ওয়াইফাই ব্যবহার করুন। যদিও সমস্ত পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করা অনেক সময় ঝুঁকির কারণ নয়, তবে আপনি সেখানে ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।

৪. ডেটার ব্যবহার কমাতে Dual sim phone ব্যবহার করুন

ডেটার ব্যবহার কমাতে Dual sim phone ব্যবহার করুন

যদিও একটি Stranded single - SIM যুক্ত ফোনের তুলনায় একটি Dual sim phone আমাদেরকে দুইটি মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সুবিধা দেয়। এতে করে, আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় কিংবা বিভিন্ন প্লান চয়েজ করার ক্ষেত্রে দুইটি অপশন পাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য একটি সিম এবং ভয়েস বা অন্যান্য সার্ভিসের জন্য আরও একটি সিম ব্যবহার করতে পারবেন। যাই হোক, আমাদের মধ্যে প্রায় সকলেই নিজেদের মোবাইলের ডুয়েল সিম ই বেশি ব্যবহার করে থাকি।

ডুয়েল সিম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনার একটি সিমে ইন্টারনেট শেষ হয়ে গেলে অন্য একটি সিম দিয়ে ইন্টারনেট কিনতে পারছেন এবং আপনার জন্য অফার চয়েজ করার ও সুযোগ থাকছে। অনেক সময় দেখা যায় যে, একটি অপারেটর অন্য একটি মোবাইল অপারেটরের চাইতে অনেক আকর্ষণীয় প্লান অফার করছে। আর এতে করে, আপনি দুইটি অপারেটরের মাঝে বিবেচনা করে ইন্টারনেট প্যাক বেছে নিয়ে কিনে অর্থ সাশ্রয় করতে পারেন।

৫. অ্যাপ গুলোকে Automatically Syncing করা বন্ধ করুন

অ্যাপ গুলোকে Automatically Syncing করা বন্ধ করুন

আপনি যখন আপনার ফোন ব্যবহার করেন, তখন অনেক অ্যাপ্লিকেশন গুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপেলের অ্যাপ স্টোর আপনার ফোনের অ্যাপ গুলোর আপডেট চেক করার জন্য সর্বক্ষণ চালু থাকে। একইভাবে আপনার ইমেইল অ্যাপটিও নতুন মেসেজ দেখানোর জন্য ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকে। অন্যদিকে, আপনার ফোনে ইন্সটল থাকা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ গুলো সব সময় আপডেট নোটিফিকেশনগুলো দেখানোর জন্য ও ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকে।

আপনার ফোনের এসব অ্যাক্টিভিটি গুলো মোবাইলের ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও একটি অতিরিক্ত খাত যোগ করে। এক্ষেত্রে তারা যে Data sync করে, এর ফলে আপনার ডেটার ব্যবহার বেড়ে যায়। আর এসব অ্যাপসগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকলে, ডেটার খরচ আরো বেড়ে যায়। তাই আপনি চাইলে, এসব অ্যাপস গুলোর জন্য Restricted background data usage সেটিং চালু করে দিতে পারেন।

কীভাবে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস গুলোর Syncing Disable করবেন?

আপনি আপনার মোবাইলের Setting থেকে Apps & Notifications অপশন থেকে এটি Disable করে দিতে পারেন। এখানে আপনি এমন সমস্ত অ্যাপ্লিকেশন গুলো পাবেন, যেগুলো সর্বদা বিভিন্ন Data sync করে। কোন একটি অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে কি পরিমাণে ডাটা খরচ করেছে, সেটি দেখার জন্য সেই অ্যাপটিতে ক্লিক করুন এবং চেক করুন। এবার, সেই অ্যাপসটি যদি খুবই বেশি পরিমাণে ডেটা খরচ করে থাকে, তাহলে আপনি সেই অ্যাপটির উপর ক্লিক করে Background data ডিজেবল করে দিন।

Mobile Background data off

যদিও এভাবে করে আলাদা আলাদাভাবে অ্যাপে গিয়ে Background data ডিজেবল করা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে, এটি করার মাধ্যমে আপনি অনেক ডাটা ছাড়া করতে পারবেন।

কীভাবে আইফোনে App Syncing Disable করবেন?

iOS ডিভাইসের ক্ষেত্রে, আপনি Setting > [Your Name] > iCloud অপশন থেকে App Syncing বন্ধ করতে পারেন। এরপর আপনি সে সমস্ত অ্যাপস গুলোতে ক্লিক করুন এবং এটি বন্ধ করে দিন, যেগুলোতে এই সার্ভিস চালু রাখার প্রয়োজন নেই।

যে সমস্ত অ্যাপ্লিকেশন গুলোর জন্য ক্রমাগত Syncing এর প্রয়োজন হয়, সেগুলো কীভাবে ম্যানেজ করতে হবে, সেগুলোর জন্য পৃথক Setting রয়েছে।

আপনি যদি সঠিক সেটিংটি খুঁজে না পান, তাহলে আপনার জন্য কেবল মোবাইল ইন্টারনেট ডিজেবল করাও একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।

৬. নিশ্চিত করুন যে, আপনার ফোনের ক্লাউড অ্যাপ গুলো শুধুমাত্র Wi-Fi Syncing ব্যবহার করছে

ক্লাউড অ্যাপ Wi-Fi Syncing

আমরা বিভিন্ন ফটো কিংবা ভিডিও নিরাপদে সংরক্ষণ করার জন্য অনেক ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস ব্যবহার করি। এসব ক্লাউড স্টোরেজের মধ্যে যেমন Google drive কিংবা Google photos অন্যতম। আমরা যদি এসব অ্যাপ গুলোর রিয়েল টাইম Syncing চালু করে রাখি, তাহলে কোন ছবি কিংবা ভিডিও করার সাথে সাথেই সেখানে আপলোড হতে থাকে। তো, আপনি যদি মোবাইলে মেগাবাইট কিনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে এটি আপনার জন্য অবশ্যই একটি দুঃসংবাদ। কেননা, অনেকগুলো ফটো ক্লাউড স্টোরেজে আপলোড করে রাখার জন্য অনেক পরিমাণ ডেটা খরচ হবে।

আর তাই, আপনাকে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে, সেই অ্যাপসটি আপনার মোবাইলের ডাটা ব্যবহার করছে কিনা। আপনি সেগুলোতে ফটো আপলোডের সেটিংস হিসেবে Wi-Fi কে কনফিগার করে রাখতে পারেন। এতে করে, শুধুমাত্র আপনার ফোনটি ওয়াইফাই এর সাথে সংযুক্ত হলেই ফটোগুলো আপলোড হবে।

আপনি যে মোবাইল ব্যবহার করছেন, সেটির উপর ভিত্তি করে আপনার পছন্দের ক্লাউড অ্যাপের এই সেটিংস চেক করুন। উদাহরণস্বরূপ, অ্যান্ড্রয়েড এবং অ্যাপেল ফোনের ক্ষেত্রে সেই অ্যাপসের সেটিং ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

৭. আপনার ফোনে Music বা Audio সমূহ সেভ করে রাখুন

ফোনে Music বা Audio সমূহ সেভ করে রাখুন

মোবাইলের ডাটা বাঁচানোর জন্য অন্যান্য পদ্ধতির চাইতে এটি অনেক বেশি দরকারি এবং কার্যকরী। আপনি আপনার পছন্দের সার্ভিস থেকে সরাসরি অডিও স্ট্রিম করার পরিবর্তে, বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেই সেটিকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। বেশিরভাগ ফোনেই অডিও এবং ভিডিও ডাউনলোড করার জন্য যথেষ্ট স্টোরেজ ফাঁকা থাকে।

এক্ষেত্রে যাদের ফোনে কম স্টোরেজ রয়েছে, তারা চাইলে তাদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনে একটি মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহার করে স্টোরেজের পরিমাণ বাড়াতে পারেন। আর এখানে আপনি আপনার পছন্দের অডিওটি সেভ করে রাখতে পারেন, যাতে করে ভবিষ্যতে একই অডিওটি আপনাকে ইন্টারনেট থেকে দেখতে না হয়।

আর একবার আপনি কোন একটি মিউজিক আপনার ফোনে সংরক্ষণ করলে, পরবর্তীতে আপনি আপনার ফোনের বিল্ট ইন অডিও প্লেয়ার দিয়ে সেটা শুনতে পারেন। আর এতে আপনার কোন ইন্টারনেটের প্রয়োজন নেই। আর অন্যদিকে, Spotify এবং Apple music ও অর্থ প্রদান করার মাধ্যমে আপনাকে আপনার ফোনে মিউজিক ডাউনলোড করার অনুমতি দিয়ে থাকে।

৮. ডেটা ব্যবহার হ্রাস করুন এবং এটির জন্য HD video streaming করবেন না

ডেটা ব্যবহার হ্রাস করতে HD video streaming বন্ধ করুন

স্ট্রিমিং করার সময় High Definition বা HD ভিডিও হল আপনার মোবাইল ডাটা খরচ করার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। আপনি যদি মাত্র এক ঘণ্টা HD স্ট্রিমিং করেন, তাহলে আপনার কমপক্ষে ২ জিবির মত ডাটা খরচ হতে পারে। যেখানে, আপনি যখন মোবাইল ডাটা কিনে থাকেন, তখন এই পরিমাণ ডাটা কেনার জন্য আপনাকে অনেক উচ্চমূল্য দিতে হয়েছিল।

আমরা এমনকি এর চাইতেও অনেক উচ্চ Definition এর ভিডিও প্লে করে থাকি, এতে করে আমাদের মোবাইলের ডাটার খরচ অনেক বেশি হয়। আপনাকে যদি ভিডিও স্ট্রিমিং করতেই হয়, তাহলে এটির পরিবর্তে আপনি Standard Definition বা SD কোয়ালিটি ব্যবহার করুন। যদিও এটিতে ভিডিওর মান কিছুটা দুর্বল হবে, তবে আপনার Mobile data খরচ কমানোর জন্য এবং অতিরিক্ত খরচ এড়াতে আপনি এটি ব্যবহার করুন।

৯. আপনার মোবাইল ইন্টারনেট সেটিংস 3G-তে নামিয়ে আনুন

মোবাইল ইন্টারনেট সেটিংস 3G-তে নামিয়ে আনুন

আজকের সময়ের আমাদের ব্যবহৃত স্মার্টফোন গুলোর বেশিরভাগই 4G এবং 5G সাপোর্টেড। আর এটি আপনাকে অনেক দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে। কিন্তু, বেশি স্পিড মানেই আপনার মোবাইল ডাটা দ্রুত ব্যবহার হবে।

মোবাইল ডেটা ব্যবহার কমানোর আরো একটি অন্যতম উপায় হল, মোবাইলের নেটওয়ার্ক 3G তে Downgrading করা। আপনি অনেক মোবাইলের সেটিংস এ হয়তোবা সরাসরি ফোরজি থেকে থ্রিজি কিংবা ফাইভ জি থেকে 3g তে নেটওয়ার্ক নামিয়ে আনতে পারবেন না। তবে, এটি অনেক ক্ষেত্রেই করা যায়।

১. এজন্য প্রথমে Setting > Network & Internet অপশনে যান এবং তারপর Mobile Network > Advance অপশনে ট্যাপ করুন।

Preferred network type

২. এরপর Preferred network type থেকে 3G only অথবা 3G (preferred)/2G নেটওয়ার্ক নির্বাচন করুন। এখানে আপনাকে বলে রাখি যে, মোবাইল ব্র্যান্ড এবং অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন অনুযায়ী এই সেটিংসের লেখাগুলো ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে, প্রত্যেকটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সেটিংস প্রায় একই।

আর আপনি যদি একজন IOS ডিভাইস ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য এই কাজটি আরো সহজ:

১. এজন্য আপনি Setting > Mobile Data > Mobile Data Option এ যান। এরপর Voice & Data থেকে 3G or LTE Off সিলেক্ট করুন।

এখানে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, উপরের এই সেটিং চালু করার মাধ্যমে আপনি কিন্তু ডেটার ব্যবহারে কোন পরিবর্তন আনতে পারবেন না। বরং এটি চালু করার মূল উদ্দেশ্য হলো, যাতে করে আপনি খুব দ্রুত ডেটা ব্যবহার করতে না পারেন। আপনার ইন্টারনেটের স্পিড যদি অনেক বেশি হয়, তাহলে আপনি স্বাভাবিকভাবে HD কনটেন্ট এবং অনেক বড় ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন। তাই আপনি যদি মোবাইলের নেটওয়ার্ক থ্রিজি তে নামিয়ে আনেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবে আপনার ইন্টারনেটের স্পিড কমে যাবে এবং এইসব ক্ষেত্রে আপনার চেষ্টা করার সম্ভাবনা ও কম। আর এতে করে আপনার মোবাইলের ডাটা সাশ্রয় হবে।

১০. অফলাইনে যান এবং মোবাইল ডাটা সংরক্ষণ করুন

অফলাইনে যান এবং মোবাইল ডাটা সংরক্ষণ করুন

আপনি একবার নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন যে, আপনার কি সত্যিই সবসময় অনলাইনে থাকা উচিত?

যদিও আমাদের অনেক প্রয়োজনে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় কিংবা মেসেজিং সার্ভিসে যোগাযোগের জন্য দ্রুত রেসপন্স করতে হয়। তারপরেও, আপনি যদি এভাবে করে প্রতিনিয়ত অহেতুক সময় নষ্ট করেন, তাহলে এটি আপনার জন্য এটি আসক্তিতে পরিণত হবে।

অনলাইনে বিভিন্ন সংবাদ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন আপডেট, আপনার জন্য কোনোটিই শতভাগ প্রয়োজনীয় নয়। আপনি যদি সারাদিন সোশ্যাল মিডিয়াতে না যান কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার নাও করেন, তবুও আপনি বেঁচে থাকতে পারবেন। সুতরাং, আপনার যদি ওয়াইফাই না থাকে এবং মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যয়বহুল হয়, তাহলে আপনি শুধু অফলাইনে থাকুন।

এবার আপনি নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন, তাই না? মোবাইলের ডেটা বাঁচানোর প্রক্রিয়াটি কত সহজ!

আপনার মোবাইল ইন্টারনেট ডেটা বিল কমিয়ে রাখা

মোবাইল ইন্টারনেট ডেটা বিল কমিয়ে রাখা

আপনি সবকিছু বিবেচনা করে, যদি আপনার মনে হয় আপনার পাবলিক ওয়াইফাই ছাড়া আর কিছুর প্রয়োজন নেই; তাহলে কম ডেটা ব্যবহারের ফলে আপনার অর্থ সাশ্রয় হবে।

আমরা সবকিছু বিবেচনা করে ডেটা সাশ্রয় করার জন্য যে কয়েকটি উপায় পেয়েছি, সেগুলো হলো:

  1. Manually মোবাইল ইন্টারনেট Limit সেট করে মোবাইল ডেটা করা যায়।
  2. Data compression চালু করে, মোবাইল ইন্টারনেটের খরচ কমানো।
  3. মোবাইল ইন্টারনেটের পরিবর্তে ওয়াইফাই ব্যবহার করা।
  4. ফোনে ডুয়াল সিম ব্যবহার করা।
  5. ব্যবহৃত অ্যাপগুলোর Automatically Syncing বন্ধ করা।
  6. ক্লাউড ভিত্তিক অ্যাপস গুলোতে Wi-Fi Syncing চালু করা এবং মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে আপলোড হওয়ার অপশন বন্ধ করে রাখা।
  7. ডাটা সাশ্রয় মিউজিক স্ট্রিমিং বন্ধ করা।
  8. মোবাইলের মেগাবাইট বাঁচানোর জন্য HD Video স্ট্রিমিং বন্ধ করা।
  9. ফোনে ডাটা ব্যবহার কমানোর জন্য 3G তে নেটওয়ার্ক স্যুইচ করা।
  10. ইন্টারনেট খরচ কমানোর জন্য অফলাইনে থাকুন।

আমরা মোবাইল কিংবা কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় ডেটার ব্যবহার ব্যতীত কোন কিছুই ব্রাউজ করি না। কিন্তু, আপনি ডেটার ব্যবহার ছাড়াও আপনার ডিভাইসে অনেক কাজ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি অনলাইন গেম খেলে থাকে, তাহলে তাদের জন্য অফলাইন গেম রয়েছে এবং এতে ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন নেই।

শেষ কথা

আমাদের মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় প্রধান সমস্যা হলো, ডেটার অতিরিক্ত ব্যবহার। আর আমরা যদি Mobile Data বাঁচানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নিই, তাহলে আমরা নিজেদের জন্য অনেক অর্থ সাশ্রয় করতে পারব। এক্ষেত্রে আমরা আমাদের নিজেদের মোবাইলের সেটিংস ব্যবহার করার মাধ্যমেই মোবাইল ডাটার অতিরিক্ত খরচ কমাতে পারি। এছাড়াও, আমরা নিজেরা কিছু টিপস অনুসরণ করেও ডেটার ব্যবহার কমাতে পারি।

তো, আপনার মোবাইলে ও কি অতিরিক্ত ডাটা খরচ হয়? আপনি আপনার মতামতটি অবশ্যই টিউনমেন্ট করে জানান। ধন্যবাদ, আসসালামু আলাইকুম।

Level 15

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস