যেভাবে Windows 10 এর সকল ব্যাকআপ এবং রিকোভারি টুল ব্যবহার করবেন

টিউন বিভাগ টিপস এন্ড ট্রিকস
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরেই মত আজকেও চলে এসেছি নতুন টিউন নিয়ে।

আমরা পিসি ব্যাকআপ এবং রিকোভারির জন্য সব সময় নির্দিষ্ট কয়েকটা ফিচার ব্যবহার করি। কিন্তু আপনি নিজেও হয়তো জানেন না Windows 10 এ রয়েছে অনেক গুলো ব্যাকআপ এবং রিকোভার অপশন। তো আজকের টিউনে আমরা দেখতে চলেছি Windows 10 এর সকল ব্যাকআপ অপশন গুলো।

বিভিন্ন কারণে আমাদের পিসিতে ঝামেলা তৈরি হয়, হতে পারে ভাইরাসে আক্রমণ অথবা কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম ফেইলর। কম্পিউটারে এমন বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকলেও রয়েছে সমাধানের সহজ পথ। পিসিতে দেয়া আছে একাধিক রিকোভারি মেথড।

যেকোনো সমস্যায় কম্পিউটারে রিকোভারি পেতে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে, পূর্বে সঠিক ভাবে সিস্টেম ব্যাকআপ নেয়া হয়েছিল কিনা। ব্যাকআপ দিক থেকে বললে, Windows 8 এবং 10 এর প্রাইমারি ব্যাকআপ টুল হচ্ছে File History। এর মাধ্যমে শুধু মাত্র পুরো সিস্টেমের ফুল ব্যাকআপই নেয়া যায় না, একই সাথে সকল ফাইল প্রিভিয়াস ভার্সনেও রিস্টোর old Windows 7 Backup and Restore ফিচারটিও রেখেছে। যার মাধ্যমে পুরো সিস্টেম ইমেজ ব্যাকআপ রাখা যায়।

যদি আমরা রিকোভারির কথা বলি, উইন্ডোজ আপনাকে ফুল রিকোভারি এনভায়রনমেন্ট অফার করে যার মাধ্যমে পুরো পিসি রিসেট সহ, ডিফল্ট সিস্টেমও পাওয়া সম্ভব।

উইন্ডোজের বিল্ড-ইন ব্যাকআপ টুল

যেকোনো ধরনের ঝামেলা এড়াতে বর্তমান সময়ে ব্যাকআপ এর বিকল্প নেই, হোক সেটা পিসির সিস্টেম ফাইল অথবা আমাদের প্রয়োজনীয় ফাইল ফোল্ডার। যেকোনো সিস্টেম ক্রাশ, ভাইরাসের আক্রমণ থেকে পিসিকে উদ্ধার করতে, উইন্ডোজে রাখা হয়েছে একাধিক ব্যাকআপ টুল। আপনি শুধু মাত্র হার্ডডিস্ক নয় পুরো সিস্টেমকেই কপি করে রেখে দিতে পারবেন বিভিন্ন জায়গায়।

File History

File History প্রথম বারের মত নিয়ে আসা হয় Windows 8 এ এবং এটি এখনো Windows 10 এর বিল্ড-ইন ব্যাকআপ সলিউশন হিসেবে কাজ করছে। File History আপনার পুরো পিসির ব্যাকআপ তৈরি করে না এটি শুধু মাত্র পারসোনাল ফাইল গুলো ব্যাকআপ এর দিকে ফোকাস করে। আপনি পারসোনাল ফাইল গুলো ব্যাকআপ এর জন্য File History একটি এক্সটারনাল ড্রাইভের সাথে সেটআপ করে দেবেন। এটি নিয়মিত তার কাজ করবে। এটি সকল ফাইলের ব্যাকআপ তো রাখবেই একই সাথে আপনি নির্দিষ্ট ফাইলের প্রিভিউয়াস ভার্সনও রিস্টোর করতে পারবেন।

ডিফল্ট ভাবে File History পিসিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গুলো ব্যাকআপ নেয় যেমন, Desktop, Documents, Downloads, Music, Pictures, Videos, এবং AppData ফোল্ডারের অংশ গুলো। চাইলে আপনি যেকোনো ফোল্ডার exclude ও করতে পারেন।

  • ফোল্ডার নির্বাচন করার পর যেকোনো ড্রাইভে সেগুলো ব্যাকআপ নিতে পারবেন।
  • আপনার যখন ফাইল রিকোভারের দরকার হবে তখন এখান থেকে ফোল্ডার গুলো ব্রাউজ করে দেখতে পারবেন।
  • অথবা আপনি চাইলে File Explorer থেকে ফাইলের আগের ভার্সনও রিস্টোর করতে পারবেন।
  • File History আপনাকে সহজে রেগুলারলি পারসোনাল ফাইল গুলো ব্যাকআপ এর সুযোগ করে দেবে।

Backup and Restore (Windows 7)

মাইক্রোসফট সেই Windows 7 থেকে old Backup and Restore ফিচারটি রেখেছে। এটি Windows 8, এ ছিল Windows 8.1 এ আবার রিমুভ করে দেয়া হয় পরবর্তীতে আবার Windows 10 এ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। Backup and Restore (Windows 7) টুলের মাধ্যমে আপনি Windows 10 এ Windows 7 এর ব্যাকআপ রিস্টোর করতে পারবেন। তবে দারুণ ব্যাপার হল এর মাধ্যমে Windows 7 যেভাবে ব্যাকআপ নেয়া যেতো এখন Windows 10 ও একই ভাবে ব্যাকআপ নেয়া যায়।

File History এর মত শুধু মাত্র পারসোনাল ফাইল নয় এটা পুরো সিস্টেম হার্ডড্রাইভে ব্যাকআপ রাখতে পারবেন। তবে এটিতে File History এর মত ফাইলের পুরনো ভার্সন রিস্টোর করার কোন অপশন নেই।

স্টার্ট ম্যানু থেকে আপনি এই টুলটি খুঁজে নিতে পারেন অথবা “backup, ” লিখে সার্চ দিয়ে “Backup and Restore (Windows 7)" সিলেক্ট করতে পারেন।

ব্যাকআপ সেটআপ করা এখানে একদমই সহজ। আপনি একটা এক্সটারনাল ড্রাইভ বা নেটওয়ার্ক ড্রাইভ বাছাই করবেন, যে ফোল্ডার গুলোর ব্যাকআপ নিতে চান সিলেক্ট করবেন। ব্যাস কাজ শেষ! অটোমেটিক ভাবে সব কিছু ব্যাকআপ হতে থাকবে।

সিলেক্ট করা ফোল্ডার ব্যাকআপ নেয়ার পাশাপাশি আপনি সেখানে পুরো সিস্টেম ইমেজ ব্যাকআপ এরও ব্যবস্থা পেয়ে যাবেন। যার মাধ্যমে এই টুলটি আপনার পারসোনাল ফাইল, ইন্সটল করা অ্যাপ, অপারেটিং সিস্টেম ফাইল সহ সব কিছুর স্ন্যাপশট রাখবে। আপনার সিস্টেম ফেইল করে, খুব সহজে এটা রিপ্লেস করে সিস্টেম ইমেজ রিস্টোর করতে পারবেন। আপনাকে পুনরায় সিস্টেম ইন্সটল দিতে হবে না, সব কিছুরই ব্যাকআপ থাকবে।

তবে এই মেথডের কিছু অসুবিধাও রয়েছে যেমন, এই প্রক্রিয়াটি বেশ ধীরগতির। কখনো কখনো কমপ্লিট হতে এক রাত পাড় হয়ে যেতে পারে। যেহেতু এখানে সব কিছুই ব্যাকআপ নেয়া হয় সুতরাং এখানে বড় সাইজের এক্সটারনাল ডিস্কের প্রয়োজন পড়ে। তাছাড়া সব সময় ব্যাকআপ হওয়া ফাইল গুলো নিশ্চিন্তে ব্যবহারও করা যায় না যদি কোন ভাইরাস আক্রমণ করে থাকে। আবার Windows 8, এবং Windows 10 এর ক্ষেত্রে ইমেজ ব্যাকআপ এর প্রয়োজনও পড়ে না কারণ এখানে Reset Your PC ফিচারের মাধ্যমে সহজেই পিসি রিসেট করে ফেলা যায়। তবে সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করে আপনি কোনটা ব্যবহার করবেন এটা আপনার সিদ্ধান্ত।

যাই হোক আপনি যদি ইমেজ ব্যাকআপ ফিচারটি ব্যবহার করতে চান তাহলে, Backup and Restore (Windows 7) ওপেন করে বামপাশ থেকে “Create a system image” এ ক্লিক করুন।

এবার আপনি সিলেক্ট করুন কোথায় ব্যাকআপ রাখতে চান, আপনি এক্সটারনাল হার্ডডিস্ক, DVD, নেটওয়ার্ক লোকেশন সিলেক্ট করতে পারেন। ব্যাকআপ কমপ্লিট হলে, আপনি একটি সিস্টেম রিপিয়ার ডিস্ক ক্রিয়েটের অপশন পাবেন। যার মাধ্যমে আপনি পিসি স্টার্ট করে ইমেজ রিস্টোর করতে পারবেন।

OneDrive

আমরা সবাই OneDrive এর সাথে পরিচিত। Windows 10 এ এটি ডিফল্ট ভাবে দেয়া থাকে। এর মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট কিছু ফোল্ডার ব্যাকআপ নিতে পারবেন। এটি লোকাল ওয়েতে ফাইল স্টোর করবে এবং ক্লাউডে ব্যাকআপ নেবে। সরাসরি সেভ হবে OneDrive একাউন্টে যার মাধ্যমে অন্য ডিভাইস দিয়েও পিসির ফাইলে এক্সেস নেয়া যাবে। একই সাথে রিসেট দিলেও লগইন করে পূর্বের ফাইল ফিরিয়ে আনা যাবে।

যদিও এটাকে ফুল ব্যাকআপ সলিউশন বলা যায় না, তবে আপনি মানসিক প্রশান্তি পেতে পারেন এই ভেবে যে, আপনার পারসোনাল ফাইল মাল্টিপল জায়গায় ব্যাকআপ করা আছে।

বিল্ড ইন রিকোভারি টুলের জন্য এই উপরের ব্যাকআপ গুলো জরুরি তবে উইন্ডোজ আরও কিছু রিকোভারি টুল রেখেছে যেগুলোর মাধ্যমে এই ব্যাকআপ গুলো ছাড়াও পিসিকে রিস্টোর করা যায়।

System Restore

যখন উইন্ডোজের কোন সমস্যা বারবার Troubleshooting এর মাধ্যমেও সমাধান করা সম্ভব হয় না, তখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে System Restore। নতুন কোন সফটওয়্যার ইন্সটল দেয়ার ফলে পিসিতে যখন সমস্যা দেখা দেয় তখন এই সমস্যায় কাজ করতে পারে System Restore।

System Restore প্রতিনিয়ত “restore points” তৈরি করতে থাকে। যেখানে আপনার উইন্ডোজের সিস্টেম ফাইল, Registry সিস্টেম, হার্ডওয়্যার ড্রাইভের স্নেপশট থাকে। প্রতি সপ্তাহেই এটি Resrore Points তৈরি করে। নতুন কোন সফটওয়্যার বা ড্রাইভ ইন্সটল দিলে যদি পিসি অস্বাভাবিক আচরণ করা শুরু করে তখন System Restore এর মাধ্যমে উইন্ডোজের আগের ভার্সনে ফিরে আসা যায়।

Advanced Startup অপশন

যখন আপনার পিসি বিভিন্ন কারণে অন হবে না বার বার রিস্টার্ট নেবে তখন আপনি Advanced Startup অপশনটি ব্যবহার করতে পারেন। এটা এমন একটি রিকোভারি এনভায়রনমেন্ট যেখানে পিসি বন্ধ থাকলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যায়। Windows 7, এর ক্ষেত্রে আপনি F8 এ প্রেস করে Safe Mode অথবা Command Prompt পেতে পারেন।

Windows 8 এবং 10 এ এটা একটু ভিন্ন ভাবে কাজ করে। যদি উইন্ডোজ স্বাভাবিক ভাবে লোড না হয় তাহলে সেখানে এই অপশন গুলো অটোমেটিক চলে আসে। আপনি পিসি অন থাকা অবস্থাতে এই মুডে যেতে Settings > Update & security > Recovery > Advanced Startup এ যান এবং “Restart now.” এ ক্লিক করুন। তাছাড়া Shift এ চেপে রেখেও স্টার্টম্যানু থেকে Restart এ ক্লিক করতে পারেন।

এখান থেকে আপনি সিস্টেন ইমেজ থেকে পিসি রিস্টোর করতে পারেন, অথবা ছোট সমস্যা সমাধানে System Restore ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি কোন preview builds বিল্ড ব্যবহার করেন তাহলে এখান থেকে আগের ভার্সনেও ফিরে যেতে পারবেন। পিসি ঠিক মত অন না হলে এই অপশন গুলো আপনি আপনিতেই দেখতে পাবেন।

Recovery Drive Creator

Advanced Startup থেকে যেন পুনরায় পিসি রিস্টোর করে নিতে পারেন এজন্য আপনি আগে থেকে একটি Recovery Drive ক্রিয়েট করে রাখতে পারেন। কখনো এমনও হতে পারে, আপনার পিসি এমন ভাবে ড্যামেজ হবে যে Advanced Startup এর অপশন গুলোই আসবে না, সেক্ষেত্রে Recovery Drive আপনাকে সাহায্য করবে।

  • Recovery Drive তৈরি করতে স্টার্ট মেনুতে যান এবং “recovery, ” লিখে সার্চ করুন এবং “Create a recovery drive" এ ক্লিক করুন।
  • “Recovery Drive” এ আপনি Windows 7 এর ক্ষেত্রে CD/DVD এবং Windows 8/10 এর ক্ষেত্রে, USB সিলেক্ট করতে পারেন।
  • সিলেক্ট করার পর Backup system file to the recovey drive এ টিক দিয়ে Next এ ক্লিক করুন। কপি হওয়া শুরু হবে।

কাজ শেষ হয়ে গেলে, ড্রাইভটির একটি নাম দিন এবং ভাল জায়গায় রেখে দিন। যখন পিসি অন হতে চাইবে না তখন এই পেন্ড্রাইভটি ব্যবহার করে পিসি অন করুন।

Reset This PC

“Reset this PC” ফিচারটি Windows 8 এবং Windows 10 এর অন্যতম সেরা একটি ফিচার। এটার মাধ্যমে উইন্ডোজকে ডিফল্ট ভাবে রিস্টোর করা যায়, সব কিছু নতুন করে পাওয়া যায়। ফ্রেশ ইন্সটল ছাড়াই পিসির সব কিছু নতুন করে শুরু করতে এই ফিচারটি দারুণ কাজ করে। চাইলে পারসোনাল ফাইল গুলো রেখেও রিসেট করা যায়।

Windows 8 এ একই সাথে “Refresh your PC” এবং “Reset your PC” উভয় অপশন রয়েছে। . Refresh এর মাধ্যমে আপনার সব পারসোনাল ফাইল, পারসোনালাইস সেটিংস থেকে যায় কিন্তু পিসির সেটিংস এবং ইন্সটল করে অ্যাপ আনইন্সটল হয়ে যায়। অন্যদিকে Reset এ সব কিছুই রিমুভ হয়ে যায়। কিন্তু Windows 10 এ এটি এক ফিচারেই রাখা হয়েছে, ইউজার চাইলে রিসেট এর সময় তার পারসোনাল ফাইল রাখতেও পারে অথবা রিমুভও করে দিতে পারে।

শেষ কথা

উইন্ডোজে ডিফল্ট ভাবে এই ব্যাকআপ এবং রিস্টোর অপশন গুলো দেয়া আছে, আপনি যদি এই গুলোর ব্যবহার জানেন তাহলে এগুলো থেকে উপকৃত হতে পারেন আর না জানলে এগুলো থেকেও লাভ নেই।

আশা করছি উইন্ডোজে থাকা এই রিকোভারি টুল গুলো সম্পর্কে আপনাদের ভাল একটা ধারণা দিতে পেরেছি।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস