আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরেই মত আজকেও চলে এসেছি নতুন টিউন নিয়ে। আপনার ফোনের স্টোরেজ ফুল হয়ে গেছে? তাহলে এই টিউনটি আপনার জন্য। তো কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক।
সময়ের সাথে সাথে অ্যাপ, ফটো, অপারেটিং সিস্টেম এর জন্য ফোনের স্টোরেজ ফুল হয়ে যায়। তাছাড়া আপনি যদি তুলনামূলক পুরাতন বা এন্ট্রি লেভেলের ফোন ব্যবহার করেন তাহলে এই সমস্যায় খুব তারাতাড়িই পড়তে হয়।
আমরা অনেকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ফোনকে ফরমেট করে দেই। স্টোরেজ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে ফোন রিসেট বা ফরমেট করা স্থায়ী কোন সমাধান নয়। চলুন দেখে যাক কিভাবে ফোনের স্টোরেজ ফ্রি করা যায়।
একবার চিন্তা করে দেখুন তো কয়টি অ্যাপ আপনি নিয়মিত ব্যবহার করেন? আর কত গুলো শুধু শুধু ফোনে ইন্সটল করা আছে? বেশির ভাগ সময় আমরা অযথা অ্যাপ ইন্সটল করে রাখি কিন্তু অ্যাপ গুলো ব্যবহার করি না, ফলাফলস্বরূপ অ্যাপ গুলো বেশির ভাগ জায়গা দখল করে রাখে।
কিছু অ্যাপ আমাদের প্রতিনিয়ত ব্যবহার করতে হয় যেমন, ইমেইল অ্যাপ, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ, নিউজ অ্যাপ, একটা দুইটা গেম। এছাড়া খুব কম অ্যাপই আছে যেগুলো আমাদের কাজে লাগে।
আপডেট অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আপনি সহজেই ইন্সটল করা অ্যাপ গুলো দেখতে পারবেন। প্রথমে Settings > Storage > Other apps এ চলে যান এখানে আপনি সব গুলো অ্যাপ দেখতে পাবেন। উপরে ডান পাশে ম্যানুতে ক্লিক করে Sort ও করতে পারবেন।
এবার আপনি খুঁজে দেখুন কোন অ্যাপটি আপনি ব্যবহার করেন না কিন্তু প্রচুর স্টোরেজ দখল করে আছে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে আনইন্সটল করে দিন।
আমাদের ফোনে এমন অনেক অ্যাপ থাকে যেগুলো আমাদের সুবিধার জন্য অফলাইনে ডেটা জমা রাখে। অনেক অনলাইন অ্যাপ আছে যেগুলো অফলাইনে কাজ করতে অফলাইনেই তাদের কন্টেন্ট ডাউনলোড করে রাখে।
Spotify এর কথাই ধরা যাক, আপনি এখানে চাইলে মিউজিক সরাসরি ফোনে সেভ রাখতে পারেন। কিছু কিছু RSS রিডার আছে যেগুলো অফলাইনে দেখার জন্য আর্টিকেল সেভ রাখে, কিছু পডকাস্ট অ্যাপ আছে যেগুলো অফলাইনে প্লে হবার জন্য অডিও ফাইল ডাউনলোড করে রাখে। ক্রোমেও আর্টিকেল সেভ রাখার ব্যবস্থা আছে।
অফলাইনে কন্টেন্ট সেভ রাখা দোষের কিছু না যদি পর্যাপ্ত স্টোরেজ থাকে। কিন্তু যদি আপনার স্টোরেজ ফুল থাকে তাহলে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন অফলাইন মিডিয়া কতটা স্টোরেজ দখল করেছে।
Spotify এ আপনি এলবাম ডাউনলোড না করে প্লেলিস্ট আকারে সাজিয়ে রাখতে পারেন। বড় মাপের ফাইল ডাউনলোড না করে ক্লাউড স্টোরেজে রাখতে পারেন।
চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে অফলাইন কন্টেন্ট ক্লিয়ার করবেন। এজন্য আপনাকে অ্যাপ এ চলে যেতে হবে, Settings > Apps and notifications > চলে যান, নির্দিষ্ট অ্যাপ সিলেক্ট করুন, Storage and cache এ সিলেক্ট করে Clear Cache ক্লিক করুন।
এছাড়া এই কাজটি সহজে করতে আপনি বিভিন্ন থার্ডপার্টি অ্যাপও ব্যবহার করতে পারেন। বাল্ক আকারে অ্যাপ Caches ক্লিয়ার করতে আপনি SD Maid অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন৷
ডাউনলোড লিংক @ SD Maid
আমরা সবাই জানি Google Photos এ আমাদের ছবি ব্যাকআপ থাকে। আপনি যদি রেজুলেশনের বিষয়টিতে একটু ছাড় দিতে পারেন তাহলে এটা আপনার জন্য সেরা অপশন হতে পারে। একই সাথে এটি আপনার ড্রাইভের স্টোরেজের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না।
আপনি Google Photos এ ছবি রাখলে ইচ্ছে মত যেকোনো সময় দেখতে পারবেন এবং লোকাল স্টোরেজও ফ্রি থাকবে। তাছাড়া Google Photos একটি চমৎকার ফিচার আছে। মাঝে মাঝে এটি অনস্ক্রিন নোটিফিকেশন দিয়ে আপনাকে কিছু স্টোরেজ ফ্রি করতে অফার দিবে।
আপনি চাইলে নিজে থেকেও এটি চেক করে নিতে পারেন। Google Photos > Menu > Free up space এ ক্লিক করুন। এখন আপনি দেখতে পারবেন কত গুলো ব্যাকআপ হয়েছে কতগুলো ফটো আপনি ডিলিট করে দিতে পারেন।
আপনি Photos ছাড়া অন্য ক্লাউড স্টোরেজে আপনার প্রয়োজনীয় ছবি ভিডিও সেভ করে রাখতে পারেন। আপনার জন্য সেরা হতে পারে গুগল ড্রাইভ। গুগল ড্রাইভে ফাইল রাখলে আপনাকে রেজুলেশন নিয়েও চিন্তা করতে হবে না। অরিজিনাল ফাইলই ব্যাক আপ নিতে পারবেন। গুগল ড্রাইভ ছাড়াও আরও ক্লাউড সার্ভিস আছে যেগুলো আপনি ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারেন।
দিন দিন স্মার্টফোন গুলো থেকে SD তুলে দেয়া হচ্ছে। তবে প্রিমিয়াম ফোন গুলোতে এটি বেশি হয়। এর পেছনে অবশ্য কারণও আছে। SD কার্ড ফাইলের Read/write টাইম বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে করে ফোন স্লো কাজ করবে আপনি ভাববেন ফোনে সমস্যা।
যাই হোক আপনার ফোন যদি মিড রেঞ্জের হয় তাহলে আপনি এইদিক থেকে ভাগ্যবান। প্রায় সকল মিডরেঞ্জের ফোনেই মেমোরি কার্ড স্লট থাকে। স্টোরেজ ফুল হয়ে গেলে আপনি চাইলে অতিরিক্ত ফাইল মেমোরি কার্ডে মুভ করতে পারেন। তাছাড়া ক্যামেরা সেটিংস সহ আরও কিছু সেটিংস আছে যেখানে আপনি ডিফল্ট স্টোরেজ হিসেবে SD কার্ডকে সিলেক্ট করে দিতে পারেন।
গুগল তাদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য নিজস্ব ফাইল ম্যানেজার নিয়ে এসেছে। ইউজার ইন্টারফেস সহ অ্যাপ বেশ চমৎকার কাজ করে। আপনার ফাইল গুলো সাজাতে এই অ্যাপটি আপনাকে সাহায্য করতে পারে। বর্তমানে প্রায় সব ফোনেই এই অ্যাপটি প্রিইন্সটল করা থাকে।
ফাইল ম্যানেজার হিসেবে এই অ্যাপ অন্য থার্ডপার্টি অ্যাপ এর মত অনেক ফিচার না থাকলেও বেশ কাজের কিছু ফিচার রয়েছে। এই অ্যাপ দিয়ে আপনি ফাইল সুন্দর করে সাজানোর পাশাপাশি, টেম্পোরারি ফাইল রিমুভ করতে পারবেন। জানতে পারবেন কোন অ্যাপ গুলো বেশি জায়গা দখল করে আছে, কোন অ্যাপ গুলো অনেক দিন ব্যবহার করা হয় না।
অ্যাপটি ওপেন করলেই এটি অটোমেটিকেলি স্টোরেজ এনালাইস শুরু করে দেবে, এটি আপনার স্টোরেজের. Junk files, Large files, Old files, খুঁজে বের করবে।
Google Files এর একটি দারুণ ফিচার আছে যা অনেকেই জানে না। আপনি Google Files ব্যবহার করে দ্রুত অন্য অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ফাইল আদান প্রদান করতে পারবেন। ফাইল আদানপ্রদান এর যে থার্ডপার্টি অ্যাপ গুলো আমরা ব্যবহার করি সেগুলো দিন দিন বিরক্তিকর হয়ে উঠছে এবং অতিরিক্ত পারমিশন চাচ্ছে, যা আপনার প্রাইভেসির জন্য হুমকি সরূপ। যেহেতু Google Files গুগলের অ্যাপ সেহেতু এই দিক থেকে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
আপনি যদি থার্ডপার্টি কোন অ্যাপ ব্যবহার করতে না চান তাহলেও সমস্যা নেই। প্রতিটি ফোনেই বিল্ড ইন স্টোরেজ ক্লিনার থাকে। আপনি চাইলে সেটিও ইউজ করতে পারেন।
আপনি ফোনে ডিফল্ট ফাইল ম্যানেজারে যান, সেখানে Analysis Storage নামে অপশন পাবেন। এখানে ক্লিক করে স্টোরেজ এনালাইসিস করতে পারেন। অথবা সেটিংস থেকে প্রয়োজন মত ফিচারটি কাস্টমাইজও করে নিতে পারেন।
ফোন কেনার পর বেশ কিছুদিন সব কিছু ভালই চলে কিন্তু ১ বছর বা ৬ মাস পর থেকেই অধিকাংশ মিডরেঞ্জের ফোন গুলোতে স্টোরেজ সমস্যা দেখা দেয়। যেহেতু ফোন রিসেট দেয়া বেশ ঝামেলার এবং পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা বেশ সময় সাপেক্ষ সেহেতু রিসেট না দিয়ে বিকল্প পথে হাটাই ভাল।
আশা করছি এই টিউনে উল্লেখিত বিকল্প গুলো আপনাকে ফোনের স্টোরেজ বেশ খানিকটা ক্লিয়ার করতে সহায়তা করবে।
তো আজকে এই পর্যন্তই পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।
ধন্যবাদ ভাই