আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আজকে আবার হাজির হলাম নতুন টিউন নিয়ে।
সাশ্রয়ী মূল্যে স্মার্ট ডিভাইস, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং আধুনিক মন মানসিকতার প্রভাবে প্রতিনিয়ত অনলাইন ক্রেতারপরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী রয়েছে ২.১৪ বিলিয়নেরও বেশি ডিজিটাল বায়ার। আর অনলাইন ক্রেতারপরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্যোক্তার ভাবছে নতুন নতুন বিজনেস কনসেপ্ট। তো আপনিও যদি তুলনামূলক নতুন এই ই-কমার্স খাতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাহলে কি হতে পারে আপনার বিজনেস মডেল, সেটি নিয়েই আজকের এই টিউন।
আপনার বিজনেস মডেল কি হবে সেটা কয়েকটা বিষয়ের উপর নির্ভর করবে যেমন, আপনার প্রোডাক্ট কি, আপনার বাজেট কেমন, ম্যানেজমেন্টে আপনার দক্ষতা কেমন, এবং সব মিলিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এ আপনার অভিজ্ঞতা কত টুকু।
আপনি ট্রেন্ড অনুযায়ী বিজনেস মডেল নির্ধারণ করলে, স্বল্প সময়ের জন্য এটি আপনার পক্ষে থাকলেও উপযুক্ত দক্ষতা, প্রোডাক্ট বা অফারিং এর জন্য একটা সময় আপনি থেমে যেতে পারেন। সুতরাং আপনাকে এমন বিজনেস মডেল নির্ধারণ করতে হবে যা আপনাকে দীর্ঘমেয়াদী সফলতা দেবে, আর এজন্য আপনার দরকার পরিশ্রম, অধ্যবসায়, এবং সঠিক দিক নির্দেশনা। তথ্য বলে, স্রোতে গা ভাসানো ২০% বিজনেসই প্রথম বছরেই ব্যর্থ হয়ে যায়।
তো আপনি যদি এখনো কোন বিজনেস আইডিয়া খুঁজতে থাকেন এবং দীর্ঘ মেয়াদি সফলতা চান তাহলে, আগে নির্ধারণ করুন কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে এবং আপনার চাহিদা পূরণ করতে পারবে।
আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে সহজ করতে আমি প্রথমেই আলোচনা করব ই-কমার্স বিজনেসের প্রধান ক্লাসিফিকেশন নিয়ে৷ এই টপিকটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন যাতে আপনার প্রোডাক্টের জন্য কোন ক্যাটাগরিটি উপযুক্ত সেটা বের করতে পারেন।
B2C – Business to Consumer
সবচেয়ে কমন ই-কমার্স বিজনেস হচ্ছে B2C বিজনেস। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে ভোক্তার বিজনেস হচ্ছে B2C বিজনেস। অনলাইন থেকে ক্রেতাদের যেকোনো কিছু কেনা এই ক্যাটাগরিতে পড়বে। একই সাথে B2C বিজনেস সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় কারণ তুলনা মূলক কম ব্যয়ে এবং সহজে এই ধরনের স্টার্ট-আপ বিজনেস দাড় করানো যায়।
B2B – Business to Business
একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্য আরেকটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার ব্যবসায়িক সম্পর্কই হচ্ছে B2B বিজনেস। B2B বিজনেসে এক প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের নিকট পণ্য ক্রয় বিক্রয় করে৷ বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস, সফটওয়ার প্ল্যাটফর্ম এবং অফিস সাপ্লাইয়ের মত পণ্য কেনাবেচা এই বিজনেসের মধ্যে পড়বে।
এই ধরনের বিজনেসে থাকবে হাই প্রফিট মার্জিন এবং প্রফেশনাল ব্র্যান্ড ভ্যালু। এই ধরনের বিজনেসে বড় ধরনের বিনিয়োগ দরকার হবে।
C2B – Consumer to Business
ভোক্তারা যখন তাদের পণ্য বা সার্ভিস কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে দেবে তখন তাকে বলা হবে C2B বিজনেস। C2B বিজনেসের সহজ উদাহরণ হতে পারে ফ্রিলেন্সিং ওয়েবসাইট গুলো, যেখানে ফ্রিলেন্সাররা বিভিন্ন পক্ষকে তাদের সার্ভিস অফার করে৷ এফিলিয়েট মার্কেটিং এবং স্টক ইমেজ কেনাবেচা এই ধরনের বিজনেসের আরেকটি উদাহরণ হতে পারে।
C2C – Consumer to Consumer
যখন পণ্য কেনাবেচা ভোক্তাদের মধ্যে হবে তখন তাকে আমরা বলব C2C বিজনেস। eBay, Craigslist এর মত মার্কেট-প্লেস গুলো এই ধরনের বিজনেসের উদাহরণ। তাছাড়া অনলাইনে ভোক্তাদের মধ্যে ট্রেডিং, নিলাম, কেনাবেচা এই ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত।
উপযুক্ত বিজনেস মডেল নির্ধারণ করার উপর আপনার সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে। আর কোন বিজনেস মডেল আপনার জন্য উপযুক্ত এটি নির্ভর করবে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কারা, বাজেট প্ল্যান, ই-কামার্স প্রাইজিং ট্রেটেজি এবং মার্কেটিং পদ্ধতির উপর। এবার চলুন বর্তমান সময়ের কিছু লাভজনক বিজনেস মডেল নিয়ে আলোচনা করা যাক,
অর্ডার অনুযায়ী বড় মাপের পণ্য বিক্রয় করাকে বলা হয় ড্রপশিপিং বিজনেস। Bulk আকারে পণ্য কেনাবেচা এই বিজনেসের অন্তর্ভুক্ত৷ এই ধরনের বিজনেসে পণ্য প্যাকিং করে স্টক করে রাখা হয় এবং সাপ্লাই দেয়া হয়। ড্রপশিপিং এ গুদামজাতকরণ খরচ এবং শিপিং খরচ অনেকটাই কমে যায়।
যে কেউ চাইলে স্বল্প মূলধনে এই ধরনের বিজনেস শুরু করতে পারে। মিনিমাম ই-কমার্স এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে এই ধরনের বিজনেস যেকেউই শুরু করতে পারেন। ড্রপশিপিং আপনার জন্য লাভজনক একটি বিজনেস মডেল হতে পারে যদি,
পাইকারি ব্যবসায় সম্পর্কে হয়তো নতুন করে বলার কিছু নাই। উৎপাদকের কাছ থেকে বৃহৎ আকারে পণ্য ক্রয় করে রিটেইলারদের কাছে বিক্রি করাই হচ্ছে পাইকারি ব্যবসায়৷ তুলনামূলক কম টাকায় পণ্য কিনে অধিক মূল্যে বিক্রি করা যায়।
ট্র্যাডিশনাল এই পাইকারি বিজনেস অনলাইন ট্রান্সফরমেশনে আরও লাভজনক হয়ে উঠেছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে লাভজনক বিজনেস হয়ে উঠেছে অনলাইনে পাইকারি বিজনেস। অনলাইনে পাইকারি বিজনেসের মার্কেটপ্লেস গুলো হচ্ছে eBay এবং Amazon এর মত প্ল্যাটফর্ম গুলো। স্বাভাবিক ভাবেই এই ধরনের বিজনেসে হাই প্রোফিট মার্জিন আপনার আয় বাড়িয়ে দেবে। একই সাথে এই বিজনেসে ঝুঁকিও রয়েছে।
পাইকারি বিজনেস আপনার জন্য লাভজনক হতে পারে যদি,
নিজের ব্র্যান্ড ডেভেলপ করার সুযোগ তৈরি করে দেবে প্রাইভেট লেবেল বিজনেস মডেল। নির্দিষ্ট উৎপাদকের কাছ থেকে প্রোডাক্ট কিনে নিজের ব্র্যান্ড অনুযায়ী কাস্টমাইজড করে বিক্রি করাকে বলা হয় প্রাইভেট লেবেল বিজনেস। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে এটি অন্যতম হাই প্রোফিট মার্জিন বিজনেস হয়ে উঠবে। দুইভাবে প্রাইভেট লেবেল বিজনেস করা যায়
Amazon FBA এর মাধ্যমে প্রাইভেট লেবেল
Amazon Fulfillment (Amazon FBA) এমন একটি সার্ভিস যেখানে আপনি প্রোডাক্ট স্টোর করতে পারবেন এবং নিজের মত করে শিপ করতে পারবেন। এটি একই সাথে আপনার গুদামজাতকরণ খরচ কমিয়ে দেবে এবং মিলিয়নের বেশি কাস্টমারের কাছে আপনার পণ্য বিক্রি করার সুযোগ করে দেবে।
যদিও Amazon এর এই সার্ভিসটি ব্যবহার করতে হলে আপনাকে অতিরিক্ত কিছু ফি দিতে হবে, তারপরেও তা পরের মেথড থেকে কম ব্যয়বহুল।
আপনার জন্য এই বিজনেসটি লাভজনক হতে পারে যদি,
নিজের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রাইভেট লেবেল বিজনেস
নিজের ওয়েবসাইটে স্বাধীন ভাবে পণ্য বিক্রি করেও আপনি প্রাইভেট লেবেল বিজনেস করতে পারেন। যাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ানোর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে তাদের জন্য এই বিজনেস মডেলটি চমৎকার হতে পারে। এই মডেলে আপনি পণ্যের দাম, ব্র্যান্ডিং, ডিজাইনিং, মার্কেটিং প্রতিটি ক্ষেত্রে পাবেন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। উদ্যোক্তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এই বিজনেস মডেলটি।
এই ধরনের বিজনেসে আপনাকে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগ করতে হবে এবং এতে ঝুঁকিও বেশি। আপনাকে এই ধরনের বিজনেসে সফলতা পেতে হলে ভাল ই-কমার্স অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং সঠিক ই-কমার্স সফটওয়ার ব্যবহার জানতে হবে।
এই বিজনেস মডেলটি আপনার জন্য লাভজনক হতে পারে যদি,
অনলাইনে সাবস্ক্রিপশন বিজনেসের মাধ্যমে লাভবান হবার এখনি উপযুক্ত সময়। নির্দিষ্ট কাস্টমারদের প্রয়োজন আইডেন্টিফাই করে মাসিক ভিত্তিতে তা সরবারহ করাই হচ্ছে সাবস্ক্রিপশন বিজনেস। রেগুলার ব্যাসিসে হাই কোয়ালিটি প্রোডাক্ট সরবারহ করাই সাবস্ক্রিপশন মডেলের মূল লক্ষ্য৷
এই বিজনেস মডেল আপনার জন্য লাভজনক হতে পারে যদি,
আশা করছি আপনি জানলেন বর্তমানে কোন বিজনেস মডেল গুলো আপনার জন্য লাভজনক হতে পারে। এবার আপনার নিজেকে কিছু প্রশ্ন করুন,
আজকে এই পর্যন্তই, দেখা হবে পরবর্তী টিউনে সে পর্যন্ত ভাল থাকুন। আল্লাহ হাফেজ!
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।