টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মত চলে এসেছি নতুন কোন টিউন নিয়ে।
বর্তমান সময়ের একটি সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং আপনাকে দেবে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ। তবে ফ্রিল্যান্সিং কে ক্যারিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথটি মোটেও সহজ না। আপনার সফলতার জন্য দরকার ধৈর্য এবং পরিশ্রম।
প্রথম দিকের সময় গুলো প্রতিটা ফ্রিল্যান্সারের কাছেই চ্যালেঞ্জিং সময় বলে বিবেচিত হয়, কাজ পাওয়া যায় না, স্বল্পমূল্যে কাজ করতে হয়, বিরক্তিকর ক্লায়েন্টদের সাথে ডিল করতে হয়।
তো আপনার ফ্রিল্যান্সিং জার্নির শুরুটা কিভাবে হতে পারে, কোন কোন মাধ্যম থেকে আপনি কাজ পেতে পারেন এই সকল বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করব আজকের এই টিউনে।
চলুন এমন কিছু মাধ্যম সম্পর্কে ধারণা নেয়া যাক যেখান থেকে আপনি কাজ পেতে পারেন৷ আপনি যে ক্যাটাগরিতেই কাজ করেন না কেন, সকল ক্ষেত্রেই এই মাধ্যম গুলো আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
আমরা মোটামুটি সবাই জানি LinkedIn হচ্ছে একটি B2B সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক। এই LinkedIn আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং কাজ পেতে দারুণ ভাবে সাহায্য করতে পারে।
Jobs ট্যাব থেকে যেমন ফুল-টাইম জব সার্চ করা যায় তেমনি ফ্রিল্যান্সিং কাজও পাওয়া যায়। এজন্য আপনাকে সার্চটি ভাল ভাবে ফিল্টার করতে হবে, আপনি Job Type থেকে Part-Time, Other, Contract, এবং Temporary সিলেক্ট করার মাধ্যমে কাজ সার্চ দিতে পারেন।
ফুল-টাইম জব গুলো যারা Post করে আপনি তাদের সাথেও কন্টাক্ট করতে পারেন, যদি তারা রিমোট ওয়ার্ক এক্সেপ্ট করে তাহলে আপনিও সিলেক্ট হতে পারেন।
এছাড়াও আপনি LinkedIn এ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে কাজ খুঁজতে পারেন। কেউ কেউ আপনার কাজের প্রতি আগ্রহী হতেও পারে।
Upwork, Freelancer.com, এবং Fiverr এর নতুন ফ্রিল্যান্সারদের পোর্টফলিও বিল্ড করতে দারুণ ভাবে সাহায্য করে প্ল্যাটফর্ম গুলো। বিভিন্ন জব বোর্ড প্ল্যাটফর্ম গুলোতে নতুন ফ্রিল্যান্সাররা কাজ পেতে পারে। তবে সেখানে কোন কোন ক্লায়েন্ট খুবই কম পেমেন্টে কাজ করাতে চায়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডেসক্রিপশন ভাল ভাবে পড়ে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
কিছু জব বোর্ড প্ল্যাটফর্ম,
তাছাড়া ফ্রিল্যান্সাররা Indeed এবং Neuvoo এর মত বৃহৎ জব বোর্ড গুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
ফেসবুক আমাদের বিভিন্ন কাজে আসতে পারে। ফেসবুক এর মাধ্যমে যেমন আজকাল পন্য কেনা-বেচা করা যায়, তেমনি ফ্রিল্যান্সিং কাজ পেতে পারেন ফেসবুকে। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে যেখান থেকে ফ্রিল্যান্সাররা কাজ পেতে পারেন।
আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার হলে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে জয়েন থেকে, প্রয়োজন মত কাজ পেতে পারেন। এই মুহূর্তে অনেক নতুন ফ্রিল্যান্সার ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে কাজ পাচ্ছে।
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এমনই কিছু সেরা গ্রুপের লিংক নিচে দেয় হয়। প্রতিটি গ্রুপই এখানে সিক্রেট গ্রুপ সুতরাং আপনাকে গ্রুপে জয়েন হয়ে Post গুলো দেখতে হবে।
ফেসবুকের মতই টুইটারও আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং কাজ পেতে সাহায্য করতে পারে। বলতে গেলে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য ফেসবুক থেকেও জনপ্রিয় হচ্ছে টুইটার।
নিচে উল্লেখিত একাউন্ট গুলো ফ্রিল্যান্সিং Gigs প্রোমোট করে থাকে। এছাড়াও আরও অনেক একাউন্ট রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি নিয়মিত কাজের আপডেট পেতে পারেন।
টুইটার একাউন্ট এর মত হ্যাশট্যাগের মাধ্যমেও কাজ পাওয়া যায়। আপনি যে ক্যাটাগরিতে কাজ পেতে চান সেটার হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে টুইটারে Post করতে পারেন। আপনার মত অনেকেই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতে পারে এজন্য আপনার উচিৎ সুন্দর ভাবে নির্দিষ্ট টুইটটি সাজানো।
ডিজিটাল মার্কেটিং তথা ফ্রিল্যান্সিং এ আপনাকে দারুণ ভাবে সাহায্য করতে পারে ইমেইল। আপনি বিভিন্ন কোম্পানিকে আপনার কাজ দেখিয়ে কাজের জন্য মেইল করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে ইমেইলে আপনার পোর্টফলিও যাতে আকর্ষণীয় হয়। যখন কোন কোম্পানি আপনার মধ্যে স্পেশাল কিছু খুঁজে পাবে তখনই তারা আপনার প্রতি আগ্রহী হবে।
কোন কোম্পানিকে ইমেইল পাঠানোর আগে আপনাকে কয়কটি বিষয়ের উপর নজর রাখতে হবে৷ প্রাথমিকভাবে আপনি একটি ইন্ট্রুডাক্টরী ইমেইল পাঠাবেন। সেখানে তুলে ধরার চেষ্টা করুন, আপনি কে, কি করছেন, কোম্পানিকে কি দিতে পারবেন।
সঠিক ভাবে তৈরি করা একটি পরিচিতি ইমেইল লং-টার্ম বেনিফিট দিতে পারে আপনাকে। হতে পারে এই মুহূর্তে আপনি কাজ পাবেন না, কিন্তু তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারলে ভবিষ্যতে নতুন রুলে আপনি কাজ পেতে পারেন।
যেমন আপনি যদি কন্টেন্ট রাইটার হোন তাহলে আপনার কিছু আর্টিকেল আইডিয়া তাদের কাছে প্রকাশ করুন। তাদের জানান যে কিভাবে এই ধারণা গুলো তাদের ম্যাগাজিন বা ব্লগে ব্যবহৃত হতে পারে। সর্বশেষ মাথায় রাখবেন ইমেইলটির ভাষা এমন হবে যেন মনে হয় এর পাঠক হচ্ছে একজন ব্যক্তি, মোট কথা কোন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে লিখবেন।
উপরের মেথড গুলো ফলো করা ছাড়াও আরও কিছু বিষয় মেইনটেইন করতে পারলে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে থাকতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং এ সফলতা পেতে হলে আপনাকে পরিচিত বাড়াতে হবে, বিভিন্ন পক্ষের সাথে রিলেশনশিপ বিল্ড করতে হবে। আপনি নিজেকে যত বেশি প্রচার করতে পারবেন কাজ পাবার সম্ভাবনা তত বৃদ্ধি পাবে।
এবার অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কিভাবে নিজের পরিচিতি বাড়াব অথবা নেটওয়ার্ক বিল্ড করার ওয়ে কি? চলুন নেটওয়ার্ক বিল্ড করার কিছু পথ দেখে নেয়া যাক।
আপনাকে সব জায়গায় পরিচিত লাভ করতে হবে এমন নয়, চেষ্টা করুন আপনি যে গ্রুপে আছেন সেখানে যেন নিজের একটা আইডেন্টেকটিউনস তৈরি হয়।
আপনি যখন প্রচুর কাজ পেতে থাকবেন তখন নিজের প্রোমোশন কমিয়ে দিলে চলবে না। আপনাকে সঠিক ট্র্যাকে থাকতে হবে। আপনি কাজ পেতে থাকলেও নিজের নেটওয়ার্ক বিল্ড করা অব্যাহত রাখুন। বিভিন্ন পক্ষকে নিউজলেটার পাঠাতে থাকুন।
নিজেকে প্রোমোট করা চালিয়ে গেলে আপনি সহজে ক্লাইন্ট হারাবেন না এবং নিজের পজিশনিং করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি এমন যে আপনাকে ক্লায়েন্টের সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক তৈরিতে মনোযোগী হতে হবে। কোন মত কাজ শেষ করে পেমেন্ট নিয়ে নিলেন, এমনটি করলে একটা সময় আপনি আর কাজ পাবেন না। এই ধরনের কাজের ফলে আপনার রেটিং কমে যেতে পারে তখন মার্কেটপ্লেসগুলোও আপনাকে প্রোমোট করবে না।
ক্লায়েন্টদের সাথে ভাল সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সবচেয়ে বেশী জরুরি, তাদেরকে কাজের অতিরিক্ত কিছু ভ্যালু দিন। ক্লায়েন্ট যখন অতিরিক্ত কিছু পাবে তখন এমনিতেই খুশি হয়ে ভাল রিভিউ দেবে, পাশাপাশি পরবর্তী কাজের জন্য আপনাকেই বাছাই করবে।
তাছাড়া অতিরিক্ত ভ্যালু হিসেবে আপনি সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল এবং আপনার ব্লগে বিভিন্ন উপকারী টিউটোরিয়াল দিতে পারেন।
আপনি যদি নিজের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারেন তাহলে বলা যায় আপনি ফ্রিল্যান্সিং এ দীর্ঘমেয়াদি একটা সফলতা পাবেন। নেটওয়ার্ক তৈরিতে অলসতা করা যাবে না।
আপনি নিজের শক্ত একটি পজিশন তৈরি হবার আগ পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করুন এবং পরবর্তীতে সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করুন।
আজকে এতটুকুই, পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।