টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মত চলে এসেছি নতুন কোন টিউন নিয়ে। আজকে আমি আলোচনা করব Emotional Intelligence নিয়ে।
Emotional Intelligence বিষয়টি জনপ্রিয়তা পায় ১৯৯৫ সালে, যখন সাংবাদিক ড্যানিয়েল গোলম্যানের লেখা Emotional Intelligence বইটি প্রকাশিত হয়। সাধারণ ভাবে কোন ব্যক্তির নিজস্ব আবেগ, অন্যদের অনুধাবন করার দক্ষতা হল বা ক্ষমতা হল Emotional Intelligence। Emotional Intelligence দক্ষতার অধিকারী কোন ব্যক্তি, বিভিন্ন অনুভূতির মধ্যে পার্থক্য করতে পারে এবং সেগুলো যথাযথভাবে লেবেল করতে পারে, চিন্তাভাবনা, আচরণের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সংবেদনশীল তথ্য ব্যবহার করতে পারে এবং পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বা নিজের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আবেগগুলো পরিচালনা এবং সামঞ্জস্য করতে পারেন।
তো আজকের এই টিউনের মুল বিষয়বস্তু হচ্ছে কিভাবে নিজের মধ্যে Emotional Intelligence ডেভেলপ করবেন। আমি ড্যানিয়েল গোলম্যানের Emotional Intelligence বইটি সহ আরও বেশ কিছু বইয়ের আলোকে আলোচনা করার চেষ্টা করব, কিভাবে একজন ব্যক্তি নিজের মধ্যে Emotional Intelligence ক্ষমতা তৈরি করতে পারে।
যখন কেউ আপনাকে কোন গভীর বা চ্যালেঞ্জিং বিষয়ে প্রশ্ন করবে তখন তৎক্ষণাৎ এর উত্তর না দিয়ে কিছুটা সময় নিন। ৫, ১০, ১৫ সেকেন্ড সময় নিতে দ্বিধা বোধ করবেন না।
মূলত যে বিষয়টি ঘটে, আপনি যখন দ্রুত জবাব দিতে যান তখন আপনার মস্তিষ্ক অস্থির হয়ে পড়ে এবং সঠিক ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা কমে যায়। কিছুটা সময় নিন, শান্ত হোন দেখবেন সঠিক উত্তরটা দিতে পারছেন।
কমেডিয়ান Craig Ferguson তার একটি ইন্টারভিউয়ে গুরুত্ব তিনটি প্রশ্নের কথা উল্লেখ্য করেন। যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়ার নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করুন,
নিজেকে এই প্রশ্ন গুলো করতে আপনার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগতে পারে কিন্তু এটি কয়েক বছরের আক্ষেপকে আটকাতে পারে।
আপনি হয়তো নির্দিষ্ট অনুভূতি বা ইমোশনকে আটকাতে নাই পারেন, তবে নিজের চিন্তাভাবনা গুলো নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে আপনি এই অনুভূতির প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
আমি যদি বিষয়টি আরেকটু সহজ ভাবে বলি, আপনি বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কথাই ভাবুন করোনা ভাইরাস মহামারী প্রচুর নেতিবাচক আবেগের কারণ হতে পারে। আপনি এই নেতিবাচক অনুভূতিগুলির প্রতি মনোনিবেশ করলে কিন্তু আপনার দ্বারা কোন প্রোডাক্টিভ কাজ করা সম্ভব হবে। আপনি যা করতে পারেন সেটা হল আপনার চিন্তা ভাবনাকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে পারেন এতে করে আপনি যেকোনো কাজে মনোনিবেশ করা সহজ হবে। তবে আপনাকে অবশ্যই করোনা সংক্রমণের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
সাধারণ ভাবে কেউ সমালোচিত হতে চায় না। তবে এটি উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রায় সমস্ত ফিডব্যাকই আপনার জন্য মূল্যবান। সমালোচনার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন মানুষজন আপনাকে কিভাবে দেখছে, নিজেকে কোথায় ডেভেলপ করতে হবে।
অবশ্যই, যদি কেউ আপনাকে নেগেটিভ ফিডব্যাক দেয় সেটা আপনার জন্য হজম করা কঠিন হতে পারে। এজন্য আপনাকে তৎক্ষণাৎ সাড়া দেওয়া উচিত নয়। কিছুটা সময় নিন আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন। তারপরে, নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন কীভাবে ব্যক্তির ফিডব্যাকটি আপনাকে আরও উন্নত করতে পারে। অথবা এটি কীভাবে আপনাকে অন্যের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে।
আপনি অবশ্যই অন্যের সমালোচনা করবেন অথবা ফিডব্যাক দেবেন, তবে খেয়াল রাখুন এটি যেন গঠনমূলক হয়। প্রশংসা ও আন্তরিক প্রশংসায় মনোনিবেশ করুন, কারণ এটি লোকদের সঠিকভাবে কাজ করতে উৎসাহিত করবে।
যদি কেউ ভুল করে থাকে তবে তার নেতিবাচক দিকে মনোনিবেশ করবেন না। আপনার সমালোচনাটি গঠনমূলক হিসেবে তৈরি করুন, উদাহরণস্বরূপ, অন্যরা ধরিয়ে দেবার আগে আপনি কীভাবে একইরকম ভুল করতেন সেটা তাদের বলুন। এতে করে অন্য ব্যক্তি আপনাকে পার্টনার হিসেবে দেখবে যিনি সাহায্য করার চেষ্টা করছেন।
এমন সময় আসতে পারে যখন আপনি এবং আপনার গ্রুপ, আপনার অংশীদার, এমন ভাবে পরিস্থিতি পরিচালনা করবে আপনি এটার দ্বিমত পোষণ করবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সিদ্ধান্ত গুলোর উপকারিতা এবং অপকারীতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করতে হবে।
দ্বিমত পোষণের মাধ্যমে আপনি নিজেকে সবার থেকে আলাদা করতে পারেন স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ভাবতে পারেন। তবে সিদ্ধান্তটিকে নাশকতার চেষ্টা করার পরিবর্তে আপনি এটিকে কার্যকর করার জন্য এখানে আন্তরিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবার চেষ্টা করুন
এটা ঠিক যে করার চেয়ে বলা সহজ। কিন্তু তারপরেও অন্যদের সমস্যায় সহানুভূতি প্রদর্শন করুন। অন্যের পরিস্থিতি বিচার করার আগে তাদের অনুভূতিগুলোতে ফোকাস করুন।
আপনি যখন কোন বড় ধরনের কাজ অন্যকে চাপিয়ে দিতে চাইবেন তখন কখনো বলবেন না, "এটা কোন ব্যাপার না, আমি এর আগেও এমন কাজ করেছি"। অন্যকে কোন দায়িত্ব দেয়ার আগে নিজেকে তার জায়গায় ভাবুন, আপনি তার জায়গায় থাকলে কেমন আচরণ আশা করতেন সেটা কল্পনা করুন।
আপনি যদি কোন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন এখন দাম্ভিকতা দেখিয়ে সেটা একাই সমাধানের চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার দাম্ভিকতা বা অহংকার ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
আপনি যখন সাহায্যের জন্য অন্যের কাছে যাবেন তখন অবশ্যই তার ক্ষমতাকে মূল্যায়ন করুন আপনি দেখানোর চেষ্টা করুন আপনি তার চেষ্টাকে মূল্য দিচ্ছেন। তাকে অবশ্যই বলুন, "আমি আপনাকে ছাড়া এটি করতেই পারতাম না " বা "আমি এটি আপনার সাথেই করতে চাই"
যখন কারো সাহায্য লাগবে অবশ্যই তাকে সাহায্য করুন। এটি জরুরী নয় যে সে আপনার কাছে সাহায্য চাইবে। আপনি নিজে থেকে এগিয়ে যান। আরও ভাল হয় সরাসরি কাজে লেগে পড়ুন।
এতে করে বিভিন্ন পক্ষের সাথে আপনার আন্তরিকতা, ভালবাসা, বিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে।
আপনি কখনো কি এমন কিছু বলেছেন বা করেছেন যা ফিরিয়ে নিতে চান? জানি দুঃখিত বলা সহজ নয়, তবে এটি করা নম্রতার পরিচয় দেয় এবং অন্যকে আপনার কাছে আকর্ষণ করে।
সব সময় মনে রাখবেন যে ক্ষমা চাওয়ার অর্থ সর্বদা এই নয় যে আপনি ভুল। এর অর্থ হল ইগুর চেয়ে আপনার কাছে সম্পর্কের মূল্য বেশি।
কেউ আপনাকে ক্ষতি করতে চাইলে বা ক্ষতি করলে সব সময় এর প্রতিশোধ নিতে হবে এটা জরুরী নয়। কখনো কখনো ক্ষমা করে দেয়ার মাধ্যমে সব কিছুর সর্বোত্তম সমাধান হতে পারে। ক্ষতির বিপরীতে আপনি প্রতিশোধ নিলেন এর মানে হল দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকল।
তাছাড়া বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলে যে ক্ষমা করার গুন আপনার শারীরিক, মানসিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
আমাদের যখন নিজেদের উপর পূর্ণ বিশ্বাস না থাকে তখন আমরা অন্যের কথা শুনতে পছন্দ করি। এটি নিজের উপর বিশ্বাসকে কিন্তু হ্রাস করে।
লোকে সব সময় আপনার সিদ্ধান্তকে মেনে নাও নিতে পারে তার মানে এটা নয় যে আপনি ভুল। ভেবে চিন্তা সিদ্ধান্ত নি, নিজেকে শুনুন, নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলুন।
Emotional Intelligence এর মুল বিষয় হচ্ছে নিজেকে বুঝতে পারা নিজের আবেগকে, নির্দিষ্ট পরিবেশে কন্ট্রোলে রাখা। আশা করছি উপরের আলোচনা আপনার নিজের মধ্যে Emotional Intelligence ডেভেলপ করতে সাহায্য করবে।
তো কেমন হল আজকের টিউন জানাতে অবশ্যই টিউমেন্ট করুন। আজকের মত এই পর্যন্তই, পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আল্লাহ হা-ফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।