যেহেতু সিলিন্ডারের গ্যাস খুব বেশি চাপে তরল করে প্রবেশ করানো হয়, তাই এটির বিস্ফোরণও খুব মারাত্মক হয়। এর বিস্ফোরণ হলে শক ওয়েভ ছড়িয়ে পড়ে। এ শক ওয়েভ শরীরের যে অংশে লাগে, সে অংশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনেক সময় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।

চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক ভিডিওটি দেখতে  পারেন হয়তো এই একটি ভিডিও একজন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে!

প্রথমেই আমারা জেনে নেই কি কি কারনে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয় বা এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মূল কারণ:

১ . সিলিন্ডারের গ্যাস লিক থেকেই কিন্তু মূল সমস্যা। সিলিন্ডারে যদি লিক হয়, তাহলে গ্যাস ভালভ, হোসপাইপ কিংবা রেগুলেটর ইত্যাদি লিক হয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।

২ . মেয়াদউত্তীর্ণ সিলিন্ডারে যদি উচ্চ চাপে গ্যাস ঢুকানো হয় তবে উক্ত সিলিন্ডার গ্যাসের চাপ রক্ষা করতে না পেরে বিষ্ফোরিত হয়ে যায়।

৩ . কোনও ভাবে যদি আগুন বা উচ্চ তাপ সরাসরি সিলিন্ডারের সংস্পর্শে আসে, তা হলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের সম্ভাবনা থাকে।

৪ . নিম্নমানের সিলিন্ডারও বিস্ফোরণের অন্যতম কারণ।

মুলত এই সকল কারণগুলোই এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের অন্যতম কারন

বিস্ফোরক পরিদফতর থেকে গ্যাস সিলিন্ডারের যেসব নিরাপত্তা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে-

এলপিজি সিলিন্ডার যেভাবে রাখতে হবে:

১. এলপি গ্যাস সিলিন্ডার খাড়াভাবে রাখতে হবে।

২. সিলিন্ডার এমন স্থানে খাড়াভাবে রাখা উচিত যেখানে যানবাহন বা মানুষ চলাচল করে না।

৩. গ্যাস সিলিন্ডারকে মেঝের সমতলে রাখতে হবে।

৪. চুলা বা অন্য কোনো এলপিজি ব্যবহার যন্ত্রকে সিলিন্ডারের চেয়ে উঁচুতে রাখতে হবে।

৫. ঠাণ্ডা ও অবাধ বাতাস চলাচল করে এরূপ স্থানে সিলিন্ডার রাখতে হবে।

৬. প্রচণ্ড ধাক্কা বা পড়ে যাওয়া থেকে সিলেন্ডারকে রক্ষা করতে হবে।

৭. তাপ ও আগুনের উৎস এবং দাহ্য বস্তু ও গ্যাস থেকে সিলেন্ডার দূরে রাখতে হবে।

৮. গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার ও গ্যাসশূন্য সিলিন্ডার আলাদা রাখতে হবে।

৯. সিলেন্ডার সরাসরি সূর্যের আলো, বৃষ্টি এবং তাপ থেকে নিরাপদ দূরুত্বে রাখতে হবে।

১০. কখনও বদ্ধ স্থানে সিলিন্ডার রাখা যাবে না।

১১. তাপ নির্গত হয় এমন কোনো বস্তু সিলিন্ডারের এক মিটারের মধ্যে রাখা বা ব্যবহার করা যাবে না।

এলপিজি সিলিন্ডারে রান্নার সময় করণীয়:

১. ব্যবহারের আগে সিলিন্ডারের লেবেল ও মেটেরিয়াল সেফটি ডাটা শিট (এমএসডিএস) পড়ে নিতে হবে।

২. রান্নার সময় দরজা-জানালা খোলা রাখতে হবে।

৩. রান্নার সময় নাইলনের জামা ব্যবহার না করে সুতি কাপড়ের অ্যাপ্রোন ব্যবহার করতে হবে।

৪. আগে ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে তারপর চুলা জ্বালাতে হবে।

৫. জ্বলন্ত চুলা থেকে পাত্র নামানো যাবে না।

৬. রান্না করা অবস্থায় চুলা ছেড়ে অন্যত্র যাওয়া যাবে না।

৭. রান্না শেষে প্রথমে রেগুলেটর নব ও পরে চুলার নব বন্ধ করে দিবেন। অন্যথায় পাইপে গ্যাস থেকে যাবে।

৮. ব্যবহারের পর গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখতে হবে।

৯. সিলেন্ডার ব্যবহারের সময় সেফটি জুতা এবং হাতে মোজা ব্যবহার করা উচিত।

১০. ব্যবহার শেষে সিলিন্ডার বাল্বের মুখে সেফটি ক্যাপ আটকে রাখতে হবে।

১১. ব্যবহারের পর অবশ্যই রেগুলেটর সুইচ বন্ধ কর দিতে হবে।

১২. লিক দেখার পর ভুলেও দিয়াশলাই জ্বালাবেন না। বৈদ্যুতিক সুইচ স্পর্শ করবেন না। আগুন জ্বলতে পারে এমন সব উপকরণ বন্ধ করে রাখবেন এবং দ্রুত যথাযথ কর্তৃপক্ষকে ফোন করবেন।

এলপিজি সিলিন্ডর যেভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে:

১. সিলিন্ডারের সেফটি ক্যাপ সিলিন্ডারের সঙ্গে রাখতে হবে।

২. উপযুক্ত ট্রলির সাহায্যে সিলিন্ডার স্থানান্তর করতে হবে।

৩. দাহ্য ভর্তি গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ পরীক্ষা খোলা আগুন দিয়ে না করে সাবানের ফেনা দিয়ে করতে হবে।

৪. সিলেন্ডারে কোনো ক্ষতি বা আঘাতের দাগ মেরামত বা রং করে ঢেকে দেয়া যাবে না।

৫. সিলিন্ডারের কোনো ক্ষতি হলে তাৎক্ষণিকভাবে সেটা সংশ্লিস্ট কোম্পানিকে ফেরত দিতে হবে।

৬. গ্যাসের গন্ধ পেলে লাইট, ফ্যানসহ যাবতীয় ইলেকট্রিক সামগ্রী ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। গন্ধ পেলে ঘরের দরজা খুলে দিতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ি থেকে দ্রুত বেরিয়ে পড়তে হবে।

৭. সিলেন্ডার খালি হোক বা পূর্ণ হোক ব্যবহারের পর অবশ্যই ক্যাপ লাগিয়ে রাখতে হবে।

৮. নিজে বা অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে সিলেন্ডার মেরামত করানো যাবে না।

৯. সিলিন্ডারের আশপাশে শুকনো কাঠ-কয়লা অথবা অন্য কিছু জ্বালানো যাবে না।

১. দুর্ঘটনা এড়াতে দীর্ঘস্থায়ী ও নিরাপদ সঞ্চালন পাইপ ব্যবহার করতে হবে।

১১. সিলিন্ডারের পাশে ধূমপান করা যাবে না।

১২. সিলিন্ডারের উপরে ভারী কিছু রাখবেন না।

১৩. প্রয়োজনীয় জরুরি ফোন নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে।

আপনি যদি এই সকল নিয়মকানুনগুলো মেনে চলেন তাহলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারেন।