সত্যিকারে আদৌ টাকা ইনকাম Apps আছে কি না? এই বিষয়টা বিভিন্ন সময় এতো বেশী কথা শুনেছি আমি যে, শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে টাকা ইনকাম করার অ্যাপস নিয়ে লিখতে বসলাম।
বর্তমানে আমাদের সবার হাতে হাতে মিনিমাম একটি করে স্মার্টফোন রয়েছে। সে জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করা আমাদের জন্য একদম সহজ হয়ে পড়েছে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেকে মোবাইল দিয়ে অনলাইনে আয় করার জন্য টাকা ইনকাম Apps খুঁজে থাকেন। আপনি শুনে আরো অবাক হবেন যে, এমন অনেক লোক রয়েছে যারা বাটন ফোনে টাকা আয় করার উপায় খুঁজে বেড়ান! আপনি তাদের মধ্যে একজন হলে আজকের টিউন থেকে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। শুধুমাত্র একটু ধৈর্য্যধারণ করে পোস্টটি পড়তে হবে।
আজকের টিউনে আমি ভালোমানের ৫টি Android Apps দিয়ে টাকা আয় করার উপায় জানব। সেই সাথে টিউনের শেষাংশে ২ টি বাংলাদেশী অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস নিয়ে আলোচনা করব, যারা সত্যিকার অর্থে টাকা পরিশোধ করে থাকে। আমি যে ৭ টি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস নিয়ে আলোচনা করব সেগুলো অস্থায়ি নয়। এই ৭ টি অ্যাপস স্থায়িভাবে সবসময় তাদের সেবা চালু রাখবে।
সাধারণত অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস থেকে আয় করার ক্ষেত্রে অ্যাপস এর ভীতরে থাকা বিজ্ঞাপণে ক্লিক করতে হয় কিংবা ভিডিও দেখতে হয়। সেই বিজ্ঞাপণে ক্লিক এবং ভিডিও দেখার পর একাউন্টে সামান্য কিছু টাকা জমা হয়। তবে সমস্যা হয় তখনই যখন এই টাকাটা মানুষ তুলতে পারেনা কিংবা একাউন্ট ব্যান হয়। কিন্তু আজকে যে ৭ টি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস নিয়ে আলোচনা করবো সেগুলো থেকে টাকা আয় করার জন্য এ ধরনের কোন কাজ করতে হবে না আর একাউন্ট ব্যান ও হবেনা।
মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে একটা কথা জানিয়ে রাখছি যে, ব্লগিং ও ইউটিউবে কাজ করে আপনি যে পরিমান টাকা ইনকাম করতে পারবেন, টাকা ইনকাম Apps দিয়ে সেই পরিমান টাকা আয় করতে পারবেন না।
সাধারণত যাদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ নেই তারা মোবাইলের মাধ্যমে Android Apps দিয়ে টাকা আয় করার চেষ্টা করে। তবে এখানেও একটা সমস্যা আছে। আপনার মোবাইলে ইন্টারনেট না থাকলে আপনি Android Apps দিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন না। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস দিয়ে টাকা আয় করার জন্য প্রথমে আপনার মোবাইলে দ্রুত গতি সম্পন্ন ডাটা কিনে নিবেন। সেই সাথে আপনার মোবাইল কিছুটা ভালোমানের হলে কাজ করতে আপনার জন্য সুবিধা হবে।
প্রথমে আমি বিশ্বের জনপ্রিয় ৫ টি টাকা ইনকাম অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস নিয়ে জানব, যারা সত্যিকার অর্থে টাকা পরিশোধ করে থাকে। এই ৫ টি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস দিয়ে টাকা আয় করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজীতে দক্ষতা সম্পন্ন হতে হবে। কারণ এই অ্যাপসগুলোর সকল কার্যক্রম ইংরেজীতে করতে হয়। কাজেই ইংরেজীতে আপনার দক্ষতা না থাকলে এই অ্যাপসগুলো থেকে আপনি টাকা আয় করতে পারবেন না। সো আর কথা না বাড়িয়ে অ্যাপস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
এটি একটি ইন্ডিয়ান অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস। বর্তমানে শুধুমাত্র ভারতের লোকজন এই মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে টাকা আয় করতে পারে। এই অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য তেমন কিছু করতে হয় না। প্রথমে প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপস ইনস্টল করে একটি একাউন্ট তৈরি করে নিতে হয়। ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে খুব সহজে একটি একাউন্ট তৈরি করে নেওয়া যায়। তারপর একটি একটিভ মোবাইল নাম্বার দিয়ে একাউন্ট ভেরিফিকেশন করে নিতে হয়। একাউন্ট ভেরিফাইড হওয়ার পর আপনাকে বিভিন্ন ধরনের টাস্ক কমপ্লিট করার জন্য বলা হবে। অ্যাপস এর নির্দেশনানুসারে টাস্ক কমপ্লিট করলে আপনার একাউন্টে কিছু টাকা জমা হবে।
এটি গুগল এর চমৎকার একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস দিয়ে টাকা আয় করার ক্ষেত্রে এই এপটি সারা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই অ্যাপস থেকে ইনকামের টাকা ক্যাশ করা যায় না। আপনি এই অ্যাপস থেকে আয়ের টাকা দিয়ে শুধুমাত্র গুগল প্লে-স্টোর থেকে বিভিন্ন ধরনের পেইড অ্যাপস ক্রয় করতে পারবেন।
এই অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস দিয়ে টাকা আয় করার জন্য গুগল প্লে-স্টোর থেকে ইনস্টল করে গুগল একাউন্ট ব্যবহার করে সাইনআপ করতে হবে। একাউন্টে লগইন করার পর গুগল আপনাকে প্রতি সপ্তাহে ২০-৩০ টি প্রশ্ন এবং মতামত জিজ্ঞেস করবে। আপনি প্রত্যেকটি প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারলে প্রতিটি উত্তরের জন্য ৫ থেকে ১৫০ টাকা করে ইনকাম করতে পারবেন। এটি গুগলের সার্ভিস হওয়ার কারনে পরিপূর্ণ ভরসা করা যায়।
এটি অনলাইনে কেনাকাঠার জন্য গুগলের একটি অসাধারণ অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস। অনলাইন থেকে সব ধরনের জিনিসপত্র ক্রয় বিক্রয় করে পেমেন্ট করার জন্য এই এপটি গুগল তৈরি করেছে। অনলাইনে কেনাকাঠার ক্ষেত্রে এই অ্যাপস এর অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এটি অনেকটা পেপাল এর মত কাজ করে। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতে এই অ্যাপস এর প্রচুর জনপ্রিয়তা রয়েছে।
এই অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস দিয়ে টাকা আয় করতে চাইলে আপনাকে অ্যাপস ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের কেনাকাঠা করতে হবে। আপনি যত বেশি কেনাকাঠা করবেন, আপনার লেনদেনের উপরে ভিত্তি করে শতকরা হারে আপনার একাউন্টে টাকা জমা হবে। সাধারণত প্রতি ১০০ টাকা ব্যবহারে গুগল ৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত ফেরত দিয়ে থাকে। তাছাড়াও বিভিন্ন ছুটির দিনে কেনাকাঠা ও বিল পরিশোধ করলে গুগল আরো বেশি হারে টাকা ফেরত দিয়ে থাকে।
Swagbucks অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস থেকে আয় করার বিভিন্ন অপশন রয়েছে। এই অ্যাপস দিয়ে মোটামুটি ভালোমানের টাকা আয় করা যায় এবং আয়ের টাকা পেপাল এবং ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করা যায়। তাদের ওয়েব ভার্সন এবং অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন রয়েছে। আপনি চাইলে দুটি পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে এখান থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। অনেকে বলে এটি ব্যবহার করতে হলে মোবাইল রুট করা লাগে তবে আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি এই এপ ব্যবহারের জন্য আপনার Android Phone Root করা লাগবে না।
সাধারণত এই অ্যাপস বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে থাকে এবং বিভিন্ন টাস্ক কমপ্লিট করার অপশন দিয়ে থাকে। এগুলো সঠিকভাবে পুরণ করার পর আপনার একাউন্টে টাকা জমা হবে। এ ছাড়া এখানে তেমন কোন কঠিন কাজ নেই। শুধুমাত্র কয়েকটি সহজ ধাপ অনুসরণ করে খুব সহজে একটি একাউন্ট তৈরি করে কাজ শুরু করতে পারবেন।
অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস দিয়ে টাকা আয় করে টাকা হাতের পাওয়ার ক্ষেত্রে Cointiply অসাধারণ একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস। এই অ্যাপস এর ওয়েব ভার্সনও রয়েছে। এখানে একটি একাউন্ট তৈরি করে আপনি কিছু টাস্ক কমপ্লিট করে বিট কয়েন আয় করে নিতে পারবেন। আপনার উপার্জিত বিট কয়েন ডলারে কনভার্ট করে টাকা উত্তোলন করতে পারনে। সাধারণত এখান থেকে আয় করার জন্য আপনাকে Play Games, Install Apps, Filling Surveys, View ads এর মাধ্যমে বিট কয়েন ইনকাম করে নিতে হবে। এই কাজগুলো যত বেশি করবেন, আপনার ইনকাম তত বেশি হবে।
বাংলাদেশি Android Apps দিয়ে টাকা আয় করার নির্ভরযোগ্য এবং জনপ্রিয় অ্যাপস এখন পর্যন্ত চালু হয়নি। বিশেষকরে মোটামুটি ভালোমানের টাকা আয় করার মত কোন বাংলাদেশি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস এখনো নেই। তবে আমাদের দেশের কিছু ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস রয়েছে যেগুলো থেকে আপনি কিছু ছোট খাটো এমাউন্ট আয় করে নিতে পারবেন। সেই রকম অ্যাপস এর মধ্যে নিচের কয়েকটি অ্যাপস বেশ জনপ্রিয়।
এগুলো ছাড়াও আরো কিছু অ্যাপস রয়েছে যেগুলোতে কাজ করে ছোট ছোট এমাউন্ট ইনকাম করা সম্ভব। এই অ্যাপসগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে যে, এখান থেকে আয় করার জন্য তেমন কোন অভীজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র সহজ কিছু স্টেপ অনুসরণ করে কাজ করতে পারলে টাকা ইনকাম করা সম্ভব হয়। নিচে সে রকম জনপ্রিয় দুটি বাংলাদেশি অ্যাপস নিয়ে আলোচনা করছি।
আমাদের দেশের ডিজিটাল লেনদেনের অধিকাংশ কাজ বিকাশ একদম সহজ করে দিয়েছে। বিকাশকে বাংলাদেশের ডিজিটাল ওয়ালেট হিসেবে গণ্য করা হয়। এই অ্যাপস দিয়ে টাকা পয়সা লেনদেন করার পাশাপাশি অ্যাপস রেফার করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। সাধারণত প্রতিটি রেফার এর জন্য বিকাশ ২০ টাকা পরিশোধ করে থাকে।
গুগল প্লে-স্টোর থেকে বিকাশ অ্যাপস মোবাইলে ইনস্টল করে নিজে নিজে একটি একাউন্ট তৈরি করে সেটিংস থেকে রেফার আইডি ব্যবহার করে অন্যকে অ্যাপস ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ পাঠাতে পারেন। কেউ আপনার পাঠানো লিংক ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাপস ইনস্টল করলে প্রতিটি রেফার এর জন্য আপনার একাউন্টে ২০ টাকা করে জমা হবে। এভাবে আপনি যত বেশি রেফার করবেন আপনার ইনকাম তত বেশি হবে।
বোনাসঃ
bkash এর মতই আরেকটি জনপ্রিয় এপ রয়েছে যার নাম Ring ID। এই এপ দিয়ে অনেকেই প্রচুর ইনকাম করেছেন বলে শুনেছি এবং নিজেও একবার চেষ্টা করে একদিনে ২০০ টাকা আয় করেছিলাম। এটাতে রেফার করে টাকা আয় করা যায় তবে এর মজা হলো এটা ফেসবুকের মত একটা প্লাটফর্ম যা বাংলাদেশে তৈরি। শুধু টাকা আয় করা নয় এতে আপনি বন্ধু এড করা, পেজ তৈরি করা ও লাইভে আসার মত কাজগুলো করতে পারবেন।
এটাকে এক ধরনের মাইক্রো জব এপ্লিকেশন বলা হয়। এখানে বিভিন্ন ধরনের লেখালেখির কাজ পাওয়া যায়। এই অ্যাপসে একটি একাউন্ট তৈরি করে আপনি যে বিষয়ে জানেন সে বিষয়ে ৩০০ শব্দের লেখা সাবমিট করতে পারবেন। আপনার লেখার কোয়ালিটি অনুসারে আপনাকে টাকা পরিশোধ করা হবে। আপনার লেখা যত বড় এবং ভালো হবে আপনাকে তত বেশি টাকা পরিশোধ করা হবে।
এখানে শিক্ষা, বিনোদন, ব্লগিং থেকে শুরু করে নিউজ পোর্টালসহ প্রায় সকল ধরনের লেখালেখির কাজ পাওয়া যায়। সাধারণত অনলাইন আয়, ব্লগিং, বিনোদন ও গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ নিয়ে লিখলে এই অ্যাপস থেকে বেশি টাকা আয় করা যায়। এই এপটি আমাদের দেশের হওয়ার কারনে বাংলা ভাষায় সকল ধরনের লেখা সাবমিট করা যায়।
সম্পূর্ণ টিউন পড়ার পর Android Apps দিয়ে টাকা আয় করার বিষয়টি জেনে আপনি নিশ্চয় অবাক হচ্ছেন। আপনি অবশ্যই ভাবছেন যে, এই সামান্য টাকা আয় করার জন্য এগুলোতে কাজ করার কোন প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলছেন। আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত। এগুলোতে কাজ করে কেউ স্মার্ট এমাউন্ট ইনকাম করতে পারবে না। অনলাইন ভালোমানের এমাউন্ট আয় করতে হলে আপনাকে Blogging অথবা Freelancing নিয়ে কাজ করতে হবে। তাহলে আপনি এর থেকে শুধুমাত্র স্মার্ট ইনকাম নয় বরং নিজের জীবনেই একটা ভালো পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন।
আশা করছি আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে বা আপনি এই এপগুলো থেকে কিছু হলেও যদি আয় করে থাকেন তাহলে অবশ্যই টিউমেন্ট করে জানাবেন। ভালো থাকুন আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করুন।
আমি অরিঞ্জয় ভৌমিক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 3 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
I love to write about technology. I believe, Learning Tech always helps to live better.