যে পাঁচ উপায়ে ঠিকঠাক রাখবেন নিজের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ

টিউন বিভাগ টিপস এন্ড ট্রিকস
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

-বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম-

টিউনের শুরুতে সকল টিউনারদের সালাম ও শুভেচ্ছা রইল। টিউনের শুরুতে বলে নেওয়া ভাল কোন প্রকার ভুল হলে ক্ষমা করবেন। আজ একটু অন্য রকম টিউন নিয়ে আসলাম। কথা না বাড়িয়ে মূল টিউনে আসি।

আমরা বাজার থেকে কম্পিউটার কেনার দুই-এক বছরের মধেই সেটি আর সাচ্ছন্দে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অথবা আপনি নতুন ল্যাপটপ কিনেছেন কিন্তু সেই ল্যাপটপ যদি চালু হতে অনেক সময় লাগে তাহলে কেমন লাগার কথা? অনেক বিরক্তির কারন হতে পারে। কম্পিউটার চালু হতে যদি আপনার ধৈর্য পরীক্ষা দিতে হয় কেমন লাগে বলেন? এই রকম অনেক সমস্যা আপনি নিজেই খুব সহজে মিটিয়ে ফেলতে পারেন। দরকার কিছু টিপস অ্যান্ড ট্রিকস যা আপনি এই টিউনে পাবেন। পাঁচটি টিপস শেয়ার করব আশা করি আপনারদের কাজে লাগবে।

১#তাপমাত্রা মনিটরিং

কম্পিউটারের মধ্যে কি চলছে আমরা সাধারণত খেয়াল করি না। কম্পিউটার যখন এক-দুই বছরের পুরনো হতে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবে সিপিইউ এর ওপরের কুলারটিতে ধুলা জমে যায়। এতে কম্পিউটার ঠাণ্ডা করার কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এ ছাড়া ওই ফ্যানের নিচে আর সিপিইউ এর মাঝে একটা পাতলা থার্মাল পেস্টের লেয়ার থাকে, যা সময়ের সাথে সাথে সেটাও কিছুটা শুকিয়ে আছে। ফলে সিপিইউ থেকে তাপ কুলার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না।

এখন থেকে কম্পিউটার চালিয়ে এইচডব্লিউ-মনিটর (HWMonitor) নামে সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনি বিনামূল্য পাবেন। কম্পিউটার যখন চালু করেছেন, আর যখন একসাথে অনেক প্রোগ্রাম চালাচ্ছেন, তখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত আছে মাঝে মাঝে নজর রাখুন। যদি দেখেন তাপমাত্রা সাধারণত ৩৫-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ৭৫ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, তাহলে চিন্তার কোন কারন নেই। তাপমাত্রা যদি তার থেকে বেড়ে যায়, তাহলে ভাল করে ভেতরের ধুলা পরিষ্কার করুন। অনেক ক্ষেত্রে এতেই কাজ হয়ে যায়। কিন্তু তাতেও না হলে থার্মাল পেস্ট পাল্টাতে হতে পারে। নিজে না পারলে অভিজ্ঞ কারোর সাহায্য নিন। আশা করি আপনি নিজে করতে পারবেন।

২#হার্ডডিস্ক স্লো

আমাদের অনেকের কম্পিউটার চালু হতে বা সামান্য কোন একটা কাজ করতে বা ফাইল খুলতেই অনেক সময় লেগে যায়। এই রকম হলে আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপের হার্ডডিস্কের স্পীড কত আরপিএম (RPM) চেক করুন। যদি সেটা ৫৪০০ রোটেশন প্রতি মিনিট হয় তাহলে স্লো হবেই। কারন সাধারণত  ৭৫০০ আরপিএম(RPM) হার্ডডিস্কের থেকে ৫৪০০ রোটেশন হার্ডডিস্ক অনেক স্লো হবে। কোন হার্ডডিস্ক কেনার পূর্বে অবশ্যই খেয়াল করবেন ৭২০০ আরপিএম কিনা।

এখন কথা হল, আপনার আগের হার্ডডিস্ক যদি ৭২০০ আরপিএম হয় তাহলে  স্লো কেন?  সাধারণত আমাদের হার্ডডিস্ক মধ্যে ফাইল গুলো ছরিয়ে থাকে যার কারনে আমাদের অনেক সময় ফাইল গুলো খুঁজে পেতে হার্ডডিস্ক সময় নেয়। এই জন্য আপনি আপনার হার্ডডিস্ক কে ডিফ্রাগ করুন। এর ফলে যত তথ্য হার্ডডিস্কে রয়েছে তার সব গুলো একটা নিদিষ্ট অংশে থাকবে, হার্ডডিস্ক জুরে ছরিয়ে থাকবে না, ফলে আপনি যখন ফাইল খুঁজবেন, অনেক তারাতারি খুঁজে পাবেন। আর আপনার নতুন কম্পিউটার হলে শুরুতে বায়োস সেটিং  (BIOS Settings) থেকে হার্ডডিস্ক কে ফাস্ট বুট কিরে দিন। আশা করি আপনার উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম মেশিন চালু হবে আর দ্রুত।

৩#র‍্যামের যথাযথ ব্যবহার

আমরা জানি আমাদের কম্পিউটারে মধ্যে র‍্যাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কম্পিউটারে বা ল্যাপটপে যদি র‍্যাম জায়গা কম (১জিবি) থাকে তাহলে কিন্তু স্লো হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু আপনার কম্পিউটারে যদি (৮জিবি) র‍্যাম থাকা সত্ত্বেও সামান্য কিছু ট্যাব খুলতেই প্রায় অর্ধেক র‍্যাম ভরে যায়, তারপর কিছু ছবি বা ভিডিও এডিটের কাজ করার কোন উপায় থাকে না। সব র‍্যাম লোড হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে কম্পিউটারে শুরু হতেই পেছনে কি কি সফটওয়্যার চালু হয়ে যায়, যা আপনি হয়তো কোন দিন ব্যবহার করেননি বা খুব অল্প ব্যবহার করেছেন। টাস্ক ম্যানেজার থেকে দেখুন স্টার্টআপে কি কি সফটওয়্যার চালু হচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় সকল সফটওয়্যার বন্ধ করুন। তারপর অটো আপডেটে কি কি সফটওয়্যার রয়েছে, যার জন্য আপনার কম্পিউটার এবং নেট স্লো হয়ে যেতে পারে, সব বন্ধ করুন।

ম্যানুয়াল আপডেট করুন নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী। খেয়াল রাখুন ক্যাশ মেমরি এবং টেম্প ফাইল, জাঙ্ক ফাইল নিয়মিত ক্লিয়ার করেছেন কিনা। শুধু র‍্যাম নয়, আপনার কম্পিউটার আগের থেকে ফাস্ট হবে। এই জন্য আপনি একটি ফ্রি সফটওয়্যার(C Cleaner) ব্যবহার করতে পারেন। একটি কথা মনে রাখা দরকার আপনি যদি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন তাহলে বলব আপনার যদি ৮ জিবি র‍্যাম থাকে তাহলে অবশ্যই ৬৪ বিট ইন্সটল করবেন তাহলে আপনার সকল র‍্যাম ব্যবহার উপযোগী হবে। আপনি যদি ৩২ বিট (৮৬) ব্যবহার করেন তাহলে আপনি সর্বোচ্চ ২ জিবি ব্যবহার হবে আর বাকি র‍্যাম আনউইজ দেখাবে। আমার পরামর্শ হবে আপনি ৬৪ বিট অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন।

৪#প্রয়োজনীয় আপডেট ও সফটওয়্যার ইন্সটল

আমরা সাধারণত কোন আপডেট দেখলেই সেটা "রিমাইন্ড মি লেটার" করে রাখি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এটা দরকারি তাই নয়, আপনার কম্পিউটারকে সুরক্ষিত রাখার জন্য হলেও আপডেট রাখতে হয়। ওয়ানাক্রাই (Wanna Cry) বেশি দিন আগের কথা নয়। এই ভাইরাস আপনার কম্পিউটার কে হ্যাক করে এমন অবস্থায় রেখে দিবে যে, আপনি তাদের দাবি অনুযায়ী টাকা না দেয়া অবধি কিছু করতে পারবেন না। এই ভাইরাস আসার আগেই অনেকে উইন্ডোজ আপডেট দিয়েছিল বা পড়ে অনেকে আপডেট করে নিয়েছে তাদের কম্পিউটারে কিছু হয়নি। আপডেটগুলো বেশির ভাই ক্ষেত্রেই কোন নতুন ফিচার বা পুরনো সমস্যা মেটানোর জন্য করা হয়। তাই আপনার প্রয়োজনীয় ফাইল গুলো আপডেট রাখুন। তাহলে আপনি অনেক নিরাপদ থাকবেন।

অনেকে আবার অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইন্সটল করে থাকেন। আপনার দরকার নেই এমন সফটওয়্যার ইন্সটল করা থেকে বিরত থাকুন। সব সময় যে ড্রাইভে উইন্ডোজ ইন্সটল দিবেন সেই ড্রাইভে বেশি পরিমানে জায়গা নিবেন। দেখবেন আপনার উইন্ডোজ ড্রাইভ যেন ফুল না হয়ে যায়। এই জন্য অবশ্যই ডেক্সটপ, ডকুমেন্ট, ডাউনলোড, মিউজিক, ভিডিও মত ফাইল গুলো যেন ভরে না রাখি।

৫#ক্লিন ফরম্যাট করুন

ডেক্সটপ ভর্তি আইকন, ফাইল, হার্ডডিস্ক প্রায় ভর্তি, এ রকম অবস্থায় কম্পিউটার আগের থেকে স্লো চলবে, সেটাই স্বাভাবিক। সব থেকে ভাল, সমস্ত ফাইলের ব্যাকআপ রেখে, ক্লিন ফরম্যাট করে ফেলুন। এটা ঠিক, তারপর সমস্ত সফটওয়্যার ইন্সটল করা, বুকমার্ক তৈরি করা, সব মেইল আইডি ধরে লগইন করা, হাজার ঝক্কি। কিন্তু যদি মনে করেন আগের থেকে একটু ভালভাবে কম্পিউটার চলুক, তাহলে হয় আপনার আগোছালো অভ্যাস ত্যাগ করুন।

আপনি যখন ভাইরাস বা অন্য কোন কারনে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করছেন তখন অবশ্যই সকল ড্রাইভ ক্লিন করে উইন্ডোজ দিবেন। সব থেকে ভাল হয় আপনি কমান্ড প্রমট থেকে ক্লিন করে সেটআপ দেয়া। এতে করে আপনার হার্ডডিস্ক সম্পূর্ণ ক্লিন হবে। অথবা আপনার সকল ড্রাইভ ফরম্যাট দিতে পারেন। তবে ভাইরাস বা ভালো ভাবে ব্যবহার করতে হলে একটু কষ্ট করতে হবে।

 

সর্বপরি, আমার উপদেশ থাকবে আপনি যদি এক্সপার্ট ব্যবহারকারি হয়ে থাকেন তাহলে লিনাক্স অপারেটিং  সিস্টেম ব্যবহার করুন। সকল জামেলা থেকে দূরে থাকবেন। লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ওপেন সোর্স। বিশ্বের যে প্রান্তে থাকুন আপনি নিরাপদে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করুন। উইন্ডোজ থেকে লিনাক্স হাজার গুন ভালো। এখন আপনি বলতে পারেন আপনি লিনাক্স কি জানেন না, বা কিভাবে ব্যবহার করে জানেন না তাহলে টেকটিউনস আপনার সহযোগী পার্টনার বলতে পারেন। অনেক টিউন আছে এই বিষয়ে। একটু খোঁজ করলে পারবেন। অনেকে আবার কালো পর্দা ভয় পান, কিন্তু এই কালো পর্দা আপনার সুরক্ষা প্রদান করবে।

আবার আসব আমার সিরিজ টিউন নিয়ে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন। ভুল হলে এই নিউ টিউনার কে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্‌ হাফেজ

Level 0

আমি মোনারুল ইসলাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 13 টি টিউন ও 4 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস