বর্তমানে 4K TV এর যুগ চলে, আর HDR কোয়ালিটির যুগ প্রায় শেষ! বিশ্বের প্রায় সকল বড় বড় বিনোদনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো 4K ব্যান্ডওয়াগনে চলে এসেছে। এবার আপনিও যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে 4K টিভি কিনবেন তাহলে আজকের এই টিউনটি আপনার জন্যই! সাধারণত এই দামী এবং হাই কোয়ালিটি জাতীয় টিভি কেনার আগে আমরা সবার আগে ব্রান্ড, স্ক্রিণ সাইজ এবং ফ্ল্যাট নাকি কার্ভড মডেল নিবেন সে ব্যাপারে অনেকেই চিন্তিত থাকেন।
কিন্তু এদের থেকেও গুরুর্ত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে আমরা তেমন পাত্তা দেই আর তা হলো প্যানেল টেকনোলজি। এই প্যানেল টেকনোলজির ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরী! আপনি এত টাকা খরচ করে এত দাম দিয়ে টিভি কিনছেন আর সেটা যুগের সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে কিনা সেটা নিশ্চিত করাও আপনার একটি দায়িত্ব!
প্যানেল টেকনোলজির মধ্যে LED, OLED কিংবা QLED টিভি আজকাল বেশ চলছে। এদের মধ্যে দাম এবং কোয়ালিটির পার্থক্য রয়েছে। আজকের টিউনে আমি OLED এবং QLED এদের মধ্যে পাথর্ক্যগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। তো চলুন সরাসরি টিউনে চলে যাই!
ইংরেজি শব্দ OLED এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Organic Light-Emitting Diode এবং এটি হচ্ছে একটি টিভি প্যানেল টেকনোলজি যেটি LG ব্যান্ড এর টপ র্যাঙ্জের টিভিগুলোতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। OLED প্যানেলগুলোকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবার সময় তাদের নিজস্ব লাইট এর ব্যবস্থা করে থাকে।
আর OLED টিভিগুলো তাদের প্রতিটি পিক্সেলের উজ্জলতা অটোমেটিক্যালি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই ভাবে দরকারের সময় পিক্সেলগুলো সম্পূর্ণ সুইট অফ হয়ে গিয়ে আমাদেরকে সঠিক ব্ল্যাক লেভেলস এবং contrast এর সরবরাহ করে থাকে এই OLED টিভিগুলো। এই প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে LG টিভিগুলো বেশ বাজার মাতাচ্ছে।
ইংরেজি শব্দ QLED এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Quantum-dot Light-Emitting Diode এবং এটিও হচ্ছে নতুন ধরণের একটি টিভি প্যানেল টেকনোলজি যা বর্তমানে স্যামসং তাদের টপ এন্ড টিভিগুলোকে ব্যবহার করছে। QLED টিভিতে Quantum Dots গুলোকে পর্দার LED প্যানেলের উপর বাসানো হয়ে থাকে যার কারণে টিভির পারফরমেন্স এবং পিকচার কোয়ালিটির এরিয়াতে আরো উন্নত কোয়ালিটির পিকচার ডেলিভারী করতে সাহায্য করে থাকে। বর্তমানে একমাত্র QLED টিভিতেই সর্বউকৃষ্ট মানের পিকচার কোয়ালিটি এবং উচ্চমানের কালার রিপ্রোডাক্টশন আর ব্রাইটনেস পাওয়া যাচ্ছে।
OLED বা QLED এর মধ্যে কোনটি সেরা টিভি টেকনোলজি সেটা বুঝতে হলে আগে আমাদেরকে এদের মধ্যকার বিভিন্ন প্যারামিটারগুলোর পার্থক্যগুলোর সম্পর্কে জানতে হবে। সেগুলো নিচে একটি একটি করে দেওয়া হলো।
একটি টিভি স্ক্রিণের ডিপ ব্ল্যাক প্রডিউস করার ক্ষমতার মাধ্যমেই উক্ত টিভির পিকচার কোয়ালিটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ডিপার ব্ল্যাকস টেকনোলজি অতি উন্নতমানের কালার কোয়ালিটি ডেলিভার দিয়ে থাকে এবং একই সাথে উচ্চমানের contrast লেভেলও একই সাথে সরবরাহ করে থাকে। আর উচ্চ মানের ব্ল্যাকস একমাত্র OLED দিতে পারে। OLED যে পরিমানের উচ্চ মানের ব্ল্যাক টেকনোলজি দেয় সে পরিমানের আশে পাশেও এখনো কেউ যেতে পারেনি।
OLED তার মধ্যকার প্রত্যেকটি পিক্সেলগুলোকে অন এবং অফফ করার ক্ষমতা রাখে, তাই কোনো পিকচারের কোনো অংশ যদি ব্ল্যাক হয়ে তাহলে সেই অংশের পিক্সেলটি অফ হয়ে যায় এবং সেখানে কোনো প্রকারের লাইট প্রর্দশন হয় না, এভাবে OLED পারফেক্ট ব্ল্যাক লেভেল ডেলিভারি দিতে পারে! অন্যদিকে QLED এই বিষয়ে LCD প্যানেলের উপর নির্ভর করে থাকে। যা OLED এর থেকে অনেক অংশে পিছিয়ে রয়েছে। তাই এই ক্ষেত্রে আমরা OLED কে বিজয়ী ঘোষণা করতে পারি!
কথা যখন ব্রাইটনেস কে নিয়ে হয় তখন বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় QLED অনান্য সকল টেকনোলজির থেকে এগিয়ে থাকছে। স্যামসং এর ভাষ্যমতে ২০১৭ সালের QLED TV তে ১৫০০ থেকে ২০০০ নিটস এর ব্রাইটনেস এচিভ করতে সক্ষম। নিট হচ্ছে ব্রাইটনেস পরিমাপ করার একটি ইউনিট। নতুন UHD নিয়মাবলি অনুযায়ী প্রিমিয়াম HDR সার্টিফিকেট পেতে হলে একটি টিভিকে নিচের ব্রাইটনেস ব্যাঞ্চমার্ক থাকতে হয়:
> ০.০৫ নিটস এর নিচের ব্ল্যাক লেভেলে কমপক্ষে ১০০০ নিটস এর পিক ব্রাইটনেস থাকতে হবে
> ০.০০০৫ নিটস এর নিচের ব্ল্যাক লেভেলে কমপক্ষে ৫৪০ নিটর এর পিক ব্রাইটনেস থাকতে হবে
এই ব্যাঞ্চমার্ক অনুযায়ী বর্তমানে ব্রাইটনেসে QLED অনেক এগিয়ে রয়েছে। কারণ OLED টিভিগুলো বেশি ব্রাইটনেস দিতে পারে না এবং অন্য দিকে LED টিভিগুলো ব্রাইটনেস বেশি দিতে পারলেও সঠিক ব্ল্যাক লেভেল অর্জন করতে পারে না। অন্যদিকে QLED টিভির quantum dots এর কারণে প্রতি পিক্সেলে প্রতি ডটে বেশ পরিমাণে ব্রাইটনেস পাওয়া যাচ্ছে। ২০১৬ সালের বেষ্ট OLED TV এলজি সিগনেচার ওএলইডি জি৬ টিভিতে পিক ব্রাইটনেস রয়েছে ৮০০ নিটস যেখানে ২০১৭ সালের স্যামসং কিউ৮ QLED টিভিতে পিক ব্রাইটনেস রয়েছে প্রায় ১৫০০ নিটস।
Viewing Angles হচ্ছে অনেক মানুষের কাছে একটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং অনেকেই এই বিষয়টিতে বেশ সিরিয়াসলি নিয়ে থাকেন। এই ক্ষেত্রেও OLED অনান্য টেকনোলজি প্যানেলের থেকে এগিয়ে রয়েছে। OLED টিভিগুলোতে ৮৪ ডিগ্রি ভিউয়িং এঙ্গেল পর্যন্ত স্পষ্ট এবং ক্লিয়ার পিকচার দেখার সুবিধা রয়েছে।
অন্যদিকে QLED টিভির স্ক্রিণ থেকে ডানে কিংবা বামে সরে আসতে থাকলে টিভির পিকচার কোয়ালিটি ধীরে ধীরে কালার এবং contrast ঝাপসা হতে থাকে আর যার ফলে পুরো পিকচার কোয়ালিটিতে খারাপ ইফেক্ট পড়ে। তাই ভিউ এঙ্গেলসে OLED এগিয়ে রয়েছে।
প্রতিটি diode এর অন এবং অফ হতে যে সময়টুকু লাগে সেটিকে রেন্সপন্স টাইম বলা হয়। দ্রুত রেন্সপন্স টাইম টিভি পিকচারে কম মোশন ব্লার এবং কম আর্টিফেক্ট দিয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রেও OLED বেশ এগিয়ে রয়েছে কারণ এতে রয়েছে ক্ষুদ্র diode যেগুলো এক একটা পিক্সেল হিসেবে কাজ করে থাকে এবং এতে রেন্সপন্স টাইম খুবই কম হয়ে থাকে। অন্যদিকে QLED প্যানেলগুলোতে diode গুলো অনেকগুলো একসাথে হয়ে পিক্সেল ক্লাস্টার হিসেবে কাজ করে বিধায় OLED থেকে এখানে বেশি রেন্সপন্স টাইম লেগে থাকে।
প্লাজমা সেটগুলোর মতো OLED টিভিগুলোতে সরাসরি স্ক্রিণে ইমেজগুলোকে মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য রিটেনশন করা হয়ে থাকে। এটা OLED প্রযুক্তির জন্য একটি বিশাল ড্র ব্যাক! এর ফলে টিভি স্ক্রিণে একটি ইমেজকে টানা ৫ মিনিটের মতো রেখে দিলে পরবর্তীতে ইমেজটির একটি ফেইন্টেড কপি স্ক্রিণে থেকেই যায়, লোডশেডিং এর সময় আমরা এটি খেয়াল করে থাকি। তবে অন্যদিকে QLED টিভিগুলোও এই সমস্যায় আক্রান্ত তবে এখানে আরো বেশি সময় ধরে ইমেজ স্ট্যাবল করে রাখা যায়, তাই এই সেক্টরে বিজয়ী হচ্ছে QLED টিভি।
উপরের পয়েন্ট টু পয়েন্ট পার্থক্যগুলোর থেকে আমরা এটাই জানতে পারি যে, OLED হচ্ছে সর্বপরি বিজয়ী। এবং এক্ষেত্রে OLED টিভিগুলো একই সাথে বেশি চিকন, বেশি হালকা এবং বেশি বিদুৎ সাশ্রয়ী। তবে OLED টিভিগুলো QLED এর থেকে কম টেকসই হয়ে থাকে।
অন্যদিকে QLED টিভিগুলো OLED টিভিগুলোর থেকে বেশি ব্রাইটার, বেশি টেকসই এবং লেটেস্ট মডেলে উচ্চ মানের ব্ল্যাক লেভেলস রয়েছে। যার কারণে দিনের বেলায় টিভি দেখার জন্য QLED টিভি বেষ্ট! তবে দামে এবং বিদুৎ ব্যবহারে OLED থেকে QLED তুলনামূলক ভাবে বেশি!
এবার OLED টিভি কিনবেন নাকি QLED টিভি কিনবেন, এটা আপনার সিদ্ধান্ত! আজ এ পর্যন্তই! এই টপিকে আপনার কোনো মতামত থাকলে সেটা অবশ্যই টিউমেন্টে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন!
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
চমৎকার বিশ্লেষণ। খুঁটিনাটি বোঝার ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক এবং তথ্য বহুল লেখা। ধন্যবাদ।