বর্তমানে সেলফোন বা মোবাইল ফোন কেন এতো জনপ্রিয় বলতে পারেন? হ্যাঁ, অনেক কারণ রয়েছে, আজকের স্মার্টফোন গুলো প্রায় কম্পিউটারের মতোই শক্তিশালি। কিন্তু সেলফোন জনপ্রিয়তা পাওয়ার প্রধান কারণটি কি? —কেনোনা এটি একটি ওয়্যারলেস ডিভাইজ, অর্থাৎ পুরাতন বা আগের জামানার টেলিফোনের মতো এটি ব্যবহার করতে তার লাগিয়ে রাখতে হয় না। আপনি যেখানেই যান বা যে স্থানেই যান মোবাইল ফোন বিনা তারে কাজ করবে। কিন্তু এখানে কিছু লিমিটেশনও রয়েছে। যেমন ধরুন আপনি যে সেলফোন অপারেটর থেকে সেলফোন সার্ভিস গ্রহন করছেন সেই অপারেটরের টাওয়ার আপনার এলাকায় নাও থাকতে পারে, ফলে আপনি নির্দিষ্ট অপারেটর থেকে তাদের সেবা নিতে পারবেন না। আবার ধরুন আপনি দেশের বাইরে গেলেন, সেখানে আপনার দেশীয় নেটওয়ার্ক তো আর থাকলো না, তাই সেখানেও আপনি আপনার অপারেটর থেকে সেবা নিতে পারবেন না। কিন্তু একটি পদ্ধতি রয়েছে যেখানে সেলফোন অপারেটররা অন্যান্য দেশীয় বা বিদেশী সেল অপারেটরদের সাথে চুক্তি করে অন্য অপারেটর টাওয়ার বা নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হওয়ার সুবিধা প্রদান করে। আর এই সিস্টেমকে রোমিং সার্ভিস বলা হয়। আজকের আর্টিকেলে আমি এই সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো, সাথে একটি ট্রিক শেয়ার করবো; কীভাবে এয়ারটেল সিম থেকে রোমিং সার্ভিস ব্যবহার করে রবি নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্ট হয়ে মোবাইল সার্ভিস এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে। তো চলুন শুরু করা যাক…
সেলফোন ব্যবহার করতে কি করতে হয়? প্রথমত একটি সিমকার্ড সেলফোনে প্রবেশ করাতে হয়। আর এই সিমকার্ডটি কোন সেলফোন অপারেটর কোম্পানির হয়ে থাকে। সিমকার্ড প্রবেশের মাধ্যমে তারা আপনার ফোনকে তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সুবিধা প্রদান করে। আপনি যে কোম্পানির সিমকার্ড আপনার ফোনে লাগাবেন শুধু সেই কোম্পানিরই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন। আর আপনার ফোন নেটওয়ার্কে যুক্ত হয় আপনার সেলফোন অপারেটরের টাওয়ার বা বিশাল আকারের এক এন্টেনা থেকে। আপনি যেখানে অবস্থান করছেন বা যেখান থেকে সেলফোন কল করতে চাচ্ছেন সেখানে অবশ্যই আপনার অপারেটরের নেটওয়ার্ক সিগন্যাল থাকতে হবে, অথবা বলতে পারেন আপনার নিকটস্থ স্থানে টাওয়ার থাকতে হবে।
কিন্তু সকল সেলফোন অপারেটরের টাওয়ার বা নেটওয়ার্ক সেবা সকল স্থানে নাও থাকতে পারে। শহর গুলোতে এই সমস্যা নেই, কিন্তু গ্রামিন এলাকাতে বিশেষ করে এই সমস্যা বেশি হয়। আবার আপনার দেশের বাইরে গেলে আপনার অপারেটর থেকে আর সার্ভিস পাবেন না, কেনোনা সেই দেশে আপনার অপারেটরের টাওয়ার নেই। এখানে দুইটি অপশন থাকে, হয় আপনি যে দেশে যাচ্ছেন সে দেশের লোকাল কোন অপারেটর থেকে আপনাকে সেবা নিতে হবে, অথবা আপনার বর্তমান সেলফোন অপারেটরের সাথে চুক্তি করে রোমিং সার্ভিস চালু করে নিতে হবে।
রোমিং সার্ভিস মূলত এমন একটি সার্ভিস যেখানে আপনার অপারেটরের বন্ধু অপারেটর নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে আপনি মোবাইল সেবা এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার সিমকার্ড বা অপারেটর পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে না। যেমন ধরুন আপনি এয়ারটেল ব্যবহার করে লোকাল কল এবং ইন্টারনেট ইউজ করেন। এখন অবশ্যই আপনি যেখান থেকে কল করবেন সেখানে এয়ারটেলের টাওয়ার থাকতে হবে, তবে আপনি এদের নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হতে পারবেন। কিন্তু ধরুন আপনার স্থানে এয়ারটেলের নেটওয়ার্ক নেই কিন্তু রবির নেটওয়ার্ক রয়েছে, আর যেহেতু এয়ারটেল আর রবি বন্ধু নেটওয়ার্ক তাই আপনি এয়ারটেল সিম থেকে রবি টাওয়ার থেকে সিগন্যাল ধরে এয়ারটেল সকল সেবা গ্রহন করতে পারবেন।
রোমিং সেবা নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই অপারেটর গুলোকে একত্রে চুক্তি বদ্ধ হয়ে থাকতে হয় এবং তারা এক ধরনের স্পেশাল সফটওয়্যার ব্যবহার করে একেক অপারেটরের ইউজার তথ্য গুলো আরেক অপারেটরের সাথে শেয়ার করে। যেমন আপনি রোমিং এ থাকা কালীন ব্যবহার করছেন রবি নেটওয়ার্ক কিন্তু আপনার ব্যালেন্স রয়েছে এয়ারটেল সিমে এবং ডাটা কাঁটা হচ্ছে আপনার সিম থেকে, এটা কীভাবে হয়। কেনোনা এই অপারেটর দুইটি একে অপারের সাথে সকল তথ্য গুলো শেয়ার করে। নিচে কিছু পয়েন্ট উল্লেখ্য করলাম, যেগুলো দুইটি অপারেটরের তাদের ইউজারদের রোমিং সার্ভিস দেওয়ার জন্য অবশ্যই করনীয়;
আপনারা সকলেই নিশ্চয় জানেন বাংলাদেশের এয়ারটেল এবং রবি তাদের মধ্যে চুক্তি করে এক কোম্পানি হয়ে গেছে। তারা নিজেদের মধ্যে তাদের সার্ভিস গুলো মিশিয়ে সেবার মান আরো উন্নত করার প্রচেষ্টা করছে। আপনি যদি রবি গ্রাহক হোন তবে হয়তো নেটওয়ার্ক নিয়ে বিশেষ কোন সমস্যা নেই, গ্রামিন এলাকা গুলোতেও রবি নেটওয়ার্ক রয়েছে। কিন্তু এয়ারটেল গ্রাহকরা পড়ে যান সমস্যায়, কেনোনা এখনো বাংলাদেশের অনেক থানা পর্যায়ে এয়ারটেল টাওয়ার নেই, ফলে অনেকের ইচ্ছা থাকলেও এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা সম্ভব হয়না। কিন্তু এবার রবি আর এয়ারটেল মিলে তাদের নেটওয়ার্ককে এক করার মাধ্যমে রোমিং সার্ভিসের মাধ্যমে এয়ারটেল সিম ব্যবহার করা যাবে আপনার এলাকায় এয়ারটেল টাওয়ার না থাকলেও, যদি আপনার এলাকায় রবি নেটওয়ার্ক থাকে তবে আপনি সেটার মাধ্যমেই এয়ারটেলের সকল সেবা পেতে পারেন।
এয়ারটেল বাংলাদেশের ওয়েবসাইট অনুসারে তিনটি সাধারন স্টেপ অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি এয়ারটেল সিমে রবি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সার্ভিস পেতে পারেন। নিচে স্টেপ গুলো দেওয়া হলো;
ব্যাস আপনি কানেক্ট হয়ে যাবেন এয়ারটেল থেকে রবি নেটওয়ার্কে, কিন্তু সকল সার্ভিস এবং আপনার ফোন নাম্বারটি থাকবে এয়ারটেলের। যদি আপনার সিম থেকে রবিতে কানেক্ট না হয়, তবে ফোনটি একবার রিস্টার্ট করে নেবেন। আর তারপরেও যদি কাজ না করে আপনার এয়ারটেল কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে আপনার সমস্যাটি জানাতে পারেন, সম্ভবত তারা আপনাকে সাহায্য করবে।
তো বন্ধু আমরা জানলাম, রোমিং সার্ভিস কি এবং কীভাবে কাজ করে এবং সাথে একটি ছোট্ট ট্রিক্সও শেয়ার করেছি, আশা করছি আপনার উপকারে আসবে। আপনি কি রবি বা এয়ারটেল গ্রাহক বা এই ট্রিক অনুসরণ করে কি আপনি এয়ারটেল সিম ব্যবহার করবেন? নিচে আমাদের টিউমেন্ট করে সবকিছু জানান।
ক্রেডিট— TecHubs.Net
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!
যেকোনো টেক প্রশ্নে কমেন্ট করে জানান। টিউনটি ভালো লাগলে নির্বাচিতটিউন মনোনয়ন করুন।
টেকটিউন্স এর সাথেই থাকুন 🙂