স্মার্টফোন ব্যাটারি এর ধরণ গত কয়েক বছরে অনেক বদলে গেছে। ব্যাটারি টেকনোলজির তেমন একটা পরিবর্তন না হলেও এর লাগানোর পদ্ধতি পরিবর্তন হয়ে গেছে। আজকালকার প্রায় সকল আধুনিক স্মার্টফোন এর ব্যাটারি বদ্ধভাবে লাগানো থাকে। অর্থাৎ একজন সাধারণ ব্যবহারকারী নিজে থেকে তার ফোন এর ব্যাটারি পরিবর্তন করতে পারবেন না। এবং কোনো কারনে আপনার ব্যাটারিটির ত্রুটি দেখা দিলে আপনাকে সার্ভিস সেন্টারে যেতে হবে।
এজন্য আজকাল স্মার্টফোন ব্যাটারি এর সঠিক যত্ন নেয়া আবশ্যক হয়ে পড়েছে। আজকের এই টিউন এ আমি আলোচনা করবো এমন কিছু বিশেষ উপায় নিয়ে যার মাধ্যমে আপনি আপনার স্মার্টফোনটির ব্যাটারির বিশেষ যত্ন নিতে পারবেন। এবং আপনাকে ব্যাটারি পরিবর্তন করতে বারবার সার্ভিস সেন্টারে যেতে হবে না। দেখুন আপনার ফোনটির মধ্যে কেবল ব্যাটারিই এমন একটি অংশ যা সবচেয়ে আগে নষ্ট হতে পারে। বাকী যেসকল যন্ত্রাংশ আছে যেমন মাদারবোর্ড, র্যাম, প্রসেসর ইত্যাদি এগুলোকে আপনি যদি সাধারন ব্যবহার করেন তবে সেগুলো অনেক দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। কিন্তু ব্যাটারি সাধারন ব্যবহার করার পরেও খারাপ হয়ে যেতে পারে। যাই হোক, আর ভূমিকা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক।
ব্যাটারির বিশেষ যত্ন রাখতে যেটি প্রথম ধাপ তা হলো ব্যাটারির চার্জিং অভ্যাস ঠিক করা। আপনার কখনোয় ব্যাটারিকে ০% ডিসচার্জ করা উচিৎ নয়। বা এমনটাও করা যাবে না যে, আপনি ব্যাটারি প্রতিদিন ০% ডিসচার্জ করছেন তারপর আবার ১০০% চার্জ করছেন। কিংবা সারাদিন ফোন ব্যবহার করতে করতে ১০০% থেকে ০% ডিসচার্জ করে ফেললেন। আপনি মাসে একবার ০% ডিসচার্জ করতে পারেন, যাইহোক একটু পরে এ নিয়ে আলোচনা করছি।তাহলে সঠিক উপায় কি? জী, সঠিক উপায় হলো দিনে একাধিকবার স্মার্টফোন ব্যাটারি রিচার্জ করা। মনে করুন আপনি ২০% এর পরে চার্জ করা শুরু করলেন এবং ৭০% বা ৮০% পর্যন্ত চার্জ করলেন। আবার চার্জ ২০% বা ১৫% এ নেমে আসলো তারপর পুনরায় চার্জ এ লাগালেন।
ব্যাটারি চার্জিং এর এই অভ্যাসটি আপনি একটি মানুষের সাথে তুলনা করতে পারেন। যেমন একটি মানুষ সারাদিন কাজ করার সময় কাজের ফাঁকে ফাঁকে হালকা খাবার খেয়ে থাকে কিংবা পানি পান করে থাকে। এতে সে সুস্থ থাকবে এবং বেশি দীর্ঘস্থায়ী ভাবে কাজ করতে পারবে। কিন্তু কেউ যদি সারাদিন ননস্টপ ভাবে কাজ করে কিন্তু একবারও না খায় বা সারাদিন কাজ করলো তারপর ক্লান্ত এবং ক্ষুদার্থ হয়ে রাতে একবারে সারাদিনের খাবার খেলো তবে সে এই অনিয়মের জন্য খুব বেশিদিন সুস্থ থাকতে পারবে না। এবং ধিরেধিরে তার কার্যক্ষমতাও লোপ পাবে।
স্মার্টফোন ব্যাটারি ও অনেকটা এই নীতিতেই কাজ করে। তাই ব্যাটারি এর চার্জিং অভ্যাস ঠিক খুবই প্রয়োজন। আরেকটি বিষয় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে, অন্তত মাসে একবার বা ২০-২৫ দিনে একবার আপনার ফোনের ব্যাটারি ০% ডিসচার্জ করে ১০০% চার্জ করতে হবে। ব্যাটারির ভেতর অবস্থিত সেল গুলো বারবার চার্জ এবং ডিসচার্জ হওয়ার ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে। তো আপনি যদি একমাসের ভেতর একবার পুরা ডিসচার্জ করে রিচার্জ করেন তবে সেল গুলোর আগের ক্ষমতা ফেরত পেয়ে যায়। যেমনটা আমাদের রক্তদান করার সময় হয়ে থাকে।
আরেকটি বিষয় জেনে রাখুন যে প্রতিটি ব্যাটারির একটি নির্দিষ্ট জীবনচক্র বা লাইফ সাইকেল থাকে। সেটা স্মার্টফোন ব্যাটারি হোক আর ল্যাপটপ ব্যাটারি হোক কিংবা আপনার ট্যাবলেট এর ব্যাটারি হোক। সাধারনত একটি ফোন এর ব্যাটারিতে ১০০০ লাইফ সাইকেল থাকে। ১০০০ লাইফ সাইকেল থাকার মানে হচ্ছে এই ব্যাটারিটি ১০০০ বার ডিসচার্জ এবং চার্জ হতে পারবে। এমনটা নয় যে ১০০০ লাইফ সাইকেল পার হয়ে যাবার পরে ব্যাটারিটি কাজ করা বন্ধ করে দেবে। এমনটা হতে পারে যে আগে যে চার্জ সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতো তা এখন বেলা ১ টা পর্যন্ত থাকছে। ১০০০ লাইফ সাইকেল এর দিকে লক্ষ্ করলে, একটি ব্যাটারির আয়্যু প্রায় ৩ বছরের মতো।
আমি এ কথা বারবার বলতে চাই যে যেসকল ফোন এর ব্যাটারি খোলা যায় না অর্থাৎ নন-রিমুভআবোল ব্যাটারি রয়েছে সেসকল ব্যাটারির জন্য চার্জিং অভ্যাস ঠিক করাটা বিশেষ জরুরী। তা না হলে এমনটাও হতে পারে যে ফোন কেনার ৬ মাস এর মাথায় ব্যাটারি পরিবর্তন করার জন্য সার্ভিস সেন্টারে যেতে হচ্ছে, তাও শুধু মাত্র এ জন্য যে আপনার চার্জিং অভ্যাস ঠিক ছিল না। যেসকল ফোন এর ব্যাটারি খোলা যায় সে ফোন গুলোর কথা আলাদা। সেই ফোনগুলোতে আপনি যখন চাইবেন যেভাবে চাইবেন ব্যাটারি পরিবর্তন করতে পারবেন।
স্মার্টফোন ব্যাটারি সুস্থ রাখতে সঠিক এবং ভালো চার্জার ব্যবহার করা খুবই প্রয়োজন। কোনো কারনে আপনার যদি মনে হয় যে আপনার চার্জার দিয়ে আপনার ফোনটি ভালোভাবে চার্জ হচ্ছে না তবে আপনি বিনা দ্বিধায় অন্য চার্জার ব্যবহার করতে পারেন। অথবা আপনার ফোনটি যদি কুইক চার্জিং সমর্থন করে তবে আপনি যেকোনো কুইক চার্জার ব্যবহার করতে পারেন। কুইক চার্জিং প্রযুক্তি সম্পর্কে লেখা আমার টিউন টি যদি না পড়ে থাকেন তবে পড়ে আসতে পারেন। তবে হাঁ, একটা বিষয়ের উপর খেয়াল রাখা বিশেষ প্রয়োজন আছে। আপনি যে তৃতীয় পক্ষ চার্জারই ব্যবহার করুন না কেনো এর ভোল্ট যেন আপনার আসল চার্জার এর সাথে মিল থাকে। চার্জারটি কত মিলি অ্যাম্পিয়ার বা এর কারেন্ট কত এতে কোনো যায় আসে না।
কেনোনা আপনার ফোনটির ভেতর অবস্থিত চার্জিং সার্কিট ঠিক ততটায় কারেন্ট গ্রহন করবে ঠিক যতটা তার করা দরকার। আপনাকে শুধু চার্জারটির আউটপুট ভোল্ট এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। চার্জার এর চার্জারটির আউটপুট ভোল্ট সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে আপনি আমার লেখা এই টিউন টি পড়ে আসতে পারেন।
অনেকের মনে এই ভুল ধারনাটি থেকে থাকে যে সারা রাত ধরে চার্জ করতে ব্যাটারি ওভার চার্জ হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আসলে ব্যাপারটি মোটে সত্যি নয়। গত ৪-৫ বছরে বাজারে যতো স্মার্টফোন আসছে তার সবগুলোতেই ওভার চার্জিং প্রোটেকশন এর এক বিশেষ সার্কিট থাকে। যার ফলে আপনার ব্যাটারির চার্জ ১০০% হয়ে যাবার পরে আর চার্জ গ্রহন করে না। এই সমস্যাটি আজ থেকে ৮-১০ বছর আগে ছিল। আপনারা হয়তো খেয়াল করে থাকবেন যে নকিয়া ফোন গুলোর ব্যাটারি ফুলে যেতো। কিন্তু আজকের দিনে এই বিষয় নিয়ে ভয় করার মতো মোটেও কিছু নেই।
আশা করি আজকের এই টিউন টি আপনাদের অনেক অনেক উপকার এ আসবে। এবং এখন থেকে আপনারা আপনাদের স্মার্টফোন ব্যাটারির সঠিক যত্ন নিতে পারবেন। টিউন টি ভালো লেগে থাকলে এবং উপকৃত হয়ে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এই সাইট টি নিয়মিত ভিসিট করতে থাকুন। কেনোনা আমি প্রতিদিন এইভাবেই এই রকম বিভিন্ন টিউন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হতে থাকি।
পূর্বে প্রকাশিতঃ Techubs
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!
আমার এক টা মোবাইল এর সমস্যা হল , ব্যাটারি বারি না দিলে মোবাইল মাঝে মাঝে চালু হতে চাই না । ব্যাটারি বারি দিলে এমনিতেই ৮০ থেকে ৯০ ভাগ চার্জ হয়ে যায় । সমস্যা টা কিসের ? ( বিঃদ্রঃ আমি কাস্টম রম ব্যবহার করেও দেখেছি , কোন সমাধান হয় নি ) 🙂