আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। ভালো থাকাটাই সব সময়ের জন্য প্রত্যাশা। ইতিপূর্বে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ট্রাবলশুটিং ও মেইনটেনেন্স বিষয়ে কয়েকটি টিপস নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ তারই ধারাবাহিকতায় সমস্যা-সমাধান ও পর্যালোচনা নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন যথারীতি শুরু করি।
অনেকেই বর্তমান অপারেটিং সিস্টেমকে পরিবর্তন করে নুতন ও আপডেট অপারেটিং সিস্টেম সংযোজন করার পেছনে ছুটছেন। কিন্তু আমি হালনাগাদ অপারেটিং সিস্টেম আপগ্রেড করার পক্ষপাতি নই। একারণেই নই যে হালনাগাদ করার পর দেখলেন আপনার প্রয়োজনীয় কাজ সব ভেস্তে গেছে। গুরুত্বপূর্ন কাজ করতে গিয়ে আপনি প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুক্ষীণ হচ্ছেন, কম্পিউটার হয়ে গেছে পূর্বের তুলনায় প্রচুর স্লো। যে কাজ এক্সপি দিয়ে ১০ মিনিটে করতেন সেক্জ এখন 8 অথবা 10 দিয়ে 30 মিনিটে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে হালানাগাদ করে আর লাভ কি হল। কাজেই হালনাগাদ করার পূর্বেই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন ও পর্যালোচনা করুন। আপনার ডেস্কটপ অথবা ল্যপটপটি যদি কোর আই3 অথবা কোর আই5 মানেরও হয় তাতেও আপনি উইন্ডোজ 10 ইন্সটল করে আশানুরুপ পারফরম্যান্স পাবেন না। সেক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটার এর কনফিগারেশন হতে হবে কোর আই5 অথবা কোর আই 7 এর আপগ্রেড ভার্সন। তবে হালনাগাদ করেও ভালো স্পীড পাবেন।এবার আমার নিজের অভিজ্ঞতা একটু শেয়ার করছি। আমার ল্যাপটপটি এইচপি প্যাভিলিয়ন জী 6 সিরিজের যেটি কোর আই5 এর প্রসেসর, 650 জিবি হার্ডডিস্ক এবং 6 জিবি র্যাম সমৃদ্ধ। মোটামুটি ভালো কনফিগারেশন হওয়া সত্ত্বেও আমি উইন্ডোজ 8 রিমুভ করে উইন্ডোজ 10 ইন্সটল করেছি। কিন্তু মাত্র ১ সপ্তাহে চরম বিরক্ত হয়ে চটকা মেরে বাদ দিয়ে আবার উইন্ডোজ 8 এ ফেরত গেছি। এত পরিমাণ স্লো হয়ে গেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি উইন্ডোজ 10 একটি বড় সমস্যা এটি ইন্টারনেট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বড় আকারের আপডেট সংযোগ পেলেই নিতে থাকে। ফলে অন্যান্য কাজও স্লো হয়ে যায়। আমি সেটিও অফ করেছি কিন্তু তাতে সমাধান মিলেনি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে উইন্ডোজ এর পূর্ববর্তী সকল ভার্সনে কন্ট্রোল প্যানেল একটিই ছিলো এবং স্টার্ট মেনুতে ক্লিক করে সেটিং এ গিয়ে কন্ট্রোল প্যানেলে যাওয়া যেত। উইন্ডোজ 10 এর ক্ষেত্রে সেটিং একটি আলাদা অপশন এবং কন্ট্রোল প্যানেল আরেকটি আলাদা অপশন। দুটিও অপশনই সতন্ত্র ভাবে ২ জায়গায় থাকে। ফীচারগুলোও ভিন্ন ভিন্ন। এছাড়াও উইন্ডোজ 10 এর টাস্কবার ও কন্টোল প্যানেল এর আইকনগুলোকে ব্রিটিশ আমলের রুপ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সেগুলোকে দেখে কিছুটা উইন্ডোজ 95 অথবা 98 এর মত লাগতে পারে। আর অনেকেই উইন্ডোজ 10 ইন্সটল করে খুব সহজেই মহামান্য কর্টানার দেখা পাননি। যাইহোক সবমিলিয়ে মনে হলো উইন্ডোজ 10 ব্যবহারের সময় এখনো আসেনি। আরো অনেক হালনাগাদের প্রয়োজন রয়েছে। সুবিধা অসুবিধা ও সমস্যা সমাধান এবং পর্যলোচনা নিয়ে আপনারাও টিউমেন্ট করতে পারেন।
এ পর্যায়ে আমি কম্পিউটারের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোকপাত করবো...সমস্যা নং- ৪৮ একটি কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ এক্সপি পাশাপাশি আরেকটি কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ সেভেন অথবা এইট। দুটি কম্পিউটারই লোকাল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত। কিন্তু একটি কম্পিউটার থেকে আরেকটিতে ঢুকতে গেলেই পাসওয়ার্ড চাচ্ছে। কোনভাবেই এক্সেস করা সম্ভব হচ্ছে না।
সমাধান- দুটি কম্পিউটারে ভিন্ন ভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম হলে এরকম সমস্যা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে উইন্ডোজ সেভেন থেকে উইন্ডোজ এক্সপিতে ঢুকতে গেলে যদি পাসওয়ার্ড চায় তবে উইন্ডোজ এক্সপির পাসওয়ার্ড রিমুভ করে দিন। অপরদিকে উইন্ডোজ এক্সপি থেকে উইন্ডোজ সেভেন-এর কম্পিউটারে ঢুকতে গেলে যদি পাসওয়ার্ড চায় তবে তা রিমুভ করাসহ নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হবে।
প্রথমে স্টার্ট মেনু থেকে কন্ট্রোল প্যানেল ওপেন করুন। সেখান থেকে নেটওয়ার্ক এন্ড শেয়ারিং সেন্টার ওপেন করুন। অথবা ডেস্কটপ থেকে নেটওয়ার্ক অপশন ওপেন করে নেটওয়ার্ক এন্ড শেয়ারিং সেন্টার-এ ক্লিক করুন।
তারপর Change Advanced Sharing Setting –এ ক্লিক করুন।
প্রথমে হোম নেটওয়ার্কের অধীনে ক্লিক করে Turn on network discovery সিলেক্ট করুন।
তারপর Turn on file and printer sharing সিলেক্ট করুন।
Public folder sharing – এ গিয়ে Turn on sharing ক্লিক করুন।
অতপর Turn off password protected sharing ক্লিক করে সেভ করুন।
তারপর পাবলিক নেটওয়ার্কের অধীনে ক্লিক করেও একই কাজ করুন।
এখন আর ভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম এর প্রতিটি কম্পিউটার থেকে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এক্সেস এর ক্ষেত্রে আর কোন বাধা থাকলো না। কম্পিউটার সমূহে যেসকল ড্রাইভ, ফাইল ও ফোল্ডার শেয়ার দিয়ে রাখবেন নেটওয়ার্কের মধ্যে সেগুলোই দেখতে পাবেন। মনে রাখবেন শেয়ার দেয়ার সময় ফুল পারমিশন দিয়ে দিবেন নয়তো যেকোন ইউজার ফুল এক্সেস পাবে না। উল্লেখ্য, উইন্ডোজ এইটের ক্ষেত্রেও একই সিস্টেম। ধন্যবাদ।
সমস্যা নং-৪৯ আমার কম্পিউটারে সবকিছু শেয়ার দেয়ার পরও নেটওয়ার্কে ফাইল ওপেন করে কাজ করা যাচ্ছে না।
সমাধান- আপনি আপনার কম্পিউটারের ড্রাইভ অখবা ফোল্ডার শেয়ার করতে গিয়ে ফুল পারমিশন দেননি। আরেকবার চেক করে দেখুন ঠিক আছে কিনা।
প্রথমে যে ড্রাইভ শেয়ার দিয়েছেন তার প্রপার্টিজ-এ যান। সেখানে শেয়ারিং অপশন সিলেক্ট করুন।
তারপর এডভান্সড শেয়ারিং-এ ক্লিক করুন।
এখানে এসে পারমিশনে ক্লিক করুন।
তারপর Full Control Change Read সব অপশনে টিক চিহ্ন দিয়ে দিন। Ok করুন।
ব্যাস আপনার কাজ শেষ।
সমস্যা নং- ৫০ অপারেটিং সিস্টেম কোন ভাবেই সেটআপ হচ্ছে না? বারবার বলছে সিডি/ডিভিডি মিসিং অথচ সিডি/ডিভিডি ঢুকানোই আছে। র্যাম এ সমস্যা নাকি হার্ডডিস্কে বুঝতে পারছি না।
সমাধান- শুধুমাত্র ভালো একটি সিডি/ডিভিডি ডিস্ক ঢুকান তাতেই কাজ হবে। র্যাম অথবা হার্ডডিস্ক ঠিকই আছে।
সমস্যা নং- ৫১ অপারেটিং সিস্টেম সেটআপের মাঝখানে বারবার রিস্টার্ট হয়ে যাচ্ছে? ধমক দিলেও কাজ হচ্ছে না।
সমাধান- আপনার কম্পিউটার খুলে সব ডিভাইস ভালো করে লাগান। র্যাম ঠিকমত লাগানো আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। র্যাম এর কারণে এ জাতীয় সমস্যা বেশী হয়ে থাকে। র্যাম পরিবর্তন করে আবার সেটআপ দিন এবার আর ঝামেলা হবে না।
সমস্যা নং-৫২- অপারেটিং সিস্টেম সেটআপের মাঝখানে পুরো কম্পিউটার হ্যাং, আর সামনে এগোয় না। রিস্টার্ট দিলেও একই সমস্যা।
সমাধান- এ ক্ষেত্রে সকল ডিভাইস চেক করে দেখুন, সব ডিভাইস ভালো করে লাগান। বিশেষ করে হার্ডডিস্ক ভালো আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। এটি পরিবর্তন করে দেখুন আশা করি একই সমস্যা আর হবে না।
সমস্যা নং-৫৩- কম্পিউটার চালু হওয়ার পর কিছুক্ষন চলে তারপর বন্ধ হয়ে যায় ।
সমাধান- আপনার প্রসেসর দুখিত আপনার কম্পিউটারের প্রসেসর ওভারহীট হচ্ছে। অথবা হীটসঙ্কের সাথে প্রসেসরের সংযোগস্থরে গ্যাপ রয়েছে। প্রসেসরের উপর পেস্ট দিন এবং নিশ্চিত হয়ে নিন কুলিং ফ্যান ও হীটসিঙ্ক যথাযথভাবে বসানো আছে।
সমস্যা নং- ৫৪- অনেকক্ষন কাজ করার পর ল্যাপটপ প্রচন্ড গরম হচ্ছে।
সমাধান- এজন্য ল্যাপটপ এর জন্য নির্দিষ্ট কুলার ব্যবহার করতে পারেন। ডেস্কটপের মত ভারী কাজ করতে গেলে ল্যাপটপে কুলার ব্যবহার করা ভালো তাতে ২৪ ঘন্টাই ভালো সার্ভিস পাবেন। ভারী কাজ একসাথে অনেকগুলো রানিং না রাখাই ভালো। যেমন কনভার্সনের কাজ, এনিমেশন অথবা এডিটিং এর কাজ। এসব কাজে প্রসেসর বিজি হয়ে পড়ে। প্রসেসরের উপর চাপ পড়ে মিনিমাম 90%।
সমস্যা নং- ৫৫- কীবোর্ড এর কয়েকটি কী কাজ করে না। সমাধান আশা করছি।
সমাধান- ল্যাপটপ-এ হলে আলাদা কীবোর্ড ব্যবহার করুন অথবা ডেস্কটপের জন্য মাউজ দিয়ে স্টার্ট মেনুতে গিয়ে রান-এ লিখুন osk অর্থাৎ অন স্ক্রীন কীবোর্ড এরপর এন্টার দিন । ব্যাস আপাতত কাজ সারাতে পারবেন। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে আলাদা কীবোর্ড ব্যবহার করাই ভালো।
সমস্যা নং- ৫৬- ভাইরাস এর কারণে কম্পিউটারে পেন ড্রাইভ লাগালেই সর্টকাট হয়ে যায়।
সমাধান- আপাতত সমাধান হচ্ছে টুলস এ গিয়ে ফোল্ডার অপশনে গিয়ে শো হিডেন ফাইলে টিক চিহ্ন দেয়া এবং হাইড এক্সটেনশন চেকবক্স তুলে দেয়া। তাহলে হাজারো সর্টকাটের ভিড়েও প্রয়োজনীয় ফাইল খুজে পাবেন এবং দেখতে পাবেন। শর্টকাট না হওয়ার জন্য কম্পিউটার ফরম্যাট দিয়ে নতুন করে উইন্ডোজ দিতে হবে। উইন্ডোজ দেয়ার পর প্রথমেই এন্টিভাইরাস সেটআপ দিন। আর এমন সমস্যা হবে না।
সমস্যা নং- ৫৭- কম্পিউটার চালু হয়, কীবোর্ডে লাইট জ্বলে কিন্তু মনিটরে কিছু আসে না।
সমাধান- নিশ্চিত হয়ে নিন মনিটরে পাওয়ার অন করা আছে। এছাড়াও চেক করে দেখুন ভিজিএ ক্যাবল সঠিকভাবে লাগানো আছে কিনা। সব ঠিক থাকলে র্যাম খুলে আবার লাগান ঠিকভাবে। বায়োস এর ব্যাটারীর চার্জ আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। নতুন ব্যাটারী লাগিয়ে ব্যাটারীর পাশের জাম্পার খুলে আবার লাগান, অথবা ব্যাটারী খুলে ২ প্রান্ত সর্ট করে কিছুক্ষণ পর আবার লাগান। বায়োস রিসেট হয়ে যাবে। এ জাতীয় বেশীরভাগ সমস্যার সমাধান এটি, এখন দেখুন ডিসপ্লে চলে আসছে।
আপনার কম্পিউটারের যত্ন নিন... মাঝে মাঝে নিচের কাজগুলো করুন। বহু সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবেন।
কম্পিউটার খুলে পুরোটা একবার ব্লুয়ার দিয়ে পরিষ্কার করুন। এতে কম্পিউটারের স্থায়ীত্ব বাড়বে।
এন্টিভাইরাস আপডেট দিয়ে স্ক্যান করে ভাইরাস ক্লীন করুন। প্রয়োজনে নতুন করে ফরম্যাট দিয়ে সেটআপ দিন।
ভাই মনিটরে নিচের দিকে একটা সাদা রেখা দেখা যায়।কম্পিউটার অন হওয়ার পরে কিছূক্ষণ থাকে তারপর চলে যায়।