সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আমার আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি পুরাতন ল্যাপটপগুলোকে নিজে নিজে মেরামত করে নতুন রূপ দেওয়ার উপায় সম্বলিত আমার আজকের টিউন।
সাধারনত যে সব ল্যাপটপের বয়স ৩ বছরের বেশি তাদেরকে আমরা পুরাতন ল্যাপটপ বলে থাকি। কারন প্রত্যেক বছরে নতুন নতুন সব মডেল, নতুন স্টাইল এবং নতুন এক চেহারার ল্যাপটপ বের হচ্ছে। আর নতুনকে ঘিরে থাকা মানুষদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা ল্যাপটপগুলো একটু বেশিই স্লো মনে হয়। কারন বর্তমান অপারেটিং সিস্টেমগুলো সব সময় ভালো ভালো হার্ডওয়্যার কনফিগারেশনের জন্য ক্ষুধার্থ থাকে। ফলে নতুন ল্যাপটপগুলোর হার্ডওয়্যার কনফিগারেশনের সাথে পুরাতন ল্যাপটপগুলোর হার্ডওয়্যার কনফিগারেশনের তফাত অনেকটা লক্ষণীয়। যাহোক, আসলে তুলনামুলক হার্ডওয়্যার কনফিগারেশনের তাইতেও পুরাতন পিসিগুলো বেশি স্লো হয়ে যায়। ফলে অহেতুক বিরক্তি বাড়ে এবং কাজ করতে লাগে প্রচুর সময়। আজকের টিউনে আমরা পুরাতন সেই ল্যাপটপগুলোকে নতুন ল্যাপটপগুলোর কাছাকাছি স্পিডের এবং কাছাকাছি কার্যক্ষমতার করার এক্সক্লুসিভ সব টিপস নিয়ে আলোচনা করবো। তবে দুঃখের কথা হলো, কেন জানি টিউজিটরগণ আমার টিউনগুলোতে শুধু সফটওয়্যার খুঁজে। হার্ডওয়্যার নিয়ে কিছু লিখলে তাদের মন ভরে না। আজকেও তাদের দুঃখকে আরও একটু বাড়িয়ে দিতে সেই হার্ডওয়্যার বিষয়েই লিখছি। কারন মুখের কথায় নয় কাজের ভিত্তিকে কিছু প্রমাণ করতে গেলে হার্ডওয়্যার আপগ্রেডের কোন বিকল্প নেই। চলুন তাহলে জেনে নেই পুরাতন ল্যাপটপগুলোকে নতুনত্ত্বের ছোঁয়া দিতে আমাদের কী কী কাজ করতে হবে।
প্রত্যেকটি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো ধুলো ময়লা। কেন জানিনা, এই ইলেকট্রনিক্স পণ্যের উপরেই যেন ধুলো ময়লার আক্রমন সবচেয়ে বেশি হয়। কিছুক্ষণ বায়রে রেখে দিলেই দেখা যায় তাদের উপর ধুলোর একটা আস্তরণ পড়ে গেছে। যাহোক, ল্যাপটপে ময়লা জমার কারনে ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় এবং হার্ডওয়্যার পারফরমেন্স কমে যায়। ফলে অটোমেটিক ল্যাপটপ স্লো হতে শুরু করে। একারনে ল্যাপটপ সব সময় পরিষ্কার রাখাটা জরুরী। এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক ল্যাপটপকে পরিষ্কার করতে হলে কী কী করতে হবে। যদিও এটা কঠিন কোন কাজ নয় তবে যারা নতুন এবং কোনদিন ল্যাপটপ খুলেননি তাদের জন্য হাতে ধরে বিস্তারিত বর্ণণা করছি।
দীর্ঘদিন একই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করলে সেটাও এক সময় নড়বড়ে হয়ে যায়। কোন প্রোগ্রাম আনইনস্টল করার পরেও দেখা যায় তার ভাঙ্গা রেজিস্ট্রি ফাইলগুলো থেকে যায়। তাছাড়া ম্যালওয়্যার এটাক থেকে থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারনে অপারেটিং সিস্টেম আনস্টেবল হয়ে যায়। ফলে পিসি স্লো হওয়ার পাশাপাশি নানা রকম অপারেটিং সিস্টেম ঘটিত সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে অপারেটিং সিস্টেম রিইনস্টল করা কিংবা আপগ্রেড করা যেতে পারে। তবে ল্যাপটপ যদি খুব বেশি পুরাতন হয় তাহলে অপারেটিং সিস্টেম আপগ্রেড না করে লোয়ার গ্রেডও করতে পারেন। যেমন উইন্ডো সেভেন থাকলে উইন্ডোজ এক্সপিতে ব্যাক করতে পারেন।
অপারেটিং সিস্টেম রিইনস্টল কিংবা পরিবর্তন করার পর দেখেশুনে সফটওয়্যার ইনস্টল করবেন। মাঝে মাঝে যেসব সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে সেগুলো ব্যবহার শেষেই আনইনস্টল করে ফেলবেন। প্রথম দুইটা পদ্ধতি কোন প্রকার টাকা খরচ না করেই প্রত্যেকেই করতে পারবেন। আশা করি এই দুইটা পদ্ধতিই যথেষ্ট হবে আপনার বৃদ্ধ ল্যাপটপকে নতুন যৌবণ দান করতে। পরের পদ্ধতিগুলো ল্যাপটপের গতি এবং পারফরমেন্স দুটোই স্ট্যাবল ভাবে বৃদ্ধি করবে। কিন্তু এর জন্য পকেট থেকে কিছু টাকা খরচ করতে হবে।
ল্যাপটপের র্যাম (RAM – Random Access Memory) হলো চলমান ল্যাপটপ মেমোরির হাই পারফোরমেন্স ফর্ম। ল্যাপটপে যখন কোন প্রোগ্রাম রান হয় তখন সেটা অস্থায়ীভাবে র্যামে জমা হয়। আপনি যতো বেশি প্রোগ্রাম চালাবেন ল্যাপটপ র্যামে ততো বেশি ফাইল জমা হবে এবং খালি জায়গার পরিমান কমে আসবে। এখন যদি অনেকগুলো প্রোগ্রাম একসাথে রান করেন এবং সে অনুযায়ী র্যামে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে তাহলে ল্যাপটপ স্লো কাজ করবে। এ কারনে ল্যাপটপে প্রোগ্রামগুলো অবাধে রান করার জন্য পর্যাপ্ত র্যাম থাকা জরুরী। আমি পরমর্শ দিবো যে পরিমাণ র্যাম আছে তার দ্বিগুণ করার জন্য। অর্থাৎ আগে থেকে ২ জিবি থাকলে সেই সাথে আরও ২ জিবি নতুন ইনস্টল করবেন।
ল্যাপটপে র্যাম সংযুক্ত করা খুবই সহজ কাজ। কিছু ল্যাপটপের কিবোর্ডের নিচে আবার কিছু কিছু ল্যাপটপের ব্যাক কাভারের নিচে র্যাম এর জন্য আলাদা দুটি স্লট থাকে। সাধারন ক্লিপ দিয়ে র্যামগুলো আটকানো থাকে। সুতরাং শুধুমাত্র কিবোর্ড অথবা ব্যাক কাভার খুলে ফেলুন আর র্যামগুলো ক্লিপ এর সাথে আটকে দিন। আপনার কাজ শেষ। তবে ল্যাপটপ র্যাম এর দাম প্রসঙ্গে কিছু বলি। বর্তমান বাজারে ১ হাজার টাকায় ১ জিবি র্যাম, ২ হাজার টাকায় ২ জিবি র্যাম এবং ৩-৪ হাজার টাকায় ৪ জিবি র্যাম পাওয়া যায়। র্যাম এর কোয়ালিটি ভেদে দামের কিছুটা পরিবর্তন হলেও মোটামুটি এই দামের ভেতর র্যাম কিনতে পারবেন। তারপর সংযোজন তো নিজেই করতে পারবেন।
ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্রাউজিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ল্যাপটপের বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিন্তু ইন্টারনেট ব্রাউজিং স্পিডও কমে আসে। আসলে যা হয়, নেটওয়ার্ক এডাপ্টারগুলো সিগনাল ধরার শক্তি হারিয়ে ফেলে। সুতরাং ল্যাপটপকে পূর্ণ উদ্দোমে ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই একটি নতুন ওয়্যারল্যাস এডাপ্টার সংযুক্ত করতে হবে। বাজারে এক হাজার টাকার মধ্যেই ওয়্যারল্যাস এডাপ্টার কিনতে পাবেন। এবং র্যাম এর মতোই এটাকেও একই পদ্ধতিতে ল্যাপটপে নিজে নিজে লাগাতে পারবেন। তবে এসব যদি ঝামেলার মনে হয় তাহলে একটি টিপি লিংক ওয়্যারল্যাস রিসিভার পোর্টেবল হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। আর দাম এক হাজার টাকার বেশি হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
হার্ড ড্রাইভ স্পিড ল্যাপটপের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অধিকাংশ ল্যাপটপে 5400 RPM ড্রাইভ থাকে। যেটা স্লো স্পিড এবং লো ডাটা ট্রান্সফার রেটের হয়ে থাকে। অনেক সময় ভালো মানের ল্যাপটপগুলোতেও খুব সস্তা ধরনের হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার করা হয়। ফলে আপনি যখন কোন ফাইল বা প্রোগ্রাম রান করেন তখন ল্যাপটপ হ্যাং হয়ে যায়। আমার নিজের ল্যাপটপ ২০১০ সালে ম্যানুফেকচার করা। আমি নিজেও এরকম সমস্যায় পড়ি মাঝে মাঝে। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে SSD ব্যবহার করা যেতে পারে। SSD সাধারন হার্ড ড্রাইভের তুলনায় প্রায় ৩গুন দ্রুতগতির। সুতরাং ল্যাপটপে SSD থাকলে যেকোন নতুন ল্যাপটপকে আপনার পুরাতন ল্যাপটপ অনায়াসে টেক্কা দিতে পারবে।
ল্যাপটপে SSD ইনস্টল করা বেশি একটা ঝামেলার মনে হবে না। শুধু আগেরটা খুলে নতুনটা সংযোজন করুন। তবে SSD এর দাম খুব বেশি না হলেও একেবারে সবার সাধ্যের মধ্যে নাও থাকতে পারে। আপনি ৬ হাজার টাকা খরচ করে ১২৮ জিবি একটি SSD কিনতে পারবেন। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, ল্যাপটপ খুব বেশি পুরাতন হলে SSD না লাগানোটাই ভালো। প্রথম ২ টা পদ্ধতি যেকোন বয়সের ল্যাপটপের জন্য প্রযোজ্য হলেও তার পরের ২টা পদ্ধতি ৫-৬ বছরের বেশি পুরাতন কোন ল্যাপটপে এবং শেষ পদ্ধতি ৩-৪ বছরের বেশি পুরাতন ল্যাপটপে প্রয়োগ না করাটাই ভালো। আপনাদের প্রত্যেকের ল্যাপটপ যেন নতুন যৌবণ ফিরে পায় এটাই সব সময়ের প্রত্যাশা।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আসুন আমরা কপি পেস্ট করা বর্জন করি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ
➡ ইমেইলে আমার সকল টিউনের আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুনঃ টেকটিউনস » সানিম মাহবীর ফাহাদ 🙄
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
কাজের টিউন ভাল লাগলো ।