গতকাল রাতে মেইল চেক করতে গিয়ে দেখতে পাই, একজন টিউনার ভাইরাস বিষয় নিয়ে খুব সমস্যায় পরছেন এবং সেই সমস্যার সমাধানের জন্য মেইল করেছেন। উনার সমস্যাটি হল, তিনি একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করেছেন যার সাহায্যে ফ্রী SMS পাঠানো যায়। কিন্তু ৩০-৪০ টা SMS পাঠানোর পর উনার কম্পিউটারে ইন্সটল করা এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যারটি SMS পাঠানোর সফটওয়্যারটিকে ভাইরাস হিসেবে গণ্য করে।
এই বিষয় অর্থাৎ এন্টি ভাইরাস নিয়ে একটি টিউন করব তা অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে টিউন করতে সাহস পাচ্ছিলাম না। কেননা, আমার মতামত অনেকে গ্রহণ নাও করতে পারেন। কিন্তু আজকে মনের মধ্যে অনেক সাহস নিয়ে এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ও টিউনারের সমস্যার সমাধান নিয়ে টিউন করতে বসলাম।
প্রথমে আমাদেরকে জানতে হবে যে, আমরা কেন এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করি? হ্যা! কম্পিউটারকে ভাইরাস নামক প্রোগ্রামের হাত থেকে বাচানোর জন্যই এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা। কিন্তু এই বিষয়টি কী নিশ্চিত যে, আপনি এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার হিসেবে যে ফাইলটি ইন্টারনেট হতে ডাউনলোড করছেন অথবা কোন সিডি হতে কপি করছেন তা কী আজও ভাইরাস মুক্ত? যদি এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যারটি নিজেই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে কিভাবে সে অন্য সব ভাইরাসদের ধমণ করবে। তবে এই কথা ঠিক যে, এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যারগুলো তাদের নিজস্ব ওয়েব সাইট হতে ডাউনলোড করলে তা মূলত ভাইরাস মুক্তই হয়।
আপনি কী জানেন, একটি সাধারণ এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যারের মূল্য প্রায় আপনার ডেস্কটপ কম্পিউটারটির মূল্যের সমান? তাহলে আপনি হয়ত বলবেন, আমরা যে সব এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যারগুলো ইন্টারনেট হতে ডাউনলোড করি তা তো একদম ফ্রী। হ্যা! এটা সত্য যে আপনি যে সকল এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যারগুলো ইন্টারনেট হতে ডাউনলোড করেন তা একদম বিনা মূল্যে পাওয়া যায়। একবার চিন্তা করুন তো, ২০-৩০ অথবা তারো বেশী কম্পিউটার প্রোগ্রামাররা কেন ফ্রীভাবে সবাইকে এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার প্রদান করবে? বর্তমান সময়ে বিনা স্বার্থে কাজ করে এমন ব্যাক্তি খুজে পাওয়া খুবই জটিল এমনকি এটা অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব। তারা আপনাকে ফ্রী ভার্সন প্রদান করছে যেন, আপনি এই ফ্রী ভার্সন ব্যবহার করে বুঝতে পারেন সফটওয়্যারটি দিয়ে কিভাবে কাজ করতে হয়। সফটওয়্যারটির নমুনা কেমন ইত্যাদ ইত্যাদি। আর আমরা মূলত এই সব ফ্রী ভার্সনকে ব্যবহার করি কম্পিউটার হতে ভাইরাস দূর করার জন্য। কিন্তু এই কথা নিশ্চিত যে, কোন ফ্রী ভার্সনই পরিপূর্ণভাবে তার কাজ সমাধান করতে পারে না। কেননা এই সব ভার্সনে পরিপূর্ণ কোড দেওয়া থাকে না। আর সব চেয়ে বড় কথা হল এই সব ভার্সন মূলত ৭ দিনের মত ভালভাবে কাজ সমাধান করতে পারে। কেননা এই সব ফ্রী সফটওয়্যারের মূলত একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের হয় আর এই মেয়াদ মূলত ৩-৭ দিনের মধ্যে। তবে কিছু কিছু সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে ব্যথিক্রমও রয়েছে।
আমরা মূলত জানি যে, কম্পিউটারে একটি এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার যুক্ত থাকলেই কম্পিউটারটি সম্পূর্ণ ভাইরাস মুক্ত। কিন্তু পৃথীবেতে কী কম্পিউটার ভাইরাসের পরিমাণ নির্দিষ্ট? না পৃথীবিতে ভাইরাসের পরিমাণ কখনই নির্দিষ্ট নয়। মূলত যে সকল প্রোগ্রাম কম্পিউটারের ক্ষতি করে তাদেরকেই কম্পিউটার ভাইরাস বলে। আর আপনি চাইলে নিজেও কিছু নিয়ম মেনে ভাইরাস তৈরী করতে পারেন। এমনকি আমি নিজেও ভাইরাস তৈরী করতে পারি। তাহলে কিভাবে এই সব এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার আপনার ভাইরাসটির সন্ধান পাবে? আর এভাবে প্রতিদিনই হাজার হাজার কম্পিউটার ভাইরাস তৈরী হচ্ছে। আর এই সব হাজার হাজার ভাইরাসের মধ্যে কিছু কিছু ভাইরাস দূর করার কোড যুক্ত হচ্ছে এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যারগুলোতে। তাই এই কথা বলা যায় যে, আপনি যদি আপনার এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যারটিকে নিয়মিত আপডেট দেন তাহলেও আপনার কম্পিউটার যে পরিপূর্ণভাবে ভাইরাস হতে মুক্ত তা বলতে পারবেন না। কেননা এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যারগুলো সকল ভাইরাস সমন্ধে অবগত নয়।
আমি আগেই বলেছি সকল ফ্রী ভার্সনই একটি নির্দিষ্ট সময় সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। এই নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম হবার পর সে তার কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে অথবা অনেকটা কমে যায়। তবে ঐ সফটওয়্যারটির মালিক চাইলে ফ্রী ভার্সনগুলোকেই পরিপূর্ণ ক্ষমতা দিতে পারে। কিন্তু তারা যে ফ্রী ভার্সনগুলোকে পরিপূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করবে না এটা স্বাভাবিক। ফ্রী ভার্সনগুলোতে মূলত For…Next কোড ব্যবহার করা হয়। যার ফলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর ঐ সফটওয়্যারটি কাজ করার ক্ষমতা অনেক ক্ষেত্রে হারিয়ে ফেলে। এমনকি অনেক সময় প্রোগ্রামরা এই For…Next এ এমন সব কমান্ড যুক্ত করে দেন যা কম্পিউটারের জন্য অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। প্রোগ্রামাররা কেন এই সব ক্ষতিকর কোড যুক্ত করেন? এটা খুবই স্বাভাবিক। কেননা সে অনেক পরিশ্রমের মাধ্যমে সফটওয়্যারটি তৈরী করেছে। এখন কেউ বিনা মূল্যে তার সফটওয়্যারটি ব্যবহার করবে তা হতে পারে না। তাই সে এমনভাবে কোডিং করে যে একটি নির্দিষ্ট সময় পর অথবা একটি নির্দিষ্টবার কাজ করার পর সফটওয়্যারটি মূলত ভাইরাসে পরিণত হবে। আর তখন যদি কোন এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ইন্সটল তাকে তাহলে এটি ঐ সফটওয়্যারটিকে ভাইরাস হিসেবে গণ্য করে। তবে এই কথা নিশ্চিত যে, নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করার পর সফটওয়্যারটি যদি ভাইরাসেও পরিণত হয় তাহলেও তা খুব জটিল ভাইরাস হয় না। কেননা প্রোগ্রামারদের মধ্যেও মানবতাবোধ রয়েছে। কেউ চান না, অন্য একজন তার সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। তবে এটি মূলত প্রোগ্রামারদের নিজস্ব মানসিকতার ব্যাপার।
হ্যা! এটি হল মূল কথা। বর্তমান অবস্থায় কী করণীয়? ভাইরাসের জন্য আমরা মূলত ফ্রী এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যারের উপর নির্ভরশীল। তবে আমার মতামত এভাবে ফ্রী এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারের উপর নির্ভরশীল হওয়াটা ঠিক নয়। কেননা এটি ফ্রী সফটওয়্যার। তাই এই সব ফ্রী এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারের উপর নির্ভরশীল হবার কোন প্রয়োজন নেই। তবে যদি একান্তই ফ্রী এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে চান তাহলে নিয়মিত সফটওয়্যারটিকে আপডেট করুন। আর আপনার কম্পিউটারে যদি ইন্টারনেট যুক্ত না তাকে এবং কোন পেনড্রাইভ অথবা মোবাইলে কম্পিউটারে সংযুক্ত না করেন তাহলে এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহারের কোন প্রয়োজনই নেই। এছাড়া অন্য একটি টিউনে বলেছিলাম, Winrar দিয়ে ভাইরাস চেক করার নিয়ম। তাই যখন কোন ডিভাইস কম্পিউটারে যুক্ত করবেন তখন ঐ ডিভাইসটি প্রথমে winrar দিয়ে চেক করবেন। এছাড়া যদি কোন ফ্রী সফটওয়্যার নির্দিষ্ট মেয়াদের হয় তাহলে ঐ মেয়াদ অতিক্রম করার পর সফটওয়্যারটি কম্পিউটার হত মুছে ফেলুন এবং পরবর্তীতে আবার ইন্সটল করুন। যখনই কম্পিউটারে কোন অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করবেন তখনই পূর্ববর্তী সময়ে কম্পিউটারকে রিস্টর করুন System Restore ব্যবহার করে। আর কম্পিউটার যদি খুব বেশী সমস্যা করে তাহলে আপনার অপারেটিং সিস্টেমকে আবার ইন্সটল করুন। সাধারণত এই সব বিষয়ের দিকে নজর দিলেই আপনি কম্পিউটার ভাইরাস সমস্যা হতে রেহার পেতে পারবেন বলে আমি মনে করি।
হ্যা! ভাইয়া আমি আপনার সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করেছি। কিন্তু আমি তা চালু করতে পারি নাই। কারণ তা চালু করতে গেলে ইরর প্রদর্শন করে। এই সফটওয়্যারটি আপনি অন্য কোন ওয়েব সাইট হতে ডাউনলোড করতে চেষ্টা করুন। এবং দেখুন কাজ হয় কী না। আর আপনার এন্টি ভাইরাসটি যদি ফ্রী হয় তাহলে আমার মনে হয় না ঐ এন্টিভাইরাসটির উপর নির্ভর হওয়া আপনার ঠিক হবে। আশা করি আপনি আপনার সমস্যার সমাধান পেয়েছেন। আপনাকে ধন্যবাদ।
জানি না এই লিখাটি আপনাদের ভাল লাগবে কী না? তবে এই লিখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
কম্পিউটার বিষয়ক টিপসের জন্য নিয়মিত ভিজিট করুন http://www.tfortechnic.blogspot.com
অনলাইনে আয় সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে ভিজিট করুন http://www.earnfrombangladesh.tk তে
আমি ফাগুন রেইন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 46 টি টিউন ও 401 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
প্রযুক্তির সাথে আপডেটেড থাকতে চাই। কখনও সফল আর কখনো...। বেসিকালী ওয়েব ডেভলাপমেন্ট এবং উইন্ডোজ ফোন এপস নিয়ে কাজ করা হয়।
ভাল লাগল আপনার লিখাটি পড়ে,ধন্যবাদ।