লেখালেখি করেই অনলাইনে আয়ের বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে ব্লগিং, আর্টিকেল রাইটিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের ক্ষেত্রে আপনি কি লিখছেন তার উপর আপনার সফলতা নির্ভর করবে। ট্রাডিশনাল মিডিয়ার পাঠক আর অনলাইন মিডিয়ার পাঠকদের ক্ষেত্রে বেশ পার্থক্য রয়েছে। তাই আপনি তাদেরকে আপনার লেখালেখিতে আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারছেন, তারা পরবর্তীতে আপনার অন্য কোনো লেখা পড়তে আগ্রহী হবে কিনা সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য একজন ভালো লেখককেও তার ভিজিটর বা পাঠক কি চায় সেটি বুঝতে হয় এবং তেমনটাই লিখতে হয়। আর এগুলো বুঝতেই পারলে একজন ভালো লেখক হওয়া সম্ভব। নিচের পোস্টটিতে আমি ওয়েবে লেখালেখির গুরুত্বপূর্ণ ৭টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এর বাইরেও আরো অনেক বিষয় রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি ভালো লেখক হতে পারবেন। আশাকরি আলোচিত বিষয়গুলো অনুসরন করলে উপকৃত হবেন।
ইন্টারনেটে বিলিয়ন বিলিয়ন ওয়েবসাইট ও ব্লগ রয়েছে। আপনি যে বিষয়টি নিয়ে লিখছেন, সেটি নিয়ে অনলাইনে অন্তত কয়েক মিলিয়ন লেখা পাওয়া যাবে। আপনি এখানে কিভাবে ভিন্ন? কেনো ভিজিটররা এতো লাখো লাখো আর্টিকেল বাদ দিয়ে আপনার লেখা আর্টিকেল পড়বে?
লেখালেখির প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটু ইউনিক হতে হয়। বিশেষ করে ইন্টারনেটে লেখালেখির ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার সাফল্যের পাশাপাশি আর্থিক বিষয় জটিত থাকতেই পারে। তাই যখনই কিছু লিতে বসবেন, সবসময়ই চেষ্টা করবেন অন্যদের থেকে একটু ভিন্ন হতে। অন্যদের লেখালেখি থেকে আপনার লেখার মধ্যে পার্থক্য আনার অনেক উপায় রয়েছে। এক্ষেত্রে একটি হলো আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, আপনি কি নিয়ে ব্লগিং করছেন। কোনো বিষয় নিয়ে লেখার আগে ভালোভাবে গবেষনা করুন, সেটি সম্পর্কে জানুন, অন্যদের লেখা পড়–ন। ফলে সহজেই আপনার প্রতিযোগিতা থেকে জয়ী হওয়ার উপায় পেয়ে যাবেন। অন্যদের লেখার গ্যাপগুলো চিহ্নিত করে সে বিষয়গুলো নিয়ে আপনি এগিয়ে যেতে পারেন। মোটকথা হলো লেখার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ক্রিয়েটিভ হতে হবে এবং ভিন্ন চিন্তা করতে হবে।
আমি এখানো লোভ বলতে টাকা কিংবা জিনিষের প্রতি লোভ করার বিষয় বলছি না। এখানে আপনার আর্টিকেলে লিংকের কথা বলছি। আপনার আর্টিকেলে অথোরাইজড ওয়েবসাইট বা প্রাসঙ্গিক আরো ওয়েবসাইটের লিংক যুক্ত করলে পাঠক সংশ্লিষ্ঠ আরো অনেক রিসোর্স পাবে। লিংক যুক্ত করতে আপনার কোনো টাকা লাগবে না। কিন্তু অনেকেই উদ্বিগ্ন থাকেন এই ভেবে যে, অন্য সাইটের লিংক দিলে যদি ঐ পাঠক বা ভিজিটর পুনরায় আপনার সাইটে ফিরে না আসে! কিন্তু বাস্তব হলো লিংকিং করলে আপনার এরকম কোনো ভয় পাওয়া যুক্তি নেই। আপনার পোস্টে যদি ভালো লিংক কালেকশন থাকে তবে ঐ পাঠক রেফারেন্সের জন্য আবার ফিরে আসবে। এছাড়া অনলাইনে আপনার ক্রেডিটিবিলিটি বাড়বে।
পাঠক সর্বদাই একটি সাহায্যকারী পোস্ট পড়তে চায়। আপনি যদি পোস্টে অন্য ভালো ওয়েবসাইটকে ডিসকাভার করতে পারেন তারা আপনাকে মনে রাখবে। ইন্টারনেটে শেয়ারিং ই হলো প্রধান চাবিকাঠি, তাই পাঠককে একটি ভালো ওয়েবসাইটের খোঁজ দিতে মোটেই চিন্তা করবেন না।
আপনি এই পোস্টটির শিরোনাম এবং বিভিন্ন পয়েন্ট ভিত্তিক লেখা দেখে নিশ্চিত বুঝতে পারছেন, আমি কি বলতে চাচ্ছি। ঠিক এরকমই একজন লেখকের লেখনি একঝলকেই যাতে বোঝা যায়, সে বিষয়টিতে খেয়াল রাখতে হবে। অনলাইনে লেখালেখির ক্ষেত্রে বিষয়টি খুবই ইফেক্টিভ। অফলাইনে বই বা ম্যাগাজিন এর কোনো টপিক পড়বে কিনা সেটি সিদ্ধান্ত নিতে যে সময় লাগে, অনলাইনে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পাঠক অপেক্ষাকৃত অনেক কম সময় নেয়।
আপনি আপনার পোস্টকে যদি পয়েন্ট আকারে ভাগ করে লেখেন তাইলে পাঠক বিষয়টি সম্পর্কে সহজে ও দক্ষতার সঙ্গে সেটি বুঝতে পারবেন। আপনি বুলেট পয়েন্ট, লিস্ট বা অন্যকোনোভাবে হাইলাইট করে সংশ্লিষ্ঠ বিষয়টি বোঝাতে পারেন। লেখালেখির কয়েকটি ফর্মও আছে, সেগুলো অনুসরণ করলে ভালোভাবে পাঠকদের কাছে সেটি উপস্থাপন করা যায়।
এই বিষয়টি আবার রিপিট করলাম। কারণ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পাঠক কি চায় সেটি অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে। আপনি তাদের কি দিতে পারবেন সেটি সম্পর্কেও আপনাকে অবহিত থাকতে হবে। অনেক সময় পাঠকরা একটি ছোট্র তথ্য পেলেই খুশি। অনেক সময় তারা পুরো বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে আগ্রহী। আবার কোনো কোনো সময় তারা বিষয়টির বিশ্লেষন, বিভিন্ন সময়ের তথ্য পেতে চায়। আপনার পাঠক কি চাচ্ছে, এটি যদি বুঝতে পারেন তাইলে আপনি ভালো পাঠক পাবেন।
কোনো ওয়েবসাইট বা ব্লগের জনপ্রিয়তা, ট্রাফিক উপরোক্ত বিষয়ের উপরই নির্ভর করে। আপনি যদি আপনার নিশ থেকে সরে যান তাইলে আপনার পাঠককে হারাবেন। কারণ আপনি কি লিখছেন সেটা সম্পর্কে জানতে তারা আগ্রহী হবে না। ব্যক্তিগত বিষয় অবশ্যই ভালো, তবে সেটি যেনো আপনার সাইট বা ব্লগ রিলেটেড হয়।
কোনো তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে সেটি দ্রুত ও সঠিকভাবে কাভার করা একটি ট্রেন্ড হয়ে গেছে। যখনই কোনো তথ্য আসে সবাই ই সেটি একই সময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে। তবে আপনাকে পাঠকের তৃপ্তি দিতে অবশ্যই সেটি বিশ্লেষনমূলক পোস্ট দিতে হবে। তবে সময়ের কথা বাদ দিয়ে চিন্তা করলে হবে না। আপনাকে অবশ্যই অল্প সময়ের মধ্যে পাঠককে একটি পরিপূর্ণ তথ্য দিতে হবে, অন্যথায় পাঠক অন্য কোনো সাইটে একই তথ্য জানার জন্য চলে যাবে। আপনার সাইটে ফিরে আসার সম্ভাবনা কম।
উদাহরণস্বরুপ, গুগল তাদের অ্যালগরিদমে কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধণ এনেছে। এটি ব্লগারদের মধ্যে কেমন প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে? সবাইই গুগলের এই পরিবর্তনের কথা জানানোর চেষ্টা করবে। তবে আপনাকে এই তথ্যটি দেওয়ার পাশাপাশি ব্লগারদের মধ্যে এর প্রভাব কি সেটা অ্যানালাইসিস করে দ্রুততম সময়ে পোস্ট করতে হবে। তবে আপনি যদি একটু সময় নিয়ে বেশি তথ্য ও গ্রাফ আকারে পোস্ট দিতে পারেন তবে সেটি ফলো-আপ আর্টিকেল হিসেবে অবশ্যই ভালো জনপ্রিয়তা পাবে ও পাঠক পরিতৃপ্ত হবে। মূল কথা হলো আপনাকে দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে হবে।
আপনি যদি কোনো বিষয় নিয়ে লিখতে চান তবে সেটি সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই বেশি বেশি পড়তে হবে। আপনি যদি একাধিক লেখা পড়েন তাহলে সেটি সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন অনেক তথ্য পাবেন এবং পরবর্তীতে কি হতে পারে সেটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন। যেমন আপনার প্রতিযোগি কোনো একটি ছবি মিস করেছে, কিন্তু আপনি সেটি পেয়ে যেতে পারেন অন্য কোনো মাধ্যমে। ফলে তাকে প্রতিরোধ করা সহজ হবে। এছাড়া বেশি বেশি পড়লে আপনি লেখার ক্ষেত্রে আপনি অনেক আইডিয়া পাবেন।
আপনার পাঠককে ধরে রাখতে অবশ্যই স্টোরি, পারসোনাল অ্যাকাউন্ট, কেস স্ট্রাডিসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। ফলে আপনি আপনার টপিকের বিষয়টি সম্পর্কে অন্যদের থেকে ভিন্নভাবে, দৃড়ভাবে ও কেসস্ট্যাডিগুলো সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। অন্যান্যরা কি করছে সেটির বিপরীতে পাঠককে আরো ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ বর্তমানে অনলাইন রাইটারদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্রিয়েটিভিটি। আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়টি ভালোভাবে মোটিভেট করতে হবে।
আশাকরি এই বিষয়ে আরো লিখতে পারবো। সেক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা কাম্য। আপনাদের পরামর্শই পরবর্তী লক্ষ্যে পৌছে নিয়ে যাবে।
আমি আবু তাহের সুমন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 33 টি টিউন ও 1212 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহের অনলাইন উদ্যোক্তা এবং ইন্টারনেট মার্কেটিং স্ট্রেটেজিস্ট হিসাবে কাজ করছি দীর্ঘ ১দশক যাবত। ২০১৭'তে প্রতিষ্ঠা করি ' আওয়ামাহ টেকনোলজিস লিমিটেড ' বর্তমানে এর প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। আমার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইংরেজি ব্লগ 'ক্লিক করুন' । ধন্যবাদ।
ভাল লিখেছেন।বাট ক্রিয়েটিভ তো যে কেও হতে পারে না,এর জন্য প্রচুর পরিশ্রম করা লাগে,তাই নয় কি?আবার দেখা যায় অনেকে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ব্লগিং করছে,ফলে এ কাজে নিজের ক্রিয়েটিভিটি প্রকাশ করা তার পক্ষে কঠিন হওয়াটা মনে হয় না অস্বাভাবিক।অনেকে ব্লগিংটাকে সাইড ইনকামের ক্ষেত্র মনে করতে পারে,তারা হয়ত এ ব্যাপারে এক্সটা ক্রিয়েটিভ নাও হতে পারে,তাই বলে কি তারা ইনকাম করতে পারবে না?আশা করছি প্রশ্নগুলোর জবাব পাব।