লিংক সব সময়ই এক অতি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। সাইটের পেজ র্যাংক, ট্রাফিক ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তাই বলা যায় সব সময়েই লিংক জিনিসটা হট টপিক হিসেবেই থাকে। আর কিছুদিন আগের গোগলের পেঙ্গুইন আপডেটের পর লিংক হয়ে উঠেছে আবার আলোচনার মূল বিষয়। কেমন লিংক ভালো, কেমন লিংক ভালো না।
তিন ধরনের লিংক আছে।
১। এস ই ও –এর জন্য উপকারী লিংক
২। এস ই ও – এর জন্য অপকারী লিংক
৩। লিংক যেগুলো সার্চ ইঞ্জিন ইগনোর করে।
সার্চ ইঞ্জিন সব লিঙ্ক কে র্যাংকিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করে না। গুগল এবং বিং স্পষ্ট ই অনেক লিংক ইগনোর করে চলে।
সার্চ ইঞ্জিন আপনাকে বলবে না কখনো কোন কোন লিংক তারা ইগনোর করছে। এ ব্যাপারে সার্চ ইঞ্জিন জানাবে কোন ধরনের লিংক তারা ম্যানিপুলেট করছে, কোনগুলো এস ই ও এর জন্য ভালো, এবং কোন গুলোর র্যাংকিং এ কোন প্রভাব ই নাই।
সার্চ ইঞ্জিন লিংক ডাটা দিয়ে আরো বুঝাবে কোন সাইট নর্মাল রেঞ্জে আছে, কোন সাইট অভার অপ্টিমাইজড। যেমন ধরেন আপনি একটি কি ওয়ার্ড এংকর টেক্সট করে লিংক বিল্ডিং করলেন। ধরা যাক, ওয়ার্ড টা “Cricket”। এখন আর্টিকেলে যদি কি ওয়ার্ড ১৭% তাকে তাহলে ঠিক আছে কিন্তু তা ৩০/৪০ % হয়ে গেলে সমস্যা। ওভার অপ্টিমাইজেশন যাকে বলে।সার্চ ইঞ্জিন এসব লিংক ইগনোর করে চলে।যেমন নিচের ডিস্ট্রিবিউশন কার্ভেঃ
সবুজ লাইন টা দিয়ে বুঝানো হচ্ছে এস ই ও এর জন্য উপকারী লিংক।
বেগুনী টা অপকারী লিংক।
এরকম বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাস্টিস্টিক্যাল ডাটা সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে থাকে।
আর সাধারণত দেখা যায়, সামান্য কিছু কেনা(পেইড লিংক) লিংক আপনার র্যাংকিং এ কোন প্রভাব ফেলে না।কিন্তু আপনি যদি খুব বেশী পেইড লিংক করতে থাকেন তাহলে সার্চ ইঞ্জিন এ কে রেসিপ্রোকাল লিংক বা ব্যাজ লিংক হিসেবে ধরে নিবে। এবং এগুলো পেঙুইন আপডেটের পর কিছুটা বিপদজনক হয়ে গেছে।
আর সার্চ ইঞ্জিন গুলো নেগেটিভ এস ই ওএর বিরুদ্ধে সব সময়েই তৎপর।
এবার কিছু লিংক সম্পর্কে জানা যাকঃ
এংকর টেক্সটঃ
এংকর টেক্সট মানে লিংকের যে নাম। যেমন উপরের লিংকের এংকর টেক্সট ফেসবুক। এখন ধরেন আপনি লিংকের টাইটেল দিলেন “ক্রিকেট”। এটা এংকর টেক্সট। এংকর টেক্সট এস ই ওর জন্য ভালো। “ক্লিক হেয়ার” টাইপের লিংক দেয়ার চাইতে তো ভাল অবশ্যই। কি ওয়ার্ড আপনার সাইটের হেড ট্যাগে (h1) থাকলে ভালো হয়।
রেসিপ্রোকাল লিংকঃ
কিছু সাইট, কমিউনিটি সাইট তাদের সাইটে, বা ডিরেক্টরীতে আপনার সাইট বিনামূল্যে লিস্টিং এর বদলে আপনার সাইটে তাদের একটি ব্যাজ বা লিংক রাখতে বলে। এটি রেসিপ্রোকাল লিংক।
এখন কথা হল এই লিংক আপনি রাখবেন কি রাখবেন না?
সার্চ ইঞ্জিন চায় আপনি না রাখেন। কিন্তু যদি আপনি ওইসব সাইট থেকে ভালো সেবা( ট্রাফিক) পান তাহলে রাখতে পারেন।
ডিরেক্টরী লিঙ্কসঃ
এবার আসা যাক ডিরেক্টরী লিংকের কথায়। আপনি হাজার বিজার ডিরেক্টরী পাবেন। যেগুলো বলছেঃ Free SEO Link Directory, network of directories, Pay $25 to get instant inclusion in 25 different directories with custom link text!
সাধারনত এগুলো ফালতু। সার্চ ইঞ্জিন এগুলোকে ইগনোর করে চলে।
এখন যে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন তাহলে কি আমরা ডিরেক্টরী ব্যবহার করব না?
উত্তর হল করবেন। অবশ্যই করবেন। তবে সেই ডিরেক্টরী যেন আপনার সাইনের সম্পর্কযুক্ত হয়। আপনার সাইট যদি হয় “ডাক্তারি বিদ্যা” নিয়ে তাহলে মেডিকেল ডিরেক্টরী, “ভলিবল” খেলা নিয়ে হলে ভলিবলের নির্দিষ্ট ডিরেক্টরীতে যোগ করুন। কোয়ালিটি ট্রাফিক পাবেন। এবং এই ধরনের কিং হবে এস ই ওর জন্য উপকারী।
কন্টেন্টের লিংক বা ব্লগ নেট ওয়ার্কঃ
কন্টেন্ট মার্কেটিং তুমুল জনপ্রিয় এখন। আর্টিকেল লেখা হচ্ছে। আর্টিকেল স্পিনিং করে একই আর্টিকেল দশ বিশটা ব্লগে দিয়ে দিচ্ছে আর্টিকেল স্পিনার রা। মাইব্লগ গেস্ট সহ আরো কয়েকটি নেট ওয়ার্কে যোগ দিলেই ব্যাপার টা ধরতে পারবেন।
আপনি গেস্ট ব্লগিং করবেন। ব্লগে গেস্ট পোস্ট করতে দিবেন। কিন্তু গেস্ট ব্লগার যেন আসলেই ব্লগার হয় লক্ষ্য রাখবেন। তার লেখক পরিচিতির লিংক টা যেন আপনার সাইটের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়। আপনার সাইট সোশ্যাল মিডিয়া ব্লগ হলে তার টা ও যেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্লগ বা সাইট হয়। খুব সতর্ক থাকবেন এ ব্যাপারে। কথায় যখন আসছি এখানে বলে রাখি গেস্ট ব্লগারের লেখক পরিচিতিতে যদি কোন পর্ন লিংক থাকে তবে আপনার এডসেন্স ও ব্যান হতে পারে।
তবে হাই কোয়ালিটি কোন ব্লগ নেট ওয়ার্কে যদি আপনি যেতে পারেন, যেখানে সত্যি কোয়ালিটি আর্টিকেল পাওয়া যায়, তাহলে ভালো। আর লিংক বিল্ডিং এর জন্য সম্পর্ক যুক্ত সাইটে গেস্ট ব্লগিং করুন।
আর্টিকেল সাইটঃ
যেমন ইজিন আর্টিকেল। একটু চেঞ্জ করে বিভিন্ন আর্টিকেল সাইটে পোস্ট করা। আগের একটি লিংক বিল্ডিং পদ্বতি। কিন্তু এখন আর এ পদ্বতি কাজ করছে না। পেঙুইন আপডেটে ইজিন আর্টিকেলের মত সাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে কপি কন্টেন্টের জন্য। তাই এভাবে লিংক বিল্ডিং করে সময় নষ্ট করার মানে হয় না।
( আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেনঃ http://www.webpronews.com/google-panda-update-ezinearticles-2011-05)
প্রেস রিলিজ লিংক
টাইপিকাল যে প্রেস রিলিজ করা হয় ব্লগের লিং বিল্ডিং এর জন্য এগুলো সার্চ ইঞ্জিন ইগনোর করে চলে। ব্লগার বা কোন সাংবাদিক যখন আপনার প্রেস রিলিজ কে কেন্দ্র করে কোন পোস্ট লেখে সেক্ষেত্রে তার লিংক টা এস ই ওর জন্য ভালো। কিন্তু টাইপিকাল যে প্রেস রিলিজ সেগুলোকে প্রায়ই কপি কন্টেন্টের মত ধরে সার্চ ইঞ্জিন।
ব্লগ রোল লিংকঃ
লিংক এক্সচেঞ্জ। আপনি আপনার সাইডবারে অন্য ব্লগারের লিংক রাখবেন আর সে তার ব্লগের সাইড বারে আপনার লিংক রাখবে। এটাই।
ট্রাফিকের জন্য ভালো। তবে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে এস ই ওর ক্ষেত্রে। এখানে ও মেনে চলতে হবে সম্পর্কযুক্ত সাইটের কথা। এবং একটি ব্লগ রোল লিংক রাখা যেতে পারে।
ভালো র্যাংকের সাইট থেকে ব্লগ রোল লিংকের মাধ্যমে ব্যাক্লিংক পেলে তো ভাল। তবে এমনভাবে ব্লগ রোল লিংক রাখবেন না, যাতে আপনার ব্লগ কে সার্চ ইঞ্জিন ডিরেক্টরী টাইপের কিছু মনে করে।
ব্যাজ এবং এপসঃ
সার্চ ইঞ্জিন টেক্সট লিংক কে গুরুত্ব দেয়। এই ব্যাজ আর এপস এর লিংক গুলো ইগনোর করে। অনেক ভালো ভালো সাইট তাদের পেজ র্যাংক হারিয়েছে এই নতুন আপডেটের কারনে।
ইনফোগ্রাফিকঃ
ইনফোগ্রাফিক লিঙ্ক বিল্ডিং এর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। গোগল ইতিমধ্যেই ঘোষনা দিয়েছে তারা ইনফোগ্রাফিক যাতে পেজ র্যাংক ফ্লো তৈরী করতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে। তাই ইনফোগ্রাফিক দিয়ে লিংক বিল্ডিং এর আশা না করাই ভালো।
সোশ্যাল মিডিয়া লিংকঃ
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এখন। কারন গোগল প্লাস যুক্ত জায়ান্ট গোগলের সাথে। অপরদিকে বিং যুক্ত ফেসবুক এবং টুইটারের সাথে।
এরই মাঝে যোগ হয়েছে পিন্টারেস্ট। গোগল যাকে খুব গুরুত্ব দিয়ে সার্চ রেজাল্টে দেখাচ্ছে।
তাই সোশ্যাল মিডিয়া লিংক আপনার সাইট এর জন্য ভালো।
মাইক্রোসোফটের Aya Zook বললেন বিংগ এর সাথে টুইটারের দুই রকমের সম্পর্কের কথাঃ
১। নিউজঃ আপনি বিংগ এ যদি নিউজ সার্চ দেন তাহলে ডানদিকে এই টপিকের রিসেন্ট টুইট গুলো দেখতে পারবেন। যেমন “Katie Holmes” নিয়ে নিউজসার্চের পর ডানদিকে এরকম দেখতে পাবেনঃ
২। সাইড বারে পিপল ইউ নো ফিচারঃ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিংগ এক্সপার্ট দের চিহ্নিত করে রাখে। ফেসবুকে লগিন অবস্থায় নির্দিষ্ট বিষয়ে সার্চ দিলে ওই বিষয়ের এক্সপার্ট দের সাইডবারে দেখানোর ব্যবস্থা রেখেছে বিংগ।
(আগ্রহীরা আরো পড়তেঃ )
এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার লিংক গুলো নো ফোলো এবং সার্চ ইঞ্জিন গুলো সোশ্যাল মিডিয়া সব লিংকগুলো ইনডেক্স করে না। তবু ও এস ই ও এর জন্য এই লিংক গুলো ভালো। জোরেসোরে শোনা যাচ্ছে ইদানীং আগামীতে সাইটের সোশ্যাল মিডিয়া পাওয়ার র্যাংকিং এর ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে।
ফোরাম পোস্টঃ
জিনিসটা এমনভাবে ছড়িয়েছে যে লিংক বিল্ডিং মানেই ফোরাম পোস্ট। সিগনেচারে লিংক বসিয়ে যা তা পোস্ট চলছে। স্বভাবতই সার্চ ইঞ্জিন এগুলো ইগনোর করবে। এবং করছে ও। তাই ফোরাম দিয়ে আগামীতে লিংক বিল্ডিং কত টা হবে, এবং তা এস ই ও এর জন্য কত টা ভালো হবে বলা যাচ্ছে না। খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
ফোরাম আপনি লিংক পোস্টের জন্য ব্যবহার না করে মানুষকে সাহায্য করার জন্য, সম্পর্ক তৈরী করতার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। একজন ব্লগারের জন্য সম্পর্ক বিল্ডিং লিংক বিল্ডিং এর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ন না।
ইডু এবং গভ(EDU & Gov) লিংকঃ
ইডু এবং গভ সাধারনত বড় ইউনিভার্সিটি বা সরকারী প্রতিষ্টান ব্যবহার করে। তাই এগুলো কে হাই কোয়ালিটি সাইট হিসেবে গন্য করে সার্চ ইঞ্জিন। এগুলো থেকে ব্যাক লিংক পেলে অবশ্যই অবশ্যই আপনার এস ই ওর জন্য ভালো।
কিন্তু ইদানীং কিছু ব্ল্যাক হ্যাট পদ্বতিতে ইডু গভ লিংক তৈরী করা যাচ্ছে। গুগল ব্ল্যাক হ্যাট গভ এডু লিংকগুলো স্প্যাম হিসেবে গন্য করবে। গোগল এগুলো ট্র্যাকিং করার পদ্বতি বের করেছে এবং যারা ব্ল্যাক হ্যাট এস ই ও করেছে তাদের সাইট যেকোন সময় পেনাল্টির সম্মুখীন হতে পারে।
আপনি যদি ব্ল্যাক হ্যাট এস ই ও না করে সত্যিকার ভাবে এডু বা গভ থেকে ব্যাক লিংক পান অবশ্যই তা ভালো।
কন্টেট লিংক বা গেস্ট পোস্টিংঃ
এই কন্টেট লিংক টা হচ্ছে আপনি অন্য সম্পর্ক যুক্ত সাইটে গেস্ট পোস্ট লিখবেন। সাথে জুড়ে দিবেন আপনার লিংক। এক আর্টিকেল সবমিট করবেন এক সাইটে। সার্চ ইঞ্জিন এই ধরনের লিংক ফ্রেন্ডলী। এগুলো এস ই ও র জন্য ভালো।
অন্য ব্লগার দের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তাদের ব্লগে পোস্ট করুন। এক্ষেত্রে আপনি কোয়ালিটি ট্রাফিক ও পাবেন।
এই হল মোটামোটি লিংক বিল্ডিং নিয়ে কথা। ভালো ভাবে লিংক তৈরী করতে থাকেন। নিশ্চিত ব্লগের র্যাংক বাড়বে। ব্ল্যাক হ্যাট কিছুই করতে যাবেন না। হ্যাপী ব্লগিং।
বি দ্রঃ এই লেখাটি লিখেছিলাম জিন্নাতুল হাসান ভাইয়ের ব্লগের জন্য। এটি একটি ইংরেজি পোস্টের অনুবাদ যা তিনি করতে বলেছিলেন। গত রোজায় করা। কিন্তু তার ব্লগ এখন আপাতত বন্ধ আছে। তাই এখানে পোস্ট টা দেয়া। আশা করছি আপনার উপকারে লাগবে। আমি
আমার ফেসবুক প্রোফাইলে যোগাযোগ করতে পারেন বা এখানে কমেন্ট করতে পারেন কোন সমস্যায়। অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
আমি মুরাদ ইচ্ছামানুষ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 18 টি টিউন ও 85 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ব্লগার।
তথ্য বহুল পোষ্ট