যারা বিগত এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছো তাদের প্রতি আমার শুভেচ্ছা। আর যারা আশানুরুপ ফল পাওনি তাদের প্রতি আমার সমবেদনা ও ভবিষ্যতে ভালো করার অনুপ্রেরণা থাকলো।
যদিও এ পোস্ট আমার এসএসসি পরীক্ষার পরই দেয়া উচিত ছিলো । কিন্তু আমি দিতে পারি নি বলে দু:খিত। তবুও এখন এসব পরামর্শ উপকারে আসবে বলে আমার ধারণা।
কারণ এসএসসি পরীক্ষার পরই সময় নষ্ট না করে তিনমাসেই রেজাল্টের আগেই এইচএসসি’র প্রস্তুতি নেয়া উচিত। ভালো ছাত্ররা তাই করে। এবং যেসব স্যারেরা প্রাইভেট বা কোচিং করায় তাঁরাও তখন থেকেই ব্যাচ তৈরী করে।
তো যারা এখনও শুরু করো নি, তাতে যে সব শেষ হয়ে গেছে তা ভাবার কোন দরকার নেই। বরং এখন নতুন উদ্দমে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
প্রথমেই যে ব্যাপারগুলো স্মরণে রাখতে হবে
- প্রথমত এইচএসসি’র সিলেবাস এসএসসি’র সিলেবাসের তুলনায় প্রায় চারগুন।
- কিন্ত সময় এসএসসি’র তুলনায় অনেক কম। দুই বছরও না।
- এসএসসিতে সিলেবাসে একটি বই প্রায় আড়াই বছর পড়া হয়েছে। কিন্তু এখানে দুইটি বই যা পুর্বের বইয়ের তুলনায় প্রত্যেকটি দ্বিগুন।
- তোমার ক্যারিয়ার গড়তে এসএসসি’র তুলনায় এইচএসসি’র ভূমিকা অনেকাংশে বেশী। কারণ এই রেজাল্টের উপর ভিত্তি করেই তুমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, প্রভৃতি হবে।
- ক্যারিয়ারের এসব পর্যায়ে উঠতে তোমাকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে যার প্রশ্নপত্র তৈরী হবে এইচএসসি’র বইয়ের উপর ভিত্তি করে।
- আগে যে সিলেবাস পড়ে এসেছো তাতে প্রায় সবগুলোতেই নৈর্বত্তিক ছিলো কিন্তু এখন বাংলা ছাড়া আর কোন গুলোতেই নেই। সব লিখিত । তাই লেখার গতি আরো বাড়াতে হবে এবং বেশী পরিশ্রম করতে হবে।
- এসএসসিতে খারাপ করলে এইচএসসিতে ভালো করে cover-up করা যায়, কিন্তু এ পর্যায়ে এসে খারাপ করলে তার পূরণ করা অত্যন্ত কঠিন।
- এসএসসিতে জিপিএ-৫ পায় যেসব শিক্ষার্থীরা তাদের অর্ধেকই জিপিএ-৫ এইচএসসিতে পেতে ব্যর্থ হয়। এর কারণ আলসেমীতা, সচেতনতার অভাব ও মনিটরিং নেই।
তোমার জন্য করণীয়:
- প্রথমেই তোমাকে আগের তুলনায় পড়াশুনায় আরো বেশী মনযোগ দেয়ার সংকল্প করতে হবে।
- তোমার আগের পড়াশুনার তুলনায় বর্তমান পড়াশুনা দ্বিগুন করতে হবে।
- আগে যা না বুঝেই মুখস্ত করার অভ্যাস করেছো তা পরিত্যাগ করতে হবে।
- আগে যেমন অনেক কিছু বাদ দেয়ার প্রবণতা তৈরী করেছো তা পরিত্যাগ করে সকল বিষয়েরই সবকিছু বুঝে পড়তে হবে।
- অতিরিক্ত খেলাধূলা, ঘোরাফেরা ও সময় অপচয় করার মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে।
- যারা আগে পড়াশুনা শুরু করো নি। তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এখনই ঝাপিয়ে পড়ো।
- First Year, Don’t Care ভাব যেন ঘুনাক্ষরেও আসে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
- প্রথমেই তুমি ক্যারিয়ারে কি হতে চাও তা ঠিক করে নাও। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, প্রশাসন কর্মকতা, কেমিস্ট প্রভৃতি । কারণ সে অনুযায়ী তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে। সে অনুযায়ী নিজেকে পরিশ্রম করতে হবে। এই নিজের লক্ষ্য ঠিক না থাকায় আমাদের গ্রামাঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থীরা মেধা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে ভালো মতো প্রস্তুত করতে পারে না এবং বিফল হয়। তারা টেস্ট পরীক্ষার পর সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে যে আমি কোথায় কোচিং করবো ও কোথায় ক্যারিয়ার গড়বো।
- আগে শুধুমাত্র একটি বই পড়েই যেমন সাফল্য পেয়েছো, এখন সেটি করা কঠিন হবে। এজন্য এখন তোমাকে কয়েকটি বই কেনার ও পড়ার প্রতি আগ্রহী হতে হবে। আর্থিক সমস্যা হলে একটি নতুন ও অন্যান্যগুলো মোটামুটি কয়েক বছর আগের পুরনো বই কেনা যেতে পারে। শুধুমাত্র একটি বই অনুসরণ করলে অনেক সমস্যা হবে।
- যদি নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গড়ার ইচ্ছা থাকে তবে অত্যধিক কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং মুখস্ত বিদ্যা পরিহার করে বুঝে পড়ার প্রতি মনযোগ দিতে হবে । সেই সাথে গণিতের প্রতি বেশী আগ্রহী হতে হবে। সেটি গণিতের সাথে সাথে পদার্থ ও রসায়নের গাণিতিক সমস্যা ক্ষেত্রেও। জীববিজ্ঞানের প্রতি কম মনযোগ দিলেও চলবে কিন্তু এ বিষয়ে যেন জিপিএ-৫ যেন মিস না হয়। এসব ক্ষেত্রে ইংরেজী,পদার্থ গনিত,রসায়নে কোন রকমেই জিপিএ-৫ মিস হওয়া যাবে না। পদার্থের অংকের প্রতি বেশ নজর রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথম শাহজাহান তপনের বই এর উদাহরণ, অনুশীলনী ও বিশেষ সমস্যাবলী সমাধান করতে হবে। এরপর ইসহাক, গিয়াসউদ্দীন এর বইয়ের সমস্যা সমাধান করতে হবে।তফাজ্জলের বই অনুসরণ না করাই হবে বলে আমার মত। রসায়নে হাজারী-নাগের বই বাধ্যতামূলক। সেই সাথে এই বইয়ের সবগুলো গাণিতিক সমস্যা। সেই সাথে কবীরের বইও। গণিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। গণিতে আফসার, হারুনুর রশীদ, এসইউ এর বই অনুসরণ করতে হবে।
- যদি ডাক্তার হতে চাও তবে গণিতের চেয়ে থিওরী’র প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে পদার্থ ও রসায়নের গণিতও আসে। আর সবচেয়ে অধিক গুরুত্ব উদ্ভিদ ও প্রাণীবিজ্ঞানে। সাথে সাথে ইংরেজী ও সাধারণ জ্ঞানও লাগবে।
- যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিষয়ক বিষয়ে পড়তে চাও তাহলে সববিষয়েই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। থিওরির সাথে সাথে গণিতও।
- আর যদি মানবিক বিভাগের হও তাহলে বাংলা, ইংরেজী, সাধারণ জ্ঞান অবশ্যই।
- এছাড়া আরো অন্যান্য বিষয়ের প্রতি যদি তোমার আগ্রহ থাকে তাহলে তোমাকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক ও বর্তমানে পড়ছে বা পড়ে ক্যারিয়ারে নিয়োজিত এমন ভাই বা বোনের পরামর্শ নেয়া সহায়ক হবে।
- এ পর্যায়ে এসে যে গুরুতর ভুলটি করে তাহলো বই বাদ দিয়ে স্যারদের নোট, কোচিং এর নোট, বিভিন্ন গাইড প্রভৃতি পড়ে। এটা পরিতাজ্য সেগুলো দেখা যেতে পারে তবে এগুলো পড়ার বিষয় নয়, বরং পড়ার বিষয় তোমার বই । তোমার এই বইয়ে টপিকটি কঠিন মনে হচ্ছে অন্য লেখকের বইয়ে দেখো নতুবা স্যারকে জিজ্ঞেস করো। কিন্ত যেকোন প্রকার সস্তা নোটের প্রতি আগ্রহী হয়ো না। বরং নিজেই প্রশ্নের উত্তরগুলো লিখে নোট করে রাখো।
- আগেই কঠিন কঠিন সমস্যা গুলো করে নিজেকে গুলিয়ে না ফেলে প্রথমে সহজগুলো পড়ার পর আস্তে আস্তে উপরে উঠার চেষ্টা করো।
- কোন বিষয়কেই কম গুরুত্ব দেয়া ঠিক হবে না। বরং যেটার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকই দিতে হবে। যেমন তুমি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাও তাই জীববিজ্ঞান বাদ দিতে পারো না, তুমি তেমন গভীরা না যেতে পারো কিন্তু তোমাকে সেটিতে এপ্লাস পেতে হবে। তেমনি মেডিকেলে পড়তে চাও বলে গণিত ত্যাগ করাটা বোকামি হবে। গণিত না পারলে পদার্থ রসায়ন পারা কঠিন হবে।
- আগে যেমন ব্যবহারিককে গুরুত্ব না দিয়েই এসেছো এখন তেমনটা ভাবলে চলবে না। বরং তোমার থিওরীর সাথে প্র্যাকটিক্যালকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
- যে বিষয়ে পড়বে, সে বিষয়ে যেসব বড় ভাই বা বোনরা পাশ করে এখনও পড়ছে বা পড়েছে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে এবং পরামর্শ নিবে।
- পড়াশুনার পাশাপাশি পেপার,পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারো। কিন্তু এগুলো যেন আবার নেশায় পরিণত না হয়।
- সর্বোপরি নিয়মিত পড়াশুনা, অধ্যবসায় ও পড়াশুনায় কৌশল অবলম্বনই তোমাকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যেতে পারে ।
অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ:
- সন্তানের সাফল্যে যেমন আপনি খুশি হয়েছেন তেমনি তার কিছু ভুলেও তার পাশে দাড়াতে হবে। কোন সন্তান যদি এসএসসিতে খারাপ করে তবুও তার পাশে থাকুন ।তাকে বুঝান এতে সবশেষ হয়ে যায় নি বরং তোমার কামব্যাক করার সুযোগ আছে। তুমি এরপর পারবে।
- ভালো রেজাল্ট করার পর অনেক পিতামাতাই ছেলেমেয়েকে শহরে পাঠিয়ে দেন। যদিও এটা আমার পছন্দ নয়, আমার মতে আপনার সন্তানকে এইচএসসি পর্যন্ত বাড়িতে রেখে নিজে পরিচর্যা করা। তবুও যদি পাঠিয়ে থাকেন তার প্রতি আপনি খেয়াল রাখুন । সে কোন মেসে থাকছে, কেমন খাচ্ছে কেমন ছেলেদের সাথে মিশছে তা লক্ষ্য করুন।
- তার শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। যেটির প্রতি আমাদের পিতামাতারা একদম পিছিয়ে।
- তাকে নোট,গাইড পড়ার থেকে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলুন।
- যে যে ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে চায় সেক্ষেত্রেই তাকে গড়তে দিন এবং এক্ষেত্রে আপনি তার উত্সাহদাতা ও সাহায্যকারী হউন। অযথা আপনার পছন্দের পেশা তার উপর চাপিয়ে দেবেন না। কারণ এখনও অনেক পিতামাতাই নিজের সন্তানের উপর পেশা চাপিয়ে দেন। যেমন এখন অনেক সন্তানকে ডাক্তার হওয়ার জন্য জোর করা হয়। অথচ তার আগ্রহ নেই। এমনটা যেনো না হয়।
- সর্বোপরি আপনার পরিচর্যায় একজন শিশু একই সাথে আপনার পরিবার ও দেশের সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
আমি শাহাদাত হুসাইন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 17 টি টিউন ও 214 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
I am shahadat from RUET. I am so simple.
ভালো লাগল । আমিও এবারই এসএসসি দিয়েছি । আপনাদের দোয়ায় জিপিএ ৫ পেয়েছি । পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ ।