বর্তমান বাজারের ফ্ল্যাগশিপ ফোন ওয়ানপ্লাস ৬টিOnePlus 6T রিভিউ

ওয়ানপ্লাস ৬টি এর পূর্ববর্তী ফোন ওয়ানপ্লাস ৬ অনেকের কাছেই জনপ্রিয় ছিল বিশেষ করে এর হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার পারফরমেন্স এর জন্য। ওয়ানপ্লাস ৬ এবং ওয়ান প্লাস ৬ টি দেখতে একই রকম শুধুমাত্র কিছু পরিবর্তন করে এটাকে বাজারে ছাড়া হয়েছে। সম্পূর্ণ নিউজ এবং টেক নিউজ পেতে এখনই ভিজিট করুন ২৪টেকি তে<!-more->কিন্তু এই পরিবর্তনগুলি ওয়ান প্লাস ৬টি কে আগের মডেল থেকে অনেক এগিয়ে রেখেছে। নতুন নতুন কিছু ফিচারের কারণেই ওয়ানপ্লাস ৬টি হবে এর পূর্ববর্তী মডেল থেকে অনন্য। তাই এই দুটি ফোনের তুলনামূলক পার্থক্য না করে আমি শুধু ওয়ানপ্লাস ৬টি নিয়েই আলোচনা করব।

ওয়ানপ্লাস ৬টি: ডিজাইন

ডিজাইনের দিক দিয়ে বলতে গেলে ওয়ানপ্লাস ৬ এবং ওয়ানপ্লাস ৬টি এর মধ্যে পার্থক্য খুবই কম। ওয়ানপ্লাস ৬টি একটু মোটা এবং কার্ভ করা হয়েছে এর বড় ব্যাটারিটা ঠিকভাবে সেট করার জন্য। কার্ভ করার জন্য ৬টি দেখতে সুন্দর এবং হাতে নিয়ে প্রিমিয়াম অনুভূতি আসবে। বড় ব্যাটারির কারণে এর ডিজাইনটা কিছুটা চেঞ্জ করতে হয়েছে। ওয়ানপ্লাস ৬টি এর বেজেল অনেক ছোট ওয়ানপ্লাস ৬ থেকে। সবচেয়ে বড় যে ফিজিক্যাল চেঞ্জ ওয়ানপ্লাস 6টি তে দেখা যাবে সেটা হচ্ছে এর নতুন টিয়ার ড্রপ স্টাইল নচ(Tear Drop Style Notch)। ট্রেডিশনাল যে নচ গুলো দেখে থাকি সেগুলোর থেকে ওয়ানপ্লাস ৬টি এর নচ ভিন্ন এবং ছোট। নচ ছোট করার জন্য ওয়ানপ্লাস ৬টি এর ফ্রেমের মধ্যেই ইয়ারপিস রেখেছে। স্বাভাবিকভাবে এটা খুব বড় কোনো পার্থক্য না হলেও আপনি যখন ফুলস্ক্রিন ভিডিও দেখবেন তখনই আপনি পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন। ফোনের নিচের অংশে আপনি একটি ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট এবং দুইটা স্পিকার গ্রিল দেখতে পাবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে একটি স্পিকার গ্রিল আসল এবং অন্যটি ডিজাইনের সাথে সাদৃশ্য রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছে। তবে দুইটা স্পিকার ড্রিল যদি রাখা হতো তাহলে সেটা সবার কাছে ভালো লাগতো এবং পছন্দ করত। ওয়ানপ্লাস ৬টিতে আপনি কোন হেডফোন জ্যাক পাবেন না। আসলে ব্যাটারি ক্যাপাসিটি এবং স্পিকার গ্রিলটা বড় বানানোর জন্যই হয়ত তারা এই কাজটি করেছে কিন্তু তাদের এই কাজের জন্য অনেকেই এই ফোনটি কিনতে চাইবে না। ব্যক্তিগতভাবে আমি যদি হতাম তাহলে ফোনটি কিনতাম না। তবে অন্যদের ব্যাপার ভিন্ন যারা ব্লুটুথ হেডফোন ইউজ করেন। এটা সবার ব্যক্তিগত পছন্দ। সো ওয়ানপ্লাস লাভার ডোন্ট হেট মি প্লিইজ।

ওয়ানপ্লাস ৬টি: ডিসপ্লে

ওয়ানপ্লাস ৬টিতে আছে ৬.৪১ ইঞ্চির বড় একটি অপটিক অ্যামোলেড ডিসপ্লে, যার রেজুলেশন  2340x1080 এবং এর পিক্সেল ডেনসিটি 402 পিপিআই। রেজুলেশন বলতে গেলে অনেক ভালো মানের। ফোনটিতে অনেকগুলো স্ক্রীন ক্যালিব্রেশন মুড আছে যেমন: সিস্টেম ডিফল্ট, sRGB, DCI P3 এবং user-defined কাস্টম ক্যালিব্রেশন প্রোফাইল। আপনি স্ক্রিনটিকে যেমনটি দেখতে চান ঠিক সেভাবেই সাজাতে পারবেন এই ক্যালিব্রেশন এর মাধ্যমে। ওয়ানপ্লাস ৬টি এর ব্রাইটনেস(Brightness) ওয়ানপ্লাস ৬ এর থেকে অনেক বেশি। এর ফলে এসে সূর্যের আলোতে এই মোবাইল এর স্ক্রিন দেখতে আপনার কোন সমস্যা হবে না।

 

ওয়ানপ্লাস ৬টি: পারফরম্যান্স

এখনকার সময়ে যারা ফোন কিনতে চায়, বিশেষ করে গেম খেলার জন্য তাদের কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় হল মোবাইলের পারফরমেন্স। রেগুলার ইউজে সবগুলো ভালো ব্র্যান্ডের ফোনে মোটামুটি একই মানের কিন্তু যখন গেমের বিষয়ে আসে তখন আসলে মোবাইলের পারফরম্যান্সের বিষয়টিও আসে। ওয়ানপ্লাস এর মোবাইল গুলো ফাস্ট এবং স্মুথ হয় যা এদের পূর্ববর্তী রিলিজ গুলোতেই দেখা গিয়েছে। সেই অনুসারে ওয়ানপ্লাস ৬টি তে যে এর কোনো কমতি থাকবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ওয়ানপ্লাস এর অক্সিজেন ওএস সবথেকে লাইটওয়েট এবং তারা অপটিমাইজেশনের জন্য কিছু এক্সট্রা ফিচার অ্যাড করেছে যার ফলে এই ফোন গুলোকে আরো অনেক ফাস্ট করা যাবে। আপনি যদি একটি ভালো গেমিং এক্সপেরিয়েন্স চান তাহলে ৬টি সে ক্ষেত্রে বেস্ট হবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ওয়ানপ্লাস ৬টি: হার্ডওয়ার

হার্ডওয়ার বিষয়ে ওয়ানপ্লাস কখনও ছাড় দেয় না। ওয়ানপ্লাস ৬টিতে আপনারা পাবেন কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন এর ৮৪৫ এর প্রসেসর, ৬ অথবা ৮ জিবি র‍্যাম এবং ১২৮ অথবা ২৫৬ জিবি স্টোরেজ। এই ধরনের র‍্যাম এবং স্টরেজ যদি পাওয়া যায় তাহলে আর কি লাগে? ওয়ানপ্লাস ৬টিতে আছে ৩৭০০MAh এর ব্যাটারি যেটা সবার কাছে কম মনে হতে পারে কিন্তু ফিউচার আপডেট এবং সফটওয়্যার ইমপ্রুভমেন্ট এর মাধ্যমে ব্যাটারি লাইফ অনেক বাড়বে। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা স্ক্রীন অন টাইম পাওয়া যায়। আসলে মূল কথা হচ্ছে সফটওয়্যার অ্যাডজাস্টমেন্ট, র‍্যাম ম্যানেজমেন্ট এগুলো যদি ঠিক ভাবে করা যায় তাহলে ৩৭০০MAh ব্যাটারিও অনেক ভালো স্ক্রীন অন টাইম দেবে।
ওয়ানপ্লাস ৬টি এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে বিষয় এটিকে অনন্য করে তুলেছে সেটা হচ্ছে এর ইন স্ক্রিন ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার(In Screen Fingerprint Reader)। অন্যান্য ফোনের মত এর ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার মোবাইলের পিছনের রাখা হয়নি অথবা সামনের দিকে হোমস্ক্রিন বাটনেও রাখা হয়নি। ওয়ানপ্লাস ৬টি এর রিডার আপনার আঙ্গুলের উপরে আলো ফেলবে এবং সেখান থেকে আপনার আঙ্গুলের ছাপ রিড করবে। তবে এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারটা তুলনামূলক স্লো এবং অনেক সময় ঠিকভাবে কাজ করে না। যেহেতু এই ধরনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার মোবাইলের ক্ষেত্রে নতুন তাই আশা করা যায় ভবিষ্যতে ওয়ানপ্লাস তাদের সফটওয়্যার কাস্টমাইজেশনটা আরো ভালোভাবে করার মাধ্যমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারটিকে আরো ভালো করতে পারবে।

 

ওয়ানপ্লাস ৬টি: ক্যামেরা

ওয়ানপ্লাস 6টি তে পেছনে দুইটা ক্যামেরা রাখা হয়েছে প্রাইমারি ক্যামেরা ১৬মেগাপিক্সেলের এবং ১.৭৪ অ্যাপারচার যুক্ত এবং অপটিক্যাল ইমেজ স্টাবিলিজেশন(OIS) আছে। সেকেন্ডারি ক্যামেরাটি দেওয়া হয়েছে ২০ মেগাপিক্সেলের যেটা Depth-Sensing হিসেবে কাজ করবে। মোবাইলের সামনে আছে ১৬ মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা। এর ক্যামেরা হার্ডওয়ার আগের মতই রাখা হয়েছে শুধুমাত্র কিছু অ্যাডজাস্টমেন্ট, পোর্ট্রেট অ্যালগোরিদম এবং নাইট মুড সেটিংস আরো সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। আপডেটের সাথে সাথে ক্যামেরা পারফরম্যান্স আরো ভালো হবে এটা আশা করাই যায়। নাইট মুড এর ছবিগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক সুন্দর শার্প এবং স্মুথ আসে।

 

ওয়ানপ্লাস ৬টি:সফটওয়্যার

অনেকেই অক্সিজেন ওএস এর পাগলা ভক্ত। আমিও পার্সোনালি অক্সিজেন ওএস টাকে পছন্দ করি। ওয়ানপ্লাস ৬টি তে থাকবে অ্যান্ড্রয়েড ৯.০ পাই(Android 9.0 Pie) যেখানে কিছু নেভিগেশন, গেসচার আপডেট করা হয়েছে যাতে করে ফোনটিকে ইউজ করতে সুবিধা হয় এবং কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড অপটিমাইজেশন করা হয়েছে। ওয়ানপ্লাস ৬টিতে যে প্রোগ্রামটা সবথেকে স্মার্ট করা হয়েছে সেটা হচ্ছে স্মার্ট বুস্ট(Smart Boost)। যেটার কাজ হচ্ছে র‍্যাম থেকে কিছু অংশ ফোনটি নিবে, যেখানে অ্যাপ ডাটা গুলো সে সংরক্ষণ করবে। এতে করে অ্যাপসগুলো ৫ থেকে ২০ শতাংশ ফাস্টার কাজ করবে। যেহেতু ওয়ানপ্লাস ৬টিতে ৬ এবং ৮ জিবি র‍্যাম এর ভার্সন আছে এবং এত রেম এর মধ্যে কিছু অংশ মূলত বুস্ট করার জন্য রাখা হয়েছে। যখন আমরা বড় বড় অ্যাপ্লিকেশন ওপেন করব অথবা বড় কোন গেম ওপেন করব তখন এটাকে ফাস্ট করার জন্য এই স্মার্ট বুস্ট কাজ করবে। আর ভবিষ্যতে যেহেতু মোবাইলের হার্ডওয়ার এর উন্নতি সাধন হচ্ছে তো আরো বড় বড় গেম তৈরি হবে এবং এই কথা চিন্তা করেই তারা এই অপশনটি চালু করেছে।

ভাল লাগলে আমার সাইটে ঘুরে আসবেন। ধন্যবাদ

Level 0

আমি মোঃখালেদ মোশাররফ মিথুন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 7 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 19 টি টিউন ও 12 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

I like to share tech things with people. I don't know anything so i am student here. Also whatever i know ,want to share with you guys. Best of luck.


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস