COVID-19 মহামারী যেভাবে গাড়ি শিল্পের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করছে

সামাজিক দূরত্ব, অনলাইন অর্ডার, রিমোট ওয়ার্ক ইত্যাদি ছিল ২০২০ সালের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। করোনা যেমন আমাদের প্রতিদিনের জীবনে পরিবর্তন এনেছে একই সাথে পরিবর্তন এনেছে আমাদের রাস্তা, শহর, নগরের চলাচলে।

সম্প্রতি বছর গুলিতে কার শিল্পে যুক্ত হচ্ছিল নতুন নতুন প্রযুক্তি। কিন্তু করোনা মহামারীর পরবর্তী সময় গুলোতে এই শিল্পেও এসেছে দারুণ পরিবর্তন।

গত কয়েক বছর ধরে যোগাযোগে এসেছিল দারুণ সব পরিবর্তন। একদিকে যেমন কার কোম্পানি গুলো তাদের গাড়িতে যুক্ত করছিল নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং সুবিধা অন্যদিকে Uber, Lyft এর মত রাইড শেয়ারিং কোম্পানি গুলো পরিবর্তন করেছে মানুষের যানবাহন ব্যবহারের অভ্যাস। সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে গিয়েছে রাইট শেয়ারিং সার্ভিস। বিগত বছর গুলোতে কার কোম্পানি গুলো আরও বেশি মনোযোগী হচ্ছিল সেলফ ড্রাইভিং এর দিকে।

এটা ছিল করোনা পূর্ববর্তী সময়ের অবস্থা। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময় গুলো ছিল ভিন্ন। মানুষ সামাজিক দূরত্ব তথা নিজেকে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পাবলিক পরিবহণে চলাচল কমিয়ে দেয়। BBC News এর রিপোর্ট মতে এই মহামারীতে Uber এর ট্রিপ কমেছে ৭৫% এর মত কারণ এখন মানুষ পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন থেকে প্রাইভেট ট্রান্সপোর্টেশনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া IFA 2020 ইভেন্টে দেখা যায় বেশিরভাগ ব্র্যান্ড, স্টার্ট-আপ এবং নির্মাতারা এই পরিবর্তনটিকে আমলে নিয়েছে এবং তাদের প্রদর্শনীতেও ভিন্নতা এনেছে।

ইলেকট্রিক কারের কথা বলতে গেলে, বেশির ভাগ গাড়ি এখন অভ্যন্তরীণ দাহ ইঞ্জিন (ICE) ব্যবহার করে যা দূষণের জন্য দায়ী এবং এটি পরিবেশ এর সাথে সাথে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। এই ধরনের সমস্যার জন্য মধ্য মেয়াদি পরিবর্তন হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে ইলেক্ট্রনিক কার। যদিও এখানে শক্তি উৎপাদনের দরকার হয় তবুও এগুলো ICE ইঞ্জিনের তুলনায় বেশ দক্ষ এবং কম দূষণের কারণ।

 

এই মুহূর্তে ইলেকট্রিক কার বানাতে এগিয়ে রয়েছে Elon Musk এর Tesla। প্রতিনিয়ত বৈদ্যুতিক গাড়ি গুলোর দাম কমাতে কাজ করে যাচ্ছে Elon Musk। এক দশকের বেশি সময় আর্থিক সমস্যায় থাকলেও সাম্প্রতিক বছর গুলোতে কোম্পানিটি আউটপুট বাড়িয়ে লাভের সাথে ব্যবসায় করে যাচ্ছে।

মহামারীর ফলে বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রিক কার বিক্রয় বেড়ে যায় এবং বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে Tesla ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। যেহেতু Tesla এর বেশির ভাগ গাড়ি তাদের ক্যালিফোর্নিয়ার কারখানায় উৎপাদিত হয় তাই বিক্রয় প্রায়ই উৎপাদনকে ছাড়িয়ে যায়।

বিশ্ব জুড়ে ইলেক্ট্রনিক কার বিক্রয় বৃদ্ধি পেলেও ২০১৯ সালে ইউরোপে Tesla এর বিক্রয় ছিল নিচের দিকে কারণ তারা চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি উৎপাদন করতে পারছিল না। ফলস্বরূপ ইউরোপীয় ড্রাইভাররা অন্যান্য ব্র্যান্ড বাচাই করা শুরু করে।

এর মধ্যে করোনা মহামারীতে Tesla, কোম্পানিটি আরও চাপে পড়ে যায়। চারদিকে লক-ডাউনের ফলে উৎপাদন আরও হুমকির মুখে পড়ে যায়। সেই সময় এক রিপোর্টে বলা হয়েছে Elon Musk লক ডাউন উপেক্ষা করে কর্মীদের গাড়ি উৎপাদনে বাধ্য করছে।

অন্য দিকে, The Verge এর রিপোর্ট মতে গত কয়েক বছর ধরে জনগণ তথা বিনিয়োগকারীদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল সেলফ ড্রাইভিং টেকনোলজি।  Uber, Apple, Facebook, এবং Google এর মত কোম্পানি গুলো এই খাতে বিনিয়োগ করছে প্রচুর অর্থ। তবে যত অগ্রগতি আশা করছে সাধারণ জনগণ ততটা অগ্রগতি এই খাতে এখনো হয় নি। ইতিমধ্যে সারা বিশ্বজুড়ে সরকার এবং নিয়ন্ত্রকরা বিষয়টি আমলে নিয়েছে যে এই প্রযুক্তিটি কিভাবে কাজ করবে।

যেহেতু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে বিষয়টি বাস্তবায়িত হবে সুতরাং এখানে কোন প্রোগ্রামিং এর ভুল থাকতে পারে বা হটাৎ কোন ত্রুটি মারাত্মক ক্ষতিও করে ফেলতে পারে, এই বিষয় গুলো ভাবাচ্ছে নীতি নির্ধারকদের। এমনকি প্রাথমিক ভাবে Tesla এর পরীক্ষা মূলক কার্যক্রম গুলোও দারুণ বিতর্কিত হয়েছিল।  Tesla Deaths নামে একটি ওয়েবসাইটও চালু করা হয়, কতজন Tesla এর প্রযুক্তির কারণে মারা যায় এটি শনাক্ত করতে।

অন্যদিকে  Black Lives Matter প্রতিবাদে ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম গুলোও বেশ বিতর্কিত হয় যেখানে ব্ল্যাকদের শনাক্তকরণ কঠিন হয়ে যায়, একই সাথে ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে ইউজারের প্রাইভেসি নিরাপত্তা লঙ্ঘিত হয়, এই বিতর্ক তো ছিলই।

সেলফ ড্রাইভিং টেকনোলজি নিয়ে কাজ করা বেশ কয়েকটি কোম্পানি সাম্প্রতিক সময়ের কোন ধরনের আপডেট দিচ্ছে না, বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছে সেলফ ড্রাইভিং কার গুলো হয়তো বা পুরোপুরি বাতিলও করা হতে পারে।

এই মহামারী সকল কোম্পানিকে তাদের মুল ব্যবসায় ফোকাস করতে বাধ্য করছে, জটিল ডিজাইন বা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি গুলো কিছুটা কম প্রাধান্য পাচ্ছে এই সময়টিতে।

বর্তমান পরিস্থিতি এবং IFA 2020 ইভেন্টে কোম্পানি গুলোর প্রদর্শনীর পরে এটি নিশ্চিত যে আসছে দিন গুলোতে ড্রাইভার-লেস কার বা সেলফ ড্রাইভিং প্রযুক্তি হয়তো আসবে না। তবে ইলেক্ট্রনিক কার গুলোর চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এবং চার্জিং অবকাঠামো গুলোও এগিয়ে যাবে।

-
টেকটিউনস টেকবুম - ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

Level 2

আমি টেকটিউনস টেকবুম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 461 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস