গবেষণা বলছে রিমোট ওয়ার্কের ফলে সাইবার হামলার শিকার হতে পারে বিভিন্ন কোম্পানি

টিউন বিভাগ টেকটিউনস টেকবুম
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইমেইল, ভিডিও কনফারেন্সিং এবং দীর্ঘ সময় রিমোট ওয়ার্ক কর্মীদের ব্যয়বহুল ভুলের দিকে ধাবিত করেছে।

ইমেইল সিকিউরিটি কোম্পানি Tessian এবং Stanford University এর প্রফেসর Jeff Hancock এর একটি গবেষণা মতে, Tech, Finance, এবং Consulting কোম্পানির কর্মীরা বাসায় বসে কাজ করার সময় এতটাই চাপ অনুভব করছে যে তারা ভুল করে ফিশিং ইমেইল গুলোতেও ক্লিক করে ফেলছে। গ্রাহকদের প্রয়োজনে দ্রুত সাড়া দিতে, তাদের এই ধরনের ভুল সাইবার সিকিউরিটি রিস্কে ফেলছে কোম্পানি গুলোকে।

এই রিসার্চের মাধ্যমে উঠে এসেছে বাসায় বসে কাজ করতে গিয়ে হটাৎ অমনোযোগী হয়ে, কর্মীরা ফিশিং লিংকে ক্লিক করে ফেলছে এবং ভুল ব্যক্তিকে ইমেইল পাঠিয়ে দিচ্ছে নিজেদের অজান্তেই।

২০০০ আমেরিকান এবং ব্রিটিশ কর্মীদের উপর করা এই গবেষণাটি বলছে, এই ধরনের ভুল প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্য বেশ ব্যয় বহুল। একদিকে যেমন কর্মীরা এসব ভুল করে চাকরি হারাচ্ছে অন্য দিকে FBI এর রিপোর্ট মতে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ইমেইল স্ক্যামে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১.৭ বিলিয়ন ডলার। FireEye এর একটি গবেষণাও বলেছিল ৯১% সাইবার ক্রাইম শুরু হয় ইমেইলের মাধ্যমে।

প্রফেসর Jeff Hancock বলেন, ২০২০ সালে মানুষ প্রবল মানসিক চাপে আছে এবং সকল পরিবর্তন মোকাবেলা করতে গিয়ে তারা ভুল করছে।

Tessian এর তথ্য মতে নিচে দেখানো হল, কেন কর্মীরা ফিশিং ইমেইলে ক্লিক করছে এবং ভুল মানুষকে ইমেইল পাঠিয়ে দিচ্ছে।

এখানে বেশির ভাগ কর্মীই বলেছে তারা যখন বেশি চাপে থাকে তখন ভুল করছে, পাঁচ ভাগের দুই অংশই বলছে তারা যখন অমনোযোগী বা ক্লান্ত থাকে তখন ভুল গুলো করছে। বয়স্কদের তুলনায় তরুণরা বেশি ক্লান্ত এবং অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছে। ১৮-৩০ বছর বয়সী কর্মীদের ৬২% ভুল করেছে এবং ৫১ বছরের কর্মীদের মাত্র ৪৫% ভুল করছে।

Jeff Hancock জানিয়েছেন কর্মীদের অতিরিক্ত ক্লান্ত হবার কারণ দিনে ভেতর অনেকবার ভিডিও কনফারেন্সিং। তিনি বলেন, Zoom এর মাধ্যমে আলোচনা করা আর সামনাসামনি আলোচনা করা মধ্যে দারুণ পার্থক্য রয়েছে। যখন সামনাসামনি আলোচনা করা হয় তখন কারো দিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকতে হয় না কিন্তু যখন ভিডিও কনফারেন্সিং করা হয় তখন কয়েকজনের সামনে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকতে হয়, এবং নির্দিষ্ট ফ্রেমে নিজের মুখটা রাখতে হয়৷ দিনে এটি কয়েকবার করতে হয় যা বেশ ক্লান্তিকর।

৬১% কর্মীরা বলছে তাদের কে কোম্পানি ইচ্ছে করে বেশি সময় কাজ করায়, যেখানে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন ২১% কর্মী। ৪৬% কর্মী বলছে তারা কাজের চাপে পিষ্ট হচ্ছে।

রিসার্চ বলছে দীর্ঘ সময় কাজ করতে বাধ্য হবার অন্যতম কারণ হচ্ছে কাজের মধ্যে বিভিন্ন ভুল হওয়া।

গবেষণাটিতে উঠে এসেছে কর্মীদের কাজের মনোযোগ হারাচ্ছে বাড়িতে বেশি। অফিসে কোলাহল পূর্ণ পরিবেশে কাজ করলেও যেখানে কার্যকারিতা বেশি ছিল কিন্তু বাড়িতে বিভিন্ন কারণে মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে।

আর এই ধরনের অমনোযোগিতার জন্য অধিক সংখ্যক ভুল হচ্ছে।

বাসায় কর্মীরা বেশি অমনোযোগী হয় এটি স্বীকার করেছে ৫৭% কর্মী।

যদি শিল্প অনুযায়ী হিসেব করা হয় কোন শিল্পের কর্মীরা স্প্যাম ইমেইলে বেশি ক্লিক করছে তাহলে প্রথমেই আসে টেক শিল্প গুলো। যেখানে এ ৪৭% কর্মীরা ফেক অথবা ফিশিং ইমেইল গুলোতে ক্লিক করে। যেখানে দাতা সংস্থা গুলোর হার কম ছিল।

গবেষণায় আরও জানা যায় ঠিক কেন কর্মীরা ফিশিং মেইল গুলোতে ক্লিক করে। দেখা গেছে এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ছিল মনোযোগে। ৪৫% কর্মী জানিয়েছে তারা অমনোযোগী হয়ে এই ধরনের ভুল করে।

টেক কোম্পানির কর্মীরা বলছে তাদের ইমেইলের প্রতি খুবই রেসপনসিভ হতে হয়। যেখানে তাদের রেসপন্স রেট ৮৫ % অন্যদিকে ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর গুলোতে রেসপন্স রেট ৭৭%।

Jeff Hancock এর রিসার্চ বলছে রিমোট ওয়ার্ক এর ফলে বেশি ফিশিং এর শিকার হচ্ছে পুরুষরা। যেখানে ১৭% মহিলা এ ধরনের ফিশিং ইমেইলে ক্লিক করছে সেখানে পুরুষদের পরিমাণ ৩৪%।

দেখা গেছে ফিশিং লিংকে ক্লিক করার উপর কর্মীদের বয়সও নির্ভর করে। গবেষণায় দেখা গেছে ১৮-৪০ বছরের কর্মীরা বেশি ফিশিং ইমেইল গুলোতে ক্লিক করেছিল।

দেখা গেছে  কর্মীরা ভুল করে বেশির ভাগ সময় তাদের সহকর্মীদের ভুল ইমেইল পাঠিয়েছে। যার পরিমাণ ছিল ৩২%।

ভুল ইমেইল পাঠানোর ফলাফল কি ছিল? এর উত্তরে ২০% ছিল কোম্পানি তাদের গ্রাহক হারিয়েছে।

জরিপে দেখা গেছে তুলনা মূলক কম বয়স্ক কর্মীরা বেশির ভাগ সময় ভুল ব্যক্তিদের ইমেইল পাঠাচ্ছেন।

ভুল ব্যক্তিকে কেন ইমেইল পাঠানো হচ্ছে এর উত্তর হিসেবে গবেষণাটি বলছে, বেশির ভাগ সময় ক্লান্ত থাকার কারণে এই ধরনের ভুল হচ্ছে। এবং ৩৪% বলছে কাজের চাপে দ্রুত পাঠাতে গিয়ে এই ধরনের ভুল হয়।

তবে গবেষকরা জানিয়েছে, কর্মীদের এই সকল ভুলের প্রধান কারণ হচ্ছে ভিন্ন জায়গায় কাজ করার অভিজ্ঞতা। সাধারণ ভাবে মানুষ যে জায়গায় অভ্যস্ত তার বিপরীতে এই ধরনের ভুল হবেই। নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে।

-
টেকটিউনস টেকবুম - ১৭ আগস্ট ২০২০

Level 2

আমি টেকটিউনস টেকবুম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 461 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস