বৈষম্য-মূলক ভাবে Google সার্চে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে ইউটিউবের ভিডিও

সম্প্রতি জানা গেছে গুগলে কোন ভিডিও সার্চ করা হলে সেটি Youtube এর ভিডিওকে বেশি প্রাধান্য দেয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্ম গুলো থেকে গুগলে বেশি অগ্রাধিকার পায় Youtube

The Wall Street এর একটি জার্নালে উঠে এসেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোন ভিডিও এর Youtube ভার্সন গুগলে বেশি প্রাধান্য পায়।

জানা গেছে গুগলের নির্বাহীরা ইচ্ছে করেই ইউটিউবের ভিডিওকে সার্চ রেজাল্টের প্রথম পেজে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এতে করে অধিক সংখ্যক ট্রাফিক Youtube এ নেয়া সম্ভব হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে গুগল এর মুখপাত্র জানায় তারা গুগল সার্চ রেজাল্টে ইউটিউবের জন্য আলাদা কোন কনফিগারেশন করে নি। ইউজারের চাহিদা মত সর্বোচ্চ সামঞ্জস্যতা পূর্ণ ভিডিও টিই প্রথমে দেখানো হয়।

গত বছর একটি জার্নাল তদন্তে প্রমাণিত হয়েছিল যে গুগল প্রকৌশলীরা নির্দিষ্ট ব্যবসায়ের লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিয়মিত অ্যালগোরিদমিক পরিবর্তন করেন, অথচ কোম্পানির পাবলিক স্টেটমেন্টে বলা আছে তাদের সার্চ রেজাল্ট গুলো সম্পূর্ণ কনফিগারেশন মুক্ত এবং নিখুঁত।

জানুয়ারিতে গুগল প্রথমবারের মত প্রকাশ করেছিল, বার্ষিক বিজ্ঞাপণ আয়ে ইউটিউব ১৫ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এত বিশাল একটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিণত হলেও এটি প্রতিযোগিতার দিক থেকে দারুণ চাপে আছে। ফেসবুক সহ আরও ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম গুলো এই প্রতিযোগিতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

যেমন ফেসবুক ভিডিও শেয়ারিং এ কয়েক বছর যাবত মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে আসছিল। এতে অধিকাংশ পাবলিশার যাদের ইউটিউবে চ্যানেল ছিল তারা ফেসবুকেও পেজের মাধ্যমে ভিডিও শেয়ার করা শুরু করে। যেখানে তাদের ভিউ কখনো কখনো ইউটিউবের চেয়েও বেশি হয়। অন্যদিকে Twitch ও বর্তমানে প্রফেশনাল গেমার এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

যদিও আগে Youtube এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল Dailymotion কিন্তু ব্যবহার দিক থেকে এটি কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছে। তবে নতুন প্রতিযোগিতায় যুক্ত হয়েছে, Instagram এবং TikTok

পরীক্ষায় উঠে এসেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে গুগল সার্চে, ইউটিউব ভিডিও প্রতিযোগী প্ল্যাটফর্ম গুলোর আগে শো করছে। নির্দিষ্ট ভিডিও সার্চ করলে এর ইউটিউব ভার্সন আগে দেখানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অন্য প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেসবুক, Dailymotion এর  ভিডিও গুলোতে বেশি ভিউ হওয়ার পরেও সেগুলো আসছে Youtube এর পরে।

মার্চে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে গুগল সার্চের প্রথম পেজ, যেখানে ভিডিও গুলো বক্স আকারে দেখা যায়। সেখানে অধিকাংশ সময় ইউটিউব এর ভিডিও প্রাধান্য পাচ্ছে। এমনকি পুরো সার্চ রেজাল্টে প্রতিযোগীদের ভিডিও ছিল হাতেগোনা।

এই বিষয় গুলো আলোচনায় আসলে গুগলের মুখপাত্র জানায়, "সার্চ র‍্যাংকিং ভিউ বা লাইকের উপর নির্ভর করে না। গুগলের সার্চে সব সময় অর্গানিক রেজাল্টই বেশি প্রাধান্য পায় এবং এলগরিদম গুলোর কাজই হচ্ছে সব সামঞ্জস্যপূর্ণ রেজাল্ট আগে দেখানো"।

ইউটিউব বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম এতে সন্দেহ নেই কিন্তু সমালোচকদের দাবি কেন একই ভিডিও, যেগুলোতে অডিয়েন্স এর এনগেজমেন্ট বেশি, সেগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হবে না।

যারা বিষয় গুলো নিয়ে গবেষণা করছিল তারা জানায়, যেকোনো ফেসবুকের ভিডিও একই নামে গুগলে সার্চ করলে সেটি ৯৫ ভাগ সময় ইউটিউবের ভিডিওকে নির্দেশ করে। Dailymotion এর ভিডিও টাইটেল সার্চ করলে সেটি ৮০ ভাগ সময় ইউটিউবের ভিডিওকে সামনে দেখায় এবং হতাশাজনক হচ্ছে Twitch এর কোন ভিডিও গুগল পেজে আসেই না।

Dirk Lewandowski, একজন প্রফেসর যিনি দীর্ঘ দিন গুগলের সার্চ নিয়ে গবেষণা করে আসছেন তিনি তার বক্তব্যে জানান, গুগল প্রতিনিয়ত সার্চ রেজাল্ট নিয়ে বৈষম্য মূলক আচরণ করে আসছে। তাদের সার্চে অর্গানিক রেজাল্ট প্রাধান্য পায় কম।

BuzzFeed নামের একটি চ্যানেল যারা খাবার দাবার নিয়ে ভিডিও বানায়। এর কয়েকশো ভিডিও এর মধ্যে সম্প্রতি করা কিছু ভিডিও নিয়ে কয়েকজন গবেষণা শুরু করে। গবেষণার ফলাফল ছিল কিছু আশ্চর্যজনক! বলে রাখা ভাল গবেষণায় ব্যবহার করা ২৮ টি ভিডিও টাইটেল ফেসবুক এবং ইউটিউবে একই ছিল।

Caramel Dessert নিয়ে ৬ মিনিটের একটি ভিডিও যার ফেসবুক ভার্সনের ভিউ ছিল ৫.৪ মিলিয়ন এবং ইউটিউবে ছিল মাত্র কয়েক হাজার, তারপরেও সার্চ রেজাল্টে ইউটিউবের ভিডিওটিই আগে শো করে।

গুগলের এমন বৈষম্য-মূলক আচরণে Dailymotion এর চিফ অপারেটিং অফিসার বলেন, গুগল সার্চে এর সাথে এমন আচরণ আশ্চর্যের কিছু নেই। কোন ভিডিও Youtube এর কয়েক সপ্তাহে আগেও আপলোড করা হলে গুগল ইউটিউবের ভিডিও গুলোকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। তিনি আরও বলেন, এটি প্রতিযোগিতামূলক ভিডিও প্ল্যাটফর্মগুলির দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে।

গুগলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন না। এর আগেও অন্যান্য ব্রাউজারকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হারাতে গুগল তার ক্রোমকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে গিয়ে কয়েকবার বিতর্কিত হয়েছে গুগল। তাছাড়া ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডাটা বিজ্ঞাপণে ব্যবহার করার জন্য কয়েকবার তদন্ত করা হয়েছে এই বৃহৎ টেক কোম্পানিটিকে।

এখন বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন হচ্ছে সর্বাধিক ব্যবহৃত এই সার্চ ইঞ্জিন যদি ভিডিও প্ল্যাটফর্ম গুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এভাবে আঘাত হানে তাহলে ভবিষ্যতে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটু্কু বজায় থাকবে?

-
টেকটিউনস টেকবুম - ২৫ জুলাই ২০২০

Level 2

আমি টেকটিউনস টেকবুম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 461 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস