টেকটিউন Super Successor গেস্ট: নাজমুল হাসান নিরো, লেখক, "আমরা সবাই প্রোগ্রামার"
টেকটিউন Super Successor হোস্ট: রুবিনা ইয়াসমিন
সময়: মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট ২০১৭।দুপুর ১২ টা।
ব্যাপ্তি: প্রায় ১৫ মিনিট
স্থান: নাজমুল হোসেন সাহেবের অফিস, ঢাকা।
আজ আমরা কথা বলব আমাদের অতি পরিচিত নাজমুল হাসান নিরো ভাইয়ের সাথে।তার নিজের সম্পর্কে তার কিছু কথা আজ তার মুখ থেকে শোনা যাক।
"ক্যাকটাস এবং আমার মাঝে দু'টো জায়গায় বড্ড মিল। ক্যাকটাসের মতই আমি দূর-সুন্দর। দূর থেকে দেখতেই আমি শোভনীয়। কিন্তু ছোঁয়া যাবে না, আঙ্গুলে কাঁটা বিঁধবে।
ক্যাকটাসের মত আমার কোন বিনাশও নেই। আমাকে এক জায়গায় কেটে ছেঁটে, দলিয়ে, মাড়িয়ে পুঁতে ফেল; ক'দিন পরেই আমি ভুস করে মাথা বের করে ফেলবে আরেক জায়গায়। আমি খনে খনে ডুবে গেলেও হারিয়ে যাই না খনে। ঠিকই আরেক জায়গায় জেগে উঠি।
কিন্তু.. এই জেগে ওঠার মধ্যে কোন সফলতা বা সম্পদের সম্পর্ক নেই। আমি খনে সফলতা বা সম্পদের পেছনে ছুটি না। আমি খনে আমার কাজকে ভালোবাসি না। আমি শুধু আমার ভালোবাসার কাজই করে যাই। সফলতা বা সম্পদ আসুক বা না আসুক তার প্রতি আমার মোহ কাজ করে না।
শুধু সফলতা বা সম্পদই না। আমি আসলে 'অভলোহি' অর্থাৎ অহংকার, ভয়, লোভ এবং হিংসা এই চার জিনিসেরই ঊর্ধ্বে বাস করি। সৃষ্টিকর্তা এই চার জিনিস থেকে বঞ্চিত করে সৃষ্টি করেছেন আমাকে। এগুলোর ছিঁটেফোঁটাও নেই আমার মাঝে।
আর এখন আছি প্রত্যাশাহীনতা এবং অভিযোগহীনতা এই দু'টো জিনিসকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাব বলে।" এখন আমরা তার কাছে থেকেই জানব তার নিজের বই এর সম্পর্কে কিছু কথা।
"আমরা সবাই প্রোগ্রামার" বইটি লিখবার চিন্তা আপনার মাঝে কিভাবে বা কি উদ্দেশ্য আসলো?
নাজমুল হাসান নিরো: আপনারদের টেকটিউনসে আমি আমার লিখা “আমরা সবাই প্রোগ্রামর” বইটি নিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। “আমরা সবাই প্রোগ্রামর” বইটি লিখবার ইচ্ছা আমার মাঝে আসবার পর আমার প্রথম যেই কথাটা মনে আসে তা হল, এই বই লিখাটা আমার জন্য শুধু মাত্র বই লিখা না এটা আমার কাছে একটা মিশন। এটা মিশন হিসেবে আমার মাঝে আসবার কিছু কারণ রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবার মন মানসিকতা এখন এমন হয়ে গিয়েছে যে, যখন আমরা কোন ব্যক্তির কাছে বলে থাকি যে আমি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। সবাই এমন কিছু ভেবে নেয় যে ঐ ব্যক্তি অনেক বড় কঠিন কিছু করে থাকে। সে অনেক কঠিন কাজ করে, যেটা অন্য কেউ করতে পারবে না।সবার চোখ বড় হয়ে যায় এবং মুখটা হাঁ হয়ে যায়। ব্যাপারটা অনেকটা এই রকম। একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রোগামার এর নিজেকে বড় কিছু মনে করবার পিঁছনে আমরা নিজেরাই অনেকাংশে দায়ী।
তো নতুন যারা আছে তাদের কাছে সব সময় মনে হতে থাকে প্রোগামিং অনেক ভয়াবহ ব্যাপার এবং এটা সবার দ্বারা সম্ভব না। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, প্রোগামিং অনেক সহজ একটা বিষয়। আমি যদি প্রোগামিং করতে পারি, তাহলে সবাই প্রোগামিং করতে পারবে। এটা এত বড় কোন বিষয় না। আমি সবার মাঝে থেকে এই ভুল ধারনাটাই দূর করতে চাই যে প্রোগামিং অনেক কঠিন একটা বিষয়। এখান থেকেই আমার পথ চলা শুরু।
এরপর আমি চিন্তা করি, আমি আমাদের হাই-স্কুল লেভেলে ছেলেমেয়েদের কথা যদি আমি বইটা লিখি, তাহলে তারা সেই সময় থেকেই প্রোগামিং এর সাথে পরিচিত হতে পারবে এবং তাদের ক্যারিয়ারটা তৈরি করতে পারবে।
একটা জিনিস আপনারা সকলে খেয়াল করলে দেখতে পারবেন যে, আমাদের বাবা-মার হাতে যদি একটি স্মার্ট ফোন ব্যবহারের জন্য দেয়া হয় তখন তারা সেটা ব্যবহার করতে অনেক অস্বস্তি বোধ করে, যে স্মার্ট ফোন আমাদের কাছে ব্যবহার করা তেমন কোন ব্যাপারই না। আবার আপনি যদি একজন ছোট বাচ্চার হাতে স্মার্ট ফোন ব্যবহারের জন্য বর্তমানে দেন তাহলে দেখা যাবে, বাচ্চাটির কাছে তা ব্যবহার কোন ব্যাপার না।
এটার একমাত্র কারণ তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। এই স্মার্ট ফোনের যুগে একটা বাচ্চা স্মার্ট ফোনের ব্যবহার যতটা দূত শিখতে পারে আমাদের বাবা-মা কিন্তু তত দূত তা শিখতে পারে নাই। এটাই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।
এখান থেকেই বোঝায় যে, খুব অল্প বয়স থেকে মানুষ যে কাজ করবার চেষ্টা করে, সেইটা থেকেই মানুষের ভয় তত দূত কেটে যায়। এখান থেকেই আমার মাথায় মিশনটা কাজ করে হাইস্কুলের ছেলে মেয়েদের জন্য প্রোগামিং বই লিখব। তারাও যেন সহজেই বইটা পড়ে বুঝতে পারে প্রোগামিং জিনিসটা কি? এটা কিভাবে কাজ করে? এবং তাদের মাঝে যাতে করে একজন প্রোগামার হবার ইচ্ছা তৈরি হয়।
এরপর আমাদের মাথায় আসে, হাইস্কুলের ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি আমরা টার্গেট করতে পারি যেকোনো পেশার লোকজনকে। এখন হতে পারে সে কমার্স এর স্টুডেন্ট, হতে পারে সে বিবিএ এর স্টুডেন্ট, হতে পারে সে যেকোনো বিষয়ের স্টুডেন্ট। শুধু মাত্র তার মাঝে যদি প্রোগামিং শিখবার ইচ্ছা থাকে, সে যাতে সহজেই আমাদের বইটা পড়ে প্রোগামিং শিখতে পারে এবং মানুষের মাঝে প্রোগামিং নিয়ে যেই ভয় ছিল তা যেন কেটে যায়।
তাই এ সকল চিন্তা ভাবনার মাঝে দিয়ে "আমরা সবাই প্রোগ্রামর" বইটি লিখবার ইচ্ছা আমার মাঝে তৈরি হয়।
"আমরা সবাই প্রোগ্রামার" বইটি লিখবার সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে। আমরা বইটা লিখবার জন্য একমাস সময় লাগে। কিন্তু বইটা সম্পর্কে প্রতিটা পরিকল্পনা করতে এবং বইটি কিভাবে সাজালে ভালো হবে এসব কিছু চিন্তা করতে আমাদের ৬মাস সময় লেগেছে।
বাংলাদেশের Software Industry এবং কম্পিউটার প্রোগামিং সেক্টরটা নিয়ে কিছু বলুন আমাদের।
নাজমুল হাসান নিরো: বাংলাদেশের সকল industry ক্ষেত্রে একটা সাধারণ বিষয় হচ্ছে। আজকে একটা industry এর অবস্থা ভালো তো, কাল আর একটা industry অবস্থা ভালো। তো কম্পিউটার industry এর ক্ষেত্রে সমস্যাটা হচ্ছে, এখানে সবাই ভাবে যে অল্প শিখেই আয় করা শুরু করব। কিন্তু বিষয়টা একদমই ঠিক না, কারণ আমাদের কম্পিউটার industry টা এখন অনেক update হচ্ছে।
অল্প জ্ঞানে কখনোই কিছু ভালো হয় না। আমাদের দেশের এখনকার সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়টা হচ্ছে, ব্যাঙের ছাতার মত এখন অসংখ্য ট্রেনিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। এ সকল ট্রেনিং সেন্টার গুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে। তারা নিজেরাই জানে না কি শিখাতে হবে? কিভাবে শিখাতে হবে? তারা আমাদের তরুণ সমাজকে বিভিন্ন জিনিসের প্রলোভন দেখিয়ে, বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের আকৃষ্ট করে, তাদের ক্যারিয়ারের বিষয়ে স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি করাচ্ছে।
এতে করে সঠিক শিখার অভাবে ছেলেমেয়েরা ভালো কিছু করতে পারছে না, তারা অনেক হতাশ হয়ে পড়ছে। এ জিনিসটা খুবই হতাশা জনক যে, এই ট্রেনিং সেন্টার গুলো ছেলেমেয়েদের সকল আশা গুলো নষ্ট করে দিচ্ছে। এই ট্রেনিং সেন্টার গুলোর সব কিছু ঠিক করবার জন্য সরকারী অনেক উদ্যোগের প্রয়োজন।
আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য কিছু বলুন, যারা কম্পিউটার প্রোগামিং সেক্টরটায় ক্যারিয়ার গড়তে চায়।
নাজমুল হাসান নিরো: ট্রেনিং সেন্টার গুলোর এখন এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে যে "মাত্র ৩০০০টাকায় কোর্স করে, ঘরে বসে মাসে ২০০০০টাকা আয় করুন "। ডায়লগটা শুনবার পর হয়তো সব কিছু অনেক সহজ মনে হয়। কিন্তু বাস্তবতা এত সহজ আর সুন্দর না। যেহেতু এখন অনেক সময়টা competition এর যুগ। একটার পর একটা নতুন জিনিস আবিষ্কার হতেই চলেছে। জানার আর শিখার বিষয়ের কোন অভাব নাই। যে ব্যক্তি এখন যত কম জানবে, সেই ব্যক্তি এখন সময় থেকে তত পিছিয়ে পড়বে। যে যত বেশি জানবে, সেই ব্যক্তি সামনে তত বেশি সহজেই এগিয়ে যেতে পারবে।
তাই এখন যারা ভালো কিছু করতে চায় এবং শিখতে চায়। তাদের কে এগিয়ে যেতে হবে। যখনই শিখবার বা জানবার সুযোগ হবে। অবশ্যই শিখতে হবে, জানতে হবে।অনেক প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করতে হবে। নিজের জন্য শিখতে হবে, কাজ করতে হবে।
এখন কেউ যদি বলে ৩মাসে আমি সব শিখে ফেলতে পারব। এটা ভুল, ৩মাসে একটা বিষয় নিয়ে কখনই সব শিখতে পারা সম্ভব না কারণ মানুষ যখন কোন কিছু শিখতে শুরু করে, সে শিখতেই থাকবে এটাই একটা সাধারণ ব্যাপার। কারণ জ্ঞান অর্জন বিষয়টাই এমন, ঠিক লতানো গাছের মত। আপনি একদিক দিয়ে একটা বিষয় শিখতে থাকবেন তো আরেক দিক দিয়ে আপনার মাঝে অন্য একটা জিনিস জানবার ইচ্ছা হবে।তবে হ্যাঁ, আমরা হয়তো আমদের জ্ঞানটাকে কাজে লাগাতে পারি, বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সাথে যুক্ত হয়ে।
কম্পিউটার প্রোগামিং এর বই লিখা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
নাজমুল হাসান নিরো: "আমরা সবাই প্রোগ্রামার -২" বইটি নিয়ে বর্তমানে কাজ চলছে।বর্তমানে এটার কাজ আমরা মোটামুটি গুছিয়ে নিয়েছি। এই বই আমরা হয়তো আরও advanced programming কে আরও সহজ ভাষায় তুলে ধরবার চেষ্টা করব। আশা করি আমরা খুব তাড়াতাড়ি এই বইটি সকলের জন্য নিয়ে আসতে পারব।
টেকটিউনস বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতে এক বিপ্লব সৃষ্টি করেছে, এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি।
নাজমুল হাসান নিরো: টেকটিউনস এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখান থেকে আমরা শুধু শিখেছি তা বলব না। আমরা বন্ধুর মত টেকটিউনসকে পাশেও পেয়েছি। আমি যদি টেকটিউনসের শুরুর কথা বলি,তাহলে প্রথমে এটাই বলব। আমি টেকটিউনসের সাথে তখন থেকে আছে, যখন টেকটিউনসের golden time ছিল। আমি টেকটিউনসে প্রচুর লিখা লিখিও করেছি। খুবই ভাল লাগতো লিখালিখি গুলো করতে। আইটি সেক্টরে অনেক বিশাল এক ভূমিকা রেখেছে টেকটিউনস।
টেকটিউনস নিয়ে আপনার কোন পরামর্শ আছে।
নাজমুল হাসান নিরো: বর্তমানে আমি টেকটিউনসের জন্য কিছু পরামর্শ দিতে চাই। আমরা টেকটিউনসকে আগের মত চাই। টেকটিউনস এ মানসম্মত টিউন দেখতে চাই। টেকটিউনস এ আরও ভাল অবস্থায় দেখতে চাই। টেকটিউনসের সবচেয়ে বড় পাওয়ার হচ্ছে, টেকটিউনসের ইউজাররা। আমার পরিচিতদের মাঝে অনেকেই আছে টেকটিউনসের সাথে বহু সময় ধরে। আমরা টেকটিউনসকে অনেক ভালবাসি।আমার টেকটিউনসের জন্য পরামর্শ থাকবে। আমাদের যে সকল ইউজাররা এখন বিভিন্ন ইন্ডাস্টি তে কাজ করছে, টেকটিউনসে এখন তাদের কে দরকার ॥ কিছু ভাল মানের টিউন এর জন্য টেকটিউনসের উচিত তাদের সাথে সু-সম্পর্ক তৈরি করা।শুরু প্রোগামিং না, আমাদের আইটি সেক্টর গুলোতে জানার আর শেখার বিষয়ে শেষ নেই। একদিক দিয়ে শিখা শুরু করলে আরেকদিক দিয়ে শিখার আরেকটা পথ তৈরি হয়ে যায়।
টেকটিউনস এ এডভারটাইসমেন্ট এবং ব্যান্ডিং করে আপনি কিভাবে উপকৃত হয়েছেন।
নাজমুল হাসান নিরো: আমি যখন আমার বইটা লিখে শেষ করি এবং ইউজারদের হাতে পৌঁছে দেবার কথা চিন্তা করি, তখন প্রথমেই আমার মাথায় টেকটিউনসের কথা আসে। কারন, আমি যেই ধরনের ইউজারদের কাছে reach করবার কতা চিন্তা করছি। সে সকল ১০০% ইউজারদের আমি খুব সহজেই টেকটিউনসের মাধ্যমে পেয়েছি। আমি আমার বই এর জন্য টেকটিউনসে এডভারটাইসিং এবং ব্যান্ডিং করে অনেক উপকৃত হয়েছি। আমি যেই পরিমান response আশা করেছি, সেই পরিমান response পেয়েছি।
আমি টেকটিউনসের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ।টেকটিউনসের জন্য আমার অনেক অনেক শুভ কামনা। টেকটিউনসে আরও প্রফেশনাল টিউন তৈরি হোক। যাতে করে ইউজাররা তাদের ক্যারিয়ারটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
আমি টেকটিউনস। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 131 টি টিউন ও 2929 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 530 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1590 টিউনারকে ফলো করি।
মেতে উঠুন প্রযুক্তির সুরে।
নিরো ভাই আপনি এগিয়ে যান আমি আপনার সাফল্য কামনা করি । ভাই আমিও প্রোগ্রামিং খুব ভালবাসি কিন্তু আমি শিখতে পারছি না সঠিক গুরুর অভাবে ।