আপনি যদি ছোট শহরে বড় হোন তবে আপনার জন্য ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এমন একটি পরিবেশ যেখানে আপনার আশেপাশে সবাই শুধুমাত্র দিন গুজরানোর চিন্তায় ব্যস্ত।
এমনই ছিল David Stewart (ডেভিড স্টুয়ার্ট) শৈশব, যিনি এখন আমেরিকার সবচেয়ে ধনী কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি। তার এই অভাবনীয় যাত্রা ফোর্বস ৪০০ তালিকার ২০২৪ সংস্করণে উঠে এসেছে, যেখানে তার সম্পদের মূল্য $১১.৪ বিলিয়ন বলে নির্ধারণ করা হয়েছে।
David Stewart (ডেভিড স্টুয়ার্ট) এর এই সাফল্যের যাত্রা একদিনে হয়নি। গত বছর স্টুয়ার্টের সম্পদের পরিমাণ ছিল $৭.৬ বিলিয়ন এবং তার আগের বছর $৬ বিলিয়ন। এই ক্রমবর্ধমান সফলতা তাকে প্রাইভেট ইকুইটি বিলিয়নেয়ার রবার্ট স্মিথকে ছাড়িয়ে প্রথম স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। স্মিথ বর্তমানে $১০.৮ বিলিয়ন সম্পদের মালিক। তাদের পাশাপাশি আরও দুইজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের একজন Palantir এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আলেক্সান্ডার কার্প, যার সম্পদের মূল্য $৩.৬ বিলিয়ন এবং NBA কিংবদন্তি মাইকেল জর্ডান, যার সম্পদের মূল্য $৩.৫ বিলিয়ন।
David Stewart (ডেভিড স্টুয়ার্ট) এর জীবনের গল্পটা যেন একদম সিনেমার মতো—সংগ্রাম, সংকল্প আর অভাবনীয় সাফল্যের এক অবিস্মরণীয় কাহিনী। ছোটবেলা থেকে শুরু করে আজকের দিন পর্যন্ত তার জীবনযাত্রার প্রতিটি ধাপ আমাদের শেখায় যে আত্মবিশ্বাস আর পরিশ্রমের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। আসুন, তার এই অসাধারণ যাত্রার গল্পটি এক নজরে দেখি।
David Stewart (ডেভিড স্টুয়ার্ট) এর শৈশবটা ছিল বেশ কষ্টের। মিসৌরির ক্লিনটন শহরে সাত ভাইবোনের মধ্যে একজন হিসেবে বেড়ে ওঠা স্টুয়ার্ট ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন তার বাবা কিভাবে মেকানিক, ঝাড়ুদার এবং ময়লা সংগ্রাহকের কাজ করে সংসার চালাতেন। এই কঠোর বাস্তবতার মধ্যেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন বড় কিছু করার, জীবনে উন্নতির।
সেন্ট্রাল মিসৌরি ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হওয়ার পর, স্টুয়ার্ট চাকরি নেন Missouri Pacific Railroad, Union Pacific এবং FedEx এর সেলস বিভাগে। সেখানেই তিনি ব্যবসার প্রতি তার আগ্রহ ও দক্ষতার পরিচয় দিতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি জানতেন, আরও বড় কিছু করার জন্য তাকে ঝুঁকি নিতে হবে।
১৯৮৩ সালে David Stewart (ডেভিড স্টুয়ার্ট) তার প্রথম ব্যবসা শুরু করেন। Transportation Business Specialists নামে একটি অডিটিং কোম্পানি কিনেন। এখান শুরু হয় তার আসল সংগ্রামের দিনগুলো।
২০১৩ সালে Optical Fiber Communication Conference এ এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন,
"আপনাকে ব্যবসা শুরু করতে হলে কিছু ঝুঁকি নিতে হবে, ভয়কে অতিক্রম করতে হবে, সম্ভাবনার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে এবং বিশেষ কিছু করার জন্য আপনাকে সবকিছু ঝুঁকিতে রাখতে হবে। এর জন্য বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। "
৭৩ বছর বয়সী David Stewart (ডেভিড স্টুয়ার্ট) সফলতার পিছনে রয়েছে Worldwide Technology (WWT) কোম্পানি।
১৯৯০ সালে, ডেভিড স্টুয়ার্ট এবং তার পার্টনার জিম কাভানফ $২৫০, ০০০ পুঁজি বিনিয়োগ করে Worldwide Technology (WWT) প্রতিষ্ঠা করেন। WWT এর শুরুর দিনগুলো ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা।
অনেক সময় স্টুয়ার্ট বেতন ছাড়াই কাজ করতেন, এমনকি একবার তার গাড়ি অফিসের পার্কিং লট থেকে রিকভারি করাও হয়েছিল। কিন্তু তার আত্মবিশ্বাস ছিল অটুট।
WWT ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এবং আজকের দিনে এটি এক বিশাল IT সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে WWT এর প্রধান ক্লায়েন্টদের মধ্যে রয়েছে Apple, Citi, Microsoft এবং ফেডারেল সরকার। ২০২৩ সালে কোম্পানির বিক্রয় ছিল $১৭ বিলিয়ন, যা স্টুয়ার্টের সফলতার এক বিশাল প্রমাণ।
ফোর্বস ৪০০ তালিকায় থাকা ৬৭% সদস্যই Self Made। স্টুয়ার্ট তাদের মধ্যে অন্যতম এবং তাকে Self Made স্কোরকার্ডে সর্বোচ্চ ১০ দেওয়া হয়েছে, যা তার Rags to Riches গল্পের স্বীকৃতি। তার জীবনযাত্রার গল্প আমাদের শেখায় যে সাহস, সংকল্প আর কঠোর পরিশ্রম দিয়ে যে কেউই সাফল্য অর্জন করতে পারে।
২০২৪ সালের ফোর্বস ৪০০ তালিকায় স্টুয়ার্ট ৮৪ নম্বরে রয়েছেন, যা ২০২৩ সালের ১২১ নম্বর এবং ২০২২ সালের ১৫৫ নম্বর থেকে উন্নতি। Vista Equity Partners এর CEO রবার্ট স্মিথ ৮৮ নম্বরে রয়েছেন, যা গত বছরের ৮৯ নম্বর থেকে এক ধাপ উপরে। আলেক্সান্ডার কার্প ২৩ জন নতুন তালিকাভুক্তদের একজন।
ফোর্বস ৪০০ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হলেও অন্যান্য কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গ বিলিয়নেয়ার আছেন যারা উল্লেখযোগ্য সম্পদের মালিক। তাদের মধ্যে আছেন
David Stewart (ডেভিড স্টুয়ার্ট) এর এই সাফল্যের যাত্রা আমাদের শেখায় যে কঠোর পরিশ্রম, সাহস এবং সংকল্পের মাধ্যমে যেকোনো স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। তার জীবনের প্রতিটি ধাপ আমাদের জন্য এক একটি অনুপ্রেরণার উৎস। আজকের দিনে তিনি আমেরিকার সবচেয়ে ধনী কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, কিন্তু তার জীবনের শুরুটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এই সংগ্রাম আর সাফল্যের কাহিনী আমাদের সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল থাকার জন্য।
আমি রায়হান ফেরদৌস। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 183 টি টিউন ও 131 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 73 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।