গত বেশ কয়েক বছর ধরে স্মার্টফোন ক্যামেরাগুলোর যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত DSLR এবং মিররলেস ক্যামেরার তুলনায় স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। প্রফেশনাল ক্যামেরা গুলোর সমকক্ষ হওয়ার জন্য স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলোর এখনও বিশেষ কিছু ফিচারের প্রয়োজন।
আজকের এই টিউনে আমি এরকম ৭ টি ফিচার নিয়ে আলোচনা করব, যা স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলোতে থাকলে, তা DSLR ক্যামেরা গুলোর সমকক্ষ কিংবা কাছাকাছি আসতে পারে। আর এসব ফিচারগুলোর অন্তর্ভুক্তি একটি স্মার্টফোন ক্যামেরার ক্ষমতা এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি করবে। যার ফলে, এটি প্রফেশনাল ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে তাদের গ্রহণযোগ্যতা এবং প্রতিযোগিতার মানকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। তাহলে চলুন, এবার সে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ফিচারগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
স্মার্টফোন ক্যামেরা দিয়ে কম আলোতে ছবি তোলা সম্ভব হলেও, দিনের বেলা ছাড়া এভাবে ছবি তোলা অনেক কঠিন। ক্যামেরায় আলো নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল এটির আইএসও, কিন্তু স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলো এক্ষেত্রে প্রায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
এর উদাহরণ হিসেবে যেমন Fujifilm ক্যামেরার কথাই বলা যেতে পারে, যেখানে আইএসও বাড়িয়ে ১২, ৮০০ পর্যন্ত বাড়িয়ে নিতে পারি। এমনকি পুরনো Nikon DSLR দিয়েও আইএসও ২৫, ৬০০ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব হত। যদিও, সবার ক্ষেত্রে ISO অতটা বেশি বাড়ানোর প্রয়োজন হয় না, তবে এই অপশনটি কম আলোতে ছবি তোলার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদেরকে ভালো একটি সুবিধা দেয়।
যদিও আপনি স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলোতে Brightness এডজাস্ট করতে পারেন, তবে এখানে আইএসও পরিবর্তন করার কোন অপশন নেই। আর এই কারণে, যারা তাদের ফটোগ্রাফিতে আরো কাস্টমাইজেশন চান, তারা এখনো DSLR এবং Mirrorless ডিভাইসের দিকে ঝুঁকছেন।
স্মার্টফোন মেনুফ্যাকচাররা প্রায়ই তাদেরকে ক্যামেরা গুলোতে কত মেগাপিক্সেল রয়েছে, সে সম্পর্কে আলোচনা করে থাকে এবং এটি অনেক ক্ষেত্রে একটি ফোনের প্রধান সেলিং পয়েন্ট হিসেবে ও বিবেচিত হয়। যদিও একটি ক্যামেরার মেগাপিক্সেল ভালো ছবি তোলার ক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকা পালন করে; তবে এটি অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা আপনি মনে করতে পারেন। ক্যামেরা সেন্সর আপনার ছবির গুণগত মানে অনেক বেশি প্রভাব ফেলে।
ক্যামেরা সেন্সর হলো সেই স্থান, যেখানে আলো প্রতিফলিত হয় এবং এর মাধ্যমে একটি ছবি তৈরি হয়। আপনি যখন আপনার ডিএসএলআর ক্যামেরাটির লেন্স খুলবেন, তখন আপনি ক্যামেরা সেন্সরটি দেখতে পাবেন। এখানে আপনি লক্ষ্য করবেন যে, সেই সেন্সরটি স্মার্টফোনের সেন্সরের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে অনেক বড়। ক্যামেরা সেন্সর বড় হওয়ার কারণে, সেখানে বেশি আলো প্রবেশ করতে পারে। আর এর ফলস্বরূপ, ডিএসএলআর ক্যামেরা থেকে আপনি স্বাভাবিকভাবেই উন্নত মানের পিকচার পেয়ে থাকেন।
সত্যিকার অর্থেই স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলোকে DSLR এর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হলে, এটিকে ও অনেক বড় হতে হবে। আর, স্মার্টফোন মেনুফ্যাকচাররা ডিভাইসের আকার এবং জায়গা স্বল্পতার কারণে এটি বাস্তব রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে।
স্মার্টফোন ক্যামেরার ক্ষেত্রে আরো একটি প্রধান সমস্যা হলো, White Balance এর উপর ততটা নিয়ন্ত্রণ না থাকা, যতটা ডিএসএলআর ক্যামেরার মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে। White Balance সম্পর্কে আপনাকে যদি পুনরায় বলতে হয়, তাহলে এটি মূলত আপনার তোলা ছবিকে Warm অথবা Cool দেখানোর একটি বিষয়। এটি ব্যাখ্যা করতে গেলে, আপনি যদি চান একটি ছবির রং সাদা (যেমন: কাগজ) সত্যিকারের সাদা দেখাক, তাহলে সেই নামটি থেকেই ক্যামেরার এই ফিচারটির কথা এসেছে।
যাইহোক, আপনি যখন একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা ব্যবহার করেন, তখন আপনি এখানে White Balance ঠিক করার জন্য Kelvin Number বেছে নিতে পারেন। এছাড়াও আপনি ডিএসএলআর ক্যামেরাতে প্রিসেট থেকে Cloudy এবং Daylight বেছে নিতে পারেন। অন্যদিকে, অধিকাংশ স্মার্টফোন ক্যামেরায় এই সুবিধাগুলো থাকেনা। যার ফলে, আপনাকে একটি ভালো ছবি তোলার জন্য সম্পূর্ণভাবে আপনার ডিভাইসের উপরেই নির্ভর করতে হয়।
যদিও স্মার্টফোন ক্যামেরা দিয়ে একটি ছবি তোলার পর সেটিকে Adobe Lightroom এর মত এডিটিং সফটওয়্যার গুলো দিয়ে White Balance ঠিক করা যায়। এছাড়াও, আরো অনেক Native Photo Editing Apps রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে একটি ফটো তোলার পর White Balance এডিট করা যায়। তবুও, ছবি তোলার সময় White Balance নিয়ন্ত্রণ করতে পারা, ছবির কোয়ালিটিতে অনেক ভালো ফলাফল দেয়।
বর্তমান স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলোতে অনেক ধরনের ফিল্টার Available রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অনেক স্মার্টফোন ক্যামেরা তে iPhone ক্যামেরার অসংখ্য ফিল্টার ও রয়েছে। এই ফিল্টার গুলো ছবি তোলার সময় বিভিন্ন ধরনের লুক বা ইফেক্ট যোগ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, স্মার্টফোন গুলোতে বিভিন্ন শুটিং মোড যোগ করা হয়েছে। তবে এই শুটিং মোড গুলো ফটোগ্রাফির তুলনায় ভিডিও ধারণের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর।
অন্যদিকে, আমরা যখন একটি প্রফেশনাল ক্যামেরা বা ডিএসএলআর ক্যামেরা ব্যবহার করি, তখন সেটিতে Auto, Manual, Shutter Priority, and Aperture Priority মোডে শুট করতে পারি। এই বিভিন্ন মোডগুলি আমাদেরকে পিকচার তোলার সময় সেটির উপর আরো বেশি কন্ট্রোল দেয়। উদাহরণস্বরূপ, আমরা এ ধরনের ক্যামেরাতে ম্যানুয়াল মোডে পছন্দ অনুযায়ী এক্সপোজার, ফোকাস এবং অন্যান্য সেটিংস পরিবর্তন করতে পারি, যা আমাকে নিখুঁত ছবি তুলতে সহায়তা করে।
তবে আপনি স্মার্ট ফোনে ও আপনার ফটোগ্রাফির কোয়ালিটি বাড়াতে পারেন, তবে এক্ষেত্রে এটিতে আরো বেশি শুটিং মোড থাকলে ভালো হয়। অধিকাংশ স্মার্টফোনে অটো মোড থাকে, যেখানে ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবকিছু ঠিক করে দেয়। তবে, যদি স্মার্টফোনে Manual Mode অথবা Shutter Priority Mode যুক্ত করা যায়, তাহলে আপনি আরও ভালো ছবি তুলতে পারবেন। সুতরাং, ব্যয়বহুল ক্যামেরায় ইনভেস্ট না করেও, স্মার্টফোনে শুটিং মোডের সংখ্যা বাড়ালে, ফটোগ্রাফির মান অনেক উন্নত হবে এবং ভালো ছবি তোলা আরও সহজ হবে।
ফটোগ্রাফি করার ক্ষেত্রে শাটার স্পিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা প্রায়ই এটি নির্ধারণ করে যে, ছবিটি ঝাপসা হবে কিনা। যদিও কিছু স্মার্টফোন ক্যামেরায় Aperture কন্ট্রোল করার সুবিধা থাকে, যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শাটার স্পিড ম্যানুয়ালি কন্ট্রোল করা সম্ভব হয় না।
ব্যবহারকারীদের শাটার স্পিডের উপর বেশি নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে, যেসব পরিস্থিতিতে শাটার স্পিড এডজাস্ট করার প্রয়োজন পড়ে, সেখানে ভালো ছবি তোলা কঠিন হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি খেলাধুলার ছবি তোলার সময় কম শাটার স্পিড চাইতে পারেন। যদি স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলোতে এই ফিচারটি ব্যাপকভাবে যুক্ত করা না হয়, তাহলে ডিএসএলআর ক্যামেরার সাথে এর প্রতিযোগিতা করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
আমাকে যদি একটি স্মার্টফোনের ছবি তোলার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন বিষয় নিয়ে অভিযোগ করতে বলা হয়, তাহলে অবশ্যই Zoom করা ইমেজের কোয়ালিটি সম্পর্কে বলতে হবে। অধিকাংশ স্মার্টফোন ক্যামেরা দিয়ে জুম করার ফলে ছবির কোয়ালিটি উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পায়, যেখানে দুই গুণ কিংবা তার বেশি জুম করলে ইমেজের কোয়ালিটি আরো অনেক খারাপ হয়। এর কারণ হলো, স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলোতে অন্যান্য ক্যামেরার মত অপটিক্যাল জুম নেই।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আধুনিক স্মার্টফোনে ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল শটের জন্য বেশ ভালো ইমেজ কোয়ালিটি পাওয়া যায়। কিন্তু, কখনো কখনো আমরা কাঙ্ক্ষিত ইমেজ তোলার জন্য জুম করে সেটির কাছাকাছি যেতে পারি না। এরকম পরিস্থিতিতে ছবির কোয়ালিটি উল্লেখযোগ্য-ভাবে কমে যায়। যেখানে, ইমেজটি ক্রপিং করার পর ছবির কোয়ালিটি ডিএসএলআর ক্যামেরার তুলনায় অনেক বেশি খারাপ হয়ে যায়। সুতরাং, স্মার্টফোন ক্যামেরাগুলোতে উন্নত জুম ইমেজ কোয়ালিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও বর্তমানে কিছু স্মার্টফোন RAW ফরম্যাটে শুট করার সুবিধা দেয়, তবে এখনো এই অপশনটি বেশিরভাগ ডিভাইসে পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, প্রায় প্রতিটি DSLR ক্যামেরা আপনাকে RAW ফরম্যাটে শুট করার সুযোগ দেয়। যার মানে হল যে, আপনি যদি এমন ছবি এডিট করতে চান, তাহলে সেখানে আরও বেশি ডিটেলস থাকবে এবং ছবিটি অনেক কোয়ালিটি সমৃদ্ধ হবে। যদিও কিছু পরিস্থিতিতে JPEG ফরম্যাটে শুট করা ভালো, তবুও যারা এই সুবিধা পেতে চান, তারা এখনও DSLR ক্যামেরা কিনবে।
RAW ফরম্যাটে শুট করার সুবিধাটি আপনাকে ছবির কোয়ালিটি বাড়ানোর জন্য অনেক বেশি সুযোগ দেয়, যেখানে JPEG ফরম্যাটের তুলনায় অনেক বেশি ডিটেইলস থাকে। যার ফলে, আপনি সেই ছবিটির Brightness, Color এবং অন্যান্য দিকগুলো খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলোতে এই অপশনটি Available থাকলে, ব্যবহারকারীরা তাদের ফটোগ্রাফি আরো উন্নত করতে পারবে এবং সেই সাথে DSLR এর সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।
সুতরাং, স্মার্টফোন মেনুফ্যাকচাররা যদি তাদের আরো বেশি ডিভাইসে RAW ফরম্যাটে শুটিং অপশন প্রদান করে, তাহলে স্মার্টফোন ক্যামেরার গুণগত মান আরো বৃদ্ধি পাবে।
স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলির প্রযুক্তি দ্রুতই উন্নত হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই এগুলি বর্তমানে অসাধারণ ছবি তোলার ক্ষমতা দেখাচ্ছে। কিন্তু, এখনো এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিচার রয়েছে, যেখানে DSLR ক্যামেরা গুলির তুলনায় স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলি অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
বড় সেন্সর, White Balance এর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ, অতিরিক্ত শুটিং মোড, শাটার স্পিডের আরো নিয়ন্ত্রণ, জুম ইমেজের কোয়ালিটি এবং RAW ফরম্যাটে শুটিং অপশনের মতো ফিচার গুলির কারণে স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলো এখনো পর্যন্ত ডিএসএলআর ক্যামেরার সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছে। আর এই ফিচারগুলোর অভাবের কারণে, যারা প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি বা হাই কোয়ালিটি ইমেজ তোলার ব্যাপারে আগ্রহী, তারা এখনও DSLR ক্যামেরার দিকে ঝুঁকছে।
এখন তবে স্মার্টফোন মেনুফ্যাকচারারদের এই ফিচার গুলোর ব্যাপারে উন্নতি করতে হবে এবং এসব ক্ষেত্রে আরো কার্যকর পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে। যাতে করে, স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলো সত্যিই DSLR ক্যামেরার সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে। স্মার্টফোন ক্যামেরার এই সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে, ভবিষ্যতে আমরা দেখতে পারবো যে, স্মার্টফোন ক্যামেরা গুলো ও প্রফেশনাল ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করছে।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)