আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরেই মত আজকেও চলে এসেছি নতুন টিউন নিয়ে।
স্মার্টফোন গুলো এখন আরও বেশি বুদ্ধিমান। এর পেছনে রয়েছে বিভিন্ন সেন্সরের অবদান। ফেস আনলক, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, থেকে শুরু করে GPS এবং Auto Brightness এর মত ফিচার গুলো বিভিন্ন সেন্সরের উপর নির্ভর করে চালিত হয়। এই কাজ গুলো ছাড়াও স্মার্টফোনের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় অসংখ্য সেন্সর। তো চলুন দেখে নেয়া যাক স্মার্টফোন গুলোতে কত ধরনের সেন্সর রয়েছে এবং সেগুলো কিভাবে কাজ করে।
সেন্সর হচ্ছে একটা ক্ষুদ্র ডিভাইস বা মডিউল, এটি তার চারপাশের অবস্থা এনালাইসিস করে এবং কোয়ান্টিটিভ ফর্মে সেগুলো প্রসেসরে পাঠায়। স্মার্টফোনের সেন্সর গুলো তাদের আশেপাশের বিভিন্ন দিক যেমন, যেমন চারপাশের আলো, ডিভাইসের অরিয়েন্টেশন, মুভমেন্ট ইত্যাদি পরিমাপ করে।
প্রতিটি স্মার্টফোনের একটি ত্রিমাত্রিক Coordinate System বা সমন্বয় ব্যবস্থা রয়েছে। এই ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে, স্মার্টফোনের সেন্সরগুলো রিয়েল টাইমে যেকোনো পরিবর্তন সনাক্ত করে এবং সেগুলো রেকর্ড করে৷ স্মার্টফোনের এই সমন্বয় ব্যবস্থাটি তিনটি অক্ষ বা Axis এর সমন্বয়ে গঠিত,
X-axis গিয়েছে ডিভাইসের প্রস্থ বরাবর
Y-axis গিয়েছে ডিভাইসের দৈর্ঘ্য বরাবর
Z-axis গিয়েছে ডিভাইসের মধ্য দিয়ে
আর ডিভাইসের সকল সেন্সর এই অক্ষ গুলোর উপর ভিত্তি করেও পরিচালিত হয়। এখানে উল্লেখ করার মত বিষয় হচ্ছে, ফোনের ডিফল্ট অরিয়েন্টেশনে Coordinate System বা সমন্বয় ব্যবস্থা স্ট্যাবল থাকে। ফোন ল্যান্ডস্কেপ মোডে ধরে রাখলে বা যেকোনো দিকে কাত করলে এটি পরিবর্তিত হয় না।
সেন্সর গুলো যে প্যারামিটারের উপর ভিত্তি করে কাজ করে সেগুলো বিবেচনায় সেন্সরকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। নিচে তিন ধরো
মোশন সেন্সর ডিভাইসের সমন্বয় ব্যবস্থায় তিনটি অক্ষ বরাবর গতিবিধি, ত্বরণ এবং ঘূর্ণন সনাক্ত করে। এই সেন্সরের মাধ্যমে গেম খেলায় কাত শনাক্ত হয়, দিনে কত স্টেপ হেঁটেছেন এবং কোন দিকে যাচ্ছেন সেটা নির্ধারিত হয়।
কিছু মোশন সেন্সরের উদাহরণ হচ্ছে, Accelerometers, Gravity Sensors, Gyroscopes, ইত্যাদি
পজিশন সেন্সর ফোনের ফিজিক্যাল লোকেশন রেকর্ড করে। সেন্সর গুলো ফোনের Coordinate System এর মাধ্যমে পজিশন আইডেন্টিফাই করে, এটি তার চারপাশের পরিবেশকে রেফারেন্স এর ফ্রেম হিসেবে এবং অরিয়েন্টেশনকে ত্রিমাত্রিক স্পেস এর উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করে। এই ধরনের সেন্সর গুলোর মাধ্যমে ফোন, ন্যাভিগেশন, লোকেশন ট্র্যাক, স্ক্রিন রোটেশন ডিটেক্ট করার মত কাজ গুলো করে।
কিছু পজিশন সেন্সরের উদাহরণ হল, Proximity Sensor, GPS, এবং Magnetometer।
এনভায়রনমেন্টাল সেন্সর গুলোর কাজ হচ্ছে ফোনের চারপাশের অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন ডিটেক্ট করা। যেমন আলো, তাপমাত্রা, চাপ ইত্যাদি পরিবর্তনে ফোনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। অটো ব্রাইটনেস অন থাকলে ফোনের ব্রাইটনেস নির্দিষ্ট আলোতে বাড়া কমার জন্য এই সেন্সর ব্যবহৃত হয়। ডিসপ্লে টেম্পারেচার, বাতাসের চাপ ইত্যাদি নির্ণয়েও এনভায়রনমেন্টাল সেন্সর গুলো কাজ করে।
এনভায়রনমেন্টাল সেন্সরের উদাহরণ হল, Ambient Light Sensor, Thermometer, Barometer, Air-humidity Sensors ইত্যাদি।
বর্তমানে স্মার্টফোন গুলোতে বিভিন্ন সেন্সর থাকে, এবং সেগুলো ফোনের বিভিন্ন ফাংশন এনেভল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চলুন স্মার্টফোনের কিছু কমন সেন্সর দেখে নেয়া যাক জানা যাক কিভাবে সেগুলো কাজ করে।
Accelerometer ফোনের Coordinate System এ তিনটি অক্ষ বরাবর ডিভাইসের গতিবিধি রেকর্ড করে। X অক্ষ ফোনের এপাশ থেকে ওপাশে পরিমাপ করে, Y অক্ষ উপরে, নীচের গতিবিধি ও মাধ্যাকর্ষণ পরিমাপ করে। Z অক্ষ এগোনো পেছানোর গতিবিধি পরিমাপ করে৷
তিনটি অক্ষ থেকে প্রাপ্ত ডাটা ক্যালকুলেট করে ডিভাইসের এক্সালেরেশন বা ত্বরণ নির্ধারণ করা হয়। এই ইনফো গুলো বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে ডিরেক্টশন, ও স্পীড পরিমাপ করে। আর ফোনের ফিটনেস অ্যাপ গুলো এভাবেই আপনার চলার গতি, পদক্ষেপ এর সংখ্যা দেখায়।
Gyroscope ডিভাইসের Coordinate System এ তিনটি অক্ষ বরাবর রোটেশন পরিমাপ করে। এটি রেডিয়ান পার সেকেন্ডে, আপনার ফোনের সঠিক রোটেশন পরিমাপ করে।
সহজভাবে বলতে, Accelerometer রৈখিক গতিবিধি পরিমাপ করে এবং Gyroscope কৌণিক গতিবিধি পরিমাপ করে। আর এই উভয় সেন্সর সম্মিলিত ভাবে Auto Rotation এর মত ফাংশন গুলো নিয়ন্ত্রণ করে যা Temple Run এবং Asphalt 9 এর মত গেম গুলোতে ব্যবহৃত হয়।
ম্যাগনেটোমিটার পৃথিবীতে বিদ্যমান চৌম্বক ক্ষেত্র অনুসারে আপনার ফোনের অরিয়েন্টেশন ডিটেক্ট করে। সেন্সরটি ন্যাভিগেশন এবং কম্পাস অ্যাপ গুলোর জন্য জরুরী। এই সেন্সর আপনার ফোনের ডিটেকশন সনাক্ত করতে এবং সেই অনুযায়ী মানচিত্র প্রদর্শন করতে সাহায্য করে।
ম্যাগনেটোমিটার এর মতই Global Positioning System বা GPS এন্টেনার মাধ্যমে ন্যাভিগেশনে সাহায্য করে। এটি অনবরত স্যাটেলাইট থেকে সিগনাল রিসিভ করে এবং যাত্রার দূরত্ব ক্যালকুলেটের সাথে সাথে ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করতে পারে।
একটি সিগনাল রিসিভ হবার সাথে সাথে GPS একটি লোকেশন রেকর্ড করে, যেকোনো দুটি সিগনালের মধ্যে সময়ের পার্থক্যের উপর নির্ভর করে দূরত্ব গণনা করা হয়। ন্যাভিগেশন অ্যাপ গুলো লোকেশন এবং দিক সনাক্ত করতে জিপিএস এবং ম্যাগনেটোমিটার উভয়ই সেন্সরই ব্যবহার করে।
Ambient light সেন্সর ফোনের আশেপাশের আলোর তীব্রতা পরিমাপ করতে পারে। এই সেন্সর গুলো আশেপাশের আলোর পরিবর্তন ডিটেক্ট করে এবং এর তীব্রতা রেকর্ড করে।
ফোনের Auto Brightness ফিচার এনেভল থাকলে, Ambient light সেন্সরের ডাটা গুলো ব্যবহার ফোন রুমের আলো অনুযায়ী নিজের ব্রাইটনেস কমাতে বাড়াতে পারে।
Proximity সেন্সর এর কাজ হচ্ছে নির্দিষ্ট অবজেক্ট ফোনের কতটা কাছে বা দূরে সেটা আইডেন্টিফাই করা। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে ফোনের কল রিসিভ করে কানে ধরলে এর ডিসপ্লের লাইট অফ হয়ে যাওয়া। এটি ব্যাটারি লাইফ সেভ করে এবং কলের মধ্যে এক্সিডেন্টলি টাচ এড়াতে সাহায্য করে।
Hall সেন্সর অনেকটা Proximity সেন্সরের মতই কাজ করে। এটি ডিভাইসের ম্যাগনেটিক ফিল্ড ডিটেক্ট করে এবং সেই ডাটা প্রসেসরে প্রেরণ করে। এই সেন্সর মূলত ফ্লিপ কাভারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যখন ফ্লিপ কাভার ক্লোজ করা হয় তখন মেগনেট ডিভাইসের কাছে যায় এবং ডিভাইসের চুম্বক ক্ষেত্রকে ব্যাহত করে, এই তথ্য প্রসেসরে প্রেরণ হলে লাইট অফ হয়ে যায়।
পুনরায় কাভার ওপেন করলে ম্যাগনেট দূরে সড়ে যায় এবং ফোন স্লিপ মুড থেকে স্বাভাবিক মুডে ফিরে আসে।
Biometric সেন্সর গুলো শারীরিক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আইডেন্টিফিকেশনে ব্যবহৃত হয় আর স্মার্টফোন গুলোতে এই সেন্সর গুলো সিকিউরিটির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই সেন্সর গুলো আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিশ, এবং মুখমণ্ডল এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে পারে।
মোবাইলে ব্যবহৃত কিছু বায়োমেট্রিক্স সেন্সর হচ্ছে,
ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার: ইউজার স্ক্যানারে আঙুল রাখলে সেন্সর, ক্যাপাসিটিভ পৃষ্ঠ ব্যবহার করে আঙুলের রেখা গুলোর উপর ভিত্তি করে বৈদ্যুতিক সিগনাল তৈরি করে। পরবর্তীতে এই সিগনালের মাধ্যমেই ফোন আনলক হয়।
ইরিশ সেন্সর: এই সেন্সর অদৃশ্য ইনফ্রারেড লাইটের মাধ্যমে আইরিশের প্যাটার্ন ডিটেক্ট করে এবং সেভ করে।
Atmospheric সেন্সর বা বায়ুমণ্ডলীয় সেন্সর আপনার ডিভাইসের চারপাশের বিভিন্ন অবস্থা যেমন বায়ুমণ্ডলীয় চাপ, পরিবেস্টিত তাপমাত্রা, বায়ুর আর্দ্রতা ইত্যাদি সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়৷ Atmospheric সেন্সর গুলোর মধ্যে রয়েছে,
থার্মোমিটার: এটি ডিভাইস এবং এর আশেপাশের তাপমাত্রা পরিমাপ করে।
ব্যারোমিটার: এটি ডিভাইসের পার্শ্ববর্তী বায়ুচাপ পরিমাপ করে। আমরা জানি উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে চাপ বৃদ্ধি পায়, ব্যারোমিটার আপনার ফোনে রেকর্ড করা চাপকে নিকটতম আবহাওয়া স্টেশনের রেকর্ডিংয়ের সাথে তুলনা করবে এবং আপনি কতটা উঁচুতে আছেন সেটা সনাক্ত করবে।
বায়ু আর্দ্রতা সেন্সর: এই সেন্সর আপনার ডিভাইসের চারপাশের বায়ু আর্দ্রতা পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়।
এই টিউনে আলোচনা করা সেন্সর গুলোই মূলত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তবে আসছে দিন গুলোতে আরও বুদ্ধিমান সেন্সর আসতে চলেছে যা আমাদের স্মার্টফোন গুলোকে আরও স্মার্ট করে তুলবে।
সেন্সর এমন ডিভাইস যা আপনার ফোনকে স্মার্ট করে তুলে। এই বিশেষ মডিউল গুলোর মাধ্যমে প্রসেসর বিভিন্ন ফিচার প্রদান করতে পারে। যদিও Accelerometers এবং Gyroscopes সেন্সরের মাল্টিপল ব্যবহার রয়েছে তবে Ambient Light এবং Hall Sensor এর মত সেন্সর গুলো স্পেসিফিক ফাংশনের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
তো আজকে এই পর্যন্তই পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।