প্রসেসর হচ্ছে কম্পিউটারের প্রান। দেখতে ছোট হলেও একে ছাড়া কম্পিউটার অচল। এই প্রসেসর বলতেই আমরা সাধারনত বুঝি ইন্টেল প্রসেসরকে। আসুন জেনে নেই ইন্টেল প্রসেসর এর যত ততো ইতিহাস।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজ তাঁর “অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন” এ মেমরি এবং ইনপুট/আউটপুট কার্ডের যে প্রচলন শুরু করেছিল তারই ধারাবাহিকতার ফল আজকের এই আধুনিক প্রসেসর। শুরুর দিকে শুব সীমিত পরিমাণ কাজ করার ক্ষমতা থাকলেও বর্তমানের মাইক্রোপ্রসেসর গুলো প্রতি সেকেন্ডে বিলিয়নের চেয়েও বেশি ইনস্ট্রাকশন এক্সিকিউট করতে সক্ষম। একটি Central Processing Unit (CPU) র সমস্ত Functionality কে একটি মাত্র Integrated circuit (IC) এর উপর বসিয়ে মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করা হয়।
মাইক্রোপ্রসেসর বলতে আমরা সাধারনত Intel ও AMD কেই বুঝি। কিন্তু বিশ্বে এমন বহু প্রতিষ্ঠান আছে যারা মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করে। বেশ কিছু মাইক্রোপ্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এর নামঃ Intel, AMD (Advanced Micro Devices) Analog Devices, Atmel, Cypress, Fairchild, Fujitsu, Hitachi, IBM, Infineon, Intersil, ITT, Maxim, Microchip, Mitsubishi, MOS Technology, Motorola, National, NIC, NXP(Philips), OKI, Renesas, Samsung, Sharp, Siemens, STM, Toshiba, TSMC, UMC, Unibond ইত্যাদি। তবে Intel এবং AMD প্রসেসর ই সবচেয়ে বেশি ব্যবহিত হয়।
সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহু ব্যবহিত মাইক্রোপ্রসেসর হল ইন্টেল। এমনও কিছু মানুষ আছে যারা প্রসেসর বলতে শুধু মাত্র ইন্টেল কোম্পানির প্রসেসর কেই বুঝে। মান ও গুনের দিক থেকে ইন্টেল কোম্পানির প্রসেসর সব চেয়ে এগিয়ে। আসুন জেনে নেই ইন্টেল মাইক্রোপ্রসেসরের শুরু থেকে বর্তমান অবস্থা।
১৯৬৯ সালে শুরুর সময়ে ইন্টেল ছিল খুব ছোট একটি কোম্পানি। ইন্টেলের প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর ৪০০৪ এর আবিস্কারক টেড হফ ছিলেন কোম্পানির দ্বাদশ কর্মচারী। তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা ১৯৭১ সালে ইন্টেল – ৪০০৪ মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইন করেন যেটি ছিল বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক মাইক্রোপ্রসেসর। এটি ছিল ৪- বিট মাইক্রোপ্রসেসর এবং এর ক্লক স্পিড ছিল ১০৮ কি.হা.। .এটি প্রতি সেকেন্ডে ষাট হাজার ইনস্ট্রাকশন এক্সিকিউট করতে পারত।
১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে ইন্টেল ৮০০৮ নামে ৮ বিটের মাইক্রোপ্রসেসর বাজারে আসে যা ২০০ কি.হা. ক্লক স্পিডে অপারেট করতে সক্ষম ছিল। এটি মূলত তৈরি করা করা হয়েছিল টেক্সাসের কম্পিউটার টার্মিনালস কর্পোরেশনের জন্য।
ইন্টেল ৮০০৮ কে আপডেট করে তৈরি করা হয় ইন্টেল ৮০৮০, যেটি প্রতি সেকেন্ডে ২,৯০,০০০ ইনস্ট্রাকশন এক্সিকিউট করতে পারত এবং এর ক্লক স্পিড ছিল ২ মে.হা.। .এটা ৮০০৮ এর চেয়ে ১০ গুন বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন ছিল।
১৯৭৬ সালে ইন্টেল ৮০৮৫ মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কার করে যা ৩.৫ মে.হা. গতিতে কাজ করতে পারত। এটা ৮০৮০ এর চেয়ে অনেক বেশ দ্রুত কাজ করতে পারত এবং এতে প্রথম ক্লক জেনারেটর সার্কিট ও বাস কন্ট্রোলার সার্কিট যোগ করা হয়।
১৯৭৬ সালে প্রসেসরের মাইলফলক হিসাবে আবিষ্কৃত হয় ইন্টেল ৮০৮৬, এটি ১৬ বিট মাইক্রোপ্রসেসর যেটি ১০ মে.হা. পর্যন্ত গতিতে অপারেট করতে সক্ষম ছিল। ৮০৮৬ প্রসেসরে একটি ৬ বাইট ইনস্ট্রাকশন কিউ যুক্ত করা হয় যেটি প্রথম পাইপ লাইনিং ধারনার প্রচলন ঘটায়।
১৯৭৯ সালে ইন্টেল ৮০৮৮ প্রসেসরের প্রচলন শুরু করে যেটির ডাটা বাদ ছিল ৮ বিট ওয়াইড। এতে ৪ বাইট ইনস্ট্রাকশন কিউ ছিল এবং ৯ মে.হা. ক্লক স্পিড সাপোর্ট করতো। এটি IBM এর প্রথম কম্পিউটারে ব্যবহিত হয়।
এই প্রসেসর ফাস্ট জেনারেশন প্রসেসর নামে পরিচিত। ১৯৮২ সালে আবিষ্কৃত হয় এটি, যা মূলত ৮০৮৬ এর মতই ৬ বাইট ইনস্ট্রাকশন কিউ, ২০ বিট অ্যাড্রেস বাস এবং ১৬ বিট ডাটা বাস নিয়ে গঠিত। এর ক্লক স্পিড ছিল ৪-৬ মে.হা.
এই প্রসেসর Protected Mode এবং Real Mode নামে দুই মোডে অপারেট করতে পারত। এর বড় সুবিধা হল, ইউজার ইনস্ট্রাকশন এবং অপারেটিং সিস্টেম ইনস্ট্রাকশন আলাদা করতে পারা যেটি মেমরিকে সুরক্ষিত রাখতে সহয়তা করতো। এই প্রসেসর ৬-২৫ মে.হা. গতিতে কাজ করতে সক্ষম ছিল।
১৯৮৫ সালে ইন্টেল ৮০৩৮৬ বাজারে আসে, এটি সব ধরনের অপারেটিং সিস্টেম সাপোর্ট করতো। এই প্রসেসর সেকেন্ডে প্রায় ৫ মিলিয়ন ইনস্ট্রাকশন এক্সিকিউট করতে পারত এর ইনস্ট্রাকশন কিউ সাইজ ছিল ছিল ১৬ বাইট। এই প্রসেসর ৩৩ মে.হা. গতি পর্যন্ত কাজ করতে পারত। এর দুটি ভার্সন ছিল, একটি 80386 D.X অপরটি 80386 S.X
১৯৮৯ সালে এটি বাজারে আসে এবং এতে ৮ কিলোবাইট ক্যাশ মেমরি এবং বিল্ডি ইন ম্যাথ কো প্রসেসর ছিল। এই ম্যাথ কো প্রসেসর এর কারণে এটি পূর্ববর্তী প্রসেসর এর চেয়ে ৩ গুন দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারত।
পেন্টিয়াম প্রসেসর দুটো ডাটা পাইপলাইনের সাহায্যে একই সাথে দুটি ইনস্ট্রাকশন এক্সিকিউট করতে পারত। এটি ৫০-৬৬ মে.হা. পর্যন্ত ক্লক স্পিড প্রদান করে। এটি ২৫৬ কে.বি. থেকে ১ এম.বি. পর্যন্ত ক্যাশ মেমরি সাপোর্ট করতে পারত।
১৯৯৫ সালের শেষের দিকে ইন্টেল পেন্টিয়াম প্রো প্রসেসর ডেভেলপ করে যেটি প্রতি সাইকেলে মাল্টিপাল ইনস্টাকশন রান করতে সক্ষম। এই প্রসেসর ৩২ বিট সার্ভার এবং ওয়াকস্টেশন অ্যাপ্লিকেশান এর জন্য মূলত ডিজাইন করা হয় (যেমনঃ উইন্ডোজ এন.টি.) যা ২০০ মে.হা. পর্যন্ত গতিতে কাজ করতে পারে।
এই প্রসেসর ৫৭ টা মাল্টিমিডিয়া এক্সটেনশন সাপোর্টটিং ইনস্টাকাশন যুক্ত করা হয় যার ফলে এই প্রসেসর ভালো অডিও ভিডিও সাপোর্ট দিতে পারে। এর ক্লক স্পিড ছিল ৩০০ মে.হা. পর্যন্ত।
পেন্টিয়াম টু জেনন প্রসেসর সার্ভার এবং পার্সোনাল কম্পিউটারের জন্য তৈরি করা হয় যেটি মূলত কিছু বিশেষ কাজের জন্য তৈরি করা হয়। এসব কাজ হলঃ ইন্টারনেট সার্ভিসেস, কর্পোরেট ডাটা ট্র্যান্সফার, ডিজিটাল কন্টেন্ট ক্রিয়েশন ও মেকানিক্যাল ডিজাইন অটোমেশন ইত্যাদি।
১৯৯৮ সালে ইন্টেল তুলনামূলক কম দামে প্রসেসর বাজারে আনে সেটি হল সেলেরন। কম দাম বলে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বর্তমানে সেলেরন প্রসেসর ৩.৬ গি.হা. স্পিডে অপারেট করতে সক্ষম।
পেন্টিয়াম থ্রি প্রসেসর ইমেজিং, থ্রিডি স্টীমিং অডিও ভিডিও, গেমস এর জন্য খুব জনপ্রিয়তে অর্জন করে। এটি ১.৪ গি.হা. পর্যন্ত ক্লক স্পিড সাপোর্ট করে।
১৯৯৯ সালে পেন্টিয়াম থ্রি জেনন বাজারে আসে যা মূলত ই-কমার্স এবং অ্যাডভান্সড বিজনেস অ্যাপ্লিকেশান এর জন্য। পেন্টিয়াম টু জেনন এর মত ২ এম.বি. পর্যন্ত L2 ক্যাশ সাপোর্ট করে। ৭০০ মে.হা. পর্যন্ত ক্লক স্পিড প্রদান করে।
২০০০ সালের শেষের দিকে ইন্টেল নেট বাস্ট টেকনোলজির উপর ভিত্তি করে তাদের সপ্তম প্রজন্মের মাইক্রোপ্রসেসর পেন্টিয়াম ফোর বাজারে ছাড়ে যা ৩.৮ গি.হা. পর্যন্ত ক্লক স্পিড সাপোর্ট করে। বিভিন্ন সুবিধার কারণে এটি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
ইন্টেল ও এইচপি (HP) মিলিত ভাবে এই প্রসেসর তৈরি করে। ৬৪ বিট এই প্রসেসরগুলো মূলত প্যারালাল প্রসেসিং সাপোর্ট করে যা প্রতি সাইকেলে ৬ টা ইনস্টাকশন পারফর্ম করতে পারে। এতে মোট ২৫৬ টা অ্যাপ্লিকেশান রেজিস্টার আছে। ইটানিয়াম ৮০০ মে.হা. পর্যন্ত ক্লক স্পিড সাপোর্ট করে যেখানে ইটানিয়াম টু ১.৬ গি.হা. পর্যন্ত সাপোর্ট করতো। এই পরচেসসর বাজারে তেমন একটা চাহিদা সৃষ্টি করতে পারে নি।
ইন্টেল ২০০৫ সালে পেন্টিয়াম ডি প্রসেসর বাজারে আনে যা আসলে দুটি পি-ফোর প্রসেসরের সমন্বয়ে। পরবর্তীতে তারা মুলত ল্যাপটপ কম্পিউটারের জন্য ডুয়াল কোর প্রসেসর তৈরি করে যা ১.২০ গি.হা. স্পিডে কাজ করতে সক্ষম। ডুয়াল কোর প্রসেসর এর পরবর্তী ভার্সন কোর টু ডুয়ো। কোর ডুয়ো এবং কোর টু ডুয়ো উভয়েরই দুটো করে আলাদা প্রসেসর আছে। চারটা প্রসেসর কোর নিয়ে ইন্টেল যে প্রসেসর টা বাজারে এনেছে সেটা হল কোয়াড কোর। এটা অনেক বেশি গতি সম্পন্ন।
ইন্টেল কোর আই সিরিজে ৩ ধরনের প্রসেসর আছে Core i3, Core i5, Core i7. এখানে শুধু Core i7 নিয়ে আলোচনা করা হবে কারণ এটা হল ইন্টেলের সর্বশেষ প্রসেসর। এটাকেই কার্যক্ষমতা কমিয়ে, পাওয়ার কমিয়ে বানানো হয় Core i5 ও Core i3.
ইন্টেল কোর আই সেভেন হচ্ছে নেহালেম মাইক্রোআর্কিটেকচারের উপর ভিত্তি করে তৈরি তিনটি ইন্টেল ডেস্কটপ X86-64 প্রসেসরের একটি ফ্যামিলি। এ ফ্যামিলিতে আছে তিনটি প্রসেসরঃ ২.৬৬ গি.হা. এ চলা Core i7-920, ২.৯৩ গি.হা গতিতে Core i7-940 এবং ৩.২ গি.হা. গতিতে চলা Core i7-965 Extreme. এগুলো অনেক বেশি কার্যকর, অনেক বেশি শক্তিশালী প্রসেসর।
আমি হোসেন রাহাত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 46 টি টিউন ও 210 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
প্রযুক্তিকে ভালোবাসি আর মানুষকে সাহায্য করতে পছন্দ করি তাই Blogging এর মাধ্যমে নিজের মনের ইচ্ছাকে পূরণ করার চেষ্টা করছি। আমাকে আরও জানতে Visit করুন -হোসেন রাহাত
চরম একখান জিনিস ভাইজান! আর রিলেটেড পোস্ট দেখেন, আমারগুলান আইস্যা গেসে 😀
ভালো থাকেন। তারা দিয়া রাখলাম।