আর একটু জানি পলিগ্রাফ সম্পর্কে …….

‘কখনো বিবাহিত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন?’ এতো গেল ভারতীয় জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘সাচ কা সামনা’র খুব সাধারণ একটি প্রশ্ন। সেলিব্রেটিদের ধরে এনে এর চেয়েও একান্ত ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা হয় সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানটিতে।
sach_ka_saamna_logo.jpg
পেছনে কাড়ি কাড়ি রুপির হাতছানি। লোভে পড়ে এসে মান-ইজ্জতটুকু খোয়ানোর যোগাড় হয়। মিথ্যে বলার জো নেই। আছে লাই ডিটেক্টর, ‘পলিগ্রাফ’। অঙ্ক কষে ঠিক বলে দেবে ‘তুমি মিথ্যেবাদি’। অনুষ্ঠান তর্ক-বিতর্ক রেখে আপাতত নজর দেয়া যাক মূল হোতা পলিগ্রাফের দিকে। বহু আগের পশ্চিম আফ্রিকার মিথ্যে ধরার আনুষ্ঠিকতা অনেকটা এমন। বেশ কতগুলো লোক সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়াত। এক পর্যায়ে তাদের হাতে দেয়া হত পাখির ডিম। সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ানো সাবই একে একে হাত বদল করত। যার হাতে ডিমটি ভাঙত সেই মিথ্যেবাদী। অন্যদিকে আদি চীনে মিথ্যুক ডিটেক্টর হিসেবে ব্যবহার হতো একমুঠো চাল। সন্দেহভাজনদের তা চিবোতে দেয়া হতো। যার মুখের চাল শুখনো থাকতো সেই নাকি মিথ্যেবাদী।প্রাচীনকালের এই মিথ্যে ধরার তরিকাগুলো কি পুরোপুরি ভিত্তিহীন? আধুনিক বিজ্ঞান অবশ্য তা পুরোপুরি মানতে নারাজ। ডিম ভেঙে ফেলা বা চাল চিবোতে না পারা, দুটোই কিন্তু হচ্ছে মিথ্যেবাদীর মানসিক অস্তিরতার জন্য। মিথ্যে বলা চাট্টি খানি কথা নয়। একটি মিথ্যে হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসে সাধারন ছন্দকে পাল্টে দেয়। এমনলি সূক্ষ পরিবর্তনের দেখা মেলে ত্বকের পরিবহন ব্যবস্থায়ও। তাই মিথ্যে ধরার সবচে বড় হাতিয়ার খোদ মিখ্যেবাদীর শরীর। আধুনিক যুগের মিথ্যে বলার যন্ত্র পলিগ্রাফও দাঁড়িয়ে এই ভিত্তিতে। যা নিয়ে চুম্বকের মতো দর্শক টানছে ‘সাচ কা সামনা’ বা সত্যের মুখোমুখি অনষ্ঠানটি। আসলেই কি কাজ করে এটি? করলে কিভাবেই বা করে? জানতে প্রথমেই উঁকি দেয়া যাক পলিগ্রাফের ইতিহাসে।

tech.JPG

পলিগ্রাফের পূর্বপুরুষ বলতে হয় ১৮৮৪ সালে আবিষ্কৃত রক্তচাপ মাপার যন্ত্রকে। ১৯২১ সালে আরো একটি লাই ডিটেক্টর তৈরি করা হয় যা রক্তচাপের পাশাপাশি ত্বকের তথ্য আদান-প্রদানের বৈদ্যুতিক পরিবহন ব্যবস্থার হেরফের ও সনাক্ত করতে পারত। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি যন্ত্রটি সেসময় ব্যবহার হয়েছিল বার্কলে পুলিশ স্টেশনে। এরপর আসা-যাওয়া চলতে থাকে আরো বহু পদের পলিগ্রাফের। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৩৬ সালে সি ডি লি’র তৈরি যন্ত্রটি। প্রথমবারের মতো প্রেসার -পালস-রেস্পিরেশন রেকর্ড সহকারে তৈরি করেন লাই ডিটেক্টরটি।শেষমেষ মানসিক স্বাস্থ্যের আরো কতগুলো মাপন যন্ত্র নিয়ে আবির্ভাব ঘটল আধুনিক পলিগ্রাফের। বিভিন্ন সাইকোলজিক্যাল রেসপন্স বা মানসিক অবস্থার প্রেক্ষিতে কাজ করে যন্ত্রটি। রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের তালে হেরফের মাপ-ঝোক করে সনাক্ত করে মিথ্যেবাদীকে। মার্কিন ফেডারেল গভর্মেন্ট একে সাইকোফিজিওলজিক্যাল ডিটেকশন অফ ডিসেপশন (পিডিডি) বলে। এরই মধ্যে বেশ কাজ করেছে পলিগ্রাফ। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৯টি প্রদেশের ফেডারেল কোর্টের ট্রায়ালে, ইউরোপের বিচার ব্যাবস্থায়ও চলে গেছে পলিগ্রাফ। যদিও ইউরোপের পুলিশেরা একে অতটা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে না। তবে এটি কানাডার বিচার বিভাগের জয় করেছে, ১৯৮৭ সালে কোর্টে প্রমাণ হিসেবে একে স্বীকৃত করা না হলেও ফরেনসিক টুল হিসেবে এর ব্যবহার বাড়ছেই।

amato.gif

তবে অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েলের মতো দেশে যন্ত্রটি অতটা সুবিধে করতে পারে নি। তবে সম্প্রতি পড়শি দেশ ভারতের পুলিশ বিভাগেও কাজ করেছে পলিগ্রাফ। নিজের বাগদত্তাকে খুন করে এক নারী। স্বীকারোক্তি আদায় করা হয় যন্ত্রটির মাধথ্যমেই।
এতো গেল পলিগ্রাফের গুনগান। এর উল্টোদিকও কম ভোগায়নি মার্কিন মুল্লুকের এফবিআইকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়ে গোয়েন্দাগিরি করছিলেন অলরিল্ড নামের একজন এজেন্ট। অথচ দু’বারই পলিগ্রাফ টেস্টে উতরে গিয়েছিলেন তিনি। পলিগ্রাফের চোখে ভালো মানুষ হতে পেরেছিলেন আরো তিন জন স্পাই। অথচ যন্ত্রটি স্পাই বলেছে জেমস নিকোলসন নামের এক ব্যক্তিকে যিনি আদৌ স্পাই নন। কিভাবে হারালেন যন্ত্রটিকে? উত্তরে অলরিল্ড বলেন, ‘রাতে খুব ভালো একটি ঘুম, রিল্যাক্স মুডে প্রশ্নের জবাব দেয়া, ব্যাস! ’ কাটিয়ে গেলেন যন্ত্রটিকে।

polygraph3jpg.bmp

তাহলে কতটা গ্রহনযোগ্য পলিগ্রাফ? গবেষণা বলছে প্রায় ৮০ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য এটি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেয়াদি গবেষণার পর অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ একে কখনো ৮০ শতংশের কম নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেননি। তবু এর উপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারছেন না সমালোচকরা। এমনই একজন সমালোচক নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির ডক্টর ডেভিড মার্টিন বলেন, মানুষের আবেগ কোন যন্ত্র বুঝতে পারে না, পলিগ্রাফের মাপকাঠি নিছক অনুমান। উল্টো প্রশ্ন করেছেন, ‘মানুষ কি তার আবেগকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে না?’ এছাড়া ১৯৯৭ সালের একটি জরিপে ৪২১ জন মনোবিজ্ঞানী পলিগ্রাফকে ৬১ শতাংশ নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেছে। তবে পলিগ্রাফের জন্য সবচে বড় ধাক্কা ছিল ২০০৩ সাল ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের রিপোর্ট। পলিগ্রাফের ৮০ টি ফলাফলের ৫৭টিইতে তারা ‘অবৈজ্ঞানিক’, ‘অবিশ্বাসযোগ্য’ বলে আখ্যায়িত করেছে। তাই পলিগ্রাফের কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্কটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

লেখা - আমাদের সময়

Level New

আমি মঈনুল হক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 159 টি টিউন ও 299 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

সব সময় নতুন কিছু শিখতে চেষ্টা করি ..........


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

দারুন টিউন। জটিলস

হুম ……… জানতাম আগেই তবে শেয়ার করার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ

অনেক অজানা তথ্য পেলাম।

অনেক অজানাকে জানলাম আপনাকে ধন্যবাদ

Level New

ধন্যবাদ সবাইকে …………

Level 0

ভাই তাড়াতাড়ি 100 নম্বর টিউন টি করে ফেলুন, আর মনে আছেত 100 নম্বর টিউন টি কি নিয়ে করবেন

Level New

হ্যা মনে আছে জোস কিছু হ্যাকিং টিপস ………………..

আমার অনুষ্ঠানটা বিশ্বাস হয়না!

Level 0

ধন্যবাদ…………………………………….

Level 0

Aga jantam kothata biroktikor

দারুন….কঠিন….জটিল….এবং….ধন্যবাদ মঈন সাহেব

Level New

মইন ভাই, exclusive কিছু তথ্য দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার বই পড়ার মত করে একটা ছবি তোলার কথা ছিলো, মনে আছে?

Level 0

অনেক ধন্যবাদ মঈন ভাই। ব্যাপারটা পরিস্কার হলো।

Level 0

খুব ভাল লাগল, পলিগ্রাফ সম্পর্কে কিছু জানতামনা

Level 0

ভালো লাগল টিউনটি পড়ে।

Level 0

সেঞ্চুরী টিউন আবশ্যই সেই রকম হতে হবে । ধন্যবাদ আপনাকে ।

Level 0

মঈন ভাই আপনি কোথায় লুকিয়ে আছেন। Plz মঈন ভাই আমাকে note pad jadu -5 এর সমাধান দিন।