বর্তমানে সারা বিশ্বে স্মার্টফোনের গ্রহণযোগ্যতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এককালে আমাদের মোবাইল ফোন মূলত ফোন করা বা এসএমএস এর জন্য ব্যবহার করা হলেও, আজ আমরা মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের দিকে ক্রমান্বয়ে ঝুঁকে পড়ছি। আর কেনই বা পড়ব না বলুন – মোবাইল ফোন যদি আমাদের প্রিয়জনের সাথে ফেসবুক এর মত এপ্লিকেশন ব্যবহার করার সুযোগ দেয় বা বলে দেয় আজকের আবহাওয়া কেমন যাবে, বা আপনার শেয়ারের বর্তমান রেট কত যাচ্ছে কিংবা হুমায়ুন আহমেদের বই ডাউনলোড করে পড়ার সুযোগ দেয় – তাহলে তো এই “হাতের মুঠোয় ছোট্ট বিশ্ব” টাই আমাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে পড়বে। আর সহজ ব্যবহার, ইন্টারনেট সুবিধা ও সহজ বহনযোগ্যতার জন্য দিন দিন ট্যাবলেট পিসির প্রতি মানুষের আকর্ষণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে বলা যায়, আমাদের ল্যাপটপের দিন শেষ হল বলে।
আ্যপেল এর আইপড (iPod), আইফোন (iPhone) বা সদ্য বের হওয়া আইট্যাব (iTab) এর কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। আ্যপেল তার এই মোবাইল প্রোডাক্টসমূহে যে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে তা হল আইওএস(iOS)। কোন সন্দেহ নেই আ্যপেল এর আইফোন তার সহজে ব্যবহার্য, সুন্দর ইন্টারফেস আর নানারকমের কাজের এপ্লিকেশনের স্বকীয়তার জন্য সারাবিশ্বে বহুল ব্যবহৃত একটি পণ্য। আর এসমস্ত কারণে আর বিশেষতঃ বহনযোগ্য একটি কম্পিউটারের বিকল্প হিসেবে আইট্যাবের প্রতিও মানুষের আকর্ষণ স্বভাবতঃই বেশি।
কিন্তু ইদানীং আ্যপেল পড়েছে এক দারুণ চাপের মুখে। চাপটা আসছে আমাদের সবার প্রিয় টেক-জায়ান্ট গুগল থেকে। গুগলের মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম এন্ড্রয়েড শুরু থেকেই বেশ হইচই ফেলে দিয়েছিল। বর্তমানে মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের এনড্রয়েড মধ্যে বোধ করি সবচেয়ে জনপ্রিয়, আর এই জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এক কথায় এনড্রয়েড একটি অপারেটিং সিস্টেম, একটি মিডলওয়্যার ও কিছু আবশ্যকীয় এপ্লিকেশন/প্রোগ্রামের সমন্বয়ে তৈরি একটি সফটওয়্যারগুচ্ছ বা প্লাটফর্ম। এনড্রয়েডের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কিট (SDK) এর বিভিন্ন টুলস ও এপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (API) এর মাধ্যমে জাভা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে এপ্লিকেশন তৈরি করার সুযোগ দেয়।
এনড্রয়েডের জন্য ওপেন হ্যান্ডসেট এলায়েন্স (OHA) সদস্য হিসেবে এর নির্মাতা গুগল, আমাদের বিভিন্ন ভার্সনের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। এনড্রয়েডের বিভিন্ন ভার্সন লিনাক্সের বিভিন্ন ভার্সনের মতই খুব মজার একটি নামকরণ পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। এনড্রয়েডের ভার্সনগুলোর প্রতিটিই কোন না কোন মজার খাবারের নামে নামকরণ করা হয়। যেমনঃ
- এনড্রয়েড ভার্সন ২.০/২.১ (Eclair)
- এনড্রয়েড ভার্সন ২.২ (Froyo)
- এনড্রয়েড ভার্সন ২.৩ (Gingerbread)
- এনড্রয়েড ভার্সন ৩.০/৩.১ (Honeycomb)
- এনড্রয়েড ভার্সন ২.৩ + ৩.১ (Gingerbread + Honeycomb) (Ice Cream Sandwich) (এই বছর মুক্তি পাবে)
একনজরে আসুন দেখে নেই এনড্রয়েডের গঠনশৈলি
কেন এনড্রয়েড এত জনপ্রিয়? ঐ একটাই কারণ – ওপেন সোর্স। যে কারণে দিন দিন লিনাক্স ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে চলছে, সে কারণেই আমরা অনেকেই এনড্রয়েডে আসক্ত হয়ে পড়ছি। আমরা তো সাধারণ ব্যবহারকারী – কিন্তু বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন ও মোবাইল প্রোডাক্টের নির্মাতারাও এই আসক্তির শিকার হয়ে, উইন্ডোজ, সিমবিয়ান, আইওএস ইত্যাদি ছেড়ে এনড্রয়েড নির্ভর পণ্য তৈরি করে চলেছে। তাদের অবশ্য এই আসক্তির একটি বাণিজ্যিক কারণও আছে।
যাই হোক, চলুন দেখে নেই এনড্রয়েড এর জনপ্রিয়তার কারণগুলো কি কি?
- ফ্রী ও ওপেন সোর্স লিনাক্স কার্নেল নির্ভর অপারেটিং সিস্টেম।
- অত্যন্ত ব্যবহার-বান্ধব (ইউজার-ফ্রেন্ডলি) ইন্টারফেস।
- নিজস্ব ওপেন সোর্স ওয়েবকিট ভিত্তিক ইনটিগ্রেটেড ব্রাউজার ছাড়াও অনন্য বিখ্যাত ব্রাউজার যেমন অপেরা, ফায়ারফক্স বাবহারের সুবিধা।
- উন্নত মিডিয়া সাপোর্ট যা বিভিন্ন অডিও ও ভিডিও ফরম্যাট (যেমন MPEG4, H.264, MP3, AAC, AMR, JPG, PNG, GIF) সাপোর্ট করে।
- ফ্রী লাইব্রেরী – আপনি পাবেন গুগল বুকস, জিনিও ম্যাগাজিন, বা এনড্রয়েড পিট থেকে শত শত ই-বই (ePub ফরম্যাটে)।
- উন্নত ক্যামেরা, জি পি এস, কম্পাস, এক্সেলারোমিটার সাপোর্ট।
- জি এস এম টেলিফোনি, ব্লু-টুথ, এজ, থ্রি-জি, ওয়াই-ফাই সাপোর্ট
- উন্নত গ্রাকিক্স সাপোর্ট।
- উন্নত ডেভেলপমেন্ট এনভায়রনমেন্ট এবং ডালভিক ভার্চুয়াল মেশিন
- “এনড্রয়েড মার্কেট” নামের প্রায় দুলক্ষ সফটওয়্যারের এক বিশাল ভাণ্ডার যেখানে বেশিরভাগ সফটওয়্যারই ফ্রী ও সম্পূর্ণ কার্যকরী।
- বিভিন্ন ওয়েবসাইট/ওয়াপসাইট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোডের সহজলভ্যতা। আইফোন বা আইপডের জন্য কোন সফটওয়্যার বা মিডিয়া আপনার ডিভাইসে ব্যবহার করতে হলে আপনাকে আ্যপেলের ওয়েবসাইট বা আইটিউনসের সাহায্য নিতেই হবে। কিন্তু এনড্রয়েডের ডাউনলোড আপনি যে কোন থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট (যেখানে পাওয়া যায়)
- সম্পূর্ণ ফ্ল্যাশ সাপোর্ট যা ভার্সন ২.২ থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
- বর্তমানে যে হারে এনড্রয়েড নির্ভর ফোন ও মোবাইল কম্পিউটিং ডিভাইস তৈরি হচ্ছে, তাতে আপনাকে নির্দিষ্ট কোন ব্রান্ডে আটকে থাকতে হবে না। ফোন ও মোবাইল কম্পিউটিং ডিভাইস হিসেবে আপনি বেছে নিতে পারেন Samsung, HTC, Dell, Acer, Lenovo, Motorola, Haier, Huawei ইত্যাদি।
এনড্রয়েডের সাপোর্ট আপনি অনেক জায়গা থেকে পাবেন। নীচে মাত্র কয়েকটা ওয়েবসাইটের নাম দেয়া হলঃ
এনড্রয়েড ও এনড্রয়েড ডেভেলপমেন্ট, এনড্রয়েড মার্কেট, এনড্রলিব, এপএওয়ার, এট্র্যাকডগ, এনড্রয়েড এন্ড মি, এনড্রয়েড কমিউনিটি, ফ্যানড্রয়েড, এনড্রয়েড পিট
আমি মোহাম্মদ ইউসুফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 96 টি টিউন ও 1053 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
টিউন চালিয়ে যাবেন বলে আশা করছি… এবং পরবর্তী টিউন এ আরো বিস্তারিত কিছু পাবো সেই অপেক্ষাতে রইলাম.