আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরেই মত আজকেও চলে এসেছি নতুন টিউন নিয়ে। আজকে আলোচনার বিষয়, এই মুহূর্তে আপনার কত জিবি র্যামের ফোন কেনা উচিৎ?
বাজারে প্রায় প্রতিটি জনপ্রিয় ফোনের কয়েটা র্যাম ভ্যারিয়েন্ট থাকে। আলট্রা প্রিমিয়াম ডিভাইস গুলোতে কখনো ১২ জিবি আবার কখনো ১৬ জিবি পর্যন্ত র্যাম পাওয়া যায়। একই সাথে মিড র্যাঞ্জের ফোন গুলোতে ৬ জিবি ও ৮ জিবি এবং বাজেট ফোন গুলোতে ৪ জিবি র্যাম পাওয়া যায়।
স্বাভাবিক ভাবেই বেশি দামের ফোন গুলোতে বেশি র্যাম এবং তুলনামূলক কম দামি ফোন গুলোতে কম র্যাম অফার করা হয়। এখন আপনার প্রশ্ন হতে পারে এই ২০২২ সালে ফোন কিনলে কত র্যামের ফোন কেনা উচিত হবে? এবং কত র্যাম ফোন কিনে ভবিষ্যতেও ফিচারের দিক থেকে নিরাপদ থাকা যাবে? এই বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমাদের কিছু বিষয়ে ভাল ধারণা নিতে হবে। চলুন শুরু করা যাক।
প্রতিটি কম্পিউটার এবং আমাদের ফোন তার কার্যক্রম চালানোর জন্য, Random Access Memory (RAM) ব্যবহার করে। আমরা যখন ফোনে কাজ করি তখন, রানিং অ্যাপ, সেগুলোর ডাটা, অপারেটিং সিস্টেম র্যামে স্টোর থাকে। র্যাম থেকে ডেটা আদান প্রদান হয়। ডিভাইস অফ করলে র্যাম থেকেও ডেটা মুছে যায়। এক সাথে কয়টি অ্যাপ আপনার ফোন ভাল ভাবে রান করতে পারবে সেটা নির্ভর করে র্যামের উপর।
ফোন গুলোতে যত বেশি ফিচার যোগ হচ্ছে, ভাল ভাবে কাজ করার জন্য র্যাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ছে। আজ থেকে দশ বছর বা তারও আগে ফোনের র্যাম কিন্তু এত ছিল না। অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস গুলোতে র্যাম থাকতো 512MB অথবা 1GB এর মত। এটি সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে। ২০১৪ সালের দিকে প্রিমিয়াম ফোন গুলোতে ছিল 3GB র্যাম আর ২০১৬, ২০১৭ তে এটি বেড়ে দাঁড়ায় 4GB। কিন্তু এখন 4GB র্যাম কে নতুন ফোনের মিনিমাম র্যাম হিসেবে ভাবা হয়।
ফোন ভাল হবে না খারাপ হবে এটা বেশি র্যামের উপর নির্ভর করে না। আপনি যখন একটা অ্যাপ ওপেন করবেন তখন নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা স্পেস প্রয়োজন হবে যা। এবং সেই স্পেসটা দেবে র্যাম। সাধারণ ভাবে একটা অ্যাপ রান করতে কয়েকশো মেগাবাইট লাগে। যদি হাই গ্রাফিক গেম রান করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে 1.5GB পর্যন্ত র্যাম এর প্রয়োজন হতে পারে।
কোন ফোনে 4GB র্যাম থাকা মানে সেখানে মিডিয়াম লেভেলের গেম এবং অ্যাপ এর জন্য যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। তবে আপনাকে আরেকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে আপনার র্যাম এর সাইজ যত বেশিই হোক না কেন, এটার কিন্তু একটা লিমিট আছে৷ এক সময় না এক সময় আপনার র্যাম ফুল হয়ে যেতেই পারে। আর র্যাম ফুল হলে গেলে যেন কার্যক্রমে ব্যাঘাত না ঘটে জন্য Swapping এর উৎপত্তি।
র্যাম ফুল হয়ে যাবার সমস্যাটিকে কন্ট্রোল করতে মডার্ন কম্পিউটার গুলো Swapping টেকনিক ব্যবহার করে। চলুন বিষয়টি সহজ ভাবে বুঝানো যাক। কম্পিউটারে Swapping টেকনিকে তুলনামূলক পুরনো টাস্ক, Swap স্টোরেজে পাঠানো হয় এতে করে র্যাম পুরোপুরি ফুল হয়ে যায় না, যদি পুরনো অ্যাপ বা টাস্ক গুলো আবার ওপেন করা হয় তাহলে সেগুলো স্টোরেজ থেকে র্যামে ফিরে আসে। এই টেকনিকে এক সাথে অনেক অ্যাপ রান করা যায় তবে এটি র্যামের মত ফাস্ট কাজ করে না।
ডেক্সটপ, ল্যাপটপ, এবং সার্ভারের ক্ষেত্রে এক্সটারনাল স্টোরেজকে Swap স্পেস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে স্টোরেজ গুলোতে Page নামে আলাদা আলাদা পার্টিশন তৈরি হয় এবং অতিরিক্ত অ্যাপ গুলো সেখানে স্থানান্তর করা হয়।
কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড এই কাজটি একটু ভিন্ন ভাবে করে। এন্ড্রয়েডে ডেটা গুলোর জন্য নতুন স্টোরেজে নতুন কোন পেজ তৈরি করে না তারা ডেটা গুলোকে কমপ্রেস করে এবং প্রয়োজনের সময় র্যামে ফিরিয়ে আনে। মূলত এখানে র্যামে আলাদা একটা পার্টিশন তৈরি করা হয় যাকে বলে zRAM। লিনাক্সের ভাষায় z শব্দটিকে কমপ্রেশন হিসেবে ব্যবহার করা হয় আর তাই এটার নাম zRAM দেয়া হয়েছে।
অ্যান্ড্রয়েড ডেটা গুলো ৫০% পর্যন্ত কমপ্রেস করতে পারে। যেমন 128KB এর ফাইলকে 64KB পর্যন্ত কমপ্রেস করতে পারে। এখানে আরেকটা বিষয় বলা উচিত সে কমপ্রেস করা ডেটা গুলো পুনরায় ডিকমপ্রেস করার প্রয়োজন পড়ে। যে অ্যাপ গুলো এখন ব্যবহৃত হচ্ছে না সেগুলো কমপ্রেস করে zRAM এ পাঠানো হয় এবং পুনরায় অ্যাপ গুলোতে শিফট করলে সেগুলো ডিকমপ্রেস হয়। চলুন বিষয়টি পরিষ্কার হবার জন্য একটা উদাহরণ দেয়া যাক,
ধরে নিলাম আপনার পিসির র্যাম ২ জিবি, এখন যদি আমরা একসাথে বিভিন্ন অ্যাপ ওপেন করি তাহলে সেটা ধীরে ধীরে ফুল হতে থাকবে। যদি ২ জিবি র্যামের অধিক অ্যাপ সিস্টেমে রান হয় তাহলে, পিসি কিন্তু কাজ অফ করে দেবে না, বাড়তি যে স্পেস প্রয়োজন সেটার জন্য স্টোরেজে পেজ তৈরি করবে এবং সেখান থেকে অ্যাপ গুলো রান হবে। এই কাজটি মোবাইল করে অন্য ভাবে, ধরুন আপনি এক সাথে ৫ টি অ্যাপ রান করলেন। এবার ফোন খেয়াল করবে কোন অ্যাপ গুলো আপনি এখন ব্যবহার করছেন আর কোন গুলো ব্যবহৃত হচ্ছে না। যে অ্যাপ গুলো ব্যবহৃত হবে না সেগুলো zRAM এ চলে যাবে এবং বাকি অ্যাপ গুলো র্যামে থাকবে।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যদি zRAM ও ফুল হয়ে যায় তখন কি হবে? zRAM কাজই হচ্ছে র্যামের লিমিটকে বর্ধিত করা তবে যদি zRAM ও ফুল হয়ে যায় তবে অ্যান্ড্রয়েড পুরনো অ্যাপ গুলো নিজে থেকে ক্লোজ করে দেবে এবং নতুন রান করা অ্যাপ গুলোকে গুরুত্ব দেবে।
এখন আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন বেশি র্যাম এর গুরুত্ব। র্যাম বেশি হলে আপনি এক সাথে অধিক অ্যাপ রান করে রাখতে পারবেন, ডিভাইস জোর করে কোন অ্যাপকে ক্লোজ করবে না। আর কম হলে লিমিট অ্যাপ চালাতে পারবেন।
২০২২ সালে কোন সাইজের র্যাম আপনার জন্য আইডিয়াল হবে এটা জানতে আমরা একটা টেস্ট করব। আমরা তিনটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন নিব এবং যাচাই করব। সব চেয়ে ভাল র্যাম কোনটি এটা এখন পরীক্ষা করার পালা। আমরা নিয়েছি ১২ জিবি র্যাম এর Samsung Galaxy S21 Ultra, ৮ জিবি র্যাম এর OnePlus 9 Pro, এবং ৪ জিবি র্যাম এর Pixel 3XL। এখানে Samsung এবং Google ডিভাইস গুলো Android 12, অন্য দিকে OnePlus, Android 11 এ চালিত। আমরা ফোন গুলোতে কয়েকটা গেম রান করব এবং পরীক্ষা করে দেখব কোন ফোন কত গুলো গেম এক সাথে রান করতে পারে পাশাপাশি তাদের মেমোরি ম্যানেজমেন্ট কেমন।
কয়েক গেম ওপেন করার পর সেগুলোর ব্যবহার করা স্পেস ছিল এমন,
Subway Surfers — 750MB
1945 Airforce — 850MB
Candy Crush — 350MB
Brawl Stars — 500MB
Minecraft — 800MB
Asphalt 9 — 800MB
Shadowgun Legends — 900MB
Elder Scrolls Blades — 950MB
Genshin Impact — 1.4GB
Chrome — 2.2 GB
আমরা অ্যাপ গুলো সিরিয়াল অনুযায়ী রান করব যতক্ষণ পর্যন্ত সিস্টেম ফোর্স ভাবে এগুলোকে ক্লোজ না করে।
আমরা S21 Ultra তে চমৎকার ফলাফল পেয়েছি। অ্যাপ গুলো রান করার সময় যখনই ফ্রি স্পেস কমছিল তখনই Swap স্পেস বাড়ছিল। ১২ জিবি র্যাম শুরু থেকেই Subway Surfers, 1945 Air Force, Minecraft, Elder Scrolls Blades সব গুলো গেমকেই ধরে রাখছিল। কিন্তু আমি যখনই ১২ ট্যাব সহ ক্রোম ওপেন করলাম এবং ২.২ জিবি র্যাম দরকার হল তখনই Minecraft কে সিস্টেম ক্লোজ করে দিল।
Pixel 3 XL এ বিষয়টি একটু ভিন্ন ভাবে হল। এটি তিনটা গেম, Subway Surfers, 1945 Airforce, Candy Crush র্যামে এক সাথে রান করতে পেরেছিল। যখন আমি Brawl Stars, রান করলাম তখন Subway Surfers কিল হয়ে যায় এবং মেমোরি থেকে ডিলিট হয়ে যায়। দেখতে পেলেন কম র্যামের অবস্থা। এখানে swap মেমোরি কম থাকায় এক সাথে বেশি অ্যাপ রান হতে পারে না।
OnePlus 9 Pro ফোনটি ৮ জিবি র্যামের একটি ফোন যেখানে রয়েছে RAMBoost ফিচার। RAMBoost ফিচারটি ফোনের মেমোরি ম্যানেজমেন্ট স্মার্ট ভাবে করার চেষ্টা করে। এটি আপনার ব্যবহার করা অ্যাপ গুলো চালু রাখতে এবং তুলনা মূলক আনইউজড অ্যাপ গুলো কিল করতে এনালাইসিস করে। পুরনো অ্যাপ গুলো পুনরায় রান করতে চাইলেও এটি সেটা প্রি-লোড করতে সাহায্য করে। আমি এখানে ফিচারটি অফ এবং অন উভয় ভাবেই চেষ্টা করেছি।
যখন আমি RAMBoost অন করে টেস্ট করছিলাম, Candy Crush রান করা সময় ফ্রি র্যাম উপরের দিকে ছিল। কারণ ইতিমধ্যে এটি Subway Surfers কে ক্লোজ হয়ে গিয়েছিল। এবং তখনো অনেক ফ্রি র্যাম এবং Swap স্পেস ফ্রি ছিল। আমি আবার Subway Surfers রান করলাম, Brawl Stars, Minecraft এর মতই ইস্যু ছাড়াই চলতে থাকে, যখন Asphalt 9 রান করলাম তখন সিস্টেম Candy Crush এবং 1945 Air Force কে ক্লোজ করে দেয়।
দেখা যাচ্ছে OnePlus 9 Pro র্যাম ফ্রি থাকার পরেও কিছু অ্যাপকে টারমিনেট করে দিচ্ছে।
এবার আমি RAMBoost অফ করে দিলাম। আমি Subway Surfers থেকে Minecraft, পর্যন্ত সব গুলো অ্যাপ রান করতে পারলাম কিন্তু যখনই Asphalt 9 রান করলাম Subway Surfers ক্লোজ হয়ে গেল।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে OnePlus 9 Pro র্যাম ফ্রি থাকার পরেও অ্যাপ ক্লোজ করে দিচ্ছে। OnePlus 9 Pro এর চার জিবি র্যাম ছিল কিন্তু দেখা গেছে গড়ে মাত্র ১ জিবি র্যাম ব্যবহৃত হয়েছে।
আপনারা পরিষ্কার হয়েছেন, 4GB র্যাম এভারেজ মাল্টিটাস্কিং এর জন্য যথেষ্ট নয়। এই র্যামে তিনটা থেকে চারটা গেম মেমোরিতে এক সাথে থাকতে পারে। অ্যাপ এর ক্ষেত্রে আপনি এক সাথে ছয়টির মত প্রোডাক্টিভ অ্যাপ রান করতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে ৬ জিবি র্যাম আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
Galaxy S21 Ultra এর মেমোরি ম্যানেজমেন্ট সেরা ছিল। ১৫ টি গেম এক সাথে চলতে পেরেছে। সাথে ক্রোমও ছিল আমার মনে হয় না কেউ মাল্টিটাস্কিং নিয়ে এই ডিভাইসের পারফরম্যান্সকে প্রশ্ন তুলতে পারবে।
বলা যায় ২০২২ সালে 8GB থেকে 12GB RAM ভাল হতে পারে। যদিও আমরা, OnePlus 9 Pro এর ক্ষেত্রে এর ভাল ম্যানেজমেন্ট পাই নি তবে অন্য ডিভাইস গুলো ৮ জিবি র্যামেও ভাল ফলাফল দিতে পারে।
সব মিলিয়ে বলতে পারি বাজেট ফোন থেকে একটু বেশি রেঞ্জের ক্ষেত্রে আপনি ৬ জিবি র্যামের ফোন নিতে পারেন। তবে আপার মিডল বা হাই এন্ড ডিভাইস আপনাকে ৮ জিবি র্যামে ভাল মাল্টিটাস্কিং অভিজ্ঞতা দিতে পারে।
আমাদের মেমোরি ম্যানেজমেন্ট টেস্ট জয়ী হয় Galaxy S21। যেহেতু ফোনটির র্যাম ১২ জিবি সুতরাং মাল্টিটাস্কিং এর জন্য এটা বেশ ভাল। আপনার চাহিদা অনুযায়ী এই ফোনটি দেখতে পারেন তবে বাজেট কম থাকলে ৮ থেকে ৬ জিবি র্যামের ফোন গুলোও ভাল হবে, যদি সেগুলো ভাল ভাবে মেমোরি ম্যানেজমেন্ট করতে পারে।
তো আজকে এ পর্যন্তই পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।
দারুন লিখেছেন।