আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরেই মত আজকেও চলে এসেছি নতুন টিউন নিয়ে।
স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রিতে এমন হাতে গুনা কয়েকটা ব্র্যান্ড আছে যাদের নিজস্ব চিপ রয়েছে বা যারা নিজেদের চিপ দিয়ে ফোন তৈরি করে। আমি এখানে চিপ বলতে প্রসেসরের কথা বলছি, আলাদা ভিডিও চিপ, ইমেজ চিপ বা চার্জিং চিপের কথা বলছি না। বর্তমানে শুধু মাত্র Apple, Huawei, এবং Samsung তাদের নিজের চিপ এর উপর আস্থা রাখতে পারে। Xiaomi এরও নিজস্ব চিপ আছে তবে তারা এখনো এতটা নির্ভরযোগ্য হতে পারে নি। এমনকি Xiaomi, তাদের Xiaomi Surge S1 মোবাইল চিপটি নিয়ে অনেক বছর ধরে কাজ করার পরও সফলতা পাচ্ছে না। কয়েক সপ্তাহ আগে Oppo তাদের Oppo Find X5 Pro স্মার্টফোন রিলিজ করেছে যা তাদের নিজস্ব MariSilicon X চিপের তৈরি এবং এটি একটি ইমেজ চিপ।
সিঙ্গেল ফাংশন চিপ যেমন ইমেজ চিপ, ভিডিও চিপ তৈরি করা কঠিন কিছু না, প্রায় সব ব্র্যান্ডই চাইলে নিজেদের সিঙ্গেল চিপ তৈরি করতে পারে। এই চিপ গুলো প্রসেসর এর সাথে কাজ করে যেমন ইমেজ চিপ প্রসেসরের সাথে যুক্ত হয়ে ইমেজের পারফরম্যান্সকে অপটিমাইজ করে। বর্তমানে প্রায় সব কোম্পানিই নিজেদের চিপ নিয়ে আসার চেষ্টা করছে, তবে এটা কি আসলেও সম্ভব?
বড় কোম্পানি গুলো নিজস্ব প্রসেসর নিয়ে কাজ করতে চাইতেই পারে তবে বাস্তবতা এতটা সহজ নয়। চিপ তৈরি করা শুধু মাত্র কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং একটি সিদ্ধান্তই নয় বরং এটির পেছনে ব্যয় হতে পারে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।
চলুন জেনে নেয়া যাক কেন স্মার্টফোন কোম্পানি গুলো নিজেদের প্রসেসর নিজেরা বানাতে পারে না।
বর্তমান প্রসেসর গুলো সিঙ্গেল ফাংশন হলে হয় না, একটি চিপেই সম্পূর্ণ একটি সিস্টেম থাকতে হয়। এক্ষেত্রে Apple A15 প্রসেসর একটি উদাহরণ হতে পারে। এটি শুধুমাত্র একটি CPU নয় এখানে একই সাথে রয়েছে Graphics Card (GPU), DSP, Image Processor (ISP), Wireless Baseband, AI Processor (NPU), Video Codecs, System Caches, সহ আর অনেক কিছু। প্রতিটি পার্ট ডিজাইন করা কিন্তু মোটেও সহজ কাজ নয়। ডিজাইন করার পর সব গুলো আমার কম্বাইন্ড করা বেশ জটিল একটি বিষয়। এর একটি উদাহরণ হতে পারে Baseband।
Apple বেশ কয়েক বছর ধরেই Closed-Loop Ecology নিয়ে কথা বলে আসছিল এবং ফাইনালি M1 প্রসেসর নিয়ে আসে। তবে এই প্রসেসরে তারা 5G কাজ করে এমন Baseband তৈরি করতে পারে নি। দুই বছর intel এর Baseband ব্যবহার করে আবার তারা Qualcomm এর সাথে চুক্তি করে এবং বর্তমান আইফোন গুলোতে Qualcomm এর Baseband ব্যবহৃত হয়।
কোম্পানিদের মডিউল ডিজাইন করতে পারার ক্ষমতা শুধু মাত্র একটি দিক। ডিজাইনের পর এই গুলোকে আবার অন্য ফাংশন মডিউল গুলোর সাথেও যুক্ত করতে হয়। মডিউল ডিজাইনের পর,
মডিউল তৈরি বা একটি ব্লক বিল্ড করা কতটা কঠিন সেটা হয়তো বুঝতে পারছেন। তবে কি কোন কোম্পানি এই বিষয় গুলো মেইনটেইন করতে পারে না? অবশ্যই পারে, তবে অন্য কোম্পানির হেল্প ছাড়া একা সব কিছু করতে পারে না। Apple, Huawei, এবং Samsung, প্রসেসর তৈরি করতে পারে তবে অবশ্যই অন্য কোম্পানির সাহায্য নিয়ে।
Huawei ২০০৯ সাল থেকে এই চিপ তৈরিতে কঠোর পরিশ্রম করছে। ১০ বছর রিসার্চ করে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ফাইনালি তারা এখন সফলও হয়েছে। যদিও বর্তমানে আমেরিকার বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার ফলে কোম্পানিটি কিছুটা চাপে আছে, কারণ চিপ তৈরিতে তারা আমেরিকার কয়েকটি প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল
অধিকাংশ কোম্পানি যারা প্রসেসর ডিজাইন করতে চায় এবং চিপ মার্কেটে ঢুকতে চায় তাদের আর্থিক ভাবে সেই ক্যাপাসিটি থাকে না। কারণ এতে যে পরিমাণ মূলধন দরকার সেটার সামর্থ্য অনেক ব্র্যান্ড এরই থাকে না।
যদি কোন কোম্পানি চিপ তৈরি করতে চায়, তাহলে সে কয়েকজন লোক ডেকে এনে কাজ শুরু করে দেবে বিষয়টি এত সহজ নয়। চিপ তৈরিতে মিনিমাম কয়েকশো লোক লাগবে এবং অবশ্যই এক্সপার্ট হতে হবে একই সাথে মোটা অংকের বেতন অফার করতে হবে। তা না হলে কেউ এত পরিশ্রম করতে আসবে না।
হিউম্যান রিসোর্স ছাড়াও প্রসেসর তৈরি করতে ARM এ পে করতে হবে। ARM আর্কিটেকচার এবং আইপি কোর কিনতেও লাইসেন্স ফি দিতে হবে। এগুলো গেল নির্দিষ্ট খাতে টাকা এগুলা ছাড়াও এমন আরও অনেক খরচ আছে যেগুলো প্রথম থেকে আন্দাজ করা যাবে না। যেমন ডেভেলপমেন্টে প্রতিনিয়ত টাকা ঢেলেই যেতে হবে। প্রোগ্রামে যেমন বাগ আসে তেমনি চিপের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়, এগুলো ফিক্স করতে হবে, প্রতিবার টেস্ট করতে হবে ফলশ্রুতিতে এখানেও অনেক টাকা লাগবে।
কিছু টেস্ট সফটওয়্যার সিমুলেশনের মাধ্যমে হবে আবার কিছু টেস্টে জন্য, প্রসেসর তৈরি করে সেটা রিয়েল টাইম ফোনে বসিয়ে ট্রায়েল দিতে হবে। এটার জন্য একই সময় অনেক গুলো চিপ তৈরি করা লাগতে পারে। এই প্রসেসটাকে বলা হয় Tape Out যেখানে প্রসেসর গুলোকে ট্রায়েল দেয়া হয়। আর এই Tape Out অবশ্যই ফ্রিতে হবে না।
14nm প্রসেস এ Tape Out করতে কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ হয়, ২০২১ সালে জনপ্রিয় 5nm প্রসেসে ৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল।
মোবাইল প্রসেসর ডিজাইনে কত খরচ হবে? আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে কত বার Tape out করা লাগতে পারে এটা চিপ তৈরিতে? উত্তর হচ্ছে এটা বলা অসম্ভব যে কত বার Tape Out লাগতে পারে। এমনও কিছু বাগ দেখা দিতে পারে যেগুলোর কারণ খুঁজে বের করা যায় না সেক্ষেত্রে পুনরায় Tape Out করা লাগতে পারে।
তো এবার আপনিই হয়তো আন্দাজ করতে পারছেন চিপ তৈরিতে কত টাকার প্রয়োজন। ছোট একটা উদাহরণ দেখে বিষয়টি সম্পর্কে আরও পরিষ্কার হতে পারবেন। Huawei তাদের HiSilicon Kirin এর পেছনে গত ১০ বছরে ৭৫.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ২০১৯ সালেই এর বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২০.০৭ বিলিয়ন ডলার। ফাইনালি তারা Kirin series SoC তৈরিতে সক্ষম হয়েছে যা Apple এর Qualcomm এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্য।
স্মার্টফোনের প্রসেসর তৈরিতে একাধিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য ভিন্ন টিম তৈরি করতে হবে। কয়েক মাসের পরিশ্রম এবং কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সব কিছু ঠিক থাকলে হয়তো আপনি ফলাফল পাবেন তবে এটা খুবই সামান্য।
আর স্মার্টফোন কোম্পানির এত ধৈর্য থাকে না এবং তারা চিপ তৈরি করতে চায়ও না। Pop-up Camera, Under-screen Camera, On-screen Fingerprint Sensor, এই সব কিছু প্রসেসর এর সাথে কাজ করে। এখন আপনি যদি যেকোনো একটি ফিচার যোগ করতে চান তাহলে আপনাকে নতুন একটা টিম তৈরি করতে, বিশাল বিনিয়োগ করতে হবে এবং কয়েক মাস এর পেছনে পরিশ্রম করতে হবে।
প্রসেসর তৈরিতে এত ঝামেলা এত এত টাকার বিনিয়োগের জন্য স্মার্টফোন কোম্পানি গুলো, স্মার্টফোন তৈরি নিয়েই মনোযোগী থাকতে চায়। তারা নিজেরা প্রসেসর তৈরি করার চেয়ে Qualcomm অথবা MediaTek এর মত কোম্পানি গুলো থেকেই প্রসেসর কিনতে সাচ্ছন্দবোধ করে।
তো কেমন হল এই টিউনটি জানাতে টিউমেন্ট করুন। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।