বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আক্রমের যদি কোথাও কোন প্রসেসর এর স্পেসিফিকেশন দেখে থাকেন, বিশেষ করে কোন ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারের ক্ষেত্রে; তাহলে আপনি হয়তোবা এই জিনিসটি অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন যে, যেখানে 2.3GHz Upto 3.5GHz লেখা থাকে। অথবা সেখানে ক্লক স্পিড এর এই জায়গায় লেখা থাকতে পারে 3.5GHz upto 4.5GHz। এখানে এই যে দুইটি ক্লক স্পিড রয়েছে এটি দিয়ে আসলে কি বোঝানো হচ্ছে?
আজকের টিউনের এই বিষয়টি হয়তবা আপনাদের মধ্যে অনেকেই জেনে থাকবেন। তবুও যারা এ বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না তাদের জন্য আজকের এই টিউনটি অনেক তথ্যবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। আমরা আমাদের স্মার্টফোনে কিংবা কম্পিউটারে যে প্রসেসরগুলো ব্যবহার করি সেখানে স্পেসিফিকেশনের এই জায়গায় আমরা এ বিষয়টি লক্ষ্য করে থাকি। প্রসেসর এর এখানে যে 3.2GHz, 4.2GHz কিংবা 5GHz এটি হচ্ছে সেই প্রসেসরের ক্লক স্পিড।
এখানে কম গিগাহার্টজে ফ্রিকোয়েন্সির যে ক্লক স্পিড রয়েছে, সেটি হচ্ছে এই প্রসেসর এর Base clock speed এবং বেশি ফ্রিকোয়েন্সির যে ক্লক স্পিড রয়েছে, সেটি হচ্ছে সেই প্রসেসর এর Boost clock speed। এখন এই Base clock speed এবং Boost clock speed কি এবং এগুলো কিসের জন্য দরকার সেগুলো সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করব আজকের এই টিউনে। এসব বিষয়গুলো আমি আপনাকে খুব সহজ ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করব, এজন্য অবশ্যই সম্পূর্ণ টিউন টি মনোযোগ দিয়ে দেখুন।
তো দেখুন, Base clock speed দিয়ে একটি প্রসেসর সর্বনিম্ন কত ফ্রিকুয়েন্সিতে কাজ করবে সেটি কে বোঝানো হয় এবং Boost clock speed দিয়ে সর্বোচ্চ সেই প্রসেসরটি কত ফ্রিকুয়েন্সিতে কাজ করবে সেটিকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ, Base clock speed হলো; প্রসেসর টি ফ্রিকোয়েন্সি নিচে নামতে পারবে না এবং Boost clock speed হচ্ছে এই ফ্রিকুয়েন্সির ওপরে প্রসেসরটি কাজ করতে পারবে না। এখানে আপনাদের মনে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, এখানে একটি প্রসেসর যত বেশি ফ্রিকুয়েন্সিতে কাজ করবে সেই প্রসেসরটি ততো বেশি ফাস্ট হবে এবং রেস্পন্সিভ হবে। তাহলে প্রসেসর এর ক্ষেত্রে Base clock speed দরকার কি? আর এ কথাটি ঠিক যে আপনার ডিভাইসের প্রসেসর ক্লক স্পিড যত বেশি হবে; সেইসঙ্গে আপনার ডিভাইসটি ততো বেশি ভালো পারফর্ম করবে।
এখান থেকে আমাদের একটি প্রশ্ন জাগে যে, তাহলে এখানে Base clock speed এর প্রয়োজন কি? তো দেখুন, একটি প্রসেসর যখন high-frequency তে কাজ করবে তখন স্বাভাবিক ভাবেই সে বেশি বিদ্যুৎ খরচ করবে বা বেশি পাওয়ার খরচ করবে। এখানে সে যত বেশি পাওয়ার এ কাজ করবে স্বাভাবিকভাবেই সে ততো বেশি হিট হবে। আমাদের ডিভাইসে সাধারণ যেসব কাজে রয়েছে যেমনঃ কোন অডিও প্লে করা, কাউকে ফোন কল করা ইত্যাদি এসব কাজগুলো করার জন্য কিন্তু মর্ডান যেসব হাই ফ্রিকোয়েন্সির প্রসেসর রয়েছে সেগুলোর দরকার নেই। এসব কাজগুলো করার জন্য কিন্তু লো ফ্রিকোয়েন্সি এর প্রসেসর দিয়েই সম্ভব।
কিন্তু কোন প্রসেসর যদি প্রতিনিয়ত এসব কাজগুলো করার জন্য হাই ফ্রিকোয়েন্সি রান হয়, তবে স্বাভাবিক ভাবেই আপনার ডিভাইসের পাওয়ার খরচ বেড়ে যাবে। এতে করে আপনার ডিভাইসটি অযথা গরমও হবে। আর আপনি এটি মোটেও চাইবেন না যে আপনার ডিভাইসটি অযাথা গরম হয়ে যাক সাধারন একটি অডিও প্লে করতে কিংবা কারো কাছে ফোন করতে। এবং এটি কিন্তু আপনার ডিভাইসের বেশি পাওয়ার ও খরচ করবে, যে কারণে আপনার ব্যাটারি ব্যাকআপ ও ভালো হবে না। এসব কারণেই মূলত একটি প্রসেসরে Base clock speed এবং Boost clock speed দেওয়া হয়।
এটার মানে এই নয় যে আপনার ডিভাইসে ছোটখাটো কাজ করানোর জন্য কম ফ্রিকুয়েন্সির প্রসেসর লাগানো উচিত। এখানে ঠিক ঐ আপনার ডিভাইসটিতে হাই ফ্রিকোয়েন্সি প্রসেসর থাকবে, কিন্তু এক্ষেত্রে এটি আপনার ডিভাইসের সিস্টেম অনুযায়ী তার ক্লক স্পিড কে নির্ধারণ করে নিবে।
এরপর আপনার অপারেটিং সিস্টেমের রিকোয়ারমেন্ট অনুসারে আপনার প্রসেসর টি তার ক্লক স্পিড বাড়াতে কিংবা কমাতে পারে। কিন্তু আপনার প্রসেসর টি তার Base clock speed এর নিচে নামতে পারবে না এবং তার Boost clock speed এর উপরে উঠতে পারবে না। এবার এখানে একটি জিনিস লক্ষ্য করার বিষয় রয়েছে। এখানে একটি প্রসেসরের Boost clock speed যদি 4.5GHz হয়, তবে তার মানে এটা নয় যে সেই প্রসেসর টি পূর্ণাঙ্গ কার্যক্ষমতা দিয়ে 4.5GHz ই কাজ করবে। বরং এখানে সেই প্রসেসরটি তার চাহিদা অনুযায়ী ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে কাজ করবে।
এখানে আরো একটি জিনিস নির্ভর করে তা হচ্ছে, সেই প্রসেসরটি টেম্পারেচার। যদি একটি প্রসেসরের ওপর চাপ দেওয়া হয় এবং প্রসেসরটি যদি লক্ষ্য করে যে প্রসেসরটি অত্যধিক গরম হয়নি, অর্থাৎ সেই প্রসেসরটি ঠান্ডা রয়েছে; তাহলে সে তার পূর্ণাঙ্গ কার্যক্ষমতা অর্থাৎ Boost clock speed এ রান হবে। অর্থাৎ, এখানে যে আরও একটি বিষয় নির্ভর করে তা হচ্ছে প্রসেসর এর টেম্পারেচার বা তাপমাত্রা। যখন একটি প্রসেসর এর ফুল লোড ফেলানো হবে এবং প্রসেসর টি এটি লক্ষ্য করবে যে, তাপমাত্রা কম রয়েছে তখনই সে তার সর্বোচ্চ Clock speed-এ রান হবে। এছাড়া আপনার ডিভাইসকে আপনি যদি অতিরিক্ত কাজ করতে দেন তবে এক্ষেত্রে আপনার ডিভাইসটিকে দেখবেন গরম হতে; কেননা সেই সময় প্রসেসরটি বেশি কাজ করছে এবং বেশি ক্লক স্পিডে অর্থাৎ Boost clock speed-এ রান হচ্ছে।
আর এ কারণেই আপনার ডিভাইসটি অতিরিক্ত গরম হচ্ছে। তাহলে এখানে আরেকটি বিষয় নির্ভর করে তা হচ্ছে, আপনার ডিভাইস এর কুলিং সিস্টেম। আপনার ডিভাইস এর কুলিং সিস্টেম যত ভালো হবে সেটি আপনার ডিভাইসকে ততো বেশি ঠান্ডা রাখবে এবং আপনার ডিভাইসের প্রসেসরটি ততই বেশি high-frequency তে কাজ করবে।
আপনি হয়তোবা এটি অবশ্যই জানবেন যে, একটি প্রসেসরকে যখন অভার ক্লক করা হয় তখন সেখানে কুলিং সিস্টেম খুবই ভালো লাগানো হয়। এটার মানে হচ্ছে এটাই যে, যখন একটি প্রসেসরকে ওভারক্লক করা হবে তখন সেই প্রসেসরটি যখন তার Boost clock speed-এ নিয়ে যাওয়া হবে তখন সে অবশ্যই বেশি ইলেকট্রিসিটি খরচ করবে এবং এ কারণে ডিভাইসটি গরম হতে থাকবে। আর এজন্য সেই ডিভাইস কে ভালো রাখার জন্য ভালো কুলিং সিস্টেম দরকার। যখন একটি প্রসেসরকে ওভারক্লক করা হয় তখন সেখানে ভালো থেকে ভালো কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এমনকি একটি প্রসেসর কে ঠান্ডা রাখার জন্য লিকুইড নাইট্রোজেন পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়।
আমি আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে, একটি প্রসেসর এর Base clock speed এবং Boost clock speed কি। এরপর আমি যখন কোন প্রসেসর এর স্পেসিফিকেশন দেখতে যাবেন তখন অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে এগুলো কি এবং কিসের জন্য এরকম ভাবে লেখা থাকে। যেখানে 2.3GHz Upto 3.5GHz লেখা থাকে আবার 3.5GHz upto 4.5GHz ও লেখা থাকে। যদি আপনার কাছে আজকের টিউনটি ভাল এবং তথ্যবহুল লেগে থাকে তবে টিউনটিতে একটি জোসস করবেন এবং সেইসঙ্গে আপনার মতামত জানাতে টিউনমেন্ট করবেন।
আমরা স্মার্টফোন কেনার সময় কিংবা ল্যাপটপ কম্পিউটার কেনার সময় সেসবের স্পেসিফিকেশন দেখতে গেলে অবশ্যই এই GHz এর বিষয়টি দেখতে পাই। যেখানে হয়তোবা আমরা এটি লক্ষই করিনি, কিংবা লক্ষ্য করলেও আমরা এটি নিয়ে কোনো দিন অনুসন্ধান করিনি। যে কারণে আজকের টিউনটি অনেকের কাছে অনেক সাহায্য করেছে। আপনারা যারা আগে থেকেই বিষয়টি জানেন তাদেরকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাকে ফলো করে দেখতে থাকুন ভবিষ্যতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক টিউন গুলো; কেননা ভবিষ্যতে তো আপনার অজানা কোন টিউন নিয়ে আসতেও পারি।
প্রসেসর সম্পর্কিত আজকের এই টিউনটি এখানেই তবে শেষ করছি। যদি টিউনটি আপনার কাছে টিউনটি তথ্যবহুল মনে হয় তবে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন, যাতে করে তারাও এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারে। তো বন্ধুরা, দেখা হচ্ছে তবে পরবর্তী টিউনে ইনশাআল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)