টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মত চলে এসেছি নতুন কোন টিউন নিয়ে।
আমরা টেকনোলজির যুগে বসবাস করছি, প্রতিদিন পরিচিত হচ্ছি নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে। প্রযুক্তি গুলো যেমনি আমাদের অবাক করে দিচ্ছে তেমনি আমাদের জীবনকে আরও সহজ করে তুলছে। বর্তমান সময়ে অন্যান্য প্রযুক্তি গুলোতে যেমন নতুন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে ঠিক একই ভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতেও আসছে বৈচিত্র্যতা।
আমরা এমন একটি সময়ে অবস্থান করছি যেখানে ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্ল্ড এবং ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ড এর মধ্যে দারুণ মেলবন্ধন তৈরি হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি সাইন্স ফিকশন মুভি গুলোকে এখন বাস্তবে রূপ দিচ্ছে। আর এই মুহূর্তে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ হচ্ছে Extended Reality বা XR।
আজকের এই টিউনে আমরা জানব Extended Reality বা XR সম্পর্কে, আলোচনা করব বর্তমান বিশ্বে এর প্রভাব নিয়ে।
সাধারণ ভাবে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ড এবং ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড একীভূত করাকে বলা হয় Extended Reality বা XR। আরও পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে Virtual Reality (VR), Augmented Reality (AR), এবং Mixed Reality (MR) কে একত্রে বলা হয় Extended Reality।
হয়তো বিষয় গুলো সম্পর্কে অনেকেই পরিচিত তারপরেও যারা জানেন না তাদের জন্য চলুন Virtual Reality (VR), Augmented Reality (AR), এবং Mixed Reality (MR) সম্পর্কে একটু পরিষ্কার ধারণা নেয়া যাক।
Virtual reality (VR) এর মাধ্যমে ইউজার একটি থ্রি-ডাইমেনশনাল এনভায়রনমেন্টের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। সে অভিজ্ঞতা পেতে ইউজারকে বিভিন্ন ডিভাইস পড়তে হয় যেমন VR headsets, Controllers, এবং Gloves। বর্তমান বাজারে Oculus Quest 2, একটি অন্যতম জনপ্রিয় VR সলিউশন।
Virtual reality (VR) তে আপনি নিজেকে অন্য একটি জগতে কল্পনা করবেন এবং মনে হবে আপনি সেখানে নির্দিষ্ট কাজ করছেন, যেমন গেমিং এর ক্ষেত্রে শক্র পক্ষের সাথে ফাইট করা।
Augmented reality (AR) এমন এক ব্যবস্থা যেখানে ভার্চুয়াল এক্সপেরিয়েন্স এবং বাস্তবতা এক সাথে ব্যবহার করা হয়। যেমন আপনার ঘরের দেয়ালে কোন নির্দিষ্ট নকশা নিয়ে আসা, আপনার ঘরের মধ্যে বনের পশু পাখি নিয়ে আসা। AR Smart Glass, ট্যাবলেট, মোবাইলের মাধ্যমে Augmented reality এর অভিজ্ঞতা নেয়া হয়।
Virtual reality (VR) এবং Augmented reality এর মধ্যে মূল পার্থক্য হল Virtual reality তে আপনার রিয়েল ওয়ার্ল্ডের কোন বিষয়ের সাথে ইন্টারেকশন হবে না।
আমরা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের ফটোতে যে ফিল্টার গুলো দেখতে পাই, আমাদের মাথায় টুপি এসে পড়া, স্টিকার যুক্ত হয়ে যাওয়া, এগুলো মূলত Augmented reality (AR)।
Mixed reality (MR) হচ্ছে AR এবং VR এর হাইব্রিড প্রযুক্তি। এখানে Virtual এবং Augmented ওয়ার্ল্ডের গ্যাপটা ফিলআপ করা হয়। এখানে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এবং রিয়েল ওয়ার্ল্ডকে একটি এনভায়রনমেন্টে নিয়ে আসা হয়। MR হেডসেটের মাধ্যমে এই ধরনের অভিজ্ঞতা নেয়া যায়। Microsoft HoloLens একটি MR হেডসেট।
Microsoft HoloLens এর সাথে Skype মিটিং করা একটি Mixed reality (MR) এর উদাহরণ। যেখানে ইউজার ফিজিক্যাল মিটিং এর অভিজ্ঞতা পেয়ে থাকে।
দিন দিন XR মার্কেট বড় হচ্ছে বর্তমানে প্রায় সকল ইন্ডাস্ট্রি এই প্রযুক্তি গ্রহণ করছে। চলুন কিছু উদাহরণ দেখে নেয়া যাক
বর্তমানে রিটেইল সেক্টর XR ব্যবহার করে আরও স্মার্ট হয়ে উঠছে গ্রাহকদের কাছে। এখন WatchBox এ গ্রাহকরা ভার্চুয়ালি বুঝতে পারছে তাদের হাতে কোন ঘড়িটি বেশি মানাবে। ফার্নিচার কোম্পানি IKEA লঞ্চ করছে AR অ্যাপ যার মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের বাড়িতে ভার্চ্যুয়াল ফার্নিচার প্লেস করতে পারছে।
XR এর দারুণ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন ব্যক্তি বিপদজনক পরিবেশে না রেখেই তাকে সেই সমস্ত পরিবেশের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে পাইলট, দমকল বাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিতে ভার্চুয়াল এক্সপেরিয়েন্স ব্যবহার করা হয়।
XR সলিউশন ব্যবহার করা হচ্ছে রিয়েল এসেস্ট বিজনেসে। কাস্টমারকে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে ভার্চ্যুয়াল ট্যুরের অভিজ্ঞতা। ঘরে বসেই ইউজাররা নির্দিষ্ট লোকেশনে ঘুরে আসতে পারছে। কোন ব্যক্তির সাহায্য ছাড়াই আগ্রহীরা যেকোনো বাসা বাড়ি বা ফ্ল্যাট ঘুরে আসতে পারছে।
বিনোদনের ক্ষেত্রে XR এর অবদান নতুন করে বলার কিছুই নেই এর বড় উদাহরণ গেমিং। মানুষ শুধুমাত্র পিসির সামনে বসে থেকে এখন গেম খেলে না তারা রিয়েল টাইম এক্সপেরিয়েন্স নিচ্ছে গেম গুলোতে।
গেমিং ছাড়াও বিভিন্ন প্রদর্শনী এবং মিউজিক্যাল কন্সার্টে অডিয়েন্সরা না গিয়েও ঘরে বসে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারছে।
বলতে গেলে XR টেকনোলজি যুগান্তকারী একটি উদ্ভাবন হলেও এখানে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। চলুন চ্যালেঞ্জ গুলো জেনে নেয়া যাক।
XR টেকনোলজি ইউজারদের ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ করে এবং সেগুলো প্রসেস করে। ডেটা গুলো হতে পারে, আপনি কি দেখছেন, কি করছেন, এমনকি আপনার আবেগ সংক্রান্ত। তো বলা যায় বিশাল সংখ্যক ডেটা লিক হবার সম্ভাবনা থাকতে পারে। কখনো সেনসিটিভ তথ্যও চলে যেতে পারে অনলাইনে।
এখন পর্যন্ত সকল ধরনের XR টেকনোলজি বেশ ব্যয়বহুল। এটা যে কেবল ইউজারের দিক থেকে নয়, বিভিন্ন কোম্পানিও যদি চায় যে তারা এটি গ্রহণ করবে সেক্ষেত্রে সেটা অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। অধিকাংশ কোম্পানি তাই এই খাতে বিনিয়োগ করতে ভয় পায়। সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের AR প্রযুক্তিটি কিছুটা কম ব্যয়বহুল হলেও ভার্চ্যুয়াল বা মিক্সড রিয়েলিটি যন্ত্রাংশ গুলো এখনো ব্যয়বহুল।
XR ডিভাইস গুলো ডিজাইন বা ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রেও বিপাকে পড়তে হয়, প্রথমত ঝামেলা হয় ভিন্ন ভিন্ন ইউজারদের জন্য আরামদায়ক ডিভাইস তৈরি করতে। তাছাড়া VR এবং MR ভিভাইস গুলো তুলনামূলক ভারী হওয়াতে ইউজারদের কাছে এগুলো দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারে, মাথা ব্যথা বা অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
ইউজারদের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হতে ডিভাইস গুলোতে আরও ফিচার যুক্ত করা উচিৎ। যেমন HoloLens বিভিন্ন Gestures এবং Voice Command এর মাধ্যমে কন্ট্রোল করা গেলেও, Gestures শুধুমাত্র হাতের মুভমেন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
আশা করা যায় ভবিষ্যৎ XR ডিভাইস গুলো ইউজারদের দেবে আরও দুর্দান্ত এবং পারসোনালাইজড অভিজ্ঞতা। ডিভাইস গুলো ব্যবহার করে মানুষ ঘরে বসেই বিভিন্ন ইভেন্টে যোগ দিতে পারবে। বর্তমানে এটা সম্ভব হলেও ভবিষ্যতে এটিও উন্নত হবে।
ধারণা করা হচ্ছে XR এর মাধ্যমে Out-of-home বা OOH বিজ্ঞাপণ গুলো আরও স্পেসিফিক হবে। যেমন আপনি নির্দিষ্ট লোকেশন দিয়ে যাবার সময় বিশেষ বিশেষ বিজ্ঞাপণ প্রদর্শন করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছে আসছে বছর গুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর বিপরীতে জনগণকে প্রস্তুত করতে বিভিন্ন XR প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
আমরা ভবিষ্যতে আমাদের মোবাইল ফোন, VR হেডসেট, AR গ্লাস নির্দিষ্ট একটি পরিধেয় XR ডিভাইসেও পেতে পারি যাতে সব কিছুই অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
XR টেকনোলজির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বেশির ভাগ ইন্ডাস্ট্রি গুলো ইতিমধ্যে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করা শুরু করেছে। হতে পারে এমন একটা সময় আসবে যখন আমাদের পক্ষে কোনটা রিয়েল এবং কোনটা ভার্চুয়াল সেটা ধরা কষ্টকর হয়ে পড়বে। বলা যায় XR ডিভাইস গুলো আরও কার্যকর এবং সাশ্রয়ী হবে উঠবে।
নতুন নতুন প্রযুক্তি যেমন আসতে থাকবে তেমনি সে সমস্ত প্রযুক্তি গুলোতে ভাল খারাপ উভয় দিকও থাকবে। XR টেকনোলজির খারাপ কিছু দিক বা চ্যালেঞ্জ গুলো একপাশে রাখলে, এটাকে বলা যায় আসছে বিশ্বের অন্যতম একটি প্রযুক্তি।
তো কেমন হল আজকের টিউন জানাতে টিউমেন্ট করুন। আজকে এ পর্যন্তই পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।
এটি সত্যিই এক অসাধারণ প্রযুক্তি। কিন্তু আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশ কি এই প্রযুক্তির জন্য তৈরি।