আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মতই আজকে হাজির হলাম নতুন কিছু নিয়ে। আজকে আলোচনা করব ট্রেন্ডিং একটি টপিক নিয়ে। আজকে আপনাদের পরিষ্কার করার চেষ্টা করব ডিজিটাল জুম এবং অপটিক্যাল জুমের মধ্যে পার্থক্য।
প্রোমোশনে এই যুগে প্রায়ই শুনা যায় এক কোম্পানি ফোনে 10x, Zoom অন্য কোম্পানির ফোনে 2০x, Zoom! এমনকি Samsung বলছে তাদের ফোনে 100x পর্যন্ত কাজ করবে। কিন্তু আসলেই কি তা সম্ভব? আজকে এই বিষয় গুলোই তুলে ধরার চেষ্টা করব।
Zoom কি? 5x অথবা 10x, Zoom কাকে বলে? সহজ ভাষায় যদি তাহলে বলতে হবে, অপটিক্যাল ফিজিক্সে Zoom বলতে কিছুই নেই! এটাকে লেন্স ম্যাগনিফিকেশ হিসাবে ধরা যায়।
লেন্স ম্যাগনিফাই মানে হচ্ছে এটি দূরের বস্তুকে কতটা ম্যাগনিফাই করা যায়, বা কতটা কাছে থেকে দেখাতে পারে। এই লেন্স ম্যাগনিফিকেশন নির্ভর করে ক্যামেরার Focal length এর উপর।
যদি কোন লেন্সের দীর্ঘ Focal length থাকে তাহলে এর ভিউ ফিল্ড ছোট হয়। এখানে আমি ভিউ ফিল্ড বলতে বুঝাতে চাচ্ছি, একটা ছবি কতটা জায়গা দেখাতে পারে। যা বলছিলাম, কোন লেন্সের যদি দীর্ঘ Focal length হয় তাহলে এটির ভিউ ফিল্ড ছোট হবে এবং একটি দূরের বস্তু ম্যাগনিফাই করতে পারবে।
বেশির ভাগ ক্যামেরা গুলো, যেকোনো বস্তু ম্যাগনিফিকেশনের উপর ভিত্তি করে বিক্রি হয় না, Focal length এর ভিত্তি করে বিক্রি করা হয়।
Zoom হচ্ছে একটি মার্কেটিং কনসেপ্ট যা Compact ক্যামেরা গুলোর সময় থেকে চলে আসছে। আসলে Zoom হচ্ছে দীর্ঘ এবং স্বল্প Focal length এর অনুপাত।
10mm-100mm লেন্সের থাকবে 10x zoom, যখন 25mm-100mm লেন্সের থাকবে 4x Zoom। তার মানে 10x, জুম মানেই কোন বস্তু ১০ গুন বড় দেখাবে বিষয়টি এমন নয়।
স্মার্ট ফোনগুলো এই Zoom এর বিষয়টি একটু ভিন্ন ভাবে ব্যবহার করে। সাধারণ ভাবে স্মার্ট ফোনের মেইন ক্যামেরায় 1x Zoom দেয়া হয় যার মানে এটি বেশি ভিউ ফিল্ড দেয় বা ছবিতে বেশি জায়গাকে কাভার করতে পারে। যেমন iPhone 11 Pro দীর্ঘ লেন্স যোগ করেছে বলে তারা সাধারণ Zoom হিসেবে. 05x ধরেছে।
তাহলে এবার চলুন দেখা যাক অপটিক্যাল Zoom আর ডিজিটাল Zoom এর মধ্যে পার্থক্য কোথায়।
আমরা কোন ক্যামেরার Zoom কে তখনই অপটিক্যাল জুম বলব, যখন ল্যান্সের ভেতরের জিনিস পত্রের মাধ্যমে কোন বস্তু ম্যাগনিফাই হবে। হয়তো বিষয়টা কঠিন লাগছে, চলুন একটা সহজ উদাহরণ দেই। আপনি যখন DSLR দিয়ে কোন ছবি তুলতে চান, তখন অবশ্যই একটি ফ্রেম ঠিক করার জন্য জুমিং করেন। ঠিক তখন খেয়াল করে দেখবেন আপনি যখন Zoom in বা Zoom out করছেন তখন লেন্স একবার ভেতরে আরেকবার বাইরে যাচ্ছে। এই লেন্সটি সামনের দিকে এজন্যই এগিয়ে যায় যাতে করে নির্দিষ্ট বস্তুটি কাছ থেকে ক্যাপচার করা যায়।
এই বিষয়টি স্মার্টফোন গুলোর ক্ষেত্রে কিভাবে হয়? আমরা এখন যে ফোন গুলো দেখি, তিনটি ক্যামেরা চারটি ক্যামেরা, এত ক্যামেরার কাজ কি? এখানে একটি ক্যামেরা কাজ করে অপটিক্যাল Zoom এর জন্য। নিচের ছবিটি খেয়াল করুন।
এখানে Telephoto ক্যামেরার কাজ হচ্ছে 2x অপটিক্যাল Zoom দেয়া। যখন কেউ 2x জুম দিয়ে ছবি তুলবে তখন এই ক্যামেরাটি ব্যবহৃত হবে।
একই ভাবে ডিজিটাল Zoom এ কিন্তু এটা হয় না, সেখানে একটা ছবি তুলা হলে লেন্স তার একই জায়গায় থাকে। এখানে যা হয়, ছবিটি ক্রপ হয়ে কাছে দেখায়। যাই হোক এ ব্যাপারে পরে আসছি৷
দীর্ঘ Focal length এর লেন্স গুলো থেকে অপটিক্যাল Zoom করা যায়। আমরা ফুটবল বা ক্রিকেট খেলায় যে ল্যান্স গুলো ব্যবহার করতে দেখি এগুলো অপটিক্যাল Zoom ল্যান্স যা সাধারণত 500mm থেকে 1000mm হয়ে থাকে।
তাছাড়া Compact ক্যামেরা গুলোও 100mm লেন্সে ভাল অপটিক্যাল Zoom দিতে পারে।
ইদানীং স্মার্ট গুলোতে ভাল অপটিক্যাল জুমের জন্য Periscope lenses (তিনটা ক্যামেরা, চারটা ক্যামেরা) দেয়া হচ্ছে। যেগুলোর মাধ্যমে 5x জুম(DSLR এর 100mm লেন্স ম্যাগনিফিকেশনের সমান) পাওয়া যায়।
যেখানে 5x এবং 100x এর মধ্যে এখনো অনেক পার্থক্য সেখানে ফোন কোম্পানি গুলো কিভাবে দাবী এমন দাবী করতে পারে আমার জানা নেই।
এবার আসি ডিজিটাল জুমে। আগেই বলেছি জুম বিষয়টি খুবই জটিল একটি বিষয়, আর এই সুবিধাটিই কাজে লাগানো হয় ডিজিটাল জুমের ক্ষেত্রে। বিষয়টি ক্লিয়ার করতে আবার একই কথা রিপিট করছি, অপটিক্যাল জুমে লেন্সের ভেতরের অবজেক্ট গুলো এগিয়ে এসে কোন বস্তুকে ম্যাগনিফাই করে, অথবা ভিন্ন ক্যামেরা ব্যবহৃত হয়, অন্যদিকে ডিজিটাল জুমে লেন্স এক জায়গায় ফিক্সড হয়ে থাকে। তাহলে জুম কিভাবে হয়? Digital Zoom এর ক্ষেত্রে খুব সহজে ছবি গুলো Crop করে ফেলা হয়। ধরুন আপনি ক্যামেরা অন করে যখন জুম করবেন এটি ক্যামেরার ফ্রেম ঠিক রেখে ছবিটিকে Crop করে ফেলবে। আপনি কোন ছবি তুলে সেটা crop করলে যেমন দেখাবে, ডিজিটাল জুম ব্যবহার করে জুমিং করলে সেটা একই দেখাবে।
আর জন্যই Zoom এর ফলে ছবি কোয়ালিটি খারাপ হয়ে যায়।
নিচের ছবিটি খেয়াল করুন এটি iPhone Xs দিয়ে তুলা যার 2x অপটিক্যাল জুম আছে এবং 10x ডিজিটাল জুম আছে। ছবিটি 2x অপটিক্যাল জুম দিয়ে তুলা হলে তার কোয়ালিটি খারাপ হয় নি কিন্তু 10x ডিজিটাল জুম দিয়ে তুলাতে ছবি ফেটে গেছে।
সুতরাং এটি বিষয় হয়তো পরিষ্কার হতে পেরেছেন যে অপটিক্যাল জুম ছবির কোয়ালিটি নষ্ট না করেই বস্তুকে ম্যাগনিফাই করে অন্যদিকে ডিজিটাল জুম ছবিকে শুধুমাত্র Crop করে।
সাধারণত ভাবেই অপটিক্যাল লেন্স গুলোর দাম বেশি হয় যা স্মার্ট-ফোন গুলোতে দেয়া সব সময় সম্ভব না সেক্ষেত্রে স্মার্ট-ফোন কোম্পানি গুলো কিভাবে বিষয়টি মেইনটেইন করে? স্মার্ট-ফোন গুলোতে অপটিক্যাল Zoom এর সুবিধা দিতেই Periscope lenses এর উৎপত্তি।
তারপরে ডিজিটাল জুমে ভাল ছবি পাওয়ার জন্য কোম্পানি গুলো কিছু ট্রিক্স ফলো করে,
হাই রেজুলেশন সেন্সর
Galaxy S20 ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে 64 MP telephoto ক্যামেরা যা দিয়ে Crop করার জন্য অধিক ইমেজ থাকবে এবং Zoom ও বাড়বে।
পিক্সেল বিনিং
একক সুপার-পিক্সেল এর সাথে একাধিক পিক্সেলের সংমিশ্রণ কেবলমাত্র পরে ক্রপিংয়ের চেয়ে ডিজিটালি জুম-ইন ছবি গুলোর বেশি কোয়ালিটি দিতে।
AI বা মেশিন লার্নিং ব্যবহার
ক্যামেরা ম্যানুফেকচারা AI বা মেশিন লার্নিং ব্যবহার করেও ছবি কোয়ালিটি ঠিক রেখে জুম করতে পারে।
মনে রাখতে হবে হাই কোয়ালিটি জুমিং এর জন্য অবশ্যই অপটিক্যাল জুম লাগবে। আর 50x এবং 100x এর মত জুম তখনই সম্ভব যখন কোন ক্যামেরায় এক সাথে অপটিক্যাল এবং ডিজিটাল জুম থাকবে।
আপনাকে মনে রাখতে হবে ভাল ছবির জন্য 50x বা 100x জুমের দরকার নেই 5x অথবা 10x অপটিক্যাল জুম দিয়েই যথেষ্ট ভাল ছবি পাওয়া যায়।
যদিও ডিজিটাল জুম খারাপ কিছু না তবে অধিক জুম করা হলে ছবির কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায়।
এই বিবেচনায়, 20x অথবা 30x (যা DSLR এর 1000mm লেন্স ম্যাগনিফিকেশনের সমান) অপটিক্যাল জুম আপনাকে দুর্দান্ত ছবি অভিজ্ঞতা দিতে পারে। এমন কি এই জুম দিয়ে যথেষ্ট ভাল ব্লার ইফেক্ট ছবিও তুলা সম্ভব।
অপটিক্যাল জুমের সেরা অভিজ্ঞতা পেতে DSLR এর বিকল্প নেই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না তবে সবার সামর্থ্য অনুযায়ী স্মার্ট ফোনে অপটিক্যাল জুম ফিচার সত্যি প্রশংসা যোগ্য।
স্মার্ট- ফোন কোম্পানি গুলো তাদের Zoom নাম্বার বাড়ানোর জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেই কিন্তু আপনাকে দেখতে হবে এখানে Optical Zoom কতটুকু। কারণ কেউ যদি 100x জুম দাবী করে এবং সেটা হয় ডিজিটাল জুম তাহলে তো এর কোন ভ্যালুই থাকে না।
তো আপনাদের কেমন লাগল আজকের টিউন জানাতে ভুলবেন না।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।
আপনার টিউন খুব ভালো। আমি একটু লেখালেখি করছি টেক বিষয়ে দেখে নিবেন কেমন