আপনার ডাউনলোড একটিভিটি কেউ নজরদারি করছে না তো?

টিউন বিভাগ প্রযুক্তি কথন
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

হ্যালো টেকটিউনস জনগণ, কেমন আছেন আপনারা সবাই? টেকটিউনসের নিত্যনতুন টপিক আর সার্ভিস নিয়ে ভালো না থেকে আর উপায় আছে? আর এই নিত্যনতুন টপিক আর সার্ভিসের ধারা বজায় রাখার নিমিত্তে, আজকে আমি আপনাদের সাথে একদম নতুন একটি টপিক নিয়ে হাজির হলাম। আর আপনারা এই টিউনের মাধ্যমে জানতে পারবেন অনেক নতুন নতুন সব তথ্য।

এই টিউনে আমি আজকে আলোচনা করবো, যতই গোপনীয়তা আপনি অবলম্বন করেন না কেন ইন্টারনেট থেকে কোন কিছু ডাউনলোড করবেন তখন তা কে কে দেখতে পারে, তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ টিউনটি পড়ুন।

ইন্টারনেট, যেমন আমাদের জন্য আশীর্বাদ, ঠিক তেমনি এর কিছু খারাপ দিকও আছে। ইন্টারনেটে আপনি যতই প্রাইভেসি রক্ষা করে চলেন না কেন, কেউ না কেউ তা ভেঙ্গে ফেলতে পারবে। আপনার অনলাইন পরিচয় এবং সিকিউরিটি গোপন রাখতে আপনি যতই চেষ্টা করেন না কেন, কেউ না কেউ তা ঠিকই খুঁজে পাবে। আর এটা সবচেয়ে ভাল বুঝবেন যারা টরেন্ট থেকে ডাউনলোড করে থাকেন।

তো, কে আপনার ডাউনলোড এর উপর নজরদারি করছে?

যদি ছোট করে বলি তাহলে বলব, সবাই আপনার ডাউনলোড এর উপর নজরদারি করছে।

আর যদি একটু বিস্তারিত বলি তাহলে বলব, কিছু লোক এটার উপর নজরদারি করে আর আপনি চান না যে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য তারা দেখুক বা জানুক।

আপনি যতই শক্তপোক্ত ভাবে প্রাইভেসি রক্ষা করে চলেন না কেন, হ্যাকাররা যদি একটু কঠোর পরিশ্রম করে তবে তারা দেখতে পারবে আপনি কি ডাউনলোড করছেন এবং তা কখন করেছেন। আপনি কি ডাউনলোড করছেন তা আপনার আপনজন দেখে ফেলার চেয়ে একজন হ্যাকার যখন দেখতে পারে তাহলে তার চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি আর হতে পারেনা।

হ্যাকার এবং / অথবা যে কোম্পানি গুলো আমাদের ডাউনলোড গুলোর উপর নজরদারি করছে তাদের সাথে আমরা কিভাবে ডিল করবো? ডাউনলোড করার সময় পরিচয় গোপন রাখার টিপস গুলো কি?

উপরের প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়ার আগে কিছু ব্যাপারে পরিষ্কার হয়ে নেইঃ

আমি যখন কিছু ডাউনলোড করি তখন আসলে কি ঘটে?

একজন কম্পিউটার ইউজার হিসেবে আপনি প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট থেকে কিছুনা কিছু ডাউনলোড করছেন। একটা বাটনে ক্লিক করার মাধ্যমে আপনার প্রয়োজনীয় ফাইল বা কন্টেন্ট ডাউনলোড করতে পারছেন অনায়াসেই। তবে ডাউনলোডের সময়ে আসলে কি হয়? কিভাবে ইন্টারনেট থেকে প্রতিটি ফাইল ডাউনলোড হয়।

ইন্টারনেট থেকে প্রতিটি ডাউনলোড একই প্রসেস এর মধ্য দিয়ে যায়। আপনি ইউজার হিসেবে একটি সার্ভারের কাছে ফাইল ডাউনলোডের রিকুয়েস্ট সেন্ড করেন। মানে, আপনি সার্ভারকে বলছেন, "হ্যালো সার্ভার, দয়া করে আপনি কি আমার জন্য এইPDF টি ডাউনলোড করতে পারবেন? ধন্যবাদ" আর তখন একটি সার্ভার (গুগলের সার্ভার বা অন্য যেকোনো সার্ভার) আপনার রিকোয়েস্ট করা ফাইলটির একটি কপি আপনার কাছে সেন্ড করবে। দুই ধরনের সার্ভার আছে যেগুলো আপনাকে ইনফরমেশন দিবে। যদি আপনি কোন ফাইল সার্ভারে কোন ফাইলের জন্য রিকোয়েস্ট পাঠান তাহলে তা প্রসেস করার জন্য FTP প্রোটোকল ব্যবহার করে থাকে, আর এটি ক্লায়েন্ট-সার্ভার আর্কিটেকচার ব্যবহার করে করা হয়ে থাকে। আর এই ক্ষেত্রে আপনি হচ্ছেন ক্লায়েন্ট এবং সার্ভার হচ্ছে একটি কম্পিউটার এবং/ অথবা ডিস্ক ড্রাইভ ম্যানেজ করার জন্য ডেডিকেটেড প্রসেস।

আপনি যদি ওয়েব সার্ভারে কোন ফাইলের জন্য রিকোয়েস্ট পাঠান তাহলে আপনার কম্পিউটারটি HTTPপ্রোটোকল ব্যবহার করে থাকে, ফলে আপনি আপনার কম্পিউটার দিয়ে সরাসরি World Wide Web অ্যাক্সেসের জন্য ওয়েব সাইটের সাথে কানেক্ট করাবে।

টরেন্ট ডাউনলোডিং কি?

সরাসরি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করার পাশাপাশি বিটটোরেন্ট বা টরেন্ট থেকেও ডাউনলোড করা যায়। আর এই উপায়ে ডাউনলোড করার অনেক গুলো মাধ্যম রয়েছে, তারমধ্যে অনেক ইউজার রয়েছে যারা একটি সেন্ট্রাল লোকেশনে ফাইল আপলোড করে থাকেন। ফলে, এই লোকেশন থেকে, যেকেউ যেকোনো ফাইল ডাউনলোড করতে পারেন। আর এই সিস্টেমকেই আমরা peer-to-peer বা P2P ফাইল শেয়ারিং বলা হয়।

যেকেউ টরেন্ট ক্লায়েন্ট ব্যবহার করে ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন। ডাউনলোড প্রসেস হয় কিভাবে তা উপরে বলেছিলাম, টরেন্টেও ঠিক একইভাবে ডাউনলোড প্রসেস হয়, একজন কম্পিউটার ইউজার একটি ফাইল ডাউনলোড করার জন্য রিকোয়েস্ট পাঠাবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য সম্পূর্ণ ফাইলটি ডাউনলোড হওয়ার পরিবর্তে, ইউজার একই সাথে বিভিন্ন ওয়েব সোর্স থেকে সেই ফাইলের ছোট ছোট অংশ বিট আকারে ডাউনলোড হবে। আর ইউজার যেহেতু একাধিক সোর্স থেকে একটি ফাইল ডাউনলোড করছে ফলে FTP প্রোটোকলের চেয়ে টরেন্ট ডাউনলোডে তিনি বেশি স্পীড পাবেন।

যেকেউ ফ্রিতেই বিট-টরেন্ট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবে। টরেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে ডাউনলোড করার কিছু উপকারিতা এবং অপকারিতাও রয়েছে।

টরেন্ট নেটওয়ার্কিং এর উপকারিতাগুলো কি?

১. ট্রু P2P নেটওয়ার্কিং

টরেন্ট নেটওয়ার্কগুলোতে সমস্ত ব্যবহারকারীকেই ফাইল আপলোড এবং ডাউনলোড করতে হয়, ফলে সকল ব্যবহারকারীদেরকেই ফাইল সারভিং প্রসেসে অংশগ্রহণ করতে হয়।

২. টরেন্ট সফটওয়্যারের ব্যবহার

ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করে টরেন্ট ফাইল খোঁজার পরিবর্তে আপনি সফটওয়্যার ব্যবহার করেও টরেন্ট ফাইল খোঁজতে পারবেন। সফটওয়্যার এর মাধ্যমে টরেন্ট নেটওয়ার্কে ফাইল খুঁজতে হলে প্রথমে আপনাকে সফটওয়্যারটিকে ইন্টারনেট কানেক্ট করার পারমিশন দিতে হবে যাতে করে আপনি নির্দিষ্ট টরেন্ট ফাইলটি খুঁজে পেতে পারেন।

৩. নেই কোন ভুয়া এবং ডামি ফাইল

টরেন্ট নেটওয়ার্কে সমস্ত ভুয়া এবং ডামি ফাইলগুলি ফিল্টার করে থাকে। কিন্তু ক্র্যাক এর মাধ্যমে কিছু কারাপ্ট ফাইল আপনি ডাউনলোড করতে পারেন তবে টরেন্ট নেটওয়ার্কগুলো ঘরবাড়ি পরিষ্কারের মতো ৯৯% কারাপ্ট ফাইল (বা ব্যাকটেরিয়া) ব্লক করে থাকে।

৪. শেয়ারিং মানেই কেয়ারিং

টরেন্ট নেটওয়ার্কগুলি তাদের ব্যবহারকারীদেরকে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ফাইল শেয়ার করার জন্য উৎসাহিত করে। প্রযুক্তির ভাষায় টরেন্ট ফাইলকে সীড বলা হয়। তবে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ফিল্টারিং করা কারাপ্ট ফাইলগুলির মতো, এমনও ব্যবহারকারী রয়েছে যারা শুধু ফাইল ডাউনলোড করেন এবং কখনও নিজের তথ্য সীড করেন না। আর এই কারণে এই সব ব্যবহারকারীদের শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে অন্যান্য ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করে থাকে।

৫. মুনাফা-হীন টরেন্ট

টরেন্ট নেটওয়ার্কের সোর্স কোডটি ওপেন সোর্স, বিজ্ঞাপণ মুক্ত এবং অ্যাডভার্টাইজ এবং স্পাইওয়্যার মুক্ত। আর এই কারণে কেউ কোন অর্থ পাচ্ছে না এবং সফটওয়্যার এর মাধ্যমেও অর্থোপার্জন করেছে না কারণ এর সোর্স কোড যেকেউ ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারবেন।

কে আমার ডাউনলোডগুলো দেখছে?

আমরা সবাই চাইবো বিশ্বে যেন কেউ কারও ডাউনলোড কেউ দেখতে না পারে। যেহেতু আমাদের পৃথিবীতে তা হওয়া সম্ভব নয়, আর তাই কেউ ইচ্ছা করলেই আমাদের ডাউনলোডগুলি দেখতে পারে।

আজকে আমরা শুধু টরেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে ডাউনলোড সম্পর্কে কথা বলতে যাচ্ছি। সুতরাং কে আপনার টরেন্ট নেটওয়ার্ক ডাউনলোড দেখতে পাচ্ছেন? নিম্নে চারটি গ্রুপ নিয়ে আলোচনা করবো মূলত তারাই আপনার টরেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে ডাউনলোড গুলো দেখতে পারে।

১. ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP)

আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা ISP, আপনার বাড়িতে যে ইন্টারনেট কানেক্টশন দিয়ে থাকে। যদিও আপনি তাদের নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছেন, আর শুধু আপনি একাই যুক্ত হননি। আপনার মতো আরও হাজারো মানুষ এই একই নেটওয়ার্কে কানেক্ট হয়েছে। যখন ইউজাররা ডাউনলোড করে, তখন আপনি কি ডাউনলোড করছেন তা ISP নজরদারি করে না। তারা নজরদারি করে আপনি মূলতা কতটা ব্রডব্যান্ড খরচ করেছেন। আপনি যদি জানতে চান যে, আপনার ইন্টারনেট স্পীড কত, তাহলে আপনাকে জানতে হবে আপনার ব্যান্ডউইথ স্পীড বা প্রতি সেকেন্ড কত কেবি/এমবি (KB/MB) স্পীডে ডাউনলোড হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ টরেন্ট নেটওয়ার্কে ডাউনলোডের জন্য ইন্টারনেট স্পীড ভাল থাকা প্রয়োজন, তা যদি না থাকে তাহলে আপনি টরেন্ট থেকে ভাল ডাউনলোড স্পীড পাবেন না। যদি আপনি একটি বড় সাইজের ফাইল ডাউনলোড করেন তাহলে অন্যান্য ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট স্পীড কম পাবে। এবং আপনি যদি বিটটরেন্ট থেকে কোন ফাইল ডাউনলোড করেন তাহলে আপনার ISP ইন্টারনেট স্পীড স্লো করে দিবে - যদিও আপনি টরেন্ট থেকে লিগ্যাল ফাইল ডাউনলোড করেন না কেন। আর আপনার ISP দেখেও না আপনি কি লিগ্যাল বা ইলিগ্যাল ফাইল ডাউনলোড করছেন কিনা, তারা দেখে আপনি কি টরেন্ট থেকে কিছু ডাউনলোড করেন কিনা, যদি দেখে আপনি টরেন্ট থেকে ডাউনলোড করছেন তাহলে তারা আপনার পরিচয় গোপন রাখতে দিবে না তা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকাশ করে দিবে।

২. মিডিয়া কোম্পানি

টরেন্ট থেকে ডাউনলোডের আর একটি বাধা হল মিডিয়া কোম্পানিগুলি। বেশিরভাগ ব্যবহারকারী, বিশেষকরে কলেজের শিক্ষার্থীরা মুভি, মিউজিক, টিভি শো বা ক্রিয়েটিভ কন্টেন্টগুলো ডাউনলোড করতে টরেন্ট ব্যবহার করে। কারণ টরেন্ট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ফ্রিতে মুভি, মিউজিক, টিভি শো ইত্যাদি ডাউনলোড করতে পারে। মিডিয়া কোম্পানিগুলো, তাদের কন্টেন্ট ফ্রিতে ডাউনলোড করার জন্য কোন টাকা পয়সা পাচ্ছে না, ফলে তারা আপনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আপনি তাদের কাজটি চুরি করেছেন কারণ আপনি তাদের মিউজিক, মুভি বা টিভি শো ফ্রিতে ডাউনলোড করার মাধ্যমে তাদের প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করেননি। আর তাই মিডিয়া কোম্পানি গুলি আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আর টরেন্ট নেটওয়ার্কগুলোতে মিডিয়া কোম্পানির লোক নিয়োগ করে মনিটর করবে যে তাদের মিউজিক বা টিভি শো টরেন্ট নেটওয়ার্কে আছে কিনা। যদি তারা তাদের কন্টেন্ট টরেন্ট নেটওয়ার্কে পায় তাহলে তারা তা প্রথমে ডাউন-লোড করে। আর ফাইলটি ডাউনলোড করার সাথে সাথে মিডিয়া কোম্পানিগুলি দেখতে পারবে যে কোন কোন টরেন্ট ইউজার এই ফাইলের সাথে কানেক্টেড আছে এবং তারা উক্ত ইউজার এর ISP এর সাথে যোগাযোগ করবে। তখন ইউজার এর ISP তাদের প্রত্যেককে একটি মেইল সেন্ড করবে। প্রথম অপরাধের জন্য আপনাকে সতর্ক করে মেইল পাঠানো হবে এবং বলবে "দয়া করে টরেন্ট থেকে আর ডাউনলোড করবেন না।

৩. আইন প্রয়োগকারী সংস্থা

গ্রুপ অফ কোম্পানি মুনাফা লাভের জন্য একত্রিত হয়ে আপনার ইনফরমেশন ব্যবহার করে থাকে। আর এটি বিটটরেন্ট ইউজারদের সিকিউরিটির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে একাধিক ডাউনলোডের রিকোয়েস্ট ডাটাবেজে চলে যায়। ডাটাবেজে যাওয়া তথ্যগুলো যেমন IP ইনফরমেশন বিভিন্ন পার্টির কাছে বিক্রয় করা হয়, পরে তারা এই তথ্য তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যবহার করে থাকে। একটু চিন্তা করুন এবং ভাবুন, এই মিডিয়া কোম্পানিগুলো এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কিভাবে টরেন্ট নেটওয়ার্কে কি ডাউনলোড করছি তা দেখতে পারছে?

৪. টরেন্ট নেটওয়ার্কের প্রত্যেকে আপনাকে দেখতে পারে

যখন আপনি টরেন্ট থেকে কিছু ডাউনলোড করেন, তখন আপনার IP অ্যাড্রেসটি সারা বিশ্বে টরেন্ট ডাউনলোডাররা দেখতে পারে। তবে IP অ্যাড্রেস এর সাথে আপনার নাম প্রকাশ করা হয় না। তবে এই IP অ্যাড্রেস এর মাধ্যমে আপনার সমস্ত তথ্য বের করা সম্ভব। শুধু আপনার ISP এবং মিডিয়া কোম্পানিগুলোই যে আপনি কি ডাউনলোড করছেন তা দেখতে পারছে তা কিন্তু নয়, আপনার প্রতিবেশও জানতে পারছে আপনি কি ডাউনলোড করছেন সে সম্পর্কে, কেননা সেও একই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ডাউনলোড করছে। যে সমস্ত কন্টেন্টই টরেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে ডাউনলোড বা আপলোড হচ্ছে তার সাথে জড়িত সকলের IP অ্যাড্রেস শো করে থাকে।

এটা নিয়ে কি আমার ভয় করা উচিৎ?

আপনি যদি টরেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে ডাউনলোড করার সময় নিজের পরিচয় পরিপূর্ণ ভাবে গোপন রাখতে পারেন তাহলে এটা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আর পরিচয় গোপন রেখে টরেন্ট নেটওয়ার্কগুলো ব্যবহার করার অনেকগুলি উপায় রয়েছে।

কিন্তু যারা টরেন্ট ব্যবহার করে ইলিগ্যাল ফাইল বা কন্টেন্ট ডাউনলোড করছেন তাদের এখনই ভয় পাওয়া উচিৎ।

যদি আপনি ইলিগ্যাল ফাইল ডাউনলোড করে থাকেন এবং ইলিগ্যাল ডাউনলোড করার রিস্ক সম্পর্কে জানেন তাহলে এটি হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোর মতোই অবস্থা। যদিও আপনি খেয়াল করে এবং ধীরে ধীরে বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু একটি ছোট দুর্ঘটনাই আপনার সারা জীবনের কান্নার কারণ হবে।

আর যারা লিগ্যাল ফাইলগুলি ডাউনলোড করছেন তারা তাদের সিকিউরিটি এবং সেফটি নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে। যদিও সবাই আপনাকে টরেন্ট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ডাউনলোড করছেন তা দেখতে পাচ্ছে, আর বেশিরভাগ ইউজাররা সিস্টেম এর অপব্যবহার করতে চায় না এবং তাই তারা তাদের রিয়্যাল IP অ্যাড্রেস ব্যবহার করেই ডাউনলোড করে থাকে। এবং তারা তাদের নিজের ডাউনলোড এবং আপলোড এর দিকেই বেশি মনোযোগী হয়ে থাকে।

টরেন্ট নেটওয়ার্কে পরিচয় গোপন রাখার উপায়সমূহ

তবে ইন্টারনেটে ব্যবহার করা অন্যান্য সার্ভিসের মতো, টরেন্টেও আপনার পরিচয় হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর টরেন্ট নেটওয়ার্কে পরিচয় গোপন রাখলে আপনি আপনার পরিচয় গোপনের সাথে সাথে আপনার ডাউনলোড করা ফাইলগুলো প্রটেক্ট রাখতে পারবেন। নিম্নে টরেন্ট নেটওয়ার্কে পরিচয় গোপন রাখার উপয়াসমূহ নিয়ে আলোচনা করবোঃ

১. VPN ব্যবহার করা

পরিচয় গোপন রাখার জন্য আমাদের ব্যবহার করা প্রথম সফটওয়্যার হল ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা VPN। এই সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আপনার রিয়াল IP অ্যাড্রেস হাইড করে ফেলে যেই IP অ্যাড্রেস আপনার ISP সেট করে দিয়েছিল এবং আপনার টরেন্ট নেটওয়ার্ক থেকেও আপনার রিয়াল IP অ্যাড্রেস হাইড করে। এছাড়াও আপনার বর্তমান লোকেশন চেঞ্জ অন্য কোন দেশের IP অ্যাড্রেস ব্যবহার করে টরেন্ট থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার  VPN সফটওয়্যার দেখাচ্ছে আপনি ইতালি থেকে ডাউনলোড করছেন তবে আপনি এখন রয়েছেন বাংলাদেশে।

২. প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে

আপনার IP অ্যাড্রেস লুকানোর আরেকটি উপায় হল প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করা। এই প্রক্সি সার্ভারগুলি তাদের IP অ্যাড্রেসটি আপনাকে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে থাকে, বরং আপনার ISP থেকে দেওয়া IP অ্যাড্রেস থেকে ইউনিক একটা IP অ্যাড্রেস দিয়ে থাকে। আর প্রক্সি সার্ভার হচ্ছে BTGuard, যা বিটটরেন্টের সমস্ত ট্রাফিক তাদের সার্ভারের মধ্যে দিয়ে পাস করায় এবং আপনার রিয়াল IP অ্যাড্রেসটি টরেন্ট নেটওয়ার্কের সমস্ত ইউজার থেকে হাইড করে রাখে।

৩. একই সাথে VPN এবং প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করুন

সবচেয়ে সিকিউর থাকার সর্বোত্তম উপায় হল VPN এবং প্রক্সি সার্ভার একত্রে ব্যবহার করা। মনে রাখবেন আপনি যত বেশি টুলস ব্যবহার করবেন আপনি তত প্রাইভেসি রক্ষা করে চলতে পারবেন।

৪. Seed Box ব্যবহার করুন

Seed box হচ্ছে প্রক্সি সার্ভারের মতোই যা শুধুমাত্র ডিজিটাল ফাইলগুলি আপলোড এবং ডাউনলোড করার জন্য ডেডিকেটেড ভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই Seed box এর মাধ্যমে আপনি আপনার প্রাইভেসি রক্ষা এবং গোপনীয়তা বজায় রাখতে পারবেন আরও উন্নত ভাবে।

৫. বিজ্ঞাপণের ব্যানারে ক্লিক করবেন না

আপনি তো ইন্টারনেটের বিজ্ঞাপণ সম্পর্কে জানেন, যেখান "আপনি ১, ০০০, ০০০ ডলার জিতেছেন! আপনার পুরুস্কারন নিতে এখানে ক্লিক করুন" ইত্যাদি ধরনের বিজ্ঞাপণ দেখতে পাবেন, এই বিজ্ঞাপণের উপরে কখনো ক্লিক করবেন না। বেশিরভাগ বিজ্ঞাপণেই ভাইরাস ফাইল থাকে যা আপনার কম্পিউটারের জন্য ক্ষতিকর। এই সব অ্যাড থেকে বাঁচতে একটি অ্যাড-ব্লকার ব্যবহার করুন যাতে আপনি এইসব অ্যাডে ক্লিক করার ইচ্ছা জাগে।

৬. এডমিনিস্ট্রেটর মোডে সফটওয়্যার রান করাবেন না

ট্রোজান এবং রুটকিটসের মতো বিপজ্জনক সফটওয়্যার আপনার সিস্টেম সেটিং পরিবর্তন করতে পারে যদি কিনা আপনি এই সব সফটওয়্যার কে এডমিনিস্ট্রেটর মোডে রান করান। আর এর ফলে এই সব সফটওয়্যার আপনার সিস্টেমে লো-লেভেল অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারে। এছাড়াও এটি আপনার কম্পিউটারকে এডমিনিস্ট্রেটর মোডে রান করার জন্য ফোর্স করে থাকে আর এর ফলে এই সব সফটওয়্যার বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার আপনার সিস্টেমে ইন্সটল করে।

৭. Tor ব্রাউজার এবং Anonymous সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করুন

পরিচয় গোপন রেখে ইন্টারনেটে ব্রাউজ করার জন্য অসাধারণ একটি সফটওয়্যার হচ্ছে টর ব্রাউজারের এবং DuckDuckGo সার্চ ইঞ্জিন নিশ্চিত করে আপনার করা সার্চগুলো যেন আপনার ব্রাউজার কুকিজ আকারে সেভ করতে না পারে।

শেষ কথা

ইন্টারনেটে আপনি যেভাবেই আপনার পরিচয় গোপন রাখতে চেষ্টা করেন না কেন, আপনি কখনই ১০০% পরিচয় গোপন রাখতে পারবেন না। উপরে আলোচনা থেকে আপনার কাছে থাকা যেকোনো রিসোর্স ব্যবহার করে আপনি আপনার পরিচয় গোপন রাখতে পারবেন। আর আমরা প্রত্যেকে আমাদের সেফটি এবং সিকিউরিটি নিয়ে চিন্তিত। আর উপরের আলোচনা থেকে আমরা আমাদের পরিচয় গোপন রাখার উপায় গুলো জানলাম। আবারও বলছি, ইন্টারনেটে আপনি যেভাবেই আপনার পরিচয় গোপন রাখতে চেষ্টা করেন না কেন, আপনি কখনই ১০০% পরিচয় গোপন রাখতে পারবেন না।

টিউন জোসস করুন, আমার টিউন শেয়ার করুন, টেকটিউনসে আমাকে ফলো করুন, আপনাদের মতামত জানান

আমি এরকম নিত্যনতুন কাজের সফটওয়্যার নিয়ে টেকটিউনসে হাজির হবো নিয়মিত। তবে সে জন্য আপনার যা করতে হবে তা হলো আমার টেকটিউনস প্রোফাইলে আমাকে ফলো করার জন্য 'Follow' বাটনে ক্লিক করুন। আর তা না হলে আমার নতুন নতুন টিউন গুলো আপনার টিউন স্ক্রিনে পৌঁছাবে না।

আমার টিউন গুলো জোসস করুন, তাহলে আমি  টিউন করার আরও অনুপ্রেরণা পাবো এবং ফলে ভবিষ্যতে আরও মান সম্মত টিউন উপহার দিতে পারবো।

আমার টিউন গুলো শেয়ার বাটনে ক্লিক করে সকল সৌশল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। নিজে প্রযুক্তি শিখুন ও অন্য প্রযুক্তি সম্বন্ধে জানান টেকটিউনসের মাধ্যমে

Level 8

আমি রায়হান ফেরদৌস। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 182 টি টিউন ও 131 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 73 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস